bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












এই লিংক থেকে SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন



দোয়েলের চোখে কুকাবারা (৮)
“ব্লু -মাউন্টেইন, কাটুম্বা”
কাজী লাবণ্য



আগের পর্ব পরের পর্ব



ঝলমলে ছুটির দিনে সকাল সকাল আমরা সাথে খাবার, পানীয়, ছাতা ইত্যাদি নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম। আজকের ‘মিশন’ ব্লু -মাউন্টেইন এবং আশপাশ। গন্তব্যে গিয়ে আমরা মিলিত হব অভিদের সাথে, ওরাও এই সিডনী শহর থেকেই যাবে। আজ ড্রাইভিং সিটে রাফেদ। স্টিয়ারিং এর সামান্য এদিক ওদিকে লীলাবতীর ঝাড়ি শুনতে শুনতে আর পথের দু’ধারের অভূতপূর্ব সৌন্দর্য দেখতে দেখতে আমরা গ্রেট ওয়েস্টার্ন হাইওয়ে ধরে ছুটে চললাম কাটুম্বার দিকে।

সিডনীর পশ্চিমে অলিম্পিক পার্ক থেকে প্রায় ৮০/৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বিস্তৃত পর্বতমালার নাম ব্লু মাউন্টেইন। গত জনমে এবরিজিনদের দেয়া অন্য নাম ছিল কিনা জানিনা বর্তমান নাম – ‘ব্লু -মাউনন্টেইন’। আমাদের বান্দরবনের ‘নীলগিরি’ র মত। এখানেই আছে তিন শৃঙ্গ বিশিষ্ট একটা পাহাড় যা ‘থ্রি সিস্টার্স’ বা তিন বোন নামে পরিচিত। মূলত এই ‘থ্রি সিস্টার্স’ আমাদের আজকের দর্শনীয় স্থান।

জ্যামিসন ভ্যালির বিস্তীর্ণ সবুজ উপত্যকায় সু প্রাচীন একটি পাহাড় পানি, বাতাস, এবং কালের কারণে ক্ষয়ে ক্ষয়ে তিন মাথার আকৃতি নিয়েছে যাদের তিন বোন বলা হয়ে থাকে। বড়বোনের নাম মিহনী (Meehni) মেঝো উইমলা (Wimlah) এবং গানেডু (Gunnedoo) ।

৪০ হাজার বছরের পুরনো অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের পৌরাণিক কাহিনীতে এই তিন বোনের গল্প পাওয়া যায়। যা অনেকটা এরকম-

জ্যামিসন ভ্যালিতে বাস করত ‘কাটুম্বা’ এবরজিন বা আদিবাসী আর নেপিয়ান নদীর ওপারে বাস করত ‘নেপিয়ান’ আদিবাসী। নেপিয়ান তিন ভাই প্রেমে পড়ে কাটুম্বা উপজাতির তিন বোনের। কিন্তু কোন গোত্রই এই প্রেমকে স্বীকৃতি না দেয়ায় তিন ভাই অপহরণের সিদ্ধান্ত নিলে এই বিষয়কে কেন্দ্র করে দুই গোত্রের মধ্যে লেগে যায় ধুন্ধুমার যুদ্ধ। যেমন যুগে যুগে প্রেমের জন্য লড়াই হয়েছে পৃথিবীর সকল জায়গায় সকল মানুষের মধ্যে। হেলেনের জন্য ধ্বংস হয়েছে ট্রয়।
প্রেম বলতে প্রথমত পৃথিবীতে বিচরণকারী নরনারীর একের প্রতি অন্যের রহস্যাতীত আকর্ষণ বোধ এবং অপূরণজনীত কারণে অসুস্থতাকে বুঝায়। বিশ্বের প্রতিটা প্রেম কাহিনী অভিন্ন। প্রেমিক হৃদয়মাত্র ব্যাখ্যাতীত বেদনায় মথিত। আগুনের আকর্ষণে আত্মাহুতি দেয়ার নামও তো প্রেম।
এক অমর অজর প্রেম কাহিনী- পারসিক রাজকুমার খসরু আর আর্মেনীয় রাজকুমারী শিরিন এই দুজনকে ঘিরে রচিত হয়েছে চিরকালীন বিয়োগান্তক প্রেম-গাথা। ঘটনা পরম্পরায় পরবর্তীতে আসে ফরহাদ নামে অশান্ত হৃদয় এক ভাস্কর বা পাথর খোদাইকর, সৌন্দর্য পিয়াসি যুবক এক পলক দেখামাত্র তুমুল প্রেমে পড়লেন অনিন্দ্য সুন্দরী শিরিনের। নানান জটিলতায়, সংকটে, প্রাণের বিনিময়ে চলে এই প্রাচীন ইরানী লোকগাথা।
ইতিহাসের অন্যতম অমর প্রেম-গাথার নাম মার্ক অ্যান্টনি-ক্লিওপেট্রা, শেক্সপিয়ার এই জুটিকে নিয়ে বলেছিলেন- “Great loves demands sacrifices”.

প্রেম কাহিনীর কথা উঠলে সবার আগে যাদের নাম উচ্চারিত হয় তারা হলো- ‘লাইলি-মজনু’ - স্বর্গীয় প্রেমের প্রতীক মানা হয় এই জুটিকে।

দুই উপজাতির মধ্যে যুদ্ধ চলাকালীন কাটুম্বা গোত্রপ্রধান নিজ ক্ষমতা প্রয়োগে গোত্রের তিন কন্যাকে পাথুরে পাহাড় বানিয়ে রাখলেন, ভাবলেন যুদ্ধশেষে আবার মনুষ্য-রূপ দান করবেন কিন্তু যুদ্ধে তিনি নিজেই প্রাণ হারালে ঐ তিন বোনের প্রাণ ভোমরা আজও পাহাড়-বন্দীই থেকে গেছে।

ব্লু-মাউন্টেইন একটি বিস্তীর্ণ পর্বতমালা, যতদূর চোখ যায় উঁচুনিচু পাহাড় আর পাহাড়। পুরো এলাকাজুড়ে অনেক নিচুতে ইউক্যালিপটাস এর বন মাঝে মাঝে সঘন সবুজ ট্রিফার্ণ, একেবারে রাক্ষুসে সাইজের, সেগুলি এত বিশাল আর বিস্তৃত...
অসংখ্য ইউক্যালিপটাস নিঃসৃত একধরণের বাষ্প বা গ্যাসের উপস্থিতে দূর থেকে এই পাহাড়কে হালকা নীলাভ লাগে আর পাহাড়ের গায়ে মেঘের ছায়া পড়লে অদ্ভুত নীল দেখা যায়, এজন্যই হয়ত এ পাহাড়ের নাম ‘ব্লু-মাউন্টেইন’।



১৮৭২ সালে জনব্রিটি নামে এক ভদ্রলোক কাটুম্বায় কয়লার সন্ধান পান। আমরা থ্রি-সিস্টারস দেখে আমরা চলে গেলাম কয়লা খনি দেখতে। এখানে পাহাড়ের অনেক নিচুতে একটি পরিত্যক্ত কয়লাখনি আছে যেটি দর্শন করা এক মজার অভিজ্ঞতা বটে। এটি ১৯০৩ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। পাহাড়ের উপর থেকে খাড়া নেমে গেছে এক রেলপথ যার নাম বর্তমান নাম সিনিক রেলওয়ে। ১৯৯৭ সালে গিনেসবুকে এটি রেকর্ড হয় সর্বোচ্চ খাড়া রেলপথ হিসেবে। ৪১৫ মিটার খাড়া পথ। অদ্ভুত খেলনা ট্রেনের মতো এক ট্রেনে চেপে দর্শনার্থীরা শাঁই শাঁই করে নিচে নেমে যায়। নিচে খনির একটি জানালা আছে ভেতরে দেখা যায় আগুনের শিখা। বাইরে রেলের যে ট্রলিতে করে কয়লা উত্তোলন করা হতো তা সাজিয়ে রাখা হয়েছে পর্যটকদের জন্য। আছে পিতলের তৈরি ঘোড়া। এই সব ঘোড়া দিয়ে খানি থেকে কয়লা টেনে ওপরে তোলা হতো।



এখানে আরো আছে স্কাইওয়ে, ক্যাবলওয়ে এবং ওয়াকওয়ে। প্রথমে আমরা রেলওয়েতে চড়ে শাঁ করে নিচে নেমে দেখে এলাম পরিত্যক্ত খনি। এরপরে এক এক করে উঠলাম স্কাইওয়ে এবং ক্যবলওয়েতে। শূন্যে ঝুলে ঝুলে দেখলাম প্রকৃতির নয়নাভিরাম দৃশ্য। পৃথিবীটা সত্যিই অধরা সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি, যা কেবল হাতছানি দেয় কিন্তু ধরা দেয়না... একথা স্বীকার করতে করতে আমরা আবার ঘরের পথে...

(চলবে...)



আগের পর্ব পরের পর্ব




কাজী লাবণ্য, ঢাকা থেকে




Share on Facebook               Home Page             Published on: 27-Nov-2018

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far