কাউসার খানের প্রতিবেদন সাম্প্রতিক অস্ট্রেলিয়া (৩৫)
দুর্নীতির অভিযোগে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ
ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির অভিযোগের জের ধরে নিজ থেকেই পদত্যাগ করেছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধান শহর সিডনির রাজ্য নিউ সাউথ ওয়েলসের মুখ্যমন্ত্রী গ্ল্যাডিস বেরেজিক্লিয়ান। তিনি পদত্যাগ করবেন—এমন গুঞ্জন উঠেছিল গত শুক্রবার সকাল থেকেই। পরে দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী ও দলের রাজ্য-প্রধানের পদ থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন গ্ল্যাডিস। তবে রাজ্য সংসদের সদস্য হিসেবে এখনো বহাল তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে এ পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান তিনি। চলতি মাসের শেষ নাগাদ গ্ল্যাডিস বেরেজিক্লিয়ানের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের তদন্ত শেষ হবে।
অস্ট্রেলিয়ার দুর্নীতি তদন্ত কমিশনের কাছে অভিযোগ রয়েছে, ব্যক্তি-স্বার্থে সরকার ও দলীয় ক্ষমতা ব্যবহার করেছিলেন গ্ল্যাডিস। এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজ্যের সাবেক সাংসদ ড্যারিল ম্যাগুইয়ারের দুটি প্রতিষ্ঠানকে সরকারি ক্ষমতাবলে অনুদান নিয়ে দিয়েছিলেন গ্ল্যাডিস। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে অস্ট্রেলিয়ান ক্লে টার্গেট অ্যাসোসিয়েশন ও ২০১৮ সালে ওয়াগায় রিভারিনা কনজারভেটরিয়াম অব মিউজিক নামের দুটি প্রতিষ্ঠানে প্রায় ছয় লাখ অস্ট্রেলীয় ডলার অনুদান নিয়ে দেওয়া হয়। যদিও প্রথমটির সময় নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন গ্ল্যাডিস। অন্যদিকে, তাঁর সঙ্গে সাবেক সাংসদ ড্যারিল ম্যাগুইয়ারের প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলেও উল্লেখ রয়েছে। ড্যারিল ২০১৮ সালে তাঁর বিরুদ্ধে আসা দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে পদত্যাগ করেছিলেন।
মুখ্যমন্ত্রী ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় ও উৎসাহিত করেছেন কি না, তা খতিয়ে দেখবে কমিশন। ১৮ অক্টোবর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্তের কাজ শুরু হবে এবং ১০ দিনের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করবে কমিশন। গ্ল্যাডিস বেরেজিক্লিয়ানের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ প্রমাণিত হলে রাজ্য সংসদ থেকেও তাঁকে পদত্যাগ করতে হবে। ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টি নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের জন্য নতুন নেতা নির্বাচনের পরই গ্ল্যাডিস বেরেজিক্লিয়ানের পদত্যাগ কার্যকর হবে। তিনি ছিলেন এই রাজ্যের ৪৫তম মুখ্যমন্ত্রী।
পার্টনার ভিসায় আসছে পরিবর্তন
অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল বাজেটে দেশটির পার্টনার ভিসা প্রোগ্রামে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের কথা উঠেছে। অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দার বিদেশি স্বামী বা স্ত্রীকে অস্ট্রেলিয়ায় আনতে চালু রয়েছে এই পার্টনার ভিসা। এ ভিসায় যুক্ত হতে যাচ্ছে ইংরেজি দক্ষতার আবশ্যিক শর্ত, যা আগে ছিল না। এ ছাড়া আগে একটি ভিসা দিয়েই আবেদনকারী ও স্পন্সরকে যাচাই করা হলেও এখন তা হবে আলাদা। চলতি বছরের নভেম্বর থেকে এ পরিবর্তন কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। সাব-ক্লাস ৩০৯ ও ১০০ এবং ৮২০ ও ৮০১ নামের দুটি স্ট্রিমে পার্টনার ভিসা চালু রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ার বাইরে থেকে আসা আবেদনকারীর দ্বিতীয় ধাপের ভিসা, অর্থাৎ সাব-ক্লাস ১০০ পার্টনার ভিসায় যুক্ত হবে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার আবশ্যিক শর্ত। আর এ শর্ত দেশটির স্থায়ী বাসিন্দা স্পন্সর ও ১৮ বছরের বেশি বয়সী সব আবেদনকারীর ওপর জারি হবে। অর্থাৎ আবেদনকারীর পাশাপাশি স্পন্সরকেও ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা প্রমাণ করতে হবে। তবে স্পন্সর অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক হলে এ শর্ত তাঁকে পূরণ করতে হবে না। যদিও আইইএলটিএস বা সমমানের পরীক্ষায় কত স্কোর করতে হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। এ নিয়ম শুরুর আগপর্যন্ত জমা দেওয়া কোনো আবেদনে এ শর্তের প্রভাব পরবে না। এ ছাড়া আগত পরিবর্তনের আওতায় পার্টনার ভিসার স্পন্সরশীপ ও ভিসা আবেদন আলাদা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত পার্টনার ভিসার আবেদনপত্রে স্পন্সরের তথ্য দেওয়ার মাধ্যমেই স্পন্সরশীপ যাচাই করে নেয় অভিবাসন বিভাগ। কিন্তু নতুন পরিবর্তনে প্রথমে স্পন্সরশীপ আবেদন করতে হবে। শুধু তাই নয়, স্পন্সরশীপ মঞ্জুর হলে তবেই আবেদন করা যাবে মূল ভিসায়। এ ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে পারেন যারা অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করছেন। এমন অনেক অস্থায়ী বাসিন্দা রয়েছেন, যারা তাঁদের ভিসার মেয়াদ শেষ হতে চলেছে বলে পার্টনার ভিসার ব্রিজিং ভিসা দিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করতে পারতেন। এমন কোনো পরিকল্পনা যাঁদের রয়েছে, তাঁদের জন্য দ্রুত কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ থাকছে
নতুন মুখ্যমন্ত্রী ডোম পেরোটে
নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের নতুন মুখ্যমন্ত্রী (প্রিমিয়ার) নির্বাচিত হয়েছেন ডোমিনিক পেরোটে। গত মঙ্গলবার দলীয় সদস্যদের ভোটে তিনি নির্বাচিত হন। ডোম পেরোটে নামে সমাধিক পরিচিত তুখোড় এই রাজনীতিবিদ এ রাজ্যের ৪৬তম মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। এর আগে রাজ্য সরকারের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন তিনি। ৩৯ বছর বয়সী ডোমিনিক হলেন রাজ্যের সবচেয়ে তরুণ নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর বিপরীতে মুখ্যমন্ত্রীর পদের জন্য লড়েছেন রাজ্য সরকারের পরিকল্পনা-মন্ত্রী রব স্টোকস।তিনি ভোট পেয়েছেন মাত্র ৫টি।অন্যদিকে ডোমিনিক পান ৩৯টি ভোট। দুর্নীতির অভিযোগের জের ধরে রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী গ্ল্যাডিস বেরেজিক্লিয়ান পদত্যাগ করলে নতুন মুখ্যমন্ত্রীর জন্য দলের ভেতর এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সাবেক মুখ্যমন্ত্রী গ্ল্যাডিসের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাঁর প্রেমিক সাবেক সাংসদ ড্যারিল ম্যাগুইয়ারকে প্রায় পঞ্চান্ন লাখ অস্ট্রেলীয় ডলারের অনুদান নিয়ে দিয়েছিলেন। তবে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে গ্ল্যাডিসের সফলতার বেশিরভাগেরই অংশীদার নবনির্বাচিত এই মুখ্যমন্ত্রী যিনি গ্ল্যাডিস সরকারের সাবেক কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। রাজ্যের বহু উন্নয়ন এবং সফল বাজেট বাস্তবায়নে ভূমিকা রেখেছেন ডোমিনিক। রাজনীতিতে প্রবেশের পূর্বে তিনি আইনজীবী পেশায় ছিলেন। ২০১১ সালে ২৮ বছর বয়েসে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে নির্বাচিত হন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী হিসেবে। ২০১৭ সালে থেকে গত সোমবার পর্যন্ত রাজ্যের কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। নির্বাচনের পর ডোমিনিক তাঁর ভাষণে বলেন, ‘হঠাৎ এ পরিবর্তন আমাদের কাজে অনেকটাই ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। তবে আমরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ দায়িত্ব পালন করতে থাকব এ কোভিড-১৯ এর সংকট কালীন সময় না কাটিয়ে উঠা পর্যন্ত।’
কাউসার খান: অভিবাসন আইনজীবী, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া। ইমেইল: immiconsultants@gmail.com
|