bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia













সিডনির প্রথম নিউজ পোর্টাল:
‘বাঙলা-সিডনি’র সাফল্যের কুড়ি বছর!
ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন



আজ বাঙলা-সিডনির অগ্রযাত্রার দুই দশক পূর্ণ হল। একুশতম জন্মদিনে বাংলা-সিডনিকে জানাই প্রাণঢালা অভিনন্দন। ২০০৩ সালের ১২ই মার্চ আন্তর্জালে বাংলা-সিডনি নামে যে পোর্টাল শিশু ভূমিষ্ঠ হয়েছিল তা আজ কুড়ি বছরের দুরন্ত যুবক। আমি খুব ভাগ্যবান যে একজন পাঠক হিসাবে বাংলা-সিডনির শৈশব থেকে যৌবনে বেড়ে উঠা যেমন দেখেছি, তেমনি একজন লেখক হিসাবেও এই ডিজিটাল পত্রিকার সাথী হতে পেরেছি। বিভিন্ন সময়ে অনিয়মিতভাবে লেখা ছাড়াও আমার কাতার প্রবাসী জীবনের দিনলিপি ধারাবাহিকভাবে বাংলা-সিডনির পাতায় তুলে ধরেছি, যা পাঠক সমাদৃত হয়েছে। জীবন ও জীবিকার টানে প্রায় একযুগ অস্ট্রেলিয়া ছেড়ে প্রবাসে থাকলেও দ্বিতীয় আবাস সিডনির সাথে আমার নাড়ীর বন্ধন অটুট রেখেছে এই বাংলা-সিডনি।

ইদানীং অন্তর্জলে ও ফেসবুকের পাতায় বেশ কিছু সিডনি ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল চোখে পড়ে। কিন্তু একটা সময় ছিল যখন কয়েকটি কমিউনিটি রেডিও, মাসিক পত্রিকা ও প্রয়াত নুরুল আজাদের প্রতিষ্ঠিত “স্বদেশ বার্তা” পত্রিকা ছাড়া আন্তর্জাল-ভিত্তিক কোনো নিউজ পোর্টাল ছিলনা। নব্বই দশকের প্রথম দিকে ম্যারিকভিলস্থ 2RSR FM88.9 কমিউনিটি রেডিও স্টেশন থেকে “তরঙ্গ মালা” নামে একটি বাংলা অনুষ্ঠান আমি চালু করি। তবে কমিউনিটি রেডিওর সমস্যা হচ্ছে সম্প্রচারের পরিসর সীমিত হওয়ায় সিডনির বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাঙালি শ্রোতারা রেডিওতে প্রচারিত অনুষ্ঠানমালা শুনতে পেতেন না। কমিউনিটির খবরা-খবর জানার জন্য সবাইকে কখন পত্রিকা বেরুবে সেই অপেক্ষায় থাকতে হত। তাই অন্তর্জলে বাঙলা-সিডনির আগমন সবার জন্য বয়ে এনেছিল আনন্দের বার্তা ও স্বস্তি। প্রিন্ট মিডিয়ার পাশাপাশি বাংলা-সিডনি একটি নতুন ধারা তৈরি করেছিল। যা খুব কম সময়ের মধ্যে প্রাণবন্ত ও পাঠক প্রিয় এক অনলাইন পোর্টাল হয়ে ওঠে।

বাংলা-সিডনির অন্যতম কৃতিত্ব হচ্ছে নতুনদের লেখার সুযোগ তৈরি কর দেয়া। প্রতিভা রয়েছে অথচ কখনো পত্রিকায় লিখার সাহস করেননি এমন বহু লেখকদের জন্য একটি চমৎকার প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দিয়েছে বাংলা-সিডনি, যা সত্যিই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য।

যার হাত ধরে বাংলা-সিডনির যাত্রা, তিনি হলেন আনিসুর রহমান। পেশায় আইটি বিশেষজ্ঞ। দীর্ঘদিন ধরে অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষ দৈনিক পত্রিকা সিডনি মর্নিং হেরাল্ডে কাজ করেছেন। সাংবাদিকতার মূলমন্ত্র বুকে ধারণ না করলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে নিউজ মিডিয়ার কাজ করলেই কেউ সাংবাদিক হয়ে উঠতে পারেন না। তবে আনিসুর রহমান হলেন একজন ব্যতিক্রম। পেশাদার সাংবাদিক না হয়েও সংবাদ পরিবেশনে তাঁর সততা, বন্তুনিষ্ঠতা ও দায়বদ্ধতা বহু প্রতিষ্ঠিত পেশাদার সাংবাদিকদেরও হার মানিয়েছে।

নব্বই দশকের শেষের দিকের কথা। প্রকৌশল পেশার পাশাপাশি আমি এসবিএস রেডিওর বাংলা অনুষ্ঠানের একজন সাংবাদিক হিসাবে যোগদান করি। বাঙালি কমিউনিটিতে বাঙলা-সিডনির জনপ্রিয়তা তখন তুঙ্গে। একবার সাক্ষাৎকার নেয়ার জন্য সম্পাদক আনিসুর রহমানকে এসবিএস রেডিওর স্টুডিওতে আমন্ত্রণ জানাই। আলাপচারিতার এক পর্যায়ে তাঁর নিউজ পোর্টালের জনপ্রিয়তার কারণ জানতে চাইলে তিনি বললেন, ”আমার পোর্টালে সিডনির বাঙালি কমিউনিটির খবর, ও স্থানীয় লেখকদের লেখাই প্রাধান্য পায়। দেশ-বিদেশের খবর জানার জন্য অন্তর্জলে তো রয়েছে হাজারো পোর্টাল। আর মতের অমিল কিংবা ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ কখনোই সম্পাদক হিসাবে আমাকে প্রভাবিত করেনা”। বাঙলা-সিডনির জন্য কাজ করতে গিয়ে আনিসুর রহমানকে অনেক প্রতিবন্ধকতারও মুখোমুখি হতে হয়েছে। তবে তিনি হার মানেননি। অত্যন্ত বিচক্ষণতা ও সততা সাথে কাজ করে তিনি বাংলা-সিডনিকে পাঠকদের ভালোলাগার কাছাকাছি নিয়ে গেছেন।

আনিসুর রহমান হলেন ওয়ান ম্যান ব্যান্ড। ওয়েবসাইট ডিজাইন ও ম্যানেজম্যান্ট, সম্পাদনা, কমিউনিটির কর্মকাণ্ডের সংবাদ পরিবেশন ইত্যাদি সবকিছুই করেন এক হাতে। এছাড়া সময় সময় কমিউনিটির অনুষ্ঠানগুলোর ভিডিও ও স্থিরচিত্র ধারণ করে পোর্টালে প্রকাশ করেন। সংসার, চাকুরী, সবকিছু সামলে একজন মানুষ এতকিছু কিভাবে করেন, জানিনা।

একজন লেখকের পরম নির্ভরতার জায়গা হচ্ছে বাংলা-সিডনি ও আনিসুর রহমান। বাংলা সিডনিতে দেয়া প্রতিটি লেখা আনিসুর রহমান খুব মনোযোগ দিয়ে পড়েন। কোনো কিছুই তাঁর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি এড়িয়ে যায়না। বানান ভুল, লেখায় বাক্য গঠনে অসামঞ্জস্যতা কিংবা তথ্যগত কোনো ত্রুটি থাকলে তিনি সাথে সাথে লেখকের সাথে যোগাযোগ করে তা শুধরে নেন। অথচ এ ধরণের অনেক ভুল-ত্রুটির দায়ভার সম্পাদক চাইলে খুব সহজেই লেখকের উপর চাপিয়ে দিতে পারেন।

আনিসুর রহমান একজন সজ্জন, উদ্যমী আর সৃজনশীল ভাবনার মানুষ। সর্বোপরি তিনি একজন সুলেখকও বটে। তাঁর লেখার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তিনি খুব অল্প কথায়, সহজ সরল কথার মালা দিয়ে সাজিয়ে নিজের ভাবনাগুলোকে তুলে ধরতে পারেন। সময়ের অভাবে উনি নিজের পোর্টালে নিয়মিত লিখতে পারেন না। তবে যা লিখেন তা খুব সহজেই পাঠকদের হুদয় ছুঁয়ে যায়।

আনিসুর রহমানের নিজের তোলা অরাইয়ন নেবুলা'র
(Orion Nebula) ছবি।
মহাবিশ্বতত্ত্ব, কৃষ্ণগহ্বর, গ্যালাক্সি ইত্যাদি নিয়ে আমার উৎসুক্যের শেষ নেই। এ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় আমি সময় সময় লেখা-লেখিও করে থাকি। একদিন আনিসুর রহমানের সাথে আলাপ করতে গিয়ে জানতে পারি একই বিষয়গুলো নিয়ে তাঁর কৌতূহলের কথা। তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যা, কোয়ান্টাম তত্ত্ব, নভোবস্তুবিদ্যা নিয়ে তিনি নিয়মিত পড়াশুনা করেন এবং এসব বিষয়ে পরিষ্কার ধারণাও রাখেন। আনিসুর রহমানের বাড়ীর বারান্দায় আবার রয়েছে একটি অত্যাধুনিক টেলিস্কোপ। যা দিয়ে তিনি নিয়মিত আকাশ পর্যবেক্ষণ করেন, গভীর রাতে আকাশের উঠোনে লুকিয়ে থাকা নক্ষত্রমালা ও গ্যালাক্সি খুঁজে বেড়ান।

বাঙলা-সিডনি কেবল একটি নিউজ পোর্টালই নয়, এ হচ্ছে সিডনির বাঙালি কমিউনিটির টাইম ক্যাপসুল। বাংলা-সিডনির আর্কাইভের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে আছে সিডনির বাঙালি কমিউনিটির কর্মযজ্ঞ ও সুখ-দুঃখের সাতকাহন। তাই বাংলা-সিডনি চালু রাখা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায় শুধু একজন আনিসুর রহমানের নয়, আমাদের সবার।

কুড়ি বছর পেরিয়ে এসে বাঙলা-সিডনি আজও তার জনপ্রিয়তা ধরে রেখে এগিয়ে চলেছে। বাঙলা-সিডনির পথচলা প্রবহমান ও নিষ্কণ্টক হোক এই প্রত্যাশা ও শুভ কামনা।








Share on Facebook               Home Page             Published on: 11-Mar-2023

Coming Events:

Blacktown Lakemba Mascot







Blacktown Lakemba Mascot