bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












এই লিংক থেকে SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন



দোয়েলের চোখে কুকাবারা (২)
সসেজ এন্ড এগ ম্যাকমাফিন
কাজী লাবণ্য



আগের পর্ব পরের পর্ব



নাহ জেট ল্যাগ এখনও কাটেনি। বায়োলজিক্যাল ক্লকের নির্দেশে এখানকার অনেক বেলা অবধি ঘুম পায়, যখন কিনা এখানে অগ্নি স্ফুলিঙ্গের মতো জীবন ফুটতে শুরু করে টগবগ করে। কন্যার হাঁকডাকে উঠে দ্রুত ড্রেস পরে নেই, মাকে নিয়ে ম্যাকে সকালের নাস্তার পরিকল্পনা। ওদের দুটো বাইসাইকেল আছে, কন্যার ইচ্ছে সাইকেলে চেপে দুজনে যাই। যতই বলি আমি চালাতে পারিনা, সে ততই বলে- না তুমি পারবা, ভুলে যাওনি চালানো, কেউ-ই ভোলেনা...কি বলি এই অবোধ (শিশু) কে!

বেশ ক’বছর আগে যখন রাজশাহীতে ছিলাম তখন সেখানকার জলবায়ু বা আমার ফুডহ্যাবিট যে কারণেই হোক ভয়াবহ এসিডিটিতে আক্রান্ত হই। বহুদিন ধরে ভুগি এবং দীর্ঘ ট্রিটমেন্ট চলে। এরপর চিকিৎসকের পরামর্শে আমি এখনও দিনে দুটি করে অমিপ্রাজল খাই আর ‘বেছে’ খাই। মাঝে মাঝে বাছতে বাছতে গা উজাড় হওয়ার মত আমার খাদ্যতালিকাও উজাড় হওয়ার দশা হলে তখন কাঁধ ঝাঁকিয়ে মনে মনে বলি যা হয় হবে খেয়ে নেই- এই ভেবে খেয়ে ফেলি পছন্দের বা প্রয়োজনের খাদ্যদ্রব্য। তখন আবার কদিন ভুগি, অসম্ভব কষ্ট হয়, আবার সুস্থ হই এভাবেই চলে জীবন। দেশ ছাড়ার পর এখন পর্যন্ত একটি ট্যাবলেটও খাইনি। কিন্তু মেয়ের চাপাচাপিতে সব ধরনের খাবার খাচ্ছি। আমার সামান্যতম অসুবিধাও হচ্ছেনা। মনে মনে ভাবছি- “ইটস আ মিরাক্যল”। কিন্তু আসলে কি তাই! সত্যিই মিরাক্যল! এই শব্দ কেবল ডিকশনারি ছাড়া বাস্তব জীবনে আছে কি! কেবল আমাদের দেশের অসাধু কিছু মহাজন, ব্যবসায়ী, বিক্রেতাদের লোভের জন্য সব ধরনের খাবারে ক্ষতিকর ভেজালের কারণে আমাদের নানাবিধ অসুস্থতা। আহারে! আমার সোনার দেশের সোনার মানুষ! সকাল বেলাতেই এসব নাস্তা আমার এসিডিটি বাড়াবে কিনা, তোয়াক্কা না করে বেড়িয়ে পড়লাম মাতা কন্যায়...আর সঙ্গে সঙ্গে সুখপাখিটি মনের আনন্দে ডাকাডাকি শুরু করে দিলো...

১৮৯৬ সালে ১৪টি দেশের মাত্র ২৪১জন ক্রীড়াবিদ নিয়ে যে অলিম্পিকের যাত্রা শুরু হয়েছিল, বর্তমানে দুই শতাধিক দেশের অংশগ্রহণে মুখরিত এই অলিম্পিক গেমস বিশ্বের সর্ববৃহৎ এবং সর্বোচ্চ সম্মানজনক প্রতিযোগিতা হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে। এই আসর চার বছর পর পর অনুষ্ঠিত হয়। ২০০০ সালের অলিম্পিক অস্ট্রেলিয়ার সিডনি শহরের এই অলিম্পিক পার্কে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেসময় এই আসরকে কেন্দ্র করে এখানে গড়ে উঠেছিল অসংখ্য স্থাপনা। তার মধ্যে - টেনিস সেন্টার, শোগ্রাউন্ড, বিশাল একোয়াটিক সেন্টার, বড় বড় পার্কিং ভবন, আন্ডারগ্রাউন্ড রেলস্টেশন, কয়েকটি স্টেডিয়াম, বিভিন্ন হোটেল যেমন পুলমেন, নভোটেল, আইবিস ইত্যাদি। এর মধ্যে ANZ স্টেডিয়াম নামে ৮৫ হাজার মানুষের ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন স্টেডিয়ামটি শুধু স্থান সংকুলানের দিক থেকেই নয় সার্বিক বিবেচনায় বিশ্বের অন্যতম ইভেন্ট ভেন্যু হিসেবে স্বীকৃত।

মাথার পনিটেইল দুলিয়ে, কেডসের লম্বা পা ফেলে ফেলে পৌঁছে গেলাম গন্তব্যে। অলিম্পিক পার্ক আন্ডারগ্রাউন্ড রেলস্টেশন পাশেই এই ম্যাকডোনাল্ডস। রিচার্ড ম্যাকডোনাল্ডস এবং মরিস ম্যাকডোনাল্ডস নামের দু’ভাই যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াতে ‘ম্যাকডোনাল্ডাস’ নামের রেস্টুরেন্ট চালু করেন যা এখন বিশ্বের সর্ববৃহৎ রেস্টুরেন্ট চেইন। সারাবিশ্বে এর ৩৫ হাজার শাখা রয়েছে। বহু ধরনের খাদ্য সম্ভার, মজাদার এবং স্বাদে-গন্ধে এর আবেদনের কারণে এটি বিশ্বের আবালবৃদ্ধবনিতার কাছে অসম্ভব জনপ্রিয়। যখন আপনি মনে মনে ভাবছেন কিছু খাবারের কথা, ডানে বামে বা সামনে তাকালেই দেখবেন হলুদ বর্ণের এম লেখা যার নিচে লাল প্লেটের উপরে McDonald’s ছোট বড় হাতের ইংরেজি লেটারে লেখা সাইনবোর্ড।

ম্যাকডোনাল্ডাস থেকে সসেজ এন্ড এগ ম্যাকমাফিন, হ্যাস ব্রাউন, ফ্রেঞ্চফ্রাই, কফি ইত্যাদি নিয়ে ওখানে বসে না খেয়ে চলে গেলাম একটা সবুজ ছাওয়া পার্কে, সেখানে পরিচ্ছন্ন সিঁড়িতে বসে গেলাম। এখানে চারপাশে অসংখ্য গাঢ় সবু্জ ঘাস বিছানো পার্ক রয়েছে, যার কোনটাতে বিনোদন, বাচ্চাদের নানা ধরনের খেলার ইকুয়েপমেন্ট, রাইড, এমনকি ব্যায়াম করার ব্যবস্থাও আছে। আমাদের আশপাশে ছড়িয়ে রইল- সুবিশাল খোলামেলা মাঠ, সতেজ বাতাস আর ঘুরঘুর করতে লাগল কিছু ঘুঘু, হ্যাঁ একেবারে বাংলার খাঁটি ঘুঘু। কেবল এরা বেশি নাদুস নুদুস আর নির্ভীক। জিজ্ঞেস করলাম- ‘তোমাদের পূর্বপুরুষ কি আমার বাংলাদেশ থেকে এসেছিল? হিজলের ডালে বসে ডাকিতেছিল যারা তোমরা কি তাদেরই ধারাবাহিকতা? তোমাদের নিয়ে সবচেয়ে বেশি কাব্য করেছেন যে কবি তোমরা কি তাঁর নাম শুনেছ! বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান এই কবিকে বাংলাভাষার “শুদ্ধতম কবি” হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়, তাঁর এই লাইনগুলি নিয়ে কি তোমরা গান বেঁধেছ’!

“পৃথিবীর সব ঘুঘু ডাকিতেছে হিজলের বনে
পৃথিবীর সব রূপ লেগে আছে ঘাসে
পৃথিবীর সব প্রেম আমাদের দুজনের মনে
আকাশ ছড়ায়ে আছে শান্তি হয়ে আকাশে আকাশে”

নধরকান্তি বিহঙ্গরা খাবারগুলি খুঁটিয়ে খেতে থাকে আর আমি যেন তাদের জবাব গুলি শুনতে পাই -
বাংলা সাহিত্যের প্রহেলিকাময় এই মানুষটি বলেছেন- জাগতিক কিছু পাওয়া না পাওয়ার বাইরেও আমাদের কারো কারো রক্তের ভেতর এমন একটা বোধ আছে, যা আমাদের ভেতর থেকে ক্ষয় করতে শুরু করে, ক্লান্ত করতে শুরু করে। কি সেই বোধ? তিনি তার নাম দিলেন “বিপন্ন বিস্ময়”। অশ্বত্থ বৃক্ষের নিচে বসে বুদ্ধ যেমন নির্বাণ আবিষ্কার করলেন, জীবনানন্দও যেন বোধিপ্রাপ্ত হয়ে বললেন- “যে জীবন ফড়িঙের, দোয়েলের মানুষের সাথে তার হয়নাকো দেখা”

বিহঙ্গের কথামালার উত্তরে আমি কেবল বলি...

কবিদের কষ্টের চেয়ে ভারী কোন পদার্থ নেই,
তারা কথার মালায় সেই কষ্টকে উপহারের ডালায়
সাজাতে চায় বারংবার, নির্মোহ ফুল হয়ে ফোটে
রূপকে, ছন্দে, গানে, বীণায় এস্রাজের তারে
যুগযুগ জেগে থাকে, মনে মননে অজস্র জটিলতায়।

আমি আবার শুনতে পাই-

-‘হায় চিল, সোনালি ডানার চিল, এই ভিজে মেঘের দুপুরে
তুমি আর কেঁদো নাকো উড়ে উড়ে ধানসিঁড়ি নদীটির পাশে
তোমার কান্নার সুরে বেতের ফলের মতো তার ম্লান চোখ মনে আসে
পৃথিবীর রাঙা রাজকন্যাদের মতো সে যে চলে গেছে রূপ নিয়ে দূরে
আবার তাহারে কেন ডেকে আনো? কে হায় হৃদয় খুঁড়ে
বেদনা জাগাতে ভালোবাসে’!

সম্বিৎ ফিরে পাই, তাইতো! কে হায় বেদনা জাগাতে ভালোবাসে! জীবন ছড়িয়ে রেখেছে হীরক দ্যুতির আনন্দযজ্ঞ, তুমি কেবল সন্ধান কর তার। আমার সুখপাখিটি গেল কই!

নাস্তা শেষে, গাছগাছালি ঘেরা সবুজ ময়দানে ওদের রেখে চলে এলাম। ফেরার পথে দেখলাম জলপানের সুব্যবস্থা। এখানে ট্যাপের জলই সবাই পান করে, নিজেও করছি, অনভ্যস্ত আমার কোন সমস্যাই হচ্ছেনা। আমাদের দেশের বকুল ফুলের মত অসংখ্য গুল্ম পথের দুপাশে, ফুল দেখলামনা, কিন্তু পাতা আর গাছের আকৃতি দেখে আমার কাছে মনে হলো বকুলই, আর বকুল না হলেও এরা যে বকুলেরই আপন বোন একথা নিশ্চিত।

চওড়া রাস্তা, পথচারী কম, গাড়িগুলি গিজগিজ করা নয় বা হরেকরকম যানবাহনও নেই, যেমন রিকশা, ভ্যান, লেগুনা, সিএনজি আর রাস্তায় কোন হর্ন নেই, কোন গাড়িই সাধারণত হর্ন বাজায়না। কোন গাড়ির উদ্দেশ্যে হর্ন বাজানো মানে সে গাড়ি বা তার চালককে অনেকটা অপমান করা। আর পথচারী পারাপারের কী চমৎকার আধুনিক ব্যবস্থা... চমৎকার সুষ্ঠ ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও কন্যা আমার হাত ধরে এপারে নিয়ে আসে, জনম সার্থক ভেবে মনে মনে বলি- ঢাকা শহরের ভয়ংকর জ্যাম, কঠিন চৌরাস্তা, কিংবা গহীন নির্জনতায় সর্বদা আমি একাই পারাপার করি মা, আর এখানকার এই সুষ্ঠু ব্যবস্থায় তুমি আমার হাত ধর... আহ! চোখে কি যেন হয়েছে, আসার পর থেকে মিছেই দুচোখ ভিজে ওঠে বারবার (চলবে...)



আগের পর্ব পরের পর্ব



কাজী লাবণ্য, ঢাকা থেকে




Share on Facebook               Home Page             Published on: 8-Oct-2018

Coming Events:
বৃষ্টির সম্ভাবনার কারণে মেলার তারিখ ১ দিন পিছিয়ে ২১ এপ্রিল ২০২৪ (রবিবার) করা হয়েছে......




A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far