কাজী লাবণ্যের নতুন বই
‘আয়োলিতার পুরুষ’ গল্পগ্রন্থে মোট তেরোটি গল্প আছে। পনেরো সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে লেখা হয়েছে গল্পগুলো। তবে অধিকাংশ গল্পই লেখা হয়েছে অতিমারীর জীবন-মৃত্যুর সংশয়ের সেই শ্বাসরূদ্ধকর সময়ে। শঙ্কা আর উদ্বেগের মধ্যে কলম ধরতে হয়েছে বলেই হয়তো গল্পগুলোতে কেবল নিটোল আখ্যানই নির্মিত হয়নি, মানুষের জীবনের বহুমাত্রিক অনুভবের দৃশ্যপটও নির্মিত হয়েছে। গল্প নির্মাণের এই যে এমন দুঃসাহসী প্রচেষ্টা এতে অন্যান্য গল্পকারের মন, মনন কীভাবে প্রভাবিত হয় ঠিক জানি না; একেকটা গল্প লেখার পর ভিন্ন ভিন্ন রকম অনুভূতিতে আমার মন আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। কখনো কখনো তৃপ্তি নিয়ে গল্পের দিকে তাকাই কখনো বা দূরবর্তী এক নদীর বুকে চর জাগার মতো বিবিধ সংশয় এসে সব ওলট পালট করে দিতে চায়। বিশ্বাস করি, লেখকেরা কেবল গণেশের কলম হাতেই রাখেন না, শক্ত হাতে বৈঠাও ধরে থাকেন। তেমনই বৈঠা হাতে আমি মনে মনে ভাবি এই সংশয় তো জ্ঞান আর উৎকর্ষ অন্বেষণের কাঙ্ক্ষার! পাঠক হিসেবে নিজের লেখা গল্পের দিকে তাকালে কিছুটা আত্ম বিশ্লেষণের সুযোগ তৈরি হয়। সেই বাসনা থেকেই ‘আয়োলিতার পুরুষ’ গ্রন্থের গল্পগুলোর দিকে খানিকটা নজর দিতে চাই। ‘ঈশ্বরের রায়’ গল্পের বুড়ি ভাবে সকলের রায় শেষ হলে কখন সে একা হবে! একা হয়ে সে সন্তানের মুখ মনে করে প্রাণভরে কাঁদবে। ‘মানুষের রঙ’ গল্পের একজন উচ্চশিক্ষিত মানুষ পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য কলম ফুঁ দিয়ে আনেন। ‘হাজারমুখী রোদসী’ একদিন ঘটনার ঘনঘটায় তার স্বাভাবিকতা হারিয়ে স্তব্ধ হয়ে যায়। ‘পাড়ানির কড়ির’ বড় মেয়েটি, ‘ওই যে ছাতিম গাছের মতোই আছি, সহজ প্রাণের আবেগ নিয়ে মাটির কাছাকাছি’ মাটির কাছাকাছি থেকেও কি সে পেয়েছিল একটি স্বাভাবিক জীবন! এভাবেই এক এক করে এগিয়ে যেতে থাকে এই গ্রন্থের তেরো রকম মেজাজের তেরোটি গল্প। যার একটিতে আয়োলিতা নিজেই নিজের গল্পের স্রষ্টা হয়ে যায়। আর, একটা সময়ে মনোটোনাস এই শহরের, মনোটোনাস যাপনের ওষ্ঠাগত হতাশার ফাঁস ক্রমশ ওর দম বন্ধ করে দিতে চাইলে সেখান থেকে পালাতে চায় আয়োলিতা। কিন্তু চাইলেই কি শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে সে? এমন সব মীমাংসিত আর অমীমাংসিত দোদুল্যমানতার মধ্য দিয়েই ‘আয়োলিতার পুরুষ’ গল্পগন্থের গল্পগুলো পাঠকের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যায়।
নাম-আয়োলিতার পুরুষ লেখক- কাজী লাবণ্য প্রকাশক-চলন্তিকা
বইটি ১৯ ফেব্রুয়ারি সিডনির এশফিল্ড পার্কে অনুষ্ঠিতব্য একুশে বই মেলায় প্রশান্তিকা বই ঘরে পাওয়া যাবে।
|