bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












এই লিংক থেকে SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন



দোয়েলের চোখে কুকাবারা (৭)
জীবনের সঞ্চয়ে রোজ মেরি
কাজী লাবণ্য



আগের পর্ব পরের পর্ব



ভাত-ফোটার মতো সপ্রাণ কৌতূহল আর বুকে জড়ানোর এক অনির্বাণ ঢেউকে দমাতে না পেরে ইচ্ছেডানায় উড়াল দিলে জীবন যেন পেল এক অন্য মাত্রা। ঝরাপাতা নয়, যেন সবুজ কুশির উচ্ছ্বাস, যেন প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে সৃষ্টির আদিমাতা হাওয়ার প্রথম পদক্ষেপ।

ঘুরছি-বেড়াচ্ছি, বেড়াচ্ছি উত্তর থেকে দক্ষিণে পূর্ব থেকে পশ্চিমে। পাহাড়, সাগর, নদী, উদ্যান, মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা থেকে শপিংমলে। জগতের আনন্দ যজ্ঞে সকলের নিমন্ত্রণ। এমনকি আমারো!

বেড়াতে বেড়াতে যা কিছু আমার দেশের মত যা কিছু আজন্ম পরিচিত তা দেখেও অবাক হই, মনভরে দেখি, চোখভরে দেখি, ক্যামেরার চোখে আরো আরো দেখি। সেই দেখতে গিয়ে দেখা পেলাম এক অসমাপ্ত গল্পের।

ফিরছিলাম উলংগং থেকে অসাধারণ এক টেম্পল ও ফলস দেখে। (Nan Tien Temple Wollongong) . সিডনি থেকে ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণে এই উলংগং শহর। এখানে রয়েছে একটি বৌদ্ধমন্দির যেটি তৈরি হয় ১৯৯৫ সালে। এটি মহায়ানা বৌদ্ধদের। ভেতরে একটি টেম্পল ও একটি প্যাগোডা আছে। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে সবুজে ছাওয়া সেই প্রাঙ্গণের মনমাতানো সৌন্দর্য মুগ্ধ হয়ে দেখার মতো। আমরা টেম্পল এবং প্যাগোডা দুটোরই অভ্যন্তরে গিয়েছিলাম, অর্থাৎ তারা ঢুকতে দিয়েছিল। বুদ্ধের অসংখ্য ছবি সংবলিত, গাছপালা বেষ্টিত টেম্পল ও প্যাগোডা দেখা শেষে ফিরছিলাম...



এখানকার অনেক এলাকাজুড়ে প্রায় প্রতিটি বাসার সামনে অন্যান্য গাছের সাথে ফুলে ফুলে উপচে পড়া চাঁপা গাছ আছে। কামিনীও আছে, আসার পর থেকেই মুগ্ধতা ও বিস্ময় নিয়ে দেখে যাচ্ছি। ভাবি এই চাঁপা বা কামিনী এখানে এলো কি করে! এগুলি তো আমাদের উপমহাদেশের নিজস্ব ফুলগাছ।
তুলব তুলব করেও এখানকার চাঁপার সাথে ছবি তোলা হচ্ছে না। ব্যাংকস টাউন এলাকায় গাড়ি থামিয়ে ছবি তোলার শখ পূরণে নেমে গেলাম। ছবির মতো দেখতে একটি বাড়ির সামনে ছবি তুলছি, বয়সী বটের মতন দুজন নারী এলেন –

-এই ফুল যেমন সুন্দর তেমনি এর স্মেইল। খুব চমৎকার। ছবি তুলছ! তোলো তোলো... আমিও একমত হয়ে ওদের ভাষায় হু হা করে দায়সারা উত্তর দিয়ে আবার তাকাই ফুল ও ক্যামেরার দিকে। তারা কিছুটা এগিয়ে গিয়ে ফের ফিরে এসে বলে-



-শোন, এ গাছটার চেয়ে দেখ ঐ গাছটায় বেশী ফুল আর বেশী সুন্দর। তাকিয়ে দেখি দুটো গেট পরেই গাছটি আসলেই পরিপূর্ণ সৌন্দর্য মেলে দাঁড়িয়ে আছে। ধন্যবাদ দিয়ে পা বাড়াতে যাব তাদের কৌতূহল-
-তুমি কি বেড়াতে এসেছ? visitor?
-হ্যাঁ
-কোন দেশ থেকে? এদেশ তোমার কেমন লাগছে? কবে এসেছ? উঠেছ কোথায়? জানালাম...
-আমাদের দেশ কিন্তু খুব চমৎকার, তাইনা?
-ওহ! নিশ্চয়ই!
-ও তোমার কি হয়?
-আমার সন্তান। অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে দুজনের দিকে তাকিয়ে আবার হেসে ফেলে-
- Are You joking! তুমি মজা করছ?
-“না”। এবারে আমি হাসি থামিয়ে সিরিয়াস মুখে বলি ও আমার সন্তান। সেও সমর্থন জানায় হ্যাঁ, আমার মা।
দুই নারী এবারে হাসির ঝংকার ছড়িয়ে এমন উচ্ছ্বসিত আর আনন্দিত হয়ে ওঠে- বলার মত না। দুজনেই এগিয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে আদর করে।
... তুমি এত ইয়াং, এত সুন্দর...এত ফ্রেন্ডলি... বলতে বলতে ঠোঁটের মাঝে একটু থুতু এনে- নিজ তর্জনীতে লাগিয়ে আমার কপালে, গালে, গলায় ছুঁয়ে দেয় আর আমার মুহূর্তটা যেন বদলে যায়! আনমনা হয়ে ওঠে! হঠাত করেই আমি যেন স্মৃতিভ্রংশ হয়ে পড়ি, মনে হয় কোথায় দাঁড়িয়ে আছি, সামনে কি আমার মা খালা নাকি অন্যকোন আত্মার আত্মীয়!
একজন জড়িয়ে ধরেই থাকে আর জলের মত ঘুরেঘুরে একই কথা বলে তুমি আমার মেয়ে, তুমি আমার মেয়ের মত, আসলে তুমি আমার মেয়েই...
আমার মনে হয়- আমার মা, আমার দাদী, নানী, ঠাকুমা, পিসিমা তাদেরই কেউ একজন আমাকে কোন ‘বদ নজর’ যেন না লাগে সেজন্যই এই ‘রক্ষাকবচ থুতুর’ স্পর্শ।
এরপর বেশ খানিকটা গল্প হয়...
তারা তাদের বাসায় যাবার জন্য আন্তরিক আহ্বান জানায়। বার বার দরোজার দিকে আঙ্গুল তুলে অনুরোধ করে- এসো একটু বসে কফি খেয়ে যাও। কি জানি, ইচ্ছে করল খুব তবুও গেলাম না। ঐযে কোথায় যেন এক পেন্ডুলাম তাড়া দিতে থাকে সময় নেই! সময় নেই! সে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে-
-“যে কোনদিন, যেকোন সময় তুমি আমার কাছে চলে আসবা। এইযে দরোজা মনে রাখবা”...
শুরু থেকেই তার শার্টের খোলা বোতাম কাঁপা হাতে আটকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছিলেন- আমি হাত বাড়িয়ে যত্নে তা লাগিয়ে দিলাম-যেন আমার মায়ের ম্যাক্সির জিপারের মত, তিনি আরো ব্যাকুল হয়ে আমায় জড়িয়ে ধরে চুমুর পর চুমু খেতে থাকলেন সারা মুখে... নিয়ন্ত্রণে রাখা আমার ভেতরটায় চিড় ধরল- টইটুম্বুর শান্ত জলের প্যারামাট্টা নদী যেন উতল হয়ে গেল!

ভাষা, গাত্রবর্ণ, বয়স, পোশাক, ভৌগলিক দূরত্ব সব ভেসে যাক সেই জলে... রোজ আর মেরির কুড়িয়ে পাওয়া এই অপাত্য স্নেহ পরমাবেশে তুলে রাখি পাঁচসিকে জীবনের সঞ্চয়ের ঝুলিতে...
ফেরার পর বাসায় এসে মনটা বিষণ্ণ হয়ে যায়...
কেন! জানিনা। (চলবে...)


(অলিম্পিক পার্ক, ৬-০১-১৮)



আগের পর্ব পরের পর্ব




কাজী লাবণ্য, ঢাকা থেকে




Share on Facebook               Home Page             Published on: 11-Nov-2018

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far