bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












এই লিংক থেকে SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন





কাতারের সুখ দুঃখ - ২
আব্দুল্লাহ আল-মামুন



আগের পর্ব পরের পর্ব


কাতারে আসার পর আমার অস্থায়ী ঠিকানা হল "আল-নাখিল" হোটেল। দোহা শহরের পুরনো এবং ব্যস্ততম মুশাইরিব এলাকায় এর অবস্থান। সিডনীর সাথে কাতারের সময়ের ব্যবধান হচ্ছে সাতঘন্টা! শরীরটা সময়ের এই বিশাল পার্থক্য যেনো মেনে নিতে চাইছেনা। খুব ভোরে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। হোটেলের জানালা দিয়ে অলস দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছিলাম বাইরের পৃথিবীটা। হোটেলের আশেপাশে গিজ্ গিজ্ করছে দোকানের সারি, রাস্তায় পথচারী ও গাড়ীর ভিড়, হর্নের শব্দ। রাস্তার উল্টোদিক দিয়ে দেখলাম বেশ ক’জন নির্বিকার বাইক চালিয়ে যাচ্ছেন আপন গন্তব্যে, বিশাল আকৃতির গাড়ীর গা ঘেঁষে। মনে হচ্ছিল এ যেনো চট্টগ্রামের জিইসি’র মোড়।

ভোর সাতটায় অফিসের ড্রাইভার রুমের দরজায় টোকা দিল। তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে অফিসে রওয়ানা দিলাম। হোটেলে থেকে অফিসের দূরত্ব মাত্র পাঁচ কিলোমিটার হলেও ট্রাফিকের ভিড় সরিয়ে অফিসে পৌছতে প্রায় ৩০ মিনিট লেগে গেলো। আমার অফিস হচ্ছে একটি বহুজাতিক কোম্পানি। অফিসের পরিবেশ, প্রটোকল, সবকিছু সাথে অস্ট্রেলিয়ার অফিস পরিমণ্ডলের তেমন বিশেষ কোনো পার্থক্য চোখে পড়লোনা। অফিসের ইঞ্জিনিয়ারদের অধিকাংশই ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডার মতো বিভিন্ন দেশে থেকে এসেছেন। সবাই ইংরেজিতেই কথা বলছেন। মনে হল খুব সহজেই খাপ খাইয়ে নেয়া যাবে। তবে অন্যান্য কর্মচারীর মধ্যে ফিলিপিন্স এবং ভারতের কেরালা রাজ্যের মারোয়াড়ীদের আধিপত্য চোখে পড়লো। অফিসের রিসেপশন, এইচআর এবং এডমিনে কয়েকজন আরবি ছাড়া একচেটিয়া ফিলিপিনো মহিলা কাজ করছেন। অন্যদিকে আমার বারোজন ড্রাফটিং স্টাফের মধ্যে দশজনই হল কেরালার অধিবাসী। আমার অফিসের কোথাও একজন বাংলাদেশী চোখে পড়লোনা। হতাশ হলাম।

অফিসে রয়েছে বেশ ক’জন টিবয়। সুন্দর পরিচ্ছন্ন ইউনিফর্ম পরে দিনে তিনবার চা ও কফি সরবরাহ করছে। এছাড়া প্রয়োজনে ফটোকপি করা, এমনকি বাইরে টুকিটাকি কেনাকাটা থাকলে তাও করে দেয়। এটা আমার জন্য নতুন অভিজ্ঞতা তাই বিষয়টি দারুণ লাগলো। আশি দশকের শেষের দিকে কথা। সিডনীতে প্রথম দিকে অফিস থেকেই চা/কফি সরবরাহ করা হতো। চা ঘরে যেয়ে আমরা নিজেরাই বানিয়ে খেতাম। কিন্তু কিছুদিন পর কৃচ্ছতা সাধনের নামে তাও বন্ধ করে দেয়া হল। কাতারের অফিসে নিজের চেয়ারে বসে টিবয়ের বানানো গরম গরম কফি ভীষণ উপভোগ করছিলাম। চা, কফি ছাড়া আরও রয়েছে টার্কিস কফি এবং আরবি কফি গাহওয়া। গাহওয়া কফি আরব এবং স্থানীয় কাতারিদের খুবই প্রিয়। এলাচ, লবঙ্গ পানিতে সেদ্ধ করে বানানো হয় এই কফি। ছোটো ছোটো কফি পটে করে গাহওয়া পরিবেশন করা হয়। আরবরা এ ধরনের কফি পটকে দাল্লা বলে থাকে। কফি ছাড়া অনেকে শুধু লাল চা খেয়ে থাকেন যা সুলেমানি নামে পরিচিত।

কাতারে আম-জনতার চলাচলের জন্য রয়েছে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট। ট্রান্সপোর্ট কোম্পানি পরিচালিত বাস ও ট্যাক্সিকে বলা হয় কারওয়া। বাস চলাচল শহরের কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় সীমাবদ্ধ। পর্যাপ্ত সংখ্যক বাস স্টেশন না থাকায় স্বীয় গন্তব্যস্থানে যেতে হলে অনেক সময় স্টেশন থেকে বেশ কিছুদূর হাঁটতে হয়। মধ্যপ্রাচ্যের প্রচণ্ড গরমে রাস্তায় হাঁটা আর উত্তপ্ত চুল্লীতে হাঁটা একই কথা। এছাড়া সকালে অফিস টাইমে চাহিদা যখন তুঙ্গে থাকে তখন ট্যাক্সি পাওয়া দুঃসাধ্য ব্যাপার। তাই শহরে যাতায়াতের জন্য গাড়ী ছাড়া কোনো গত্যন্তর নেই। অবশেষে রেন্ট-এ-কার থেকে গাড়ী ভাড়া নিতে হলো। ভাড়া মাসে ২২০০ রিয়াল (১ আমেরিকান ডলার = ৩.৬৪ রিয়াল)। ১.৮ লিটারের ছোট্ট NISSAN TIDA গাড়ী। অস্ট্রেলিয়ায় যে চড়া দামে পেট্রল কিনেছি সেটা তখনো মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। ভাবলাম ছোটো গাড়ী, পেট্রোলের খরচ কম হবে। গ্যাস স্টেশনে পেট্রোলের দাম শুনে হতবাক হয়ে গেলাম। সিডনী শহরে যেখানে ১.৭ ডলার করে পেট্রোল কিনেছি তা কাতারে লিটার প্রতি মাত্র ২৫ সেন্ট! বলে কি? এছাড়া তেলের দাম সরকার নিয়ন্ত্রিত তাই ওঠা-নামা করার যো নেই। প্রতিটি গ্যাস স্টেশনে একই দামে পেট্রোল কেনা যায়।

এখানে গ্যাস স্টেশনে নিজ হাতে পেট্রোল ভরতে হয়না। গাড়ীর ইঞ্জিন, এসি চালিয়ে সবাই দিব্যি গাড়ীর আসনেই বসে থাকে। টাকার গোছা হাতে নিয়ে অপেক্ষমাণ পেট্রল পাম্পের সেবকরা তেল ভরে দেয়। রাজকীয় ব্যাপারই বটে! কিন্তু নিরাপত্তার কথা ভেবে বিষয়টি আমার কাছে ভয়ংকর মনে হলো। গ্যাস স্টেশনে আসার পর চিরাচরিত অভ্যাস মতো আমি গাড়ী থেকে নেমে পড়লাম। আমাকে গাড়ী থেকে নামতে দেখে স্টেশনের সেবকের চোখে দেখলাম বিস্ময়। কিন্তু প্রচণ্ড গরম, তেল ও ধুলো-বালির তাড়া খেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে দম বন্ধ হয়ে আসছিলো। তড়িৎ গাড়ীর অভ্যন্তরে আশ্রয় নিলাম।

গাড়ীর পেট্রোল ট্যাংক ভরতে পকেটে টান পড়েনা বলে পাঁচ লিটার কিংবা তারও বেশী ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ল্যান্ডক্রজার, লেক্সাস, নিসান পেট্রোল, জিএমসির ইউকনের মতো দানবাকৃতির গাড়ীর দাপট দেখলাম কাতারের রাস্তায়। স্থানীয় কাতারিদের গ্যারেজে বিলাসবহুল গাড়ী ছাড়াও থাকে বহু জাতের ও রংয়ের গাড়ী। তবে প্রতিটি কাতারির যে গাড়ী থাকা চাই-ই তা হল টয়োটা ল্যান্ডক্রজার। এটা হচ্ছে কাতরিদের ট্রেডমার্ক গাড়ী। মরুভূমি এবং কাতারের দুর্গম অঞ্চলে যাতায়াতের জন্য টয়োটা ল্যান্ডক্রুজারের জুড়ি নেই। বাংলাদেশীদের সামর্থ্য হলে সাথে সাথেই তারা একটা ল্যান্ডক্রজার কিংবা লেক্সাস কিনে ফেলেন। এটা হচ্ছে কাতারের সামাজিক মর্যাদা এবং অবস্থানের প্রতীক।

কাতারের রাস্তায় গাড়ী চলে ডান দিকে। তার মানে ড্রাইভিং হুইল হচ্ছে গাড়ীর বাম দিকে। তাই কাতারে আসার পর গাড়ীর চালকের আসনে বসে সবকিছু উল্টো মনে হচ্ছিল। অস্ট্রেলিয়ান ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকার সুবাদে কোনোরকম রোড টেস্ট ছাড়া সহজেই কাতারি লাইসেন্স পেয়ে গেলাম। কিন্তু রাস্তায় নেমে দীর্ঘ দুই দশকের ড্রাইভিং অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও ভড়কে গেলাম। সহজাত অভ্যাসের কারণে ইন্ডিকেটরের বদলে বারবার ওয়াইপারে চাপ দিচ্ছিলাম। গাড়ী রাস্তার ডান দিকের kerb-এ ঠেকে যাচ্ছিল। ফলে কখন যে টায়ারের সর্বনাশ হয়ে গেছে তা টের পাইনি যার মাশুলও আমাকে পরে দিতে হয়েছে। কাতারে এসে জানলাম পৃথিবীর প্রায় ৮০ শতাংশ রাস্তায় গাড়ী চলে রাস্তার ডান দিকে। ব্রিটিশ রাজের সৌজন্যে অস্ট্রেলিয়া সহ গুটিকয়েক সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশগুলোতেই উল্টো নিয়মে গাড়ী চলছে।

একবার রাস্তায় নির্বিঘ্নে গাড়ী চালাচ্ছিলাম। লক্ষ্য করলাম আমার ঠিক পেছনে একটা বিরাট আকারের টয়োটা ল্যান্ডক্রুজার হাই বীম দিয়ে আমার গাড়ীর চুল বরাবর কাছে চলে আসছে আর আমার উদ্দেশ্যে অশুভ ইঙ্গিতে কিছু বলছে। পোশাক দেখে মনে হল গাড়ীর চালক স্থানীয় কাতারি। আমি নিশ্চিত আমি ঠিকই আছি এবং আমার গাড়ীর গতিও নিয়ন্ত্রণে। তবে সমস্যাটা কোথায়? ওকি তবে পুলিশ? এক পর্যায়ে ওই গাড়ীটা আমাকে ওভারটেক করে সাঁই করে আমার গাড়ীর সমুখে এসে আকস্মিক ব্রেক কষে দাঁড়িয়ে পড়ল। আমি ভাগ্যগুণে ওই গাড়ীকে পেছন থেকে প্রায় ধাক্কা দিতে দিতে বেঁচে যাই। গাড়ীটি দশ সেকেন্ড পর গজ গজ করতে করতে স্পীডে চলে গেলো। এই ঘটনায় আমি বিস্মিত হই। অফিসে সহকর্মীদের সাথে কথা বলার পর ব্যাপারটা খোলাসা হল। আমি রাস্তার বাম লেনে ধীর গতিতে গাড়ী চালাচ্ছিলাম আর সেটা হচ্ছে কাতারের দ্রুত লেন। বুঝতে অসুবিধা হলনা কেন সেই কাতারি চালক এতোটা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিল। এমন পরিস্থিতিতে কাতারিদের হাতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হবার ঘটনাও শুনলাম। মনে হলো এ যাত্রায় বেঁচে গেলাম।

হোটেলের অদূরেই দাঁড়িয়ে আছে বিশাল মসজিদ। ঠিক পাশেই হচ্ছে মোবাইল ফোন ও অন্যান্য সামগ্রীর মার্কেট সুক নাজাদাও ও সুক বারাহা। আরবিতে সুক শব্দের মানে হল মার্কেট। বিকেলে ঘুরতে গিয়ে মার্কেটে চোখে পড়ল বাংলাদেশী চুলকাটার সেলুন, দোকানের নাম বাংলায় লেখা। দোহা শহরের ৮০ ভাগ সেলুন ব্যবসা বাঙালীর হাতে। বাংলাদেশী সেলুন দেখে দোকানে ঢুকে পড়লাম। দোকানের মূল পরিচালক হচ্ছেন লিটন। সাথে তার ছোট ভাইও সেলুনে কাজ করছে। এদের বাড়ী হল নোয়াখালী। খুব একটা ইচ্ছে না থাকলেও পরিচিত হবার বাহানায় চুল কাটার জন্য বসে গেলাম। প্রকৌশলী ও অস্ট্রেলিয়া থেকে এসেছি শুনে আরও বাড়তি মনোযোগ পেলাম। কাতারে পশ্চিমা দেশের পাসপোর্টধারী শিক্ষিত বাঙালীর সংখ্যা নাকি হাতে গোনা। চুল কাটার পর দেখি লিটন দু’হাতে মাথা বানানো শুরু করলো। লিটনের মাথা বানানোর কসরত দীর্ঘদিন পর দেশের সেলুনের কথা মনে করিয়ে দিল। মাথা বানাবার এক পর্যায়ে আমার ঘুমই এসে যাচ্ছিল। সবশেষে এবার ঘাড়ের মটকা ফোটানোর পালা। দোহার এই নাপিত শিল্পী এক হাতে চুলের মুঠো ধরে অন্য হাত আমার থুতনিতে রেখে ঘাড়ে বেসামাল মোচড় দিচ্ছিলেন। আমার ডান দিকটা সহজে সাড়া দিলেও বাঁদিকটা কোন মতেই যখন বাগে আসছিলনা তখন লিটন মরিয়া হয়ে উঠলে আমি তাড়াতাড়ি তাকে থামতে বললাম। কারণ এক পর্যায়ে মনে হচ্ছিল আমার ঘাড়ই বোধহয় মচকে গেল।

হোটেলে যতদিন ছিলাম, প্রায় ওদের দোকানে বসে দু’জনের সাথে আড্ডা দিতাম। ওরা খুবই ভালো মানুষ। আমি যখনই গিয়েছি তখন পাশের দোকান থেকে চা এবং নাস্তা এনে আমাকে আপ্যায়ন করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়তো। চা খাবার সময় আলাপের ফাঁকে ফাঁকে লিটন তার হৃদয়ের গভীরে জমিয়ে রাখা অনেক না বলা কথার ডালি আমার কাছে মেলে ধরতো। ওর কথা শুনতে গিয়ে আমার মনটা নিজের অজান্তেই ভিজে উঠতো।

একটি সুন্দর এবং সমৃদ্ধ জীবন গড়ার প্রত্যয় নিয়ে মাতৃভূমি ছেড়ে সুদূর কাতারে পাড়ি জমিয়েছেন লক্ষ বাংলাদেশি। এখানে অনেকেই কুড়ি থেকে ত্রিশ বছরেরও বেশী সময় ধরে বসবাস করছেন। তবে অধিকাংশ প্রবাসী মানুষ সময়ের খেয়া তরীতে চড়ে একাই পাড়ি দিচ্ছেন প্রবাস জীবন। কারণ বাড়ী ভাড়া দিয়ে পরিবারের ভরন-পোষণ করার মতো সামর্থ্য না থাকলে কর্তৃপক্ষ দেশ থেকে পরিবার আনার অনুমতি দেয়না। আমার অফিসের কয়েকজন ড্রাফ্টম্যান-এর ভিসা ক্যাটাগরি দেখলাম ইঞ্জিনিয়ার। বিস্মিত হলাম। ওরা বললো, "স্যার অনেক মাথাকুটে ইঞ্জিনিয়ার ভিসা যোগাড় করে এসেছি। না হলে পরিবার নিয়ে আসার অনুমতি কখনোই পাবোনা।"

কাতার প্রবাসী বাংলাদেশিদের নব্বই শতাংশ হলেন খেটে খাওয়া শ্রমিক এবং অল্প বেতনের চাকুরে। ওদের বেতন এতোই সামান্য যে দেশ থেকে নিজের পরিবার কাতারে নিয়ে আসার অনুমতি পাওয়া অলীক স্বপ্নই বটে। অনেক বাংলাদেশি, তরুণ বয়সে আরব সাগর পাড়ি দিয়ে পা রেখেছেন কাতারের উপকূলে। পরবর্তীতে তারা সংসারী হয়েছেন। নব-বধূর সাথে অল্প সময়ের জন্য খুনসুটি, ভালোবাসার পর্ব শেষ করে আবার চলে এসেছেন প্রবাসে। অনেকে হয়েছেন বাবা। কিন্তু পৃথিবীতে সন্তান আগমনের সেই দুর্লভ সময়ে স্ত্রীর পাশে গিয়ে দাঁড়াতে পারেননি। দেখতে পাননি নবজাতকের প্রিয় মুখ। হাঁটি হাঁটি পা করে বড় হয়েছে সন্তান। টেলিফোনের ওপার থেকে কেবল বাবা ডাক শুনেই প্রবোধ দিয়েছেন মনকে কিংবা নীরবে ভেসেছেন চোখের জলে। এভাবে দেশে ফেলে আসা প্রিয়জনদের সাথে সমান্তরাল রেখায় কেটে যায় তাদের জীবন।

কাতারে সরকারী কর্মচারীদের অবসর নেয়ার বয়স হচ্ছে ৬০ বছর। তবে ষাট পেরুবার পর কন্ট্রাক্টের সময়সীমা আরও বাড়বে কিনা তা নির্ভর করে বসের সাথে সুসম্পর্ক, এবং কর্মক্ষেত্রে কর্মচারীর মূল্যায়ন ইত্যাদির উপর। বেসরকারী খাতে অবসর নেয়ার কোনো সময়সীমা নেই। স্পন্সর ও কোম্পানি চাইলে আপনি যতদিন ইচ্ছে কাতারে থাকতে পারবেন। কাতার, সৌদি আরব সহ অন্যান্য দেশে স্থায়ীভাবে নাগরিক হয়ে থাকার কোনো সুযোগ নেই। যেমনটি রয়েছে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া সহ অন্যান্য উন্নত দেশে। নিজের হাড়ভাঙ্গা শ্রম, মেধা ঢেলে দিয়ে প্রবাসী জনগোষ্ঠী গড়ে তুলছে কাতার। জীবনের শ্রেষ্ঠ দিনগুলো মরুর বুকে কাটিয়ে দেবার পরও একদিন সবকিছু পেছনে ফেলে রেখে পাততাড়ি গুটিয়ে তাদের চলে যেতে হয় এদেশ ছেড়ে। যতদূর জানা যায়, পঞ্চাশ দশকের দিকে চট্টগ্রামের টেকনাফ এলাকা ও সিলেট থেকে কিছু বাংলাদেশি কাতার পাড়ি দিয়েছিলেন। তারাই কিছুদিন পর কাতারের নাগরিকত্ব পান। বেশভূষা, কথা শুনে এদের এখন স্থানীয় কাতারিদের থেকে আলাদা করে চেনা মুশকিল। তবে এর কিছুদিন পরই নাগরিকত্ব দেয়া বন্ধ করে দেয়া হয়।

বহু প্রবাসী বাংলাদেশী, দেশে ভালো কিছু খাড়া করতে পারলে সহসা কাতারের পাট চুকিয়ে ফিরে যান দেশে; পথপানে চেয়ে থাকা প্রিয়তমা স্ত্রী, আদরের সন্তান, স্নেহময়ী পিতা-মাতার কাছে। কেউবা আবার কৈশোর, যৌবনের তেজোময় দিনগুলো কাটিয়ে প্রৌঢ়ত্বের দোরগোড়ায় এসেও কাতারে থাকেন পড়ে। অনেকে আবার ওপারের ডাকে সাড়া দিয়ে কাতার থেকেই পাড়ি দেন না ফেরার দেশে। হিমশীতল কফিনে লাশ হয়ে নোঙর করেন শাহজালাল বিমান বন্দরে।

লিটনের কথায়, গল্পে ছড়িয়ে থাকে অদ্ভুত এক বিষাদ আর সেই বিষাদের যন্ত্রণা থেকে মুক্তির আকুতি। লিটনের গভীর কষ্ট-কথন কাতারের খেটে খাওয়া পরিশ্রমী মানুষগুলোর সাথে আমার এক অচ্ছেদ্য সেতু রচনা করে দিচ্ছিল। আমার বিদীর্ণ হৃদয়, প্রবাসী মানুষগুলোর কাছে যেনো নিবিড় সান্ত্বনা খুঁজে পেলো........(চলবে)




আগের পর্ব পরের পর্ব




আব্দুল্লাহ আল-মামুন, কাতার থেকে, অক্টোবর ১৩, ২০১৬




Share on Facebook               Home Page             Published on: 24-Oct-2016

Coming Events:
বৃষ্টির সম্ভাবনার কারণে মেলার তারিখ ১ দিন পিছিয়ে ২১ এপ্রিল ২০২৪ (রবিবার) করা হয়েছে......




A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far