bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia













ওয়াজি যেন ‘লায়ন’ ছবির শেরু
কাউসার খান




জনাব ওয়াজিউল্লাহ
অস্ট্রেলীয় এক পরিবার ভোলার চরফ্যাশনের এতিমখানা থেকে দত্তক নিয়েছিল শিশু ওয়াজিউল্লাহকে। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে গিয়ে সেই পরিবারে তার নাম হয়ে যায় ওয়াজি স্পাইবি। এরই মধ্যে কেটে গেছে কয়েক দশক। ওয়াজি স্পাইবি এখন অস্ট্রেলিয়ার নামী শেফ। তাঁর হাতের তৈরি খাবার ছাড়া অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়া রাজ্যের জমকালো অনুষ্ঠানগুলো অপূর্ণ থেকে যায়। ওয়াজি স্পাইবির গল্প মনে করিয়ে দেয় হলিউডের চলচ্চিত্র লায়ন–এর শেরুকে।

অনেকে বলেন, ওয়াজি স্পাইবির জীবনের গল্পটা হলিউডের লায়ন ছবির কাহিনীকে মনে করিয়ে দেয়। কি সেই কাহিনী? লায়ন সিনেমার কাহিনী গড়ে ওঠে শিশু বয়সে পরিবার হারানো এক তরুণের সত্য গল্প ধরে। শেরু নাম তার। ৫ বছর বয়সে ভুল করে ভারতের মধ্যপ্রদেশের খান্দোরার গাণেশতালায় থেকে কোনো এক রেলস্টেশনে কয়লা চুরি করতে এসেছিল। একসময় ট্রেনে ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুমন্ত শেরু ট্রেনে চেপে কলকাতায় এসে পৌঁছায়। তারপর ঘটনাচক্রে অস্ট্রেলীয় এক পরিবার তাকে দত্তক নিয়ে চলে আসে দেশটির তাসমানিয়া রাজ্যে। বড় হয়ে শেরু নিজের হারানো পরিবারকে খুঁজতে থাকে। এগিয়ে চলে সিনেমার কাহিনী।
শেরুর সেই হৃদয়স্পর্শী গল্পকেও হার মানায় যেন ওয়াজি স্পাইবির কাহিনী। ওয়াজিও ঘটনাচক্রে এতিমখানায় বড় হতে থাকেন। সেটা ভারতে নয়, বাংলাদেশের ভোলার চরফ্যাশনে। একসময় ভাগ্য তাঁকে নিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়াতেই।



কি ঘটেছিল বাংলাদেশি শেরুর জীবনে?

ওয়াজি স্পাইবি চলে যান ১৯৭০ সালে। তখন নাম তাঁর ওয়াজিউল্লাহ। বাংলাদেশের ভোলার মনপুরা দ্বীপের ৪ বছরের শিশু। সে বছর উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানল প্রলয়ংকরী এক ঘূর্ণিঝড়। সে ঘূর্ণিঝড় প্রায় ৫ লাখ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিল। ঘূর্ণিঝড়ে ওয়াজির বাবা শামসুল হক বেপারিও মারা গেলেন।
ওয়াজি শোনান সে রাতের কথা, ‘ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে আমিও ভেসে যাই। ঝড় থামার পর চারপাশে তাকিয়ে দেখি কেউ যেন আয়না বিছিয়ে দিয়েছে, যত দূর চোখ যায় শুধু পানি আর পানি।’ বেঁচে থাকে শিশু ওয়াজি। বাবা হারানো দরিদ্র পরিবারে নিদারুণ কষ্টের জীবন কাটতে থাকে ওয়াজিউল্লাহর। এক চাচা তখন তাঁকে রেখে আসেন চরফ্যাশনের এক এতিমখানায়।



এতিমখানার স্বেচ্ছাসেবক লিন্ডা মেরো

ভোলার চরফ্যাশনে ‘দোজ হু হ্যাভ লেস’ নামের সে এতিমখানা এখনো রয়েছে। এতিমখানাটি চালু করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক অ্যালেন রিড। দাতব্য কাজের জন্য অ্যালেন অস্ট্রেলিয়ায় বেশ পরিচিত। ভোলার সে এতিমখানায় এক বছরের জন্য স্বেচ্ছাসেবক হয়ে গিয়েছিলেন লিন্ডা মেরো। অস্ট্রেলিয়ায় তাঁর বোন জোন স্পাইবি চেয়েছিলেন একটা ছেলেসন্তানের দায়িত্ব নিতে। সে কথা লিন্ডা জানান অ্যালেনকে। তিনিই ওয়াজিউল্লাহর দরিদ্র মায়ের সঙ্গে কথা বলে ওয়াজিকে দত্তক নেওয়ার ব্যবস্থা করেন। লিন্ডা মেরো নিজের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ায় নিয়ে আসেন ওয়াজিকে।



স্পাইবি পরিবারে ওয়াজিউল্লাহ

অস্ট্রেলিয়ায় জ্যাক স্পাইবি ও জোন স্পাইবির কাছে মা–বাবার আদরেই বসবাস শুরু করে ওয়াজি। ওয়াজির বয়স তখন ৭ বছর। নতুন মা-বাবার সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া রাজ্যের ছোট শহরে ফ্রস্টারের এক নতুন মানুষ তিনি। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের শহর আর নতুন মা-বাবার আদরে-সোহাগে বড় হয়ে উঠতে থাকেন ওয়াজি স্পাইবি নামে। পড়াশোনা শুরু হয় সেখানকার স্কুলে। ইংরেজি ভাষাও রপ্ত করেন। দিনে দিনে ভুলে যান বাংলা।

দত্তক বাবা মা'র সাথে তরুণ ওয়াজিউল্লাহ

স্পাইবি পরিবার সম্পর্কে ওয়াজি বলছিলেন, ‘আমি যখন অস্ট্রেলিয়ায় আসি তখন আমার নতুন মায়ের একটি খামার ছিল আর বাবা ইস্পাত কারখানায় কাজ করতেন। তাঁরা ধনী ছিলেন না, তবে খুব ভালো মানুষ ছিলেন। আমাকে অনেক আদর দিয়েই বড় করেছেন।’

একসময় পরিবারের সঙ্গে ওয়াজি স্পাইবি থিতু হন তাসমানিয়ার হোবার্ট শহরে। রন্ধনশিল্পে পড়াশোনা করেন মেলবোর্নের উইলিয়াম আংলেস ইনস্টিটিউটে। পেশা গড়েনও শেফ হিসেবে। প্রথমে এক ফরাসি রেস্তোরাঁয় কাজ শুরু করেছিলেন ওয়াজি। স্বল্প সময়ের মধ্যেই বাঙালি এবং থাই স্বাদ দিয়ে ফিউশন খাবার তৈরির দক্ষতা অর্জন করেন তিনি। সময়ের সঙ্গে তাঁর ‘ফিউশন’ জনপ্রিয়তা পায় তাসমানিয়াজুড়ে।
দিনে দিনে হয়ে ওঠেন তাসমানিয়ার গর্ব, নামকরা শেফ ওয়াজি স্পাইবি। এমনই নামডাক, তাঁর হাতের খাবার ‘ওয়াজি ফুড’ ছাড়া তাসমানিয়া রাজ্যের বড় কোনো অনুষ্ঠানই যেন পূর্ণতা পায় না। বর্তমানে ‘ওয়াজি ফুড’ নামে নিজস্ব ক্যাটারিং ব্যবসা করছেন। অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যমে তাঁর খাবার ও তাঁর জীবনগল্প উঠে এসেছে।



ভোলায় ওয়াজি

ওয়াজি স্পাইবি একদিনের জন্যও ভুলতে পারেননি শৈশবের স্মৃতি। যেমন পারেননি লায়ন চলচ্চিত্রের শেরু। বাংলাদেশে মা, চার ভাই আর একমাত্র বোনকে দেখার ইচ্ছা বয়ে বেরিয়েছেন বছরের পর বছর। কিন্তু ঠিকানা হীন পরিবারের সন্ধান করবেন কি করে?
এর মধ্যে ঘটে এক কাকতালীয় ঘটনা। মিজানর রহমান নামের এক বাংলাদেশি তরুণ ঘটনাচক্রে বিয়ে করেন ওয়াজির অস্ট্রেলীয় পরিবারের তিন বোনের একজনকে। তাঁর মাধ্যমেই ওয়াজি খোঁজ করেন পরিবারের। ওয়াজি বলেন, ‘যে দেশে কাউকে চিনি না, কারও সঙ্গে যোগাযোগ নেই, সেখানে আমার মনে হয় না আমি কাউকে কোনো দিনই খুঁজে পেতাম।’
নব্বইয়ের দশক সেটা। মিজানর রহমানের সঙ্গে ওয়াজি চলে যান চরফ্যাশনের সেই এতিমখানায়। সেখানকার কর্তৃপক্ষই ওয়াজির পরিবারের সন্ধান দেয়। ব্যবস্থা করে সাক্ষাতের। ওয়াজি বলেন, ‘সে এক অন্য রকম মুহূর্ত। কিন্তু ভিন্ন বাস্তবতাও ছিল। আমি বাংলা ভাষা ভুলে গেছি। তাই মনের ভাব তাদের ভাষায় প্রকাশ করতে পারিনি। দীর্ঘদিন ভিন্ন পরিবেশে বড় হওয়ায় তাঁদের কাছেও ছিলাম অচেনা মানুষ আমি।’

জন্মদাত্রী মায়ের সাথে ওয়াজিউল্লাহ

তারপর থেকে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন ওয়াজি। তাঁর বড় ভাই মোঃ সাদেক ২০১৮ সালে মারা গেছেন। ছোট ভাই মোঃ ফয়েজউল্লাহ ও মোঃ ইসমাইল কৃষিজীবী। ছোট বোন জাহানারা বেগম গৃহিণী। তাঁরা সবাই থাকেন মনপুরায়। এ পর্যন্ত তিনবার ওয়াজি বাংলাদেশে পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন। তাঁদের জন্য নিয়মিত অর্থও পাঠান। চলতি বছরের শুরুর দিকে তাঁর মা আনোয়ারা বেগম মারা গেছেন। করোনার সংকটে বাংলাদেশে আসতে পারেননি ওয়াজি স্পাইবি। তিনি বলেন, ‘সব ঠিকঠাক হলেই মায়ের কবর জিয়ারত করতে বাংলাদেশে যাব।’



কাউসার খান: অভিবাসন আইনজীবী, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া
ই–মেইল: kawsar.khan.au@gmail.com






Share on Facebook               Home Page             Published on: 20-Oct-2020

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far