বাংলাদেশের বাইরে সবচেয় বড় বৈশাখী মেলা কাউসার খান বসন্তের রুদ্র পলাশে, কোকিলের কুহু ডাকে সাড়া দেওয়ার সুযোগ থাকুক না থাকুক, চৈত্র পেরিয়ে বৈশাখ তো আসবেই। বিদেশ-বিভূঁইয়ে থাকলেও বাঙালির মন-প্রাণ বোশেখে বর্ষবরণের জন্য কাঁদবেই। অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিরাও এর ব্যতিক্রম নন, বরং অন্য অনেকের চেয়ে এগিয়ে। প্রায় দুই দশকের ধারাবাহিকতায় এবারও বাংলা নববর্ষকে বরণ করে নিতে সিডনিতে বসবে বৈশাখী মেলা।
আগামী ৪ বৈশাখ, ১৪২২, ১৮ এপ্রিল, ২০১৪, শনিবার সিডনির অলিম্পিক পার্কের টেনিস সেন্টারে সকাল ১১টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বৈশাখী মেলার এ আয়োজন করেছে বঙ্গবন্ধু কাউন্সিল অস্ট্রেলিয়া। বর্ষবরণের এ উৎসবে সিডনি ছাড়াও মেলবোর্ন, ব্রিসবেন, পার্থ, অ্যাডিলেডসহ অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাঙালি-বাংলাদেশিরা সমবেত হবেন। পোষাকে-আশাকে, সাজ-সজ্জায়, ভোজে-আড্ডায় এই দিনটিতে ষোলো আনা বাঙালিয়ানায় মেতে উঠবে হাজারো বাঙালি। প্রবাসের মাটিতে আয়োজিত হলেও এই দিনটিতে যেন সিডনির অলিম্পিক পার্ক হয়ে ওঠে লাল-সবুজের এক টুকরো বাংলাদেশ।
আয়োজকেরা আশা করছেন বিগত দিনের ধারাবাহিকতায় এবার প্রায় ২০ হাজার বাঙালি-বাংলাদেশি সমবেত হবেন সিডনির এই বৈশাখী মেলায়। ২০০০ সালের সিডনি অলিম্পিক গেমসের এই সম্মানজনক ভেন্যুতে মূল মঞ্চে সংগীত-নৃত্য-কবিতা-স্মৃতিচারণা-কথামালার মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক আয়োজনের পাশাপাশি দিনমান চলবে বিভিন্ন গ্রুপের ছোট ছোট আড্ডা-বনভোজনের নানা আয়োজন। স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠন ও শিল্পীদের পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকেও যোগ দেন প্রখ্যাত সংগীতশিল্পীরা।
লোক সমাগম এবং আয়োজনের ব্যাপকতায় সিডনির বৈশাখী মেলাকেই বাংলাদেশের বাইরে বর্ষবরণের এমন সবচেয়ে বড় আয়োজন বলে মনে করেন আয়োজকেরা। প্রায় দুই দশক ধরে ধারাবাহিকভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ায় সিডনি বৈশাখী মেলাকে অস্ট্রেলিয়ার মূলস্রোত আর জনপ্রশাসনও অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। বাংলাদেশের খ্যাতনামা ব্যক্তিবর্গের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী-দলীয় প্রধান, রাজ্য সরকার প্রধানসহ প্রশাসনের বিভিন্ন প্রতিনিধিরা সিডনি বৈশাখী মেলার মূল অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন।
বর্ষবরণের নিয়মিত অনুষ্ঠানমালার পাশাপাশি সিডনি বৈশাখী মেলার এবারের আয়োজনে মেলার ২৩তম বর্ষপূর্তি পালিত হবে। গত ২২ বছর এই সংগঠন নিরবচ্ছিন্ন ধারাবাহিকভাবে এ বৈশাখী মেলা আয়োজন করে যাচ্ছে সিডনিতে। দেশি-বিদেশি রকমারি খাবারের দোকান ছাড়াও বই ও পেষাকের ষ্টলগুলোতে থাকে মানুষের আকর্ষণ। অন্যদিকে, মঞ্চে আয়োজিত অনুষ্ঠানমালায় মুক্তিযুদ্ধ ও বাঙালি সংস্কৃতির নানা দিক তুলে ধরে স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠন রাতে মনোমুগ্ধকর আতশবাজির আলোয় আলোয় শেষ হয় এ মিলন মেলা।
মেলার পরিসর দিন দিন বাড়তে থাকায় স্থান সংকুলানের জন্য এ বছর থেকে মেলা হবে সিডনি অলিম্পিক পার্কের টেনিস সেন্টারে। এই অংশটি মেলার আগের স্থানের চেয়ে পরিসরে আরও বড় বলে জানিয়েছেন মেলার উদ্যোক্তা বঙ্গবন্ধু কাউন্সিল অস্ট্রেলিয়ার কোষাধ্যক্ষ মেহেদী রব।
মেলার সভাপতি শেখ শামীমুল হক দল-মত নির্বিশেষে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত বাঙালি-বাংলাদেশিদের বাংলা নববর্ষে বাঙালির এ প্রাণের মেলায় যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এ আয়োজনে প্রতিবছরের মতো এবারও যুক্ত হবে নতুনতর বিষয় ও ভিন্ন মাত্রার নানা আয়োজন। তিনি জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্য মঙ্গলময় ও আলোকিত জীবনের প্রার্থনা জানিয়েছেন এবং আয়োজকদের পক্ষ থেকে সবাইকে আসন্ন বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
|