কাউসার খানের প্রতিবেদন সাম্প্রতিক অস্ট্রেলিয়া (৩৩)
মাছ শিকার করতে গিয়ে দুইজনের মৃত্যু
সিডনিতে সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে দুই বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার (১২/২/২০২১) সন্ধ্যায় সিডনির পোর্ট ক্যাম্বলাতে মাছ ধরার সময় আচমকা বড় ঢেউয়ের ধাক্কায় সাগরে পড়ে গিয়ে দুজনের মৃত্যু হয়। নিহত দুই বাংলাদেশীর নাম মাহাদী খান ও মোজাফফর আহমেদ। তাঁরা সিডনির লাকেম্বা ও ওয়ালি পার্কের বাসিন্দা। মাহাদী এবং মোজাফফর দুজনই সিডনির বাঙালি পাড়াখ্যাত লাকেম্বা এলাকায় ব্যবসায় করতেন। তাঁরা শৌখিন মাছ শিকারি হিসেবেও লাকেম্বা এলাকায় বেশ পরিচিত ছিলেন বলে জানান তাঁদের বন্ধু ফখরুল আলম। নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের পুলিশ জানায়, দুর্ঘটনার পরপরই স্থানীয় পুলিশের কর্মকর্তারা এই দুজনকে সমুদ্র থেকে তুলে আনেন। কিন্তু এর আগেই মাহাদী খান মৃত্যুবরণ করেন এবং মুমুর্ষ অবস্থায় মোজাফফর আহমেদকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকেও মৃত ঘোষণা করেন। দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, পোর্ট ক্যাম্বলার হিল ৬০ এলাকায় পাথুরে অংশে দাঁড়িয়ে মাছ ধরছিলেন তাঁরা। হঠাৎ বড় ঢেউয়ের ধাক্কায় পাথরের ওপরে ছিটকে পড়েন তিনজন। এতে মারাত্মকভাবে আহত হয়ে মাহাদী ও মোজাফফর ঢেউয়ের সঙ্গে ভেসে যান। বাকি একজন নিরাপদে থেকে যান। মাহাদী ও মোজাফফরের দেহ উদ্ধারের পর পরিচয় শনাক্ত করে পুলিশ তাঁদের পরিবারকে গভীর রাতে খবর দেয়। তাঁদের মৃত্যুর সংবাদে সিডনির বাংলাদেশিরা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিন সপ্তাহ আগে একই স্থানে সাগরের ঢেউয়ে আরও তিন ব্যক্তির মৃত্যু হয়।
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দিচ্ছে অস্ট্রেলিয়া
প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চমানের ডিগ্রির জন্য পড়ালেখা করতে আসেন। তবে উচ্চশিক্ষার জন্য জনপ্রিয় দেশ অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা ও বসবাস বেশ ব্যয়সাপেক্ষ বটে। তাই মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য দেশটিতে বৃত্তির এমন সুযোগও রয়েছে, যাতে পড়াশোনা বিনা মূল্যে করা তো যায়ই, সঙ্গে সরকার মাসে মাসে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকাও দেয়। তেমনই একটি বৃত্তি “অস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ডস”। ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের জন্য এরই মধ্যে আবেদন গ্রহণ শুরু হয়ে গেছে। সরকারি এই বৃত্তির জন্য স্নাতক পাস করা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন। বিস্তারিত রয়েছে এই ওয়েবসাইটে australiaawardsbangladesh.org
দেশি-বিদেশি সবাইকে বিনা মূল্যে টিকা দেবে অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানরত দেশি-বিদেশি সবাইকে বিনা মূল্যে কোভিড-১৯ এর টিকা দেবে দেশটির সরকার। এক সংবাদ সম্মেলনে এমনই ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। আগামী অক্টোবর নাগাদ দেশটির গোটা জনসংখ্যাকে বিনা মূল্যে টিকা প্রদানের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে সরকার। ফলে, অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানরত দেশটির সব নাগরিকসহ স্থায়ী-অস্থায়ী, শরণার্থী, আশ্রয়প্রার্থী ও সুরক্ষাপ্রার্থী সব ভিসা-ধারী, এমনকি কোনো ভিসায় আবেদন করে ব্রিজিং ভিসায় অস্ট্রেলিয়ায় রয়েছেন - এমন সবাইকে বিনা মূল্যে টিকা দেবে দেশটির সরকার। এ ছাড়া প্রতিবেশী দেশগুলোকেও টিকা দিয়ে সহযোগিতার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। তবে টিকা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অবশ্যই দেশটির নাগরিকদের প্রাধান্য দেওয়া হবে। এ নিয়ে দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী গ্রেগ হান্ট বলেন, “অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে রয়েছেন - এমন প্রত্যেকেই বিনা মূল্যে টিকা দেওয়া হবে।” চলতি মাসের মধ্যেই ফাইজারের টিকার মাধ্যমে টিকাদান কর্মসূচি চালু হওয়ার কথা রয়েছে। এরপর মার্চ মাস থেকে অ্যাস্ট্রাজেনিকা এবং পরে নোভাভ্যাক্সের টিকা দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে ১৫ কোটি টিকার চালানের কথা থাকলেও বাড়তি আরও এক কোটি টিকা আমদানি করবে দেশটি।
অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশকর্মী পেলেন বিশ্বের সবচেয়ে দামি পুরস্কার
অস্ট্রেলিয়ার বন প্রচারক ও পরিবেশকর্মী নিকোল রয়ক্রফ্ট পেলেন পরিবেশ খাতে বিশ্বের সবচেয়ে দামি পুরস্কার ‘ক্লাইমেট ব্রেকথ্রু অ্যাওয়ার্ড’। এ পুরস্কারের মূল্য ৩০ লাখ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় ২৫ কোটির বেশি। আজ বৃহস্পতিবার সকালে তাঁর এই পুরস্কার পাওয়ার সংবাদটি অস্ট্রেলিয়াসহ সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করে। নিকোলের প্রতিষ্ঠিত বন সংরক্ষণ সংস্থা “ক্যানোপি” - এর কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য পুরস্কারের এই অর্থ প্রদান করা হবে। তাঁর এই অলাভজনক সংস্থায় নিকোল ২০ বছর ধরে পরিবেশ ও বিলুপ্তপ্রায় বন সংরক্ষণে কাজ করছেন। নিকোল প্রধানত বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত কাগজ জাতীয় পণ্য তৈরিতে গাছপালার ব্যবহার কমিয়ে টেকসই বিকল্প ব্যবস্থা তৈরিতে কাজ করে আসছেন। এখন পর্যন্ত তিনি ৭৫০টির বেশি শিল্পকারখানাকে বন উজাড় করে তৈরি কাগজের ব্যবহার পরিহার করাতে সফল হয়েছেন। এর পাশাপাশি তিনি একজন ফিজিওথেরাপিস্ট এবং মানবাধিকার কর্মী। পুরস্কার পাওয়া নিয়ে গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিকোল বলেন, “আমার বলার আসলে কোনো ভাষা নেই, কেননা এমনটা প্রতিদিন হয় না যে আপনি একটা আন্তর্জাতিক পুরস্কার হিসেবে তিন মিলিয়ন ডলার পেলেন, তা ও আবার জলবায়ু সংকটের মতো বিশাল সমস্যার সমাধান করার ঝুঁকি নেওয়ার জন্য।”
গ্র্যাজুয়েট ভিসার নতুন আইন বাতিল
অস্ট্রেলিয়ায় স্নাতক-পরবর্তী গ্র্যাজুয়েট ভিসার দ্বিতীয় দফায় আবেদনের সুযোগ বহাল থাকছে। এর আগে অভিবাসন বিভাগের প্রকাশিত এক অস্থায়ী নীতিমালায় সাব-ক্লাস ৪৮৫ টেম্পোরারি গ্র্যাজুয়েট ভিসাটিতে “ডিপেনডেন্ট” ভিসা-ধারীরা নতুন করে মূল আবেদনকারী হিসেবে ভিসা পাবেন না বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। গত ২০ জানুয়ারি প্রকাশিত সে নীতিমালা একটি “খসড়ার ত্রুটি” ছিল বলে ব্যাখ্যা দিয়েছে দেশটির অভিবাসন বিভাগ। মাইগ্রেশন ইন্সটিটিউট অব অস্ট্রেলিয়াকে দেওয়া এ ব্যাখ্যায় অভিবাসন বিভাগ জানায়, যারা পূর্বে সাব-ক্লাস ৪৮৫ টেম্পোরারি গ্র্যাজুয়েট ভিসা-ধারীর “ডিপেনডেন্ট” ছিলেন, তাঁরা আগের নিয়মেই মূল আবেদনকারী হিসেবে আবেদন করতে পারবেন। ত্রুটিযুক্ত পূর্বের নীতিমালায় বলা হয়েছিল, সাব-ক্লাস ৪৮৫ টেম্পোরারি গ্র্যাজুয়েট ভিসা-ধারীর “ডিপেনডেন্ট”, অর্থাৎ স্বামী বা স্ত্রী নতুন করে মূল আবেদনকারী হিসেবে এ ভিসায় আবেদন করতে পারবেন না। তবে এ নীতিমালা নিয়ে সমালোচনা হয়েছিল। কেননা জনপ্রিয় এ ভিসার মাধ্যমে সদ্য স্নাতক বা সমমানের ডিপ্লোমা পাস করা শিক্ষার্থীরা কর্ম-অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য এক থেকে চার বছর মেয়াদে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসের সুযোগ পেয়ে থাকেন। আর এ ভিসার জন্যই অনেকে পড়াশোনার জন্য অস্ট্রেলিয়াকে বেছে নেন। তবে অভিবাসন বিভাগের সংশোধিত নীতিমালা অনুযায়ী “ডিপেনডেন্ট” ভিসা-ধারীর মূল আবেদনকারী হিসেবে আবেদন করার সুযোগ বহাল থাকছে।
কাউসার খান: অভিবাসন আইনজীবী, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া। ইমেইল: immiconsultants@gmail.com
|