 কাতারের সুখ দুঃখ - ২০ ড. আব্দুল্লাহ আল-মামুন
আগের পর্ব        পরের পর্ব 
মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলোর অন্যতম প্রতীক হল খেজুর আর খেজুর গাছ। কাতারের দোহা শহরের রাস্তার দু’পাশের ফুটপাতে, মধ্যখানে, প্রায় সব বাড়ীর আঙ্গিনায় দেখা যায় সারি সারি খেজুরের গাছ। আর দোহা শহরতলী ছেড়ে একটু বাইরে গেলেই চোখে পড়বে ছোটো-বড় অসংখ্য খেজুরের বাগান। প্রচণ্ড শুষ্ক আবহাওয়া ও উত্তাপের কারণে সবুজ গাছ-গাছালীর মধ্যে একমাত্র বড়ই এবং খেজুরের গাছই এখানে টিকে থাকে। প্রকৃতিতে এনে দেয় সবুজের আভা। এসব দেশের মানুষের অন্যতম উপাদেয় খাদ্য হচ্ছে খেজুর। তবে রমজান মাসে বিশ্ব জুড়ে মুসলিমদের খাদ্য তালিকায় থাকে খেজুর। ইফতারের সময় টেবিলে খেজুর না থাকলেই যে নয়।
কাতার সহ মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশে এখন থোকায় থোকায় পাকা খেজুর ঝুলছে খেজুর গাছে। ফাগুনের আগমনে কৃষ্ণচূড়ার রং মেখে বাংলার প্রকৃতি যেমন নতুন সাজে সেজে ওঠে, ঠিক তেমনি সারা বছর ধরে শুষ্ক ম্রিয়মাণ হয়ে থাকা খেজুর গাছগুলো এই সময় রঙিন ফলের সমাহারে বাসন্তী রংয়ে সাজে। অধিকাংশ খেজুর গাছের উচ্চতা ১০ থেকে ১৫ মিটার হলেও কিছু কিছু গাছ মাত্র তিন থেকে চার মিটার লম্বা হয়ে থাকে। ফলে হাত বাড়ালেই মুঠো ভরে যায় পাকা খেজুরে।
আরব অঞ্চলে শতাধিক জাতের খেজুর রয়েছে। খেজুরের স্বাদ, গুণাবলী এবং কোন এলাকার খেজুর তার উপর ভিত্তি করে রয়েছে বিভিন্ন নাম। খেজুরকে আরবিতে সাধারণত ‘তামর” আর খেজুর গাছকে ‘নাখিল’ বলা হয়। আমার কম্পাউন্ডের আঙ্গিনায় সোনালী খেজুরে ভরা খেজুর গাছগুলোও এখন ছড়াচ্ছে সৌরভ।
সেদিন হাত দিয়ে পেড়ে বেশ কিছু খেজুর খেলাম। এই জাতের খেজুরের নাম হল বারহি। এই খেজুর পাকলে হলুদ থেকে কিছুটা বাদামী রং ধারণ করে। বারহি খেজুর পুরো পেকে যাওয়ার আগেই বাজারজাত করা হয়। বাজারের যে সব খেজুর পাওয়া তার মধ্যে উৎকৃষ্ট মানের খেজুরগুলোর মধ্যে আজওয়া, আনবারা, খালাছ, সুক্কারি অন্যতম। মদিনায় উৎপাদিত বিখ্যাত আজওয়া খেজুরের কথা আমাদের অনেকেরই জানা। এদিকে বাংলাদেশেও শুরু হয়েছে খেজুরের চাষ। ইতিমধ্যে খেজুর ব্যবসায় অনেকে সফলতা পেয়েছেন। ফলে এখন অনেকেই খেজুর চাষের দিকে ঝুঁকছেন।

কাতারের প্রকৃতির শোভায় যেমন পরিবর্তন এনেছে হলদে রংয়ের খেজুর, তেমনি দোহা শহরের অবকাঠামোতে আধুনিকতার ছোয়া এনে দিয়েছে দোহা মেট্রো। দোহা শহরে সম্প্রতি চালু হয়েছে বহু প্রতীক্ষিত মেট্রো ট্রেন। এতে ২০২২ বিশ্বকাপ ফুটবলকে ঘিরে কাতারের আধুনিকায়ন প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ সম্পন্ন হল। দোহা শহরের বিভিন্ন এলাকা, শপিং মল, বিমান বন্দর থেকে শুরু করে ফুটবল স্টেডিয়ামগুলোকে সংযুক্ত করবে এই মেট্রো ট্রেন। দুই পর্বে চালু হবে দোহা মেট্রো। পরিকল্পিত ৬০টি স্টেশনের মধ্যে এই পর্যায়ে ৩৭টি চালু হয়েছে। বাকীগুলো ধাপে ধাপে চালু হবে।
ট্রেনের ভাড়া অন্যান্য দেশের মেট্রো ট্রেনের তুলনায় বেশ কম বলেই মনে হয়েছে। যেমন, যেকোনো গন্তব্যে ওয়ানওয়ে টিকিটের মূল্য হচ্ছে মাত্র অস্ট্রেলিয়ান ৮০ সেন্ট আর ডে পাস কেনা যাবে ২.৪০ ডলারে। উন্নত মানের সিট এবং বাইরের দৃশ্য দেখার জন্য উপযোগী সিট সহ গোল্ড ক্লাসও রয়েছে ট্রেনে। বাড়ী থেকে স্টেশনে যাওয়া আসা করার জন্য প্রতিটি এলাকায় বিনামূল্যে চলছে শাটল বাস। এছাড়া বড় বড় স্টেশনগুলোতে গাড়ী রাখার জন্য রয়েছে বিশাল পার্কিং এলাকা। দোহা শহরের মানুষের মধ্যে ধীরে ধীরে মেট্রো ট্রেনের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। অনেকেই এখন গাড়ীর বদলে ট্রেনে করেই অফিসে যাতায়াত করছেন। এভাবে চললে, আগামী কিছুদিনের মধ্যে দোহা শহরের ট্রাফিক জ্যামও বহুলাংশে কমে যাবে বলে মনে হচ্ছে। (চলবে…)
আগের পর্ব        পরের পর্ব 
 ড. আব্দুল্লাহ আল-মামুন, কাতার থেকে
|