সিডনিতে এক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তরুণী খুন! কাউসার খান
অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে ১৯ বছর বয়সী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক তরুণীর মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সিডনির উত্তর প্যারাম্যাটার পেনান্ট হিলস রোডের একটি বাসায় অ্যাসিড ভর্তি বাথটাবে এ মৃতদেহ পাওয়া যায়। গত ৩০ জানুয়ারি রোববার বিকেল সাড়ে চারটায় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ২১ বছর বয়সী এক তরুণকে হত্যার দায়ে আটক করা হয়েছে। এর আগে প্রায় ২০ ঘণ্টা নিখোঁজ থাকার পর পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে এ যুবক।
পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে পারিবারিক কলহে হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। তবে এখনও নিহত তরুণী এবং হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত কোনো তথ্যই পুলিশ নিশ্চিত করে নি। এর কারণ হিসেবে জানানো হয়েছে, লাশ দীর্ঘক্ষণ অ্যাসিডে ডুবে থাকার কারণে তরুণীর পরিচয় এবং অন্যান্য প্রমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই ডিএনএ এবং ফরেনসিক প্রতিবেদন ছাড়া কোনো তথ্য নিশ্চিত করা হয়নি।
তবে মৃতদেহ উদ্ধারের পর প্রাথমিক তথ্যসূত্রে তরুণীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে পুলিশ। সে সূত্র ধরে এ তরুণীর পরিবার এবং পারিবারিক ভাবে পরিচিতদের সাথে কথা হয়। নিহত তরুণী একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। বিভিন্ন সংবাদে প্রতিবেদনে তাঁর নাম ‘তানিমা হায়াৎ, আনিমা হায়াৎ, অ্যানি’ বলা হলেও তরুণীর পরিবার তাঁর নাম আরনিমা হায়াৎ বলে নিশ্চিত করেছে। প্রেমের সম্পর্ক থেকে পরিবারের অমতে গত ৬ মাস ধরে আলাদা বসবাস করছিল আরনিমা। তাঁরা বিয়েও করেছিল বলে পরিবারের ধারনা। আটক তরুণ পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ২১ বছর বয়সী মিরাজ জাফর তাঁর স্বামী। তবে তাঁদের মধ্যে পারিবারিক কলহ ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আরনিমার বাসা থেকে হত্যাকাণ্ডের আগে মধ্যরাতে চিৎকারের আওয়াজ পায় তাঁদের প্রতিবেশী। জর্জ হেমিলটন নামের প্রতিবেশী এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমি আমার বাসার পেছনে ছিলাম আর আনুমানিক রাত ২ টার দিকে আমি কারো কথা শুনতে পাই। প্রথমে মনে হচ্ছিল তাঁরা গান গাওয়ার জন্য চিৎকার করছে, এর একটু পরেই সব চুপ।’ পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত মতে, আরনিমাকে আগে হত্যা করা হয়। এরপর প্রমাণ নষ্ট করতে একটি বাথটাবে অ্যাসিড-তুল্য উচ্চদাহ্য রাসায়নিক তরল ভর্তি করে সেখানে আরনিমার লাশ ফেলে রেখে চলে যায় মিরাজ জাফর। তাঁকে আটক করার পর সে আদালতে উপস্থিত হয় নি। এমনকি জামিনের জন্যেও আবেদন জানায় নি মিরাজ জাফর। আগামী এপ্রিল এ মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।
আরনিমা হায়াৎ এর বাবা আবু হায়াৎ এবং মা মাহাফুজা হায়াৎ। তাঁর পরিবার ২০০৬ সালে অস্ট্রেলিয়ায় আসে। তাঁদের গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জ হলেও অস্ট্রেলিয়ার আসার আগে আরনিমার বেড়ে উঠা পুরাণ ঢাকায়। আরনিমা ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিল। এর আগে সিডনির টেম্পি হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক শেষ করে আরনিমা। তাঁর সার্জন হওয়ার স্বপ্ন ছিল বলে জানায় তাঁর বাবা। মেয়ের জন্য একটি বিএমডাব্লিউ গাড়িও কিনে ছিলেন তিনি। তবে মনমালিন্যের জের ধরে গাড়িটি অব্যবহৃত আছে।
মেয়ের এমন মৃত্যুতে ভেঙ্গে পড়েছেন বাবা মা দুজনেই। বুক ভাঙা আহাজারি নিয়ে বাবা আবু হায়াৎ বলেন, ‘আমি তিলে তিলে আমার মেয়েকে গড়ে তুলেছিলাম… আমাকে মেরে ফেলত, আমার মেয়েকে মারল কেন। তারা দুনিয়াতে এসেছে, থাকত, দেখত, কেন ওকে হত্যা করা হল। আমি হাসপাতালে ফোন দিয়েছিলাম, তাঁরা বলেছে সমস্ত শরীর ঝলসে গেছে।’ বেদনায় মূর্ষে পড়েছেন আরনিমার মা মাহাফুজা হায়াৎ। বার বার শুধু বলছেন, ‘আমার মেয়ে আর ফেরত আসবে না।’
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তরুণীর অকাল মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে সিডনির বাংলাদেশি কমিউনিটিতে। বর্বরোচিত এ হত্যাকাণ্ডটি ব্যাপক আলোচনায় এসেছে সিডনিতে। অস্ট্রেলিয়ার সকল গণমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে এ সংবাদ।
নিহত তরুণীর পরিবারের সাথে দীর্ঘদিনের পরিচয় রয়েছে সিডনির সাবেক কাউন্সিলার শাহে জামান টিটু'র। তিনি বলেন, ‘ঘটনায় খুবই মর্মাহত আমারা। এমন একটা মেধাবী মেয়ের এই অকাল মৃত্যুর ভার বহন করা আমাদের জন্য অনেক কষ্টের।’
সিডনি প্রবাসী বাংলাদেশি সমাজকর্মী এস এম আমিনুল রুবেল বলেন, আরনিমার রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। আর দোষীর কঠিন সাজা দাবি করছি।’
কাউসার খান, সিডনি
|