ক্যানবেরায় আলাপনের “লীভ মি এলোন” লাভলী মোস্তফা
মূল চরিত্রে মৌসুমী এবং মোস্তাফা | বাংলাদেশ হাইকমিশান অফ অস্ট্রেলিয়া ২৫শে মার্চের কালরাত্রি স্মরণ দিবসটি আয়োজন করেছিল গত ২৪ মার্চ ২০১৯ সন্ধ্যায় ক্যানব্যরাস্থ গাঙ্গালিন কলেজ থিয়েটারে। গণহত্যার সূচনার এই বিষাদ সন্ধ্যায় হাই কমিশনের আমন্ত্রণে যোগ দিয়েছিলো সিডনির নাট্য সংগঠন আলাপন এর নাটক “লীভ মি এলোন”। এই নাটকটি মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলেছে - যে যুদ্ধ শুধু মাঠে ময়দানে হয়নি। যুদ্ধ হয়েছে মানুষের মন আর মননে। মানুষ জীবন দিয়েছে, সম্ভ্রম দিয়েছে আর কষ্টের কাব্য দিয়ে লিখেছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস।
নাটক শুরুর আগে ২৫ মার্চ কালরাত্রি নিয়ে প্রথমে বক্তব্য রাখেন মাননীয় হাই কমিশনার। তারপর মঞ্চস্থ হয় “লীভ মি এলোন” নাটক।
আলাপন প্রবাসে শুদ্ধ নাট্য চর্চার রীতিটি শুরু করতে চায়। তাই একটি নাটকের একাধিক প্রদর্শনী তাদের সেই প্রত্যয়কে আরো দৃঢ় করে। এই দলটি প্রতিমাসে “লীভ মি এলোন” নাটকের মঞ্চায়ন করার চেষ্টা করছে। ষোল বছর আগে এই নাটকটি সিডনি, ক্যানবেরা এবং মেলবোর্ন এ মঞ্চায়িত হয়েছিল। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে পরিবর্তন হয়েছে। বদলেছে মানুষের চিন্তা। তাই ষোল বছর পরও নাটকে প্রবাসে বেড়ে উঠা বর্ণা'র সংলাপ বদলিয়েছে। নাটকটি আবার নতুন করে সাজানো হয়েছে। আমরা নাট্যকার জন মার্টিনকে জিজ্ঞেস করি, “এই নাটক তো ষোল বছর আগে লিখেছিলেন। তাহলে এখন কেন নতুন করে সংলাপ জুড়ে দিলেন?” নাট্যকার হেসে বলেন, “এটাই তো মঞ্চ নাটকের ম্যাজিক। মঞ্চ নাটক তো আর টেলিভিশনের নাটক নয় যে একবার রেকর্ডিং হলে আর বদলানো যাবে না। মঞ্চ নাটকে সময়টিকে তুলে ধরা যায়। তাই এর প্রতিটি প্রদর্শনী এক নয়। প্রতি মঞ্চায়নে চরিত্র গুলো একই ভাবে সংলাপ নাও বলতে পারে।” নাটক নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা বললেন, “লীভ মি এলোন নাটকটি এখনো প্রাসঙ্গিক। এখনো মানুষের মন ছুঁয়ে যায়। এ নাটক নিয়ে যতবার মঞ্চে উঠি প্রত্যেকবার মনে হয় অভিনয় নয়, যেন কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে নিজের গল্প গুলো বলে যাচ্ছি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে।” মৌসুমী বললেন, “এটাতো নাটক নয়। এগুলো আমাদের গল্প। আমাদের দ্রোহের কথা। বার বার বলেও মনের ক্ষোভ শেষ হয় না। আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ কবে তৈরি হবে? আমরা সিডনিতে মানুষের ভেজা চোখ দেখেছি। এবার ক্যানবেরাতেও তাই দেখলাম। আমাদের নাটক মানুষের মন ছুঁয়ে গ্যাছে।” ক্যানবেরা শো শেষে মান্যবর হাই কমিশন বললেন, “নাটকটি আমি আগেই পড়েছি। তখন কাঁদিনি। কিন্তু নাটকটি দেখে আমার চোখ ভিজে গ্যাছে। আলাপনকে আমাদের ধন্যবাদ এমন অসাধারণ একটি নাটক উপহার দেবার জন্য।” ডেপুটি হাই কমিশনার ভেজা চোখ নিয়ে বললেন, “আলাপন আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করেছে। এই নাটকটি আমাদের মন ছুঁয়ে গ্যাছে।”
আর সাধারণ দর্শক যারা কান্না চেপে রাখতে রাখতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন, তারা যেন সবার সাথে কথা বলতে পেরে স্বস্তি পেলেন। জানালেন তাদের ভাল লাগার কথা।
মাননীয় হাই কমিশনার আলাপনকে একটি স্বারক উপহার দিলেন; আলাপন দিল তাদের নাটকের পোস্টার। পঁচিশে মার্চের কালো রাত্রির এই স্মরণ সভা একাত্তরের স্মৃতিতে ভারী হয়ে উঠলো। নাটক শেষে অনেক দর্শক এসে জানতে চাইলেন ক্যানবেরাতে আবার কবে এই নাটকের মঞ্চায়ন হবে। নাটকের মঞ্চ অধিকর্তা জানালেন যে ক্যানবেরা-বাসি নিমন্ত্রণ করলেই আলাপন আবার এসে মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলবে।
নাটকে অভিনয় করেছে গোলাম মোস্তফা, মৌসুমী মার্টিন, অদিতি শ্রেয়া, মীর সাদেক, মিতুল হক। শব্দ নিয়ন্ত্রণ এলভিন সৌর, আবহ সংগীত করেছে লাভলী মোস্তফা, মঞ্চ সামগ্রীর দায়িত্বে ছিলেন লারিনা নূপুর, মঞ্চ ব্যবস্থাপনা করেছে লরা এবং ঋষিতা। নাটকটি লিখেছেন এবং নির্দেশনা দিয়েছেন জন মার্টিন।
লাভলী মোস্তফা, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া
|