bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












এই লিংক থেকে SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন





কাতারের সুখ দুঃখ - ৫
আব্দুল্লাহ আল-মামুন



আগের পর্ব পরের পর্ব


দোহা শহরের একটি অন্যতম পুরনো এলাকা হল “মুশাইরিব”, যা বাঙালি ও দোহার আম-জনতার কাছে “ন্যাশনাল” বলেই পরিচিত। বেশ কিছু বাংলাদেশি রেস্তোরাঁ থাকার ফলে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবারে, ন্যাশনাল এলাকা জুড়ে বসে বাঙালি প্রবাসীদের বিশাল আড্ডা, যাতে ভিনদেশী প্রবাসীরাও যোগ দেন। মূলত: শ্রমিক ও নিম্ন আয়ের প্রবাসীরাই এখানে সমবেত হন, দেয়া নেয়া করেন নিজেদের সুখ-দুঃখের কথা। সপ্তাহের ছয়দিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পর, ছুটির দিনটি উপভোগ করার জন্য অনেকে ঝকঝকে কাপড় চোপড় পড়ে এখানে আসেন। ন্যাশনালের প্রধান সড়কের পাশেই রয়েছে একটি পাকা চত্বর, তাতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কিছু বসার বেঞ্চ। শুক্রবার বিকেল থেকে এই চত্বরকে ঘিরেই জমে উঠে জনসমাবেশ। রাস্তা, ফুটপাত, অলিগলি ও সবুজ আইল্যান্ডেও উপচে পড়ে জনতার ঢল। যেদিকেই দৃষ্টি রাখা হোকনা কেন, চোখে পড়ে কেবল মানুষ আর মানুষের মিছিল। বাতাসে ভেসে বেড়ায় মানুষের চাপা গুঞ্জরন, যা ঢাকার ব্যস্ত গুলিস্তানের মোড়ের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

দেশের রেস্তোরাঁয় জ্বাল দেয়া ঘন লিকারের চা আমার খুবই প্রিয়। অস্ট্রেলিয়ায় এই চা ভীষণ মিস করতাম। কিন্তু ন্যাশনালের বাঙালি হোটেল “মধুবন” ও “সোনাগাজী”র চা খেয়ে মনে হল, যেন চাটগাঁর কোনো রেস্তোরাঁয় বসে চা খাচ্ছি। ন্যাশনালের কাছাকাছি আমার বাসা। তাই ছুটির দিনে সেই চা, সিঙ্গারা এবং গরম গরম জিলাপির আকর্ষণে আমি হেঁটেই চলে যাই ন্যাশনালে আর ধূমায়িত চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বাঙালিদের আড্ডায় যোগ দেই। বাঙালি হোটেলের চা ও সিঙ্গারা খাবার পর আমার কয়েকজন অস্ট্রেলিয়ান সহকর্মী, বাঙালি রেস্তরাঁর নিয়মিত খদ্দেরে পরিণত হয়েছেন। একদিন দেখি, সোনাগাজীতে চা খেতে লাইন দিয়েছে এক জাপানী কন্সালট্যান্ট!



কখনো আড্ডার আসর ছেড়ে চায়ের গ্লাসটা হাতে নিয়ে, মানুষের ভিড়ে একা হেঁটে বেড়াতেও আমার খুব ভালো লাগে। আম-জনতার এই ভিড় থেকে এক ধরণের উত্তাপ বিচ্ছুরিত হয়, যা আমার অনুভূতিতে সঞ্চারিত হয়ে আমাকে মাতৃভূমির খুবই কাছাকাছি নিয়ে যায়। আর তখন ছেলেবেলার বন্ধুদের সাথে আড্ডা, দুরন্ত দুপুর, ক্লান্তিহীন খেলাধুলার স্মৃতি বুকের অন্ধকারে ছুটে বেড়ায়। মজার কথা হল, মানুষের ভিড়ের একমাথা থেকে হাঁটতে শুরু করলে চাটগাঁ, নোয়াখালী, সিলেট, কুমিল্লার আঞ্চলিক ভাষা থেকে শুরু করে নেপালি, হিন্দি, পস্তুন, মালায়ালাম সহ কমপক্ষে এক ডজন ভাষার কিচিরমিচির শব্দ শোনা যাবে।

তবে ন্যাশনালে আকর্ষণ শুধু রেস্তোরাঁ নয়, এখানে রয়েছে সস্তায় কেনাকাটার জন্য রকমারি দোকান, আছে ফটো শপ, বিশাল আইটি মার্কেট “সফিটেল” আর দেশে কথা বলার জন্য আছে ভিওআইপি টেলিফোনের দোকান। নিজ নিজ এলাকার মানুষ খুঁজে পেতে যাতে অসুবিধা না হয় সেজন্য ন্যাশনালে এলাকাভিত্তিক আড্ডার জন্যও রয়েছে বেশ কিছু নির্দিষ্ট স্পট। সোনাগাজী হোটেলের কাছেই রয়েছে বাংলা বাজার। দোহার খামারে উৎপন্ন তাজা শাক-সবজীর হাট বসে এখানে। ন্যাশনালে গেলে তাই খালি হাতে কখনো ফেরা হয়না।
বিশ্বকাপ ২০২২ ফুটবলের আসরকে বরণ করে নেবার জন্য এখন ঢেলে সাজানো হচ্ছে দোহা শহরকে। দোহা শহরে এখন চলছে ভাঙ্গা গড়ার খেলা। ক’দিন আগে রাস্তার মোড়ে যে



দালানটি দেখলাম আজ দেখি সেটা নেই, বুল-ডোজার দিয়ে উপড়ে ফেলা হয়েছে, তোলা হচ্ছে আকাশ ছোঁয়া স্কাই-স্ক্রেপার। প্রায় প্রতিটি রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে চলছে খোঁড়াখুঁড়ির কারবার, তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন হাইওয়ে, ফ্লাই-ওভার। রংবদলের রং মাখা দোহার নিত্য নতুন সাজ দেখে মনে হয়, একি দু’বছর আগে দেখা দোহা নাকি অন্য কোনো শহর। উন্নয়নের জোয়ারে এখন হারিয়ে গেছে দোহার বাংলা-টাউন খ্যাত “ন্যাশনাল”। একই জায়গায় সবকিছু ভেঙ্গেচুরে এখন তৈরি হচ্ছে অত্যাধুনিক মুশাইরিব সিটি। কখনো মুশাইরিবের রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যাবার সময় নিজের অজান্তে চোখ দু’টো খুঁজে ফেরে ন্যাশনালের ফেলে আসা স্মৃতি, মানুষের গুঞ্জন। ব্যথাতুর হয়ে যায় মনটা। উন্নয়ন হবে, নতুনের জন্য পুরাতনকে জায়গা করে দিতে হবে। কিন্তু দোহা শহরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী এলাকাগুলো কাতারের মানচিত্র থেকে এভাবে হারিয়ে যাওয়াটা মেনে নিতে পারছিলামনা।



২০০৮ সালের ডিসেম্বর। দোহার চারদিকে তখন শীতের আমেজ। সেদিন ছিল শুক্রবার, সময় সন্ধ্যা ৭:৩০টা হবে। ন্যাশনাল এলাকায় মানুষ গিজ গিজ করেছে। সোনাগাজীতে চা খেতে যাবার জন্য বের হয়েছি। রেস্তরাঁর প্রায় ধারে কাছেই চলে এসেছি। সামনে একটি টি-জংশন। দু’লেনের রাস্তার অর্ধেকটা পার হয়ে রাস্তার মাঝখানে আইল্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছি। আমার সমুখ দিয়ে প্রধান সড়কের গাড়ীগুলো একে একে টার্ন নিচ্ছিল। গাড়ী টার্ন নেয়া প্রায় শেষ। তবে শেষের গাড়ীটার দিকে আমার চোখ ছিল, ভাবছিলাম ওটা চলে গেলেই পার হব রাস্তা। গাড়ীটার দিকে আমার চোখ রাখাটাই যেন জীবন আর মৃত্যুর মধ্যে পার্থক্য করে দিল। দেখি ওই গাড়ী আচমকা বেঁকে গিয়ে আমার দিকে দানবের মত ছুটে আসছে। আমি অনেকটা নিজের অজান্তেই গাড়ীটাকে এড়ানোর জন্য কয়েক সেন্টিমিটার সরে দাঁড়াই কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি, গাড়ীটা আমার ডান দিকটায় ধাক্কা দিয়ে বিকট আওয়াজ করে ফুটপাতের রেলিংয়ে আঘাত করল। আমি রাস্তার মাঝখানে ছিটকে পড়লাম। হাতের ডান বাহুতে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করছি। মনে হল হাতটা ভেঙ্গে গেছে। হাঁটু ও অন্য হাতের কনুই থেকে রাস্তায় ঘষা খেয়ে রক্ত ঝরছিল। আমি ডান হাতটাকে বুকে চেপে রেখে রাস্তায় মাঝখানে বসে থাকি।

মুহূর্তের মধ্যে আমার চারিদিকে রাস্তায় চলমান মানুষের প্রচণ্ড ভিড় জমে গেল। আমি ঘিরে থাকা জনতাকে বললাম, পুলিশ ও এম্বুল্যান্স ডাকতে। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একজন পথচারী মোবাইল থেকে ফোন করে দিল; একজন আমাকে খাবার পানি এনে দিল। কেউ জিজ্ঞাসা করছিল আমি কোত্থেকে এসেছি, আমার পরিচয় কি? কেমন বোধ করছি ইত্যাদি। আশেপাশের পথযাত্রীর এ ধরণের সহানুভূতি ও মানবতা-বোধ আমাকে অভিভূত করলো। একজন পথচারী আমার কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলো, দোহায় আমার কোন আপনজন আছে কিনা। এই প্রশ্ন শুনে আমার বুকের মধ্যে নীরব রক্তক্ষরণ শুরু হল। কার কথা বলবো?

দোহায় এসেছি মাত্র দু’মাস হল। আমার পরিবার তখনো সিডনীতে। কেমন এক শূন্যতাবোধ আমার ঘা খাওয়া শরীরটাকে আরো অবশ করে দিল। রাস্তার গাড়ী চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক’জন ধরাধরি করে আমাকে ফুটপাতে নিয়ে গেল। ইতিমধ্যে একজন প্রবীণ পাঠান পথচারী পুরো পরিস্থিতিকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিলেন। তিনি সবাইকে বার বার তাগাদা দিচ্ছিলেন একটু দুরে সরে যেতে, আর আমার কাছে এসে সাহস দিয়ে বললেন, “চিন্তা করোনা, এম্বুল্যান্স এলো বলে”। এখানে অস্ট্রেলিয়ার সাথে বেশ পার্থক্য অনুভব করলাম। পথচারীদের এমন আন্তরিকতা ও সহমর্র্মিতা ওই সব দেশে খুব একটা দেখা যায়না, সবাই নিজেকে নিয়েই থাকে ব্যস্ত। খুব বিপাকে না পড়লে গায়ে পড়ে কেউ কারো সাথে জড়াতে চায়না। কিন্তু এখানে দেখলাম ঠিক তার উল্টো। দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ বলেই হয়ত এমনটা সম্ভব হল।

২০ মিনিটের মধ্যেই পুলিশ ও এম্বুল্যান্স হাজির, যা আমাকে রীতিমত বিস্মিত করলো। ভাবছিলাম, কতক্ষণ এভাবে ফুটপাতে পড়ে থাকতে হবে কে জানে? এম্বুল্যান্স অফিসার প্রথমেই গলায় কলার-গার্ড পরিয়ে দিলেন। ওই প্রবীণ পথচারী ও আরেকজন বাঙালি, রাস্তায় ছিটকে পড়া শপিং ব্যাগটা স্বযতেœ কুড়িয়ে এনে আমার হাতে তুলে দিলেন এবং স্ট্রেচারে করে আমাকে এম্বুল্যান্সে তুলতে সাহায্য করলেন। দোহার আম-জনতার বুকের গহীনে মানবতার যে নিয়নবাতি জ্বলছে, তা দেখে কৃতজ্ঞতায় মনে মনে তাদের স্যালুট দিলাম।

প্রচণ্ড ট্রাফিকের ভিড় চিরে এগিয়ে যাচ্ছে এম্বুল্যান্স। স্ট্রেচারে শুয়ে ব্যথায় নীল হচ্ছিলাম আমি। মনে হচ্ছিল শীতের হলুদ পাতার মতো যে কোনো মুহূর্তেই ঝরে পড়ব। সুদূর প্রবাসে, দুর্ঘটনার শিকার হয়ে হাসপাতালের পথযাত্রী আমি একা, ভীষণ একা। কেন জানিনা আপনজনের একটি স্নেহ-মাখা মুখ দেখার জন্য বারবার ব্যকুল হচ্ছিল মন। আমার প্রিয় লেখক শরৎচন্দ্রের লেখা দেবদাসের অন্তিম অধ্যয়ের কিছু পঙক্তিমালার সাথে কেমন যেন মিল খুঁজে পাচ্ছিলাম…... মরণে ক্ষতি নাই, কিন্তু সে সময়ে যেন একটি স্নেহকরস্পর্শ তাহার ললাটে পৌঁছে- যেন একটিও করুণাদ্র স্নেহময় মুখ দেখিতে দেখিতে এ জীবনের অন্ত হয়। মরিবার সময় যেন কাহারও একফোঁটা চোখের জল দেখিয়া সে মরিতে পারে।

আমার পরিবারের ভিসা হাতে চলে এসেছে। জানুয়ারিতে টিকিট বুকিং দিয়েছি। আর এই সময়, আমার যদি মারাত্মক কিছু একটা হতো? পুরো ব্যাপারটা ভাবতেই কেঁপে উঠলো শরীর। মনে হল, বিধাতা আমার পরিবারের প্রিয় ক’জন মানুষের নিদারুণ লোকসানের কথা ভেবেই হয়তো আমাকে আবারও জীবন দিলেন। তাইতো বলি - “রাখে আল্লাহ, মারে কে“?

এম্বুল্যান্স আমাকে সরাসরি দোহার সবচেয়ে বড় সরকারী হাসপাতাল, আল-হামাদের জরুরী বিভাগে নিয়ে গেলো। আমার আগে আরো রুগী ছিল। প্রায় আধ ঘণ্টার মধ্যেই আমার ডাক পড়লো। সিস্টার আমার ক্ষত: পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে টিটেনাস দিলেন। এরপর ডাক্তার মনোযোগ দিয়ে আমাকে পরীক্ষা করে বললেন, তেমন কোনো অসুবিধা নেই। তবুও এক্সরেতে পাঠাতে অনুরোধ করলাম। ডাক্তারের নাম ইউসুফ, সম্ভবত: সুদানের, হাসি খুশী আর ইংরেজি ভালো বলেন, তাই কথা বলতে অসুবিধা হলোনা। ঝটপট এক্সরে সেরে ঘন্টাখানেকের মধ্যেই রিপোর্ট পরখ করে আমাকে বিদায় করা হল। রাস্তায় এম্বুল্যান্স থেকে হাসপাতাল পর্যন্ত পুরো ব্যাপারটা যে গতি ও দক্ষতার সাথে সম্পন্ন করা হল, তাতে আমি রীতিমত মুগ্ধ।

গত ক’দিনে পরিচয় হয়েছিল ফারুক নামের দোহার একজন বাঙ্গালীর সাথে। আমার চেয়ে বয়সে বেশ ছোট। বাড়ী মিরেশ্বরাই। স্থানীয় একটি হোটেলের রিসেপ্শনে চাকরী করে। ফারুকের অনুজ ইউসুফও তার সাথে একই হোটেলে কাজ করছে। আমি একা থাকি বলে, সময় পেলেই ওরা প্রায় জোরাজুরি করে আমাকে ওদের বাসায় খেতে নিয়ে যেতো। ইউসুফ খুবই ভালো রাঁধুনে। বড্ড যত্ন নিয়ে রান্না করে। ওর হাতের মাংস ও মাছ রান্না অসাধারণ। দুর্ঘটনার ঠিক ২০ মিনিট আগে ফারুক টেলিফোন করে বললো - “ভাই, আপনারতো এখন ছুটি চলে আসুন না আমাদের সাথে খাবেন”। আমি অমত করিনি। কিন্তু এর মধ্যেই ঘটে গেলো এই অঘটন।

হাসপাতাল থেকে আমি টেলিফোন করে ওদের সব জানালাম। আমার এক্সিডেন্টের কথা শুনই ওরা ট্যাক্সি নিয়ে হাসপাতালে চলে এলো আমাকে দেখতে আর ইমার্জেন্সি থেকে ছাড়া পাবার পর ওদের বাসায় নিয়ে গেলো। আমার নিষেধ সত্ত্বেও আমাকে ট্যাক্সি ভাড়া দিতে দিলনা। আয় ও সামর্থ্য অনুযায়ী, ট্যাক্সি ভাড়াটা ওদের জন্য ছিল বিলাসিতা। কিন্তু নিজেদের সামর্থ্যের সীমানা ডিঙিয়ে মানুষকে সাহায্য করার মানসিকতা দেখে আমি সত্যিই অবাক হলাম। নিঃশব্দ ধন্যবাদ জানালাম ফারুককে আর দোহা শহরের প্রবাসী মানুষকে। মনে হল - দোহা শহরে নিজেকে যতটা একা ভেবেছিলাম, ততটা একা আমি নই ..... (চলবে)




আগের পর্ব পরের পর্ব




আব্দুল্লাহ আল-মামুন, কাতার থেকে, মে ৩০, ২০১৭




Share on Facebook               Home Page             Published on: 2-Jun-2017

Coming Events:
বৃষ্টির সম্ভাবনার কারণে মেলার তারিখ ১ দিন পিছিয়ে ২১ এপ্রিল ২০২৪ (রবিবার) করা হয়েছে......




A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far