বাংলাদেশের সরকারি চলচ্চিত্র অনুদান পেলেন সিডনি প্রবাসী গোলাম মোস্তফা
কাউসার খান: বাংলাদেশের সরকারি চলচ্চিত্র অনুদান পেলেন অস্ট্রেলিয়ার সিডনি প্রবাসী চলচ্চিত্র শিক্ষক গোলাম মোস্তফা। সরকারি এই অনুদানে নির্মাণ করতে যাচ্ছেন নারী ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক চলচ্চিত্র ‘জয়া’। সম্প্রতি প্রকাশিত সরকারি অনুদান পাওয়া চলচ্চিত্রের তালিকায় সিনেমাটি নির্মাণের পরিচালনা ও প্রযোজক হিসেবে অনুদান পেয়েছেন গোলাম মোস্তফা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের অনুদান-প্রাপ্ত সিনেমার সাধারণ শাখায় নির্বাচিত হয় এই সিনেমার গল্প। সিনেমাটি নির্মাণের জন্য সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া হচ্ছে ৭৫ লাখ টাকা। ‘জয়া’ গল্পের চিত্রনাট্যও করেছেন গোলাম মোস্তফা।
একজন নারীর পারিপার্শ্বিক প্রতিকূলতা এবং একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর বেঁচে থাকার লড়াইয়ের গল্প উঠে আসবে ‘জয়া’ সিনেমায়। সাম্প্রদায়িকতা ও গ্রামীণ সমাজ ব্যবস্থার গল্পের আদলে যুদ্ধের দুই দেশের মধ্যকার বিভেদের গল্প তুলে ধরেছেন চিত্রনাট্যকার গোলাম মোস্তফা। গল্পটি নিয়ে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধটা কি শুধু অস্ত্রশস্ত্রের, দুই পক্ষের নাকি গোটা সমাজের! যুদ্ধের সময় মানুষ কীভাবে বেঁচে থাকার লড়াই করেছেন, যাঁদের পরিবারের কেউ শহীদ হয়েছেন তাঁরা কীভাবে সে শোক কাতরে থেকেছেন, এসব কিছুই আমার সিনেমায় উঠে আসবে আশা করি। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের এক খুবই সাধারণ কিন্তু ভিন্ন দিক তুলে ধরার চেষ্টা করেছি এই গল্পে।’
সরকারি অনুদানে নির্মিত বাংলা সিনেমার গুণগত মান প্রতিনিয়ত বিতর্কের সৃষ্টি হয়। সেদিক বিবেচনা করে চলতি অর্থবছরে চলচ্চিত্র অনুদান-প্রক্রিয়ায় আনা হয় পরিবর্তন। এর আগে প্রাথমিক বাছাই, সংক্ষিপ্ত বাছাইকৃত তালিকা এবং বাছাই কমিটির পছন্দ-অপছন্দের ভিত্তিতে আসত চূড়ান্ত অনুদানের তালিকা। চলতি বছর থেকে এই বাছাই প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন এসেছে। এবছর অনুদানের জন্য মোট ১৯৫টি পূর্ণদৈর্ঘ্য এবং ৫৮টি স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমার প্রকল্পের আবেদন জমা পড়ে। সেখানে থেকে একাধিক ধাপে, একাধিক বাছাই কমিটির হাত ঘুরে ২০টি পূর্ণদৈর্ঘ্য ও ৬টি স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমার চূড়ান্ত ঘোষণা করা হয়।
সরকারি অনুদানের জন্য নির্বাচিত ‘জয়া’ সিনেমার চিত্রনাট্যকার, পরিচালক ও প্রযোজক গোলাম মোস্তফা। ঢাকার মঞ্চনাটকে তিনি একজন পরিচিত ব্যক্তিত্ব। বাংলা মঞ্চনাটকের জনপ্রিয় নাট্যদল ঢাকা পদাতিকের জ্যৈষ্ঠ সদস্য তিনি। তাঁদের জনপ্রিয় মঞ্চনাটক ‘কথা ৭১’ এর মূল ভাবনা ও প্রযোজনা উপদেষ্টাও তিনি। নাট্যচর্চার পাশাপাশি কর্মজীবনের শুরুতে দীর্ঘ ২২ বছর বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ায় কম্পিউটার প্রোগ্রামার হিসেবে কাজ করেছেন। এরপর তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণ কৌশল, নন্দনতত্ত্ব, তত্ত্ব, চিত্রনাট্য, পরিচালনা ও পরিবেশনা ইত্যাদি বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জন করেছেন। তিনি একজন বাংলাদেশি অস্ট্রেলিয়ান। তিনি কয়েকটি পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমার চিত্রনাট্য তৈরি করেছেন ‘ক্যানভাস’, ‘শিখা’, ‘মেরী’, ও ‘লিনা’ এর অন্যতম। এ ছাড়া টিভি নাটক হিসেবে ‘ফেরা’, ‘ধন্যবাদ’, ‘ভালবাসা’ এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা হিসেবে ‘বেড টাইম’, ‘আই সি ইউ’, লাইফ গোস অন্, সাবা, আই ফর ইউ, ও সোহাগী’সহ আরও অনেক সৃষ্টি রয়েছে তাঁর। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, আইইউবি ও বাংলাদেশ সিনেমা ও টেলিভিশন ইন্সটিটিউটের খণ্ড-কালীন শিক্ষক। এ ছাড়া, তাঁর হাত ধরে অস্ট্রেলিয়ার বিশেষ করে সিডনির সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বিস্তৃত হয়েছে।
কথা ৭১ এর প্রচারপত্র
ঢকা পদাতিকের আশি দশকের আলোড়িত মঞ্চনাটকে গোলাম মোস্তফা
স্বল্পদৈর্ঘ চলচ্চিত্র ‘যুদ্ধ’ এর শুটিংয়ের সময় অভিনেতাদের সাথে পরিচালক গোলাম মোস্তফা
|