bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia













কাউসার খানের প্রতিবেদন
সাম্প্রতিক অস্ট্রেলিয়া (৩৭)



অস্ট্রেলিয়া যেতে চটকদার বিজ্ঞাপনে পা ফেললেই বিপদ

অস্ট্রেলিয়া পৃথিবীর অন্যতম একটি অভিবাসন-বান্ধব দেশ। শিক্ষা, কর্ম ও স্থায়ী বসবাসের জন্য দেশটিতে অভিবাসনে ইচ্ছুক বহু দেশের মানুষ। আর এখানে অভিবাসনে ইচ্ছুকেরা যে কেবল তৃতীয় বিশ্বের বাসিন্দা, এমনটা নয়। অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসীদের মধ্যে সবচেয়ে বড় জনগোষ্ঠী যুক্তরাজ্যের। এরপর ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসন গ্রহণের ক্ষেত্রে অভিবাসনে ইচ্ছুকদের কতটা আশা রাখা উচিত—সেই ধারণা থাকছে এ লেখায়।

করোনা মহামারি পরবর্তী সময় অস্ট্রেলিয়া দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে এমনটা বলা যায়। ক্ষমতার রদবদলে দেশটিতে বিরোধী দল লেবার পার্টি সরকার গঠন করেছে। সবকিছু মিলিয়ে চলতি সময় দেশটির অভিবাসন-প্রক্রিয়া শিথিল রয়েছে। করোনা-কালীন আটকে পড়া বা ভিসার মেয়াদ চলে গেছে, এমন ভিসা-ধারী ব্যক্তিদের দ্রুত অভিবাসনের সুযোগ করে দেওয়া সহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর দেশটিতে বসবাসরত কর্ম ভিসায় অস্থায়ী বাসিন্দাদের স্থায়ী হওয়ার সুযোগও বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে অভিবাসন বিভাগের নেওয়া এমন বেশ কিছু সময়োপযোগী প্রকল্পকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করছেন অনেকে।

অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসন একটি সহজ প্রক্রিয়া কিন্তু জটিল আইনের দেশ। কোনো প্রক্রিয়া সহজ বা শিথিল করা হয়েছে, এর মানে ঢালাওভাবে কোনো আইন পরিবর্তন করা হয়েছে—এমনটা নয়। যেমন ২০২২ সালের পূর্বে অস্থায়ী কাজের ভিসায় বিভিন্ন সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত পেশার দুই বছর মেয়াদি সাব-ক্লাস ৪৮২ থেকে স্থায়ী ভিসা ১৮৬-এ আবেদন করা একেবারেই যেত না। কিন্তু করোনা-কালীন যারা এ অস্থায়ী ভিসায় অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করেছেন, তাঁদের এখন স্থায়ী ভিসায় আবেদন করতে সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
আবার দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীদের অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। দ্রুত ভিসা-প্রক্রিয়া শেষ করছে এবং আরও দ্রুত করতে অনেক কর্মকর্তা নিয়োগ দিচ্ছে। তবে কোনোভাবেই এর অর্থ এই নয়, দক্ষতা ও যোগ্যতার ব্যাপারে ছাড় দিয়েছে অভিবাসন বিভাগ। কোনো পেশারই দক্ষতা, অভিজ্ঞতার আবশ্যিক শর্ত, এমনকি ইংরেজি ভাষার পরীক্ষায়ও কোনো শর্ত কম করেনি অভিবাসন বিভাগ।

তবুও প্রায়ই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভিডিওতে বলা হয়, ‘অস্ট্রেলিয়ায় কর্মীদের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে, আবেদন করলেই অস্ট্রেলিয়ার ভিসা পাওয়া যাবে, লাগবে না স্পন্সর, এমনকি ইংরেজি দক্ষতারও প্রয়োজন নেই’—এ শিরোনামগুলো আসলে দর্শক আকর্ষণের জন্য ব্যবহার করা হয়, যাকে বলে ‘ক্লিক-বেইট’। আবার কিছু ভিডিওতে ভিসার বিভিন্ন আবশ্যিক শর্তকে ভুল ব্যাখ্যা করা হয়।
কখনো করা হচ্ছে আংশিক তথ্য উপস্থাপন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ওয়ার্কিং হলিডে ভিসাকে একটি লোভনীয় ভিসা হিসেবে প্রচার করা হয়, যে ভিসায় অস্ট্রেলিয়ায় ঘুরতে এসে এক বছর অবস্থান এবং পার্টটাইম কাজও করা যায়। তবে এ তথ্যটি দেওয়া হয় না যে ভিসাটি বিশ্বের মাত্র ১৯টি দেশের নাগরিকদের জন্য দেওয়া হচ্ছে, যেখানে বাংলাদেশ এমনকি ভারতের মতো দেশও নেই।
আবার অনেকে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় কর্ম ভিসা ৪৮২ টিএসএস ভিসাকে খুব সহজভাবে উপস্থাপন করে। অনলাইনে স্পন্সর সহ চাকরি খুঁজে, একটি অ্যাকাউন্ট খুলে আবেদন করলেই ভিসা হয়ে যাবে এমন একটি প্রক্রিয়া দেখানো হয়। কিন্তু আসলে ৪৮২ ভিসা পেতে হলে স্পন্সরশীপ সহ মোট তিন ধরনের আবেদনপত্র জমা করতে হয়। প্রতিটি আবেদনপত্র আলাদাভাবে যাচাই করে অভিবাসন বিভাগ এবং একটি মঞ্জুর হলে পরেরটি মঞ্জুর হবে, এ রকম কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই ভিসায় আবেদন করা এবং ভিসার আবশ্যিক শর্ত পূরণ করে ভিসা-প্রাপ্তি দুইটি একেবারেই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। সাধারণ চটকদার বিজ্ঞাপনে পা ফেললেই বিপদ। সাধারণভাবে তুলনা করলে অস্ট্রেলিয়ার যেকোনো ভিসায় আবেদন করার পদ্ধতি পৃথিবীর যেকোনো দেশের চেয়ে সহজ।

কোনো দেশে অভিবাসনের ক্ষেত্রে সেই দেশের নিবন্ধিত অভিবাসন আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করাই উত্তম। তবে দেশি ও বিদেশিদের প্রচার করা এমন সব ভিডিও বা তথ্যই এড়িয়ে চলতে হবে, এমনটা নয়। সাধারণ ধারণা নেওয়ার জন্য ভিডিও, বিভিন্ন প্রতিবেদন এসব অনুসরণ করা যেতে পারে।
তারপর, ইন্টারনেটে রোগের নিরাময় খোঁজা যেমন বুদ্ধিমানের কাজ নয়, রোগ হলে যেমন অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। ঠিক তেমনই, কোনো দেশে অভিবাসনের ক্ষেত্রে সেই দেশের নিবন্ধিত অভিবাসন আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করাই উত্তম। তবে দেশি ও বিদেশিদের প্রচার করা এমন সব ভিডিও বা তথ্যই এড়িয়ে চলতে হবে, এমনটা নয়। সাধারণ ধারণা নেওয়ার জন্য ভিডিও, বিভিন্ন প্রতিবেদন এসব অনুসরণ করা যেতে পারে। আর অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন নিয়ে বেশ সুন্দর ও সাবলীল ভাষায় তৈরি অস্ট্রেলিয়া সরকারের একটি ওয়েবসাইট রয়েছে immi.homeaffairs.gov.a এই ওয়েবসাইটে সব ভিসার বিস্তারিত তথ্য রয়েছে।



কাউসার খান: অভিবাসন আইনজীবী, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া। ইমেইল: immiconsultants@gmail.com





Share on Facebook               Home Page             Published on: 17-Oct-2022

Coming Events: