bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia














কাতারের সুখ দুঃখ - ৮ / আব্দুল্লাহ আল-মামুন



আগের অংশ

আগের পর্ব পরের পর্ব



এভাবে চলতে চলতে দুপুর দু’টার দিকে হফুফে এসে পৌঁছলাম। স্থানীয় একটি পেট্রোল ষ্টেশনে বিরতি দেয়া হল। পেট্রোল ষ্টেশনটা বেশ বড়, রয়েছে খাবারের রেস্টুরেন্ট, মসজিদ, টয়লেট ও বেশ বড় ওজু করার যায়গা। গাড়ী থেকে নেমেই সবাই নামাজ পড়ে নিলাম। খাবারের দোকানে যেয়ে দেখি ম্যানেজার থেকে শুরু করে প্রায় সবাই বাংলাদেশী ও চট্টগ্রামের অধিবাসী। তবে খাবারের অর্ডার দিতে গিয়ে প্যাসেঞ্জারদের হুড়োহুড়ি দেখে অবাক হলাম। কেই কাউকে ছাড় দিতে রাজী নয়। অথচ আমরা সবাই যাচ্ছি ধর্মীয় ব্রত পালন করতে। কোথায় গেল সেই ধৈর্য ধারণের কথা ? মনে হল খাবার বোধহয় এখনই শেষ হয়ে যাবে। যে পারছে অন্যকে ডিঙিয়ে খাবারের অর্ডার দিচ্ছেন। কে কার আগে কিউতে দাঁড়িয়ে তা দেখার হুশ নেই কারো। ১৫ মিনিটের মধ্যেই কিন্তু অর্ডার দেয়া শেষ। কি দরকার ছিল এই তাড়াহুড়োর ? কে জানে এটা হয়ত আমাদের চিরাচরিত স্বভাবেরই অংশ। আমরা যে পরিবেশেই থাকিনা কেন এর পরিবর্তন হয়ত কখনোই হবেনা।

যোহরের পর বিরতি-হীনভাবে গাড়ী চলতে থাকল। মাগরিবের সময় প্রায় ৬:২০ এর দিকে নামাজের ছোট্ট বিরতি দেয়া হল। আমি একটু ষ্ট্রেচিং করে নিলাম। দীর্ঘক্ষণ বসে থাকাতে পিঠে সমস্যা হচ্ছিল। হাতে করে চা নিয়ে আবার গাড়ীতে উঠলাম। ড্রাইভার বললেন রাত দশটার আগে কোন বিরতি নেই। গাড়ী রিয়াদ শহর বাই-পাস করে চলে গেলো। যাবার সময় দুরে রিয়াদ শহরের ঝলমলে বাতি দেখতে পাচ্ছিলাম। একটা ব্যাপার লক্ষ্য করলাম তা হল রাস্তায় বেশ কিছুদূর পরপরই রয়েছে বালির বস্তা দিয়ে ঘেরা সুরক্ষিত সৌদি পুলিশ ফাঁড়ি। ফাঁড়ির কাছে আসতেই সব গাড়ী ধীরে চলছিল। কোন কোন গাড়ী থামিয়ে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদও করছিল। রাত ৮টার দিকে হঠাৎ করে শুরু হল প্রচণ্ড ধুলো ঝড় ও সাথে বৃষ্টি । জরুরী লাইট জ্বালিয়ে দিয়ে বাস চলছিল খুব ধীরে। ধুলো মিশ্রিত বৃষ্টির কাদাপানিতে বাসের উইন্ডশিল্ড হয়ে যাচ্ছিল কালো। ভয় হচ্ছিল কারণ ২/৩ মিটার দুরেও কিছু দেখা যাচ্ছিলোনা। কিছুক্ষণ পরেই দেখি শাক-সবজি ভর্তি একটি ট্রাক রাস্তার একপাশে উল্টে পড়ে আছে। প্রায় আধঘণ্টার মধ্যে ঝড় বৃষ্টির এলাকা থেকে আমরা বেরিয়ে আসলাম, আবার সাবলীল গতিতে চলতে থাকল বাস।

রাত দশটার দিকে গাড়ী থামল একটি পেট্রোল ষ্টেশনে। রাতের খাবার খেতে হবে। উল্লেখ্য রাস্তার ধারের এই রেস্টুরেন্টগুলোর মান বেশ উন্নত। আরবি, বাঙালী , পাকিস্তানী ভারতীয় সব ধরনের খাবারই এখানে পাওয়া যায়। এবার আমরা আরবি খাবার খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। একটি বড় প্লেটে পোলারও মত হালকা হলুদ রংয়ের ভাত, সাথে দুভাগ করা গ্রিলড্ চিকেন ও সালাদ দেয়া হল। খুবই সুস্বাদু, এক কথায় অসাধারণ ! ইশার নামাজ ও খাবার শেষ করে আবার গাড়ীতে চড়ে বসলাম। একসময় কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানিনা। মাইকে ড্রাইভারের কণ্ঠে ঘুম থেকে জেগে উঠলাম। সময় দেখি ভোর ৩টা। ড্রাইভার বললেন আর দশ মিনিটের মধ্যে আমরা তা’ইফের মিকাতে পৌঁছে যাব। এখানেই এহরাম বাধতে হবে। তা’ইফ মক্কা থেকে খুব বেশী দুরে নয় - মাত্র ৯০ কিলোমিটার।। ফজরের নামাজের পরপরই শুরু হবে মক্কার পথে যাত্রা ...(চলবে)



আগের অংশ

আগের পর্ব পরের পর্ব




আব্দুল্লাহ আল-মামুন, কাতার থেকে




Share on Facebook               Home Page             Published on: 27-Aug-2017

Coming Events: