bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia














ঘরে-বাইরে
প্রধানমন্ত্রীর অস্ট্রেলিয়া সফর শুরু থেকে শেষ
কাউসার খান



অস্ট্রেলিয়ায় সফর শেষে গতকাল দেশে ফিরছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নানা সংশয় ও গুঞ্জনের পর অবশেষে এ সফর সম্পন্ন হল। প্রধানমন্ত্রী অস্ট্রেলিয়ার সিডনি পোঁছান গত ২৭ এপ্রিল শুক্রবার সকালে। ৮৮ জনের এক বহর নিয়ে “গ্লোবাল সামিট অব উইমেন ২০১৮” শীর্ষক সম্মেলনে আমন্ত্রিত হয়ে এ সফরে আসেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (এসএসএফ) সহ তাঁর সফরসঙ্গী ছিলেন তাঁর ছোটবোন শেখ রেহানা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, মহিলা ও শিশু-বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, সিনিয়র সরকারী কর্মকর্তা এবং আওয়ামী ঘরনার বিভিন্ন মাধ্যমের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানাতে উপস্থিত ছিলেন অস্ট্রেলিয়ায় নবনিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ সুফিউর রহমান ও অন্যান্য হাইকমিশন কর্মকর্তাগণ। এছাড়া কোনো আওয়ামী রাজনৈতিক দলের সমর্থক কিংবা কোনো সিডনি প্রবাসী বাঙালি এ অভ্যর্থনায় যোগ দেওয়ার অনুমোদন পাননি। এ সফর কালে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীরা সিডনির হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অবস্থান করেন। সিডনি পোঁছে সকাল ১১টায় অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র-বিষয়ক মন্ত্রী জুলি বিশপ এর সঙ্গে একটি সৌজন্য বৈঠক করেন তাঁর হোটেলে। পাশাপাশি ভিয়েতনাম এর উপরাষ্ট্রপতি ডাঙ্গ থী নোক থিন এর সঙ্গেও দুই দেশীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বৈঠক করেন তিনি। এরপর ‘গ্লোবাল উইমেন্স লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ গ্রহণ করতে সিডনির ডার্লিং হারবারের আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র (আইসিসি) তে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে যোগ দেন তিনি। সম্মাননা গ্রহণকালে প্রধানমন্ত্রী নারীর ক্ষমতায়ন এবং জাতীয় উন্নয়নে নারীদের মূলধারায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। তবে সম্মেলনে বাংলাদেশি গণমাধ্যম-কর্মী ছাড়া অস্ট্রেলিয়ার কোন গণমাধ্যম-কর্মী চোখে পড়েনি। যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক এ সম্মেলনে আগ থেকে নিবন্ধন করেছেন এমন স্থানীয় কিছু বাংলাদেশি প্রবাসী সাংবাদিকরা সম্মেলনে যোগ দেন। এছাড়া স্বল্পসংখ্যক সিডনির প্রবাসী বাংলাদেশি সম্মেলনের পাস কিনে অংশ নেন অনুষ্ঠানে। সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর সুষ্ঠু নিরাপত্তার নিশ্চিত করে এসএসএফ এবং নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্য পুলিশ।

সফরের দ্বিতীয় দিন ২৮ এপ্রিল শনিবার সকাল ১০টায় ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারামাটা ক্যাম্পাসে যান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে আইন অনুষদের আন্তর্জাতিক সমুদ্র-শাসন কেন্দ্রের সামনে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আবক্ষ মূর্তিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ অভ্যর্থনা প্রদান করেন। এ অভ্যর্থনায় অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যসহ এ অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক ড. দাউদ হাসান ও ভিজিটিং ফেলো ড. নাহিদ হোসাইন এবং পিএইচডিরত অস্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগের এক কমিটির সভাপতি সিরাজুল হক। শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের আগে প্রধানমন্ত্রী এক সংক্ষিপ্ত সভায় বক্তব্যও প্রদান করেন। অনুষ্ঠান চলাকালীন অস্ট্রেলিয়া ছাত্রলীগ নিরাপত্তা বেষ্টনীর বাইরে শ্লোগানে ক্যাম্পাস মুখরিত করে তুলে। তখন প্রধানমন্ত্রী নিজে কিছুদূর হেঁটে এসে তাঁদের সাথে ছবি তুলেন।

এরপর একই দিনে বিকেল ৩টায় অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল এর সঙ্গে একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর সফরের শুরু থেকেই এ বৈঠকটি দোদুল্যমান ছিল। শেষে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর বাসবভনে এ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকটি স্বল্প সময়ের হওয়ার কথা থাকলেও পরে প্রায় দেড় ঘণ্টা পর্যন্ত দীর্ঘ হয়। বৈঠকে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কথা বলেন। টার্নবুল বাংলাদেশকে সমর্থন করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্বস্ত করেন। এছাড়া বৈঠকে দুই নেতা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেন এবং এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধি করার যথোপযুক্ত উপায় খুঁজে বের করতে উভয়ে রাজি হন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে সন্ধ্যা ৬টার কিছু পরে প্রধানমন্ত্রী সোফিটেল সিডনি ওয়েন্টওয়ার্থ হোটেলে এক নাগরিক সংবর্ধনায় অংশ নেন। প্রধানমন্ত্রীর সিডনি সফর উপলক্ষে এ নাগরিক সংবর্ধনার আয়োজন করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অস্ট্রেলিয়া। প্রধানমন্ত্রীর অন্যান্য সফরসঙ্গীসহ নাগরিক সংবর্ধনায় যোগ দেন শেখ রেহানা। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘ বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ার সহযোগিতা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন একদম প্রথম দিকে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য এবং তাঁর সফর ও সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলেন। এছাড়া অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, মহিলা ও শিশু-বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, সিডনি প্রবাসী প্রবীণ আওয়ামী রাজনীতিবিদ গামা আবদুল কাদির, আওয়ামী লীগ অস্ট্রেলিয়ার একটির সভাপতি ড. শামস রহমান এবং সিডনির আওয়ামী লীগের ৩টি কমিটি থেকে ১ জন করে সাধারণ সম্পাদক পি এস চুন্নু, আনিসুর রহমান ঋতু ও ডা. আবুল হাসনাত মিল্টন। তাঁরা বিভিন্ন সমসাময়িক বিষয় নিয়ে পরিচ্ছন্ন ও সাবলীল বক্তব্য রাখেন। নাগরিক সংবর্ধনা পরিচালনা কমিটি আয়োজনের সূচিতে বেশ কিছু পরিবর্তন আসে শেষ দিকে। আরও কয়েকজন বক্তব্য দেওয়ার



কথা থাকলেও অনির্দিষ্ট কারণে তাঁরা বক্তব্য রাখেন নি। এছাড়া নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের সভাপতি শেখ শামীমুল হকের বক্তব্য দেওয়ার আগেই প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রদানের ঘোষণা করেন অনুষ্ঠান পরিচালক সিরাজুল হক। তাৎক্ষণিক প্রধানমন্ত্রী এসএসএফ এর মাধ্যমে সেটি সংশোধন করে শেখ শামীমুল হককে বক্তব্য প্রদানের আহ্বান জানান। তিনি তাঁর বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীকে সিডনিতে আয়োজিত বৈশাখী মেলায় আগামীতে বাঙালিদের সাথে অংশগ্রহণের আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানান। সম্মেলনে প্রায় আটশতেরও বেশি সিডনি প্রবাসী বাংলাদেশি অংশ নেয়। সকলকেই পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তবে অনুষ্ঠানে আওয়ামী ঘরানার বাইরে কারো থাকার কথা না থাকলেও এমন অনেকের উপস্থিতিই নজরে পড়ে। আবার আওয়ামী ঘরানার বা সমর্থক অনেকেই এ সম্মেলনে আসার আমন্ত্রণ পত্র পাননি। আবার অস্ট্রেলিয়া মূলস্রোতের জ্ঞান-বিজ্ঞান, রাজনীতি, শিল্পকলাতে কৃতিত্ব রাখা প্রবাসী বাঙালিদের অনুষ্ঠানে সম্পৃক্ত না রাখা এবং প্রধানমন্ত্রীর এ সফর অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যমে সাড়া না ফেলার বিষয়গুলো আলোচনায় এসেছে। আলোচনায় এসেছে শিক্ষা ও অভিবাসন যে কারণে বাংলাদেশিদের এদেশে স্থায়ী বসবাস বাড়ছে সে বিষয়ে কোন আলোচ্যসূচি না থাকা।

গতকাল ২৯ এপ্রিল রোববার প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরে যান। এর আগে প্রধানমন্ত্রী অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বিশিষ্ট-জনদের সাথে ব্যক্তিগত সাক্ষাৎ করেন। আলাদা করে কথা বলার সম্ভাবনা থাকলেও হঠাৎ করে উপস্থিত সকল আওয়ামী ঘারনার নেতাকর্মীদের সাথে একটি বৈঠক করেন তিনি। দীর্ঘ বৈঠকে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। আলোচনায় বিভিন্ন অভিযোগ-অনুযোগ শোনেন তিনি। তারপর স্পষ্ট ভাষায় অস্ট্রেলিয়ায় বিশেষ করে সিডনিকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের কমিটি থাকার প্রয়োজন রয়েছে বলে জানান দলের। তবে তা প্রধানমন্ত্রীর পর্যবেক্ষণের আওতায় থাকবে বলে জানান তিনি। তিনি একটি পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। তাঁর নির্দেশ ছাড়া কোনো প্রকার কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিতে শক্ত ভাষায় নিষেধ করেন। দেশের নির্বাচনের পর সিডনিতে আওয়ামী লীগ কমিটি হতে পারে এমনটি তিনি আভাস দিয়েছেন। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে কোনো নেতাকর্মীর ইন্ধনে উজ্জীবিত না হতেও বলেন তিনি। তারপর তিনি সবার সাথে ছবি তুলেন।

বৈঠক শেষে স্থানীয় সময় বিকেল ৪টায় তিনি ঢাকার উদ্দেশে সিডনি ত্যাগ করেন। অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর সমর্থকেরা প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিত-স্থলে প্রতিবাদী অবস্থান নেয়। আইসিসি’তে অনুষ্ঠিত সম্মেলন কেন্দ্রের সামনে বিএনপি সমর্থকেরা বড় আকারের প্রতিবাদ সমাবেশ করে। সমাবেশে উল্লেখযোগ্য বিএনপি প্রবাসী নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা অংশ নেয়। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নাগরিক সংবর্ধনার অনুষ্ঠান আয়োজিত হোটেলের সামনেও তারা এ বিক্ষোভ সমাবেশ করে। এ সময় শেখ হাসিনা ও আওয়ামী বিরোধী শ্লোগান সম্বলিত বড় বড় সাইন বোর্ড ভ্যান গাড়িতে প্রদক্ষিণ করে।



কাউসার খান, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া




Share on Facebook               Home Page             Published on: 30-Apr-2018

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far