bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia














কাতারের সুখ দুঃখ - ৬ / আব্দুল্লাহ আল-মামুন



আগের অংশ

আগের পর্ব পরের পর্ব



দোহার প্রায় প্রতিটি মসজিদেই ৮ কিংবা ২০ রাকাত তারাবির নামাজ হয়ে থাকে। তারাবীর শুরুতে মসজিদে উপচে পড়া ভিড় থাকলেও আট রাকাত পড়েই অধিকাংশ মুসল্লি বাড়ী চলে যান। তবে খতমে তারাবি পড়ানো হয় এমন মসজিদের সংখ্যা আগের চেয়ে এখন অনেক কমে গেছে। খতমে তারাবির কথা বলতে গেলে মুশাইরিব এলাকার বুখারি মসজিদের কথা বলতেই হয়। মসজিদের ইমাম বাংলাদেশি। ইমাম ও তাঁর ছেলে দুজন মিলেই তারাবি পড়ান। তাঁদের সুললিত কণ্ঠের কেরাত ও শুদ্ধ উচ্চারণ মন কেড়ে নেয়। আমি পুরো পরিবার নিয়ে নিয়মিত বুখারি মসজিদেই তারাবীর নামাজ পড়ে নেই। আর তারাবি শেষ করে ফেরার পথে গাড়িতে বসেই দেশীয় কোনো রেস্তোরাঁ থেকে নিয়মিত চায়ের পর্বটা সেরে ফেলি। রমজানের শেষ ১০ দিন প্রতিটি মসজিদে মধ্যরাত থেকে দীর্ঘক্ষণ ধরে কিয়ামুল্লাইল নামাজ পড়ানো হয়। এতে প্রচুর মুসল্লির সমাগম হয়।

দেশে যখন ছিলাম তখন তারাবি কত রাকাত পড়তে হবে, সে নিয়ে কখনো বিতর্ক হতে দেখিনি। ইদানীং এই বিতর্কে দেশের মানুষও জড়িয়ে পড়ছেন বলে মনে হচ্ছে। সেদিন বাংলাদেশের টেলিভিশন চ্যানেলেও দেখলাম এ নিয়ে কথা হচ্ছে। চ্যানেল আইয়ের ‘কাফেলা’ অনুষ্ঠানের উপস্থাপকের মতে, যারা আট রাকাতের পক্ষে বলছেন, তাঁরা মূলত এজিদের চক্রান্তই বাস্তবায়ন করে চলেছেন। কী অদ্ভুত কথা!

এদিকে মিসর-ভিত্তিক ইসলামিক টেলিভিশন ‘চ্যানেল হুদা’র প্রশ্নোত্তর পর্বেও একই বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করছিলেন শ্রোতারা। অনেকের প্রশ্ন ছিলো, খোদ হারাম শরিফ ও মসজিদে নববিতে যদি ২০ রাকাতের খতম তারাবি হয়, তাহলে ২০ রাকাত পড়তে অসুবিধা কোথায়? যারা ২০ রাকাত অথবা কম পড়ছেন, দুই পক্ষের কাছেই হাদিসের দলিল রয়েছে। হুদা টেলিভিশনের মুফতিরা কারও প্রতি বিষোদ্গার না করে যেভাবে উত্তর দিয়েছেন, সেটা ভালো লেগেছে। হাদিস নিয়ে আলোচনা করা আমার উদ্দেশ্য নয়, তাই সেদিকে যেতে চাই না। তবে ঈদের চাঁদের মতো তারাবি নিয়েও আমরা যেভাবে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছি, তা আমাকে ভাবিয়ে তোলে। অন্যের দিকে আঙুল না তুলে নিজে যেটাকে শুদ্ধ মনে করি, সেটা শান্তিপূর্ণভাবে কি আমরা পালন করতে পারি না?

কাতারে ভিক্ষা করা সরকারিভাবে নিষিদ্ধ। কিন্তু রমজান মাসে অনেক সময় বোরকাবৃত মহিলা ভিক্ষুকদের আগমন লক্ষ করেছি। ধরুন, আপনি কাপড়ের দোকানে ঢুকেছেন কাপড় কিনতে, হঠাৎ দেখবেন বোরকাবৃত একজন মহিলা আরবিতে আপনার কাছে টাকা চাইছে। একদিন এক বন্ধুর সঙ্গে শপিং করছি, দেখি একজন বোরকাওয়ালি ভিক্ষুক দোকানে হাজির। আমার বন্ধু ১০ রিয়াল দিতে গেলে উনি নেবেন না, আরও বেশি চাই। আমরা বেশ অস্বস্তিতে পড়ে গেলাম। শেষ পর্যন্ত আরও কিছু বেশি দিয়ে উদ্ধার পাওয়া গেলেও টাকা হাতে নিয়ে বিড়বিড় করে আরবিতে আমাদের উদ্দেশে খিস্তি-খেউড় আওড়াতে লাগলেন মহিলা। সেদিন মসজিদের দরজায় এক পাঠান বুকে ব্যান্ডেজ বেঁধে হাজির, সাহায্য চাইছে। পরে দেখা গেলো ব্যান্ডেজটা ভুয়া।

দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর আসে ঈদ। আরবদের ঈদ পালনের ধরন আমাদের দেশের চেয়ে একটু ভিন্ন। এখানে রোজার শুরু থেকেই একটা উত্তেজনার ভাব লক্ষ্য করা যায় যা রমজানের পুরো মাস ধরে চলে। ফলে আমাদের দেশের মত বিশেষতঃ ঈদের দিনে আবেগ ও আনন্দের বিস্ফোরণ ঘটতে দেখা যায়না। আরবরা ইফতারির পর থেকে সেহরির সময় পর্যন্ত অনেকেই বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনদের বাসায় আসা যাওয়া করেন। তারাবী নামাজের পর চলে রেস্টুরেন্টে বসে আড্ডা, শিশা পান ও খাওয়া দাওয়া। প্রতি বছর রোজার মরশুমে কাতারিরা বাড়ীর পুরনো ফার্নিচার বদলে ফেলেন। ফলে রোজার মাসে চলে ফার্নিচারের রমরমা ব্যবসা। তবে আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী এর তারতম্য ঘটে। এখানে ঈদের নামাজ হয় খুব ভোরে ফজরের নামাজের আনুমানিক এক ঘণ্টা পর। ফলে আমাদের দেশের মত দলবদ্ধ হয়ে পরিবার পরিজন সহ ঈদের জামাতে যাবার দৃশ্য এখানে সচরাচর চোখে পড়েনা …(চলবে)



আগের অংশ

আগের পর্ব পরের পর্ব




আব্দুল্লাহ আল-মামুন, কাতার থেকে, জুন ১০, ২০১৭





Share on Facebook               Home Page             Published on: 16-Jun-2017

Coming Events:





A day full of activities, games and fun.







Blacktown Lakemba Mascot