bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia













কাউসার খানের প্রতিবেদন
সাম্প্রতিক অস্ট্রেলিয়া (৩৪)


অস্ট্রেলিয়ায় কবে ফিরবেন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা


উচ্চশিক্ষার জন্য অস্ট্রেলিয়া অনেক দিন ধরেই জনপ্রিয় দেশ। শিক্ষা খাতের যেকোনো জনপ্রিয়তার তালিকাতেই রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার নাম। তবে চলতি অতিমারির সংকটকালে যেসব খাত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার অন্যতম অস্ট্রেলিয়ার এই উচ্চ-শিক্ষাঙ্গনও। আর এতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অস্ট্রেলিয়ার এই উচ্চ-শিক্ষাঙ্গনে পড়তে আসা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশি। সীমান্ত বন্ধ থাকায় তাদের একটা বড় অংশই নিজ নিজ দেশে ফিরে গিয়ে আর অস্ট্রেলিয়ায় ফেরত আসতে পারেনি। আবার অনলাইন শিক্ষার কারণে যারা অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করছে, তাদেরও একটা সিংহভাগ নৈমিত্তিক শিক্ষাজীবনে পিছিয়ে পড়ছে। কেননা, অনলাইন শিক্ষা এখনো মুখরিত ক্যাম্পাসের পড়াশোনার বিকল্প হয়ে ওঠেনি তাদের কাছে।

আবার নতুন শিক্ষার্থীরা অনেকেই ভর্তি হতে পারলেও তাদের দেওয়া হচ্ছে না শিক্ষা ভিসা এবং সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার অনুমতি। যদিও দেশটির সরকার এখন লকডাউনের কারণে অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানরত কাজ-হারা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদেরও অর্থনৈতিক সহায়তা দিচ্ছে; তবু শিক্ষার্থীরা যত দ্রুত সম্ভব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সীমান্ত খুলে দেওয়ার পক্ষে আহ্বান জানিয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরেই। এত দিন দেশটির সরকার এ নিয়ে কী করবে, কিছুটা দোদুল্যমান অবস্থায় থাকলেও এখন উচ্চশিক্ষা খাত আবার চালু করে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অস্ট্রেলিয়ায় ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন পরিকল্পনা করছে, এটা স্পষ্ট।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৯ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক শিক্ষাঙ্গন অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতিতে প্রায় চার হাজার কোটি অস্ট্রেলীয় ডলারের অবদান রাখে। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা যে শুধু শিক্ষা খাতেই অর্থ ব্যয় করে, এমনটা কিন্তু নয়; তাদের ব্যয়ের ৩৬ শতাংশ যায় অস্ট্রেলিয়ায় সম্পত্তি ক্রয়ে এবং আরেক ৩৬ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয় বিনোদন এবং দ্রব্যাদি ক্রয়ে। দেশটির প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান জড়িত এই শিক্ষা খাতের সঙ্গে। পরিসংখ্যান মতে, কেবল ২০১৯ সালের অক্টোবরে ৫১ হাজার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছায়। পরের বছর অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়ায় আসে মাত্র ১৩০ জন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী। তবে উচ্চশিক্ষায় অস্ট্রেলিয়া আসতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের ভিড় এখনো বেশি। ২০১৯ সালের অক্টোবরে প্রায় ছয় লাখ শিক্ষার্থী অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন কোর্সে ভর্তি হয়েছিল। ২০২০ সালের অক্টোবরে সংকট চলাকালেও পাঁচ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। ২০২০ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় খাতে প্রায় ৬ শতাংশ ধস দেখা দিয়েছে। শত বিলিয়ন ডলারের দেশটির এই উচ্চশিক্ষা খাতে সামান্য একটু নিম্নগতি মানেই শত কোটি ডলারের ক্ষতি। এ ছাড়া সংকটাপন্ন গত এক বছরে এক লাখ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী বাতিল করেছে তাদের ভিসা।

অস্ট্রেলিয়ায় বর্তমানে প্রায় তিন লাখ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী বসবাস করছে, যা ২০১৯ সালের চেয়ে ৪৯ শতাংশ কম। বিভিন্ন দেশে প্রায় দেড় লাখ শিক্ষার্থী আটকে পড়ে আছে। গত এক দশকে দেশটির উচ্চশিক্ষা খাতে এমন ধসের রেকর্ড নেই। তবে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অস্ট্রেলিয়ায় ফিরিয়ে আনতে রাজ্যভিত্তিক আলাদা পরিকল্পনা করছে রাজ্য সরকারগুলোও।

আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা অস্ট্রেলিয়ায় ফিরতে শুরু করলে দ্রুতই উচ্চশিক্ষা খাত আবারও ভারসাম্য ফিরে পাবে। তবে অস্ট্রেলিয়ার আন্তর্জাতিক সীমানা বন্ধ থাকা একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন জানিয়েছেন, অস্ট্রেলিয়ার ৮০ শতাংশ বাসিন্দা করোনার টিকা গ্রহণ করলে তবেই খোলা হবে সীমানা। আজ পর্যন্ত সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেশটির বাসিন্দাদের ৪৮.৫ শতাংশ সম্পূর্ণ টিকা গ্রহণ করেছে এবং প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছে ৭৩.৪ শতাংশ। আশা করা হচ্ছে, মধ্য নভেম্বরের মধ্যে লক্ষ্য পূরণ হয়ে যাবে। তবে শঙ্কার দিক হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ার প্রধান শহর সিডনির রাজ্য নিউ সাউথ ওয়েলসসহ বিভিন্ন রাজ্যে বাড়ছে করোনাভাইরাসের ডেলটা ধরনের সংক্রমণ। এতে রাজ্যটির চলতি পরিকল্পনা কিছুটা পিছিয়ে পড়ছে। তারপরও নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্য টিকার লক্ষ্য পূরণ হলেই সীমানা খুলে দেবে—এমন ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। ইতিমধ্যে একটি রোডম্যাপও প্রকাশ করেছে রাজ্য সরকার। রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী গ্ল্যাডিস বেরেজিক্লিয়ান জানিয়েছেন, শিগগিরই পরীক্ষামূলক-ভাবে শিক্ষার্থীদের ঢুকতে দেওয়া হবে। এর আওতায় ২৫০ জন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীকে ১৫ দিন পরপর রাজ্যটিতে আনা হবে। সে ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি ও হোটেল কোয়ারেন্টিন মানতে হবে শিক্ষার্থীদের। এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী গ্ল্যাডিস বলেন, ‘লকডাউন শেষ হওয়া মাত্রই আমরা এ ব্যাপারে পুনরায় নজর দেব।’ একই পরিকল্পনা রয়েছে সাউথ অস্ট্রেলিয়া রাজ্যেরও। তবে তারা ১৬০ জন শিক্ষার্থীকে প্রাথমিকভাবে আসার অনুমতি দিচ্ছে। ফেডারেল সরকারের পরিকল্পনার সঙ্গে মিল রেখে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে আনার কথা জানিয়েছেন ভিক্টোরিয়া রাজ্য সরকারের একজন মুখপাত্রও। আর আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি গ্র্যাজুয়েট এবং ৪৮৫ ভিসা-ধারীকেও অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার কথা ভাবছে সরকার। দেশটির বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী অ্যালান টজ বলেন, ‘আমরা জোর দিয়েই বিদেশি ছাত্রদের ফিরিয়ে আনার কথা আলোচনা করছি। এ নিয়ে একটি নীতিমালাও প্রস্তুত করছি। সেটা তৈরি হয়ে গেলে সব রাজ্যের করা আবেদনগুলো নিয়ে কাজ শুরু করব।’

অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কম নয়। বৃত্তি নিয়ে পড়তে আসা শিক্ষার্থীসহ অ্যাকাউন্টিং কিংবা আইসিটির মতো জনপ্রিয় বিষয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় আছে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা। তবে চলতি সময়ে অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে আসতে পারছে না অনেক বাংলাদেশিই। ২০২০ সালে বহু বাংলাদেশি শিক্ষার্থী বাংলাদেশে গিয়ে আটকা পড়েছে। অস্ট্রেলিয়াতেও অবস্থান করছে অনেকে। এমন কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এত দিন নানা অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকলেও ধীরে ধীরে আবার আশা ফিরে পাচ্ছে তারা।

সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত এক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী বলেন, ‘গত জানুয়ারিতে আমার স্নাতক পাস করার কথা। এরপর সে বিষয়ের একটি “ইন-পারসন ট্রেনিং” কোর্স বাকি রয়েছে। আমার কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমর্থন-পত্রও রয়েছে। তবু বারবার অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশের আবেদন ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। শিগগিরই অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশ করার অনুমতি না পেলে আমাকে স্নাতক পাসের এ শেষ সময়ে এসেও কোর্স বাতিল করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।’

বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন—এমন এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে যাওয়ার সুযোগ পাই গত বছর। প্রথমে দারুণ খুশি হয়েছিলাম। ভর্তির সব প্রক্রিয়া শেষ করে এক সেমিস্টারের টিউশন ফিও পরিশোধ করেছি। তবে প্রায় এক বছর হতে চলল এখনো ভিসা পাচ্ছি না। ক্যারিয়ার নিয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা আটকে আছে। তবে অস্ট্রেলিয়ার সীমানা খুলে দিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে বলে আশা করছি।’

অস্ট্রেলিয়ার একটি বেসরকারি কলেজের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রতিষ্ঠাতা বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে যদিও এখনো কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশনা পাইনি বিদেশি ছাত্রদের ক্লাস শুরুর, আমরা অনলাইনে আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। ধারণা করছি, কয়েক মাসের মধ্যেই আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অস্ট্রেলিয়ায় আনার একটা কার্যক্রম শুরু হবে।’

সর্বোপরি, অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল ও রাজ্য সরকারগুলোর যে মনোভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে, তাতে অনেকটায় স্পষ্ট, আগামী ডিসেম্বর-জানুয়ারি থেকে সীমিত আকারে সীমান্ত এবং মার্চ শিক্ষা সেশন থেকে আবারও অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দেবে। ফলে, সবকিছু পিছে ফেলে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আনাগোনায় আবারও মুখরিত হয়ে উঠবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাস—এমনটাই আশা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।



কাউসার খান: অভিবাসন আইনজীবী, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া। ইমেইল: immiconsultants@gmail.com





Share on Facebook               Home Page             Published on: 22-Sep-2021

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far