bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












এই লিংক থেকে SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন



ধুপশিখা / কাজী লাবণ্য



আগের অংশ


আমি আগা গোঁড়াই একটু তফাতে দাঁড়িয়ে বা বসে বসে সব অবলোকন করে যাচ্ছিলাম। না ইচ্ছে করে বিশেষ কিছু দেখার জন্য নয়, আমার বৈশিষ্ট্য বা স্বভাবটাই এমন। অনেক কিছুতেই আমার খটকা লাগলেও আমি কাউকে কিছু বলতে পারিনা, আবার করতেও পারিনা। একদম ছোটবেলা থেকেই আমি এরকম। অনেক বড় হবার পর আমি বুঝতে পেরেছি ব্যাপারটা কিন্তু তার অনেক আগেই আব্বা বুঝতে পেরেছিলেন এবং আমাকেতো নয়ই কাউকে না জানিয়ে আব্বা ডাঃ এর পরামর্শ মত নিজের বুদ্ধি বিবেচনা মত আমার সাথে প্রতিটি আচরণ করেছেন, আগলে রেখেছেন, কেউ যেন আমায় অন্যরকম কিছু মনে না করে সেজন্যে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রেখেছেন। তিনি চাননি পরিবার, সমাজ বা পৃথিবী আমাকে আলাদা ভাবে চিহ্নিত করুক বা আলাদা ভাবে ট্রিট করুক। সে সময় এই ব্যাপারে কোনরকম জন সচেতনতা বা সুচিকিৎসা গড়ে উঠেনি, তারপরও আব্বা খুঁজে খুঁজে ঢাকা শহরের কোন এক ডাঃ এর পরামর্শ নিয়েছেন এবং অনেক খুঁজে এর উপর একটি বই কিনেছেন যদিও সেটি ইংলিশে লেখা ছিল। অংকে ভালো ছিলাম বলে কোনরকমে মাস্টার্স কমপ্লিট করতে পেরেছি, আসলে আমি কি করেছি! আব্বাই হাতে ধরে করিয়েছিলেন। আবার নিজের এক বিধবা বোনের মায়াবতী একটি মেয়ের সাথে বিয়ে-শাদি দিয়ে আমার জীবনটাকে স্বাভাবিক একটা গতি এনে দিয়েছেন। অনেক বড় হবার পর আব্বার সংগ্রহের প্রচুর বইয়ের মাঝে সেই বইটি পেয়েছিলাম সেটি পড়তে গিয়েই আমি বুঝে যাই আমার ব্যাপারটা, অবশ্য আমি নিশ্চিত জানিনা আমার সমস্যা সেটাই ছিল কিনা। সেখানে অনেক লেখায় লাল কালিতে আন্ডারলাইন করা ছিল, পাশে আব্বার নিজের হাতের কিছু নোটও ছিল। বইটিতে লেখা ছিল-

“অটিজম কোন সাধারণ রোগ নয়। এটি শিশুদের একটি মনো-বিকাশগত জটিলতা যার ফলে সাধারণ ৩টি সমস্যা দেখা দেয়। যেগুলি হচ্ছে-

প্রথমতঃ মৌখিক কিংবা অন্য কোন প্রকার যোগাযোগ সমস্যা।

দ্বিতীয়তঃ সামাজিক বিকাশগত সমস্যা।

তৃতীয়তঃ খুব সীমাবদ্ধ ও গন্ডিবদ্ধ জীবন যাপন ও চিন্তা ভাবনা এবং পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ। এ ছাড়া অতি চাঞ্চল্য, জেদি, বা আক্রমণাত্মক আচরণ, অহেতুক ভয়ভীতি, খিঁচুনি ইত্যাদি থাকতে পারে।

১৯৪৩ সালে জন হপকিন্স হাসপাতালে ডাঃ লিও কান্নের এবং প্রায় একই সময়ে জার্মান বিজ্ঞানী ডাঃ হ্যান্স এস্পারজার রোগটি সম্বদ্ধে বিস্তারিত জনসমক্ষে উপস্থাপন করেন। তার আগে রোগটি থাকলেও এ সম্বদ্ধে তেমন কোন ধারনা ছিলনা। অটিস্টিক শিশুরা সামাজিক সম্পর্ক তৈরি করতে এবং সঠিক আচরণ করতে ব্যর্থ হয়। তাকে নির্দিষ্ট সামাজিক পরিস্থিতিতে প্রত্যাশিত আচরণের শিক্ষা দিতে হয় নিয়মিত। এদের সংবেদী ক্ষমতা অনেক সময় ভালো থাকে না। উৎসব বা জনসম্মুখে যেখানে শত শত মানুষ কথা বলে লাউড স্পিকার বাজে জোড় শব্দে এসব তার কাছে দুর্বিসহ হতে পারে, কেননা সে হয়ত অতি শ্রবনসংবেদি। এরা অনেক সময় কথার আক্ষরিক অর্থই বোঝে, অন্য অর্থ থাকলেও তা ধরতে পারে না। অটিস্টিক শিশুর সঙ্গে বাগধারা, প্রবচন, প্রহসন, দ্ব্যর্থবোধক শব্দ ব্যবহার না করে সরাসরি সহজ ভাষায় কথা বলা ভালো”

টুলে বসে বসেই আমি দেখলাম- আব্বাকে গোসল দেবার পর পর্দাঘেরা জায়গা থেকে কেউ একজন উচ্চস্বরে বলে উঠল- গা মোছার তোয়ালে বা গামছা কই?

এ ওর মুখের দিকে তাকাতে লাগল, আব্বার চার পুত্রবধূ বারান্দায় জটলা বেঁধে দাঁড়িয়ে রইল-

বাড়ির পুরনো আম্মার সহকারী মেয়েটি এক দৌড়ে আব্বার ঘরের দরজায় তারে ঝুলানো বহুল ব্যবহিত প্রায় ক্ষয়ে আসা গামছাখানি এনে গোসলকারির হাতে দিল- ধরা গলায় বলল-

-এইটা নানার গামছা...

আমার বিস্ময় কাটেনা- এ বাড়ির ড্রয়ার, আলমিরা, সুটকেস, খুললে কত শত নতুন তোয়ালে গামছা রয়েছে, কেউ একটা নতুন তোয়ালে এনে দিল না!

গোসল শেষে আবার হাঁক ডাক লাশ ঢেকে রাখতে হবে পরিষ্কার কাপড় কই!

কারো কোন সাড়া শব্দ নেই!

একটু পর মা নিজেই ঘর থেকে বহু পুরনো একটি কাশ্মীরী শাল এনে দিল, বলল-

-এটি পরিষ্কার।

আমি জানি ওটি ধোয়া পরিষ্কার। আব্বা প্রতি শীতে এই চাদর গায়ে দিতেন এবং শীত শেষে মা সেটি ধুয়ে ইস্ত্রি করে ন্যাপথলিন দিয়ে তুলে রাখতেন। সেটি বড় ট্রাংকের ভেতর শুয়ে শুয়ে পরের শীতের জন্য অপেক্ষা করত। আমার যতদূর মনে পরে আমার বোধ হবার পর থেকেই আব্বার গায়ে এই চাদর দেখে এসেছি যা এখন আর নিজস্ব বর্ণে নেই।

মনে হল- বাড়ীতে কত নতুন চাদর, বেডকভার আরো কত কিছু আছে কেউ একজন ছুটে গিয়ে নিয়ে এসে বলল না এটা দিয়ে আব্বাকে ঢেকে রাখ।

এই তবে জীবন! আব্বা এত কিছু করলেন সারা জীবন, এত সংগ্রাম করলেন দুনিয়ার মানুষের জন্য, পরিবারের জন্য, এত কৃচ্ছসাধন, এত লড়াই! এ্যাবনরমাল এক সন্তানকে কিভাবে জগত সংসারে স্বাভাবিক প্রতিষ্ঠা দিলেন! এত কিছু তবে কার জন্য! যা রেখে গেলেন তাই বা কার জন্য! হায় নশ্বর জীবন!

আমি জানিনা। আমি আসলেই কিছু জানিনা। বিবমিষায় আমার অন্তর যেন নিমতিতা হয়ে গেল। আমার মাথা এলোমেলো হয়ে গেল!

আচ্ছা রাত এখন কত? আমার হাতে ঘড়ি নেই। বাড়ির সব দরোজাই বন্ধ, কেবল মায়ের দরোজা একটু ফাঁক, সিডেটিভ ঘুমের ঘোরেই মা মৃদু গোঙানোর শব্দ করছেন, এছাড়া আর কোথাও কোন শব্দ নেই।

একটা খালি চৌকিতে আব্বা শুয়ে আছেন। সেই বিবর্ণ চাদরে আপাদমস্তক ঢাকা। হুজুর এবং বড় ভাইয়েরা মিলে অতি দ্রুত বাঁশ পুঁতে উপরে ছাউনি দিয়ে একটি সাময়িক চালা তৈরি করেছে এর নিচেই আব্বাকে রাখা হয়েছে। প্রায় ৯০ বছর এই গ্রহের পথপ্রান্তরে হেঁটে হেঁটে আমার অক্লান্ত আব্বা অবশেষে কাল চলে যাবেন অজানা এক ঠিকানায়...

আমি কি ক্লান্ত! আমি কি শোকাহত! আমি কি কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ করছি! না সেসব কিচ্ছু নয়। কেবল এক সীমাহীন হাহাকার আমায় গিলতে লাগল, আমার জলহীন, নিদ্রাহীন চোখ কেমন যেন জ্বালা করতে লাগল...

রাতের চরিত্র দেখেই বোঝা যাচ্ছে ভোর হতে আর বাকি নেই, সকাল হলেই সবাই মিলে আব্বাকে নিয়ে যাবে কবরে। আমি উঠে আস্তে আস্তে পুরো বাড়িটা হাঁটলাম, এল শেপের বারান্দা ঘুরে সব ঘরের দরোজায় একটু করে থামলাম। পৃথিবী গহীন ঘুমে নিমগ্ন। পুরো বাড়ি পরিক্রমা শেষে আমি আব্বার পাশে এসে দাঁড়ালাম। একবার চৌকির নিচে উঁকি দিলাম। ভেতরের অনুভূতি ব্যক্ত করার মত বিচক্ষণতা আমার নেই, আর দশজন মানুষের মত বুদ্ধিমান বা চৌকশ আমি নই, আমার ভেতরে কোথায় যেন দুমড়ে মুচড়ে আমাকে লণ্ডভণ্ড করতে লাগল, আমার সমস্ত পৃথিবী চারপাশ থেকে ছোট হয়ে আসতে লাগল, আমার দম বন্ধ হয়ে আসতে লাগল, মাথার ভেতরে এক কালো ঘূর্ণি পাগলের মত ঘুরতে লাগল। কোথায় গিয়ে আমি আমার অন্তরাত্মায় উপচে উঠা সব দুর্বিসহ যন্ত্রণা বের করে দিতে পারি! আমি আর পারলামনা- আমি আস্তে করে চৌকিতে উঠে আব্বার পাশে সেই বিবর্ণ চাদর মুড়ি দিয়ে সটান শুয়ে পড়লাম।

আগরবাতির সুগন্ধি ধোঁয়া ফুরফুর উড়তে লাগল আর মরা মাছের চোখের মত আকাশের চাঁদটা নির্বিকার তাকিয়ে রইল।

১০-৫-১৬, শ্যামলী



কাজী লাবণ্য, ঢাকা থেকে


আগের অংশ





Share on Facebook               Home Page             Published on: 22-Aug-2017

Coming Events:
বৃষ্টির সম্ভাবনার কারণে মেলার তারিখ ১ দিন পিছিয়ে ২১ এপ্রিল ২০২৪ (রবিবার) করা হয়েছে......




A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far