bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












এই লিংক থেকে SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন





কাতারের সুখ দুঃখ - ১২
আব্দুল্লাহ আল-মামুন



আগের পর্ব পরের পর্ব


কা’বার পথে – ৫: মক্কা শহরের ঐতিহাসিক স্থানগুলো ভাল করে ঘুরে দেখার পরিকল্পনা শুরু করলাম। আমাদের হোটেল থেকে একটু বাম দিকে নেমে গেলেই পড়ে জান্নাতুল মওলা। জান্নাতুল বাকীর পরেই ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কবরস্থান হল এই জান্নাতুল মওলা। এখানে রাসুলের নিকটাত্মীয় থেকে শুরু করে রয়েছে অসংখ্য সাহাবা, ইমাম ও ইসলামিক চিন্তাবিদদের কবর। তবে কোন চিহ্ন না থাকায় কবর শনাক্ত করবার উপায় নেই। উল্লেখ্য করার মধ্যে রয়েছে বিবি খাদিজা, নবীর পুত্র সন্তান কাসিম, আসমা বিনতে আবু বকর, আবু তালিব, আব্দুল্লাহ বিন জুবাইর, রাসুলুল্লাহর পূর্বসূরি আব্দুল মনাফ, হাশিম, রাসুলের দাদা আব্দুল মুত্তালিব, মা আমিনা, আরো অনেক পারিবারিক সদস্যের কবর। মহানবী (সা:) নিয়মিত জান্নাতুল মওলা জিয়ারত করতে আসতেন। একটু সামনেই রয়েছে মসজিদে জ্বিন। মসজিদের দু’পাশ ঘেঁষে রয়েছে দোকানপাট ফলে কাছে না গেলে বোঝার উপায় নেই যে এটা ইসলামিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ মসজিদ।

এর পর গেলাম রাসুলুল্লাহর জন্মস্থান দেখতে। মসজিদুল হারামের মারওয়া পাহাড়ের দিক থেকে বের হলেই এটা চোখে পড়বে। একটা ব্যাপার লক্ষণীয় সেই যুগে মক্কার পুরো বসতি গড়ে উঠেছিল কা’বা ঘরকে ঘিরে। ফলে দেখা যায় কুরাইশ ও অন্যান্য বংশের সব নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের বসতবাড়ি কা’বার এক কিলোমিটারের মধ্যে। রাসুলের জন্মস্থানে একটি লাইব্রেরী নির্মাণ করা হয়েছে যা প্রায়ই বন্ধ থাকে। দিনের বেলায় দেখলাম দরজার একপাটি খোলা কিন্তু প্রবেশ পথ এক টুকরো কাঠ দিয়ে আগলে রাখা হয়েছে কেউ যাতে ঢুকতে না পারে। লাইব্রেরী বিল্ডিং সহ এলাকার অবস্থা খুবই করুণ। বিল্ডিংয়ের দেয়ালে দেখলাম অনেক আঁকাজোঁকা। সিঁড়িতে জমে আছে ময়লা। লাইব্রেরীর দরজার পাশেই কাঁথা কম্বল নিয়ে শুয়ে আছে একজন ছিন্নমূল মানুষ। মানব ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মনীষীর জন্মস্থানের এই করুন পরিণতি দেখে বিস্মিত ও ব্যথিত হলাম।



মসজিদুল হারামের অদূরে রয়েছে একটি কবরস্থান যেখানে মক্কায় ইসলাম প্রসার হওয়ার আগে মেয়ে শিশুদের জ্যান্ত কবর দেয়া হত। অবাক করা ব্যাপার হল কা’বার খুব কাছে হলেও এই যায়গায় কোন বিল্ডিং তোলা হয়নি, এখনো খালি রয়েছে। আমার ধারণা এখানে কুরাইশ নেতাদেরও কবর রয়েছে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে কবরস্থানের দিকে তাকাতেই শরীরটা শীতল বরফের মত হিম হয়ে যাচ্ছিল। মনে হল এইতো এইখানে কত শিশু আসতো বাবার হাত ধরে ভাবত বাবার সাথে যাবে অনেক দুর বেড়াতে। কিন্তু কখনো কি জানত বাবার যে হাতটা পরম নির্ভরতায় ধরে সে হাঁটছিল সেটাই দানব হয়ে তাকে গ্রাস করবে? এ কেমন নিষ্ঠুরতা? একজন বাবা কি করে এতটা পাষণ্ড, নির্দয় হতে পারে? মনে হচ্ছিল এই নীলিমায় হয়ত এখনো ভেসে বেড়াচ্ছে হাজারো শিশুর আর্তনাদ, বুকফাটা কান্না, বাঁচার আকুতি। এভাবে না জানি হঠাৎ করে থমকে গেছে কত সম্ভাবনাময় জীবন। বেশীক্ষণ ওখানে দাঁড়াতে পারলামনা। সেলীর মনটাও দেখলাম বেশ খারাপ। সেদিনের মত হোটেলে ফিরে গেলাম। হোটেলে গিয়ে আমার মেয়ে মুনিরাকে বুকের মধ্যে টেনে নিলাম। মুনিরা বলল কি হয়েছে বাবা তোমার? বললাম - কিচ্ছু না।

পরদিন আবার বেরিয়ে পড়লাম রাস্তায়। ট্যাক্সি নিলাম। ভাড়া ১০০ রিয়াল। ক্যাব ড্রাইভার বাঙ্গালী, নাম হাবীব। কিছুদূর যাবার পর জানতে পারলাম হাবীব কক্সবাজারে আমার খালার পাশের বাড়ীতে থাকে। অবাক হলাম কাকতালীয়ভাবে এমন দেশের বাড়ীর একজনকে পাওয়াটা। হাবীব ২৪ বছর ধরে মক্কায়। আর চিন্তা রইলনা। হাবীব সময় নিয়ে আমাদের মক্কা শহর ঘুরিয়ে দেখালো আর বিভিন্ন জায়গার কিছু ঐতিহাসিক তথ্যও দিল।

হাবীব আমাদের নুর ও সওর পাহাড়, মিনা, মুজদালিফা থেকে শুরু করে অনেক যায়গায় নিয়ে গেল। দেখলাম হাজার বছরের পুরানো বেলাল মসজিদ ভেঙ্গে কিভাবে প্রসাদ গড়ে উঠেছে। এ নিয়ে



হাবীবের আফসোসের অন্তঃ নেই। শুধু হাবীব নয় এ নিয়ে অনেকের মধ্যেই একটা চাপা ক্ষোভ দেখলাম কিন্তু কি করার আছে! আরাফাত পাহাড়ে গেলাম যাকে জবলে রাহমাতও বলা হয়ে থাকে। এই পাহাড়ে দাঁড়িয়ে মহানবী বিদায় হজ্জের ভাষণ দেন। এখানেই নাকি হযরত আদম ও হাওয়া একে অপরকে খুঁজে পান। আর তাই যদি হয়ে থাকে তাহলে বলতে হয় এটা হবে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এখানেও দেখলাম কর্তৃপক্ষের নিদারুণ অবহেলা।

জবলে রাহমাত পুরো পাহাড়টা দেখলাম মূলতঃ ফেরিওয়ালা ও ভিক্ষুকদের দখলে। আরাফাতে যাবার পথে রাস্তার পাশেই পাহাড়ের উপর দেখলাম ছোট্ট কংক্রিটের তৈরি একটি চিহ্ন। হাবিব বলল এই যায়গাতেই নাকি হযরত ইব্রাহীম তাঁর সন্তান ঈসমাইলকে কোরবানি দিতে উদ্যত হয়েছিলেন। ওই পাহাড় কেটে তৈরি হয়েছে সৌদি বাদশাহর বিশাল প্রাসাদ। ক’দিন পরে



ইতিহাসের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলস্টোন বুলডোজারের আঘাতে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে এতে কোন সন্দেহ নেই। আরাফাতের সীমানা ঘেঁষে রয়েছে একটি ব্রিজ। এই ব্রিজের কাছেই নাকি কা’বা ধ্বংস করতে আসা আবরাহার বাহিনী আবাবীল পাখীর ছুড়ে দেয়া পাথরের আঘাতে কুপোকাত হয়েছিল … (চলবে)




আগের পর্ব পরের পর্ব




আব্দুল্লাহ আল-মামুন, কাতার থেকে




Share on Facebook               Home Page             Published on: 7-Jan-2018

Coming Events:
বৃষ্টির সম্ভাবনার কারণে মেলার তারিখ ১ দিন পিছিয়ে ২১ এপ্রিল ২০২৪ (রবিবার) করা হয়েছে......




A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far