সিডনি ল্যাংগুয়েজ ফেস্টিভাল
নাদির হোসেনঃ গত ৮ই অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১২ টায় সিডনির শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত কোরিয়ান কালচার সেন্টারে, ল্যাংগুয়েজ ফেস্টিভাল এসোসিয়েশন এবং এমএলসি মুভমেন্টের যৌথ উদ্যোগে দিনব্যাপী আয়োজিত ল্যাংগুয়েজ ফেস্টিভালে, ক্রমাগত ভাষার বিলুপ্তিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সকলকে সচেতন হওয়ার আহবান জানানো হয়েছে।
আলোচক-গন বলেন "আপনাকে এখনি বিপন্ন ভাষা রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে অন্যথায় অদূর ভবিষ্যতে আপনাকে এই সকল ভাষার পুনরুদ্ধারের জন্য কর দিতে হবে"।
ভাষাতত্ত্ববিদেরা আশংকা প্রকাশ করে বলেছেন আগামী ১০০ বছরের মধ্যে পৃথিবী থেকে প্রায় ৩০০০ হাজার এর মত ভাষা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। ১০০ বছরে ৩০০০ ভাষার বিলুপ্তি মানেই প্রতি এক মাসে অবলুপ্ত হতে চলেছে দুইটি করে ভাষা। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, একটি ভাষার পুনরুদ্ধারের জন্য বছরে ১ লক্ষ ডলারের প্রয়োজন। পৃথিবীর ৩০০০ হাজার বিলুপ্ত প্রায় ভাষার জন্য তিন বছর এ পরিমাণ অর্থ খরচ করতে প্রয়োজন ৯০ কোটি ডলার।
নামের দিক থেকে বাংলা ভাষার কাছাকাছি নামের আরেকটি ভাষা হচ্ছে বাংগালা। এটি দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ান বাংগালা আদিবাসীদের একটি ভাষা যা ১৯৬০ সালে বিলুপ্ত হয়ে যায়। বর্তমানে এই গোত্র থাকলেও এই ভাষায় কেউ কথা বলতে পারে না। বাংগালার মত আরো কয়েকশত ভাষা ইতিমধ্যে অস্ট্রেলিয়া থেকে হারিয়ে গেছে।
আলোচকরা আরো বলেন "গবেষণায় দেখা যায়, ভাষা হারিয়ে যাওয়ার ফলে ঐ জাতির মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে যা সব শ্রেণীর মানুষ জন্য দুশ্চিন্তার কারণ।"
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অ্যাডেলেড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্রখ্যাত ভাষাতত্ত্ববিদ মার্ক জুকারম্যান, এছাড়া আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মাদার ল্যাংগুয়েজ কনসার্ভেশন ইন্টারন্যাশনাল এর নির্বাহী পরিচালক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ইনাম হক, ল্যাংগুয়েজ ফেস্টিভাল এসোসিয়েশন প্রকল্প পরিচালক রিচার্ড ডেলমর, জেনারেল ম্যানেজার দিমিত্রি লাশনেকভ, এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কলামিস্ট ডঃ রতন কণ্ডু, হোসেন মোঃ মহসিন, অভিজিত রায়, আব্দুল আউয়াল, শাপলা তিথন পাল এবং মিষ্টি তিথন পাল।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও সেমিনারের পর দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলে বিভিন্ন ভাষার উপর পর পরিচিতি মূলক আলোচনা ও বর্ণমালা প্রদর্শনী। এবারের মেলায় অস্ট্রেলিয়ান আদিবাসী ভাষা, ভেলা, ইসরাইলী, ফ্রেঞ্চ, হিব্রু, পর্তুগিজ, রাশিয়ান, ইউক্রেনিয়ান, কিলিক্ন, কোন্ল্যাগ্নস, উর্দু, হিন্দি, এসপারেন্টো এবং বাংলার উপর পরিচিত মূলক পাঠচক্রের আয়োজন করা হয়। বাংলা ভাষার উপর পরিচিতি মূলক ক্লাসটি পরিচালনা করেন জনাব মাসুদ।
বিকাল পাঁচটায় শুরু হয় বহু ভাষাভাষী কনসার্ট। এতে ইউক্রেনিয়ান এবং রাশিয়ান ক্লাসিকাল গান পরিবেশন করে ডুয়েট মিলান ও তার দল। আদিবাসী সঙ্গীত পরিবেশন করেন মাইকেল। তুর্কি সঙ্গীত পরিবেশন করে সিরমা এবং মুরাট ।
বাংলাদেশি কমিউনিটির পক্ষ থেকে বিশিষ্ট সংগঠক, সামাজিক সংগঠন রংধনুর সাধারণ সম্পাদক ওহাব মিঞার নেতৃত্বে তারা এই কনসার্টে অংশগ্রহণ করে। প্রথমেই সালাম সালাম হাজার সালাম সকল শহীদ স্মরণে গানটি কয়েক লাইন পরিবেশন করে মঞ্চে আসেন প্রবাসের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী রুহুল আমিন এরপর তিনি পরিবেশন করেন "আমার প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ"। দুটো গানই মন জয় করেছে অন্য ভাষাভাষীদের।
"ঝুন ঝুন ময়না" গানের সাথে একক নৃত্য পরিবেশন করেছে শিশু শিল্পী অপ্সরা । এরপর পরই তালহা, কুমকুম, শার্লি, নূরা, বর্ষণ এবং তৌসিফ দলগত ভাবে পরিবেশন করে "ভাষার জন্য জীবন" শীর্ষক নৃত্য-নাট্য; নাচ এবং গানের তালে তালে ফুটিয়ে তোলা হয় বায়ান্নর ভাষার আন্দোলনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট। নৃত্যটিতে সার্বিক পরিচালনায় ছিলেন তামান্না। অস্ট্রেলিয়ান পরিবেশে বেড়ে ওঠা এই সব ছোট্ট শিশুদের অসাধারণ পরিবেশনায় অন্য ভাষাভাষী দর্শক এবং শিল্পীরা বিস্ময় প্রকাশ করে। তারা বাংলাদেশি অভিভাবক এবং সামাজিক সংগঠন রংধনুর প্রশংসায় মেতে ওঠেন। সবশেষে এ্যাসিরিয়ান ব্যান্ডের অসাধারণ কিছু গানের মধ্য দিয়ে শেষ বহু ভাষাভাষীর এই মিলন মেলা।
|