কাউসার খানের প্রতিবেদন সাম্প্রতিক অস্ট্রেলিয়া (৩২)
প্যারেন্ট ভিসার নীতিমালায় পরিবর্তন
বিশ্বব্যাপী চলমান সংকটের কথা বিবেচনায় নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দাদের মা–বাবার ভিসার নীতিমালায় একটি পরিবর্তন আনা হয়েছে। এই পরিবর্তনের আওতায় ইতিমধ্যে যারা প্যারেন্ট ভিসায় আবেদন করেছেন, পূর্বের নিয়ম অনুযায়ী আবেদনকারীকে নিজ দেশে ফেরত বা অস্ট্রেলিয়ার বাইরে যেতে হবে না। নতুন এ ঘোষণার আগে প্যারেন্ট ভিসার আবেদনকারীকে ভিসা প্রক্রিয়ার সময় অস্ট্রেলিয়ার বাইরে অবস্থান করতে হতো। অর্থাৎ এমন আবেদনকারীদের, যারা অস্ট্রেলিয়ার বাইরে থেকেই ভিসা আবেদন করেছেন কিন্তু বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করছেন, ভিসা মঞ্জুর হওয়ার জন্য তাঁদের নিজ দেশে ফেরত বা অস্ট্রেলিয়ার বাইরে যেতে হতো। ফেডারেল সরকারের এক ঘোষণায় সাময়িকভাবে নিয়মটি স্থগিত করা হয়েছে। বর্তমানে ভ্রমণে সীমাবদ্ধতার কারণে অনেকেই অস্ট্রেলিয়ায় আটকে পড়েছেন। আবেদনকারীদের এমন অভিযোগের ভিত্তিতেই নতুন সিদ্ধান্তে আসে সরকার। পূর্বের নিয়মের কারণে এ ভিসার এক আবেদনকারীকে বাধ্য হয়ে প্রাইভেট জেট বিমান ভাড়া করে অন্য দেশে যেতে হয়েছে। দেশটির প্যারেন্ট ভিসা সাবক্লাস ১৭৩ এবং সাবক্লাস ১৪৩—এই দুই ভিসায় নীতিমালা রদ করা হয়েছে। তবে এর কারণে ভিসার প্রক্রিয়ার সময়সীমায় কোনো প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন মন্ত্রী অ্যালেক্স হক। তিনি আরও জানান, আগামী এক-দুই মাসের মধ্যেই এ সাময়িক পরিবর্তন চালু হবে।
পার্থে আক্রান্ত ১ জন, লক-ডাউনে ২০ লাখ মানুষ
অস্ট্রেলিয়ার ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া রাজ্যের রাজধানী পার্থের এক হোটেল নিরাপত্তাকর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন আর এতেই গোটা পার্থ শহরে লক-ডাউন ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। ৩১শে জানুয়ারি ২০২১ থেকে পাঁচ দিনের এই সম্পূর্ণ অচলাবস্থায় পার্থ মেট্রোপলিটন এলাকাসহ দক্ষিণ পশ্চিম এলাকার প্রায় ২০ লাখ বাসিন্দা গৃহবন্দী হয়ে পড়েছেন। নিরাপত্তাকর্মীর কর্মস্থল হোটেলটি ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনের জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। সেখানে যুক্তরাজ্য থেকে আসা এক যাত্রীর মাধ্যমে তিনি সংক্রমিত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। একজন ব্যক্তির আক্রান্তের ঘটনায় রাজ্য সরকারের এই উদগ্রীবের কারণ হচ্ছে গত প্রায় ১০ মাসের মধ্যে রাজ্যের স্থানীয় কোনো বাসিন্দার আক্রান্তের এটিই প্রথম ঘটনা। কমিউনিটি পর্যায়ে আর কেউ যেন আক্রান্ত না হন, সে জন্যই রাজ্য সরকার এই অচলাবস্থা জারি করেছে। এর আওতায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য জনসাধারণের যাতায়াতের স্থান বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দোকান ও ফার্মেসি এবং হাসপাতাল সীমিত পরিসরে খোলা থাকবে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মার্ক ম্যাকগোয়ান বলেন, এটি একটি অত্যন্ত গুরুতর পরিস্থিতি এবং সবাইকে সংক্রমণ রোধে করণীয় সব নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে।
গ্র্যাজুয়েট ভিসা নেওয়া যাবে একবারই
অস্ট্রেলিয়ায় স্নাতক পরবর্তী গ্র্যাজুয়েট ভিসার দ্বিতীয় দফায় আবেদনের সুবিধা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের কাছে বহুল জনপ্রিয় এই সাবক্লাস ৪৮৫ টেম্পোরারি গ্র্যাজুয়েট ভিসাটি। ভিসাটির মাধ্যমে সদ্য স্নাতক বা সমমানের ডিপ্লোমা পাশ করা শিক্ষার্থীরা কর্ম অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য ১ থেকে ৪ বছর মেয়াদে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসের সুযোগ পেয়ে থাকে। আর ভিসাটির জন্যই অনেকে পড়াশোনার জন্য অস্ট্রেলিয়াকে বেছে নেন। তবে সরকারের নতুন অস্থায়ী অভিবাসন নীতিমালা অনুযায়ী, এ ভিসার 'ডিপেন্ডেন্ট' ভিসাধারীরা নতুন করে মূল আবেদনকারী হিসেবে ভিসা পাবেন না। এর আগে এই শিক্ষার্থী ভিসায় স্বামী-স্ত্রী দুজনেই পড়াশোনা করতে পারত এবং পরবর্তীতে আলাদা আলাদা ভিসা আবেদনের সুযোগ ছিল।
একজন শিক্ষার্থী একবারই সাবক্লাস ৪৮৫ ভিসায় আবেদন করতে পারলেও তাঁর 'ডিপেন্ডেন্ট' ভিসাধারী অর্থাৎ স্বামী বা স্ত্রী নতুন করে প্রধান আবেদনকারী হিসেবে সাবক্লাস ৪৮৫ ভিসায় আবেদন করতে পারত। অভিবাসনের আইনের পরিবর্তনের কারণে এখন থেকে সে সুযোগটি বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। পরিবর্তিত নীতিমালায় বিপাকে পড়বে অনেক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ও তাঁদের স্বামী/স্ত্রী। কেননা এমন অনেক শিক্ষার্থীই রয়েছেন যারা মূলত ডিপেন্ডেন্ট ভিসাধারী এবং স্বল্প সময়ের মধ্যেই স্নাতক পাশ করবেন। তবে ইতিমধ্যে যারা আবেদন করেছেন তাঁদের উপর নতুন এ নীতিমালার কোনো প্রভাব পড়বে কিনা তা এখনও নিশ্চিত নয়।
তবে যদি কেউ অস্ট্রেলিয়ার আঞ্চলিক কোন এলাকায় বসবাস করেন তাহলে দ্বিতীয় ধাপে আবেদন করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে সাবক্লাস ৪৮৫ টেম্পোরারি গ্র্যাজুয়েট ভিসায় আবেদন করলে ক্যাটাগরি অনুসারে ১ অথবা ২ বছর মেয়াদের ভিসা দেওয়া হবে বলেও নতুন একটি নীতিমালা রয়েছে। আর এই সুবিধাটি পেতে সাবক্লাস ৪৮৫ ভিসার মূল ভিসাধারীকে অবশ্যই কমপক্ষে গত দুই বছর অস্ট্রেলিয়ার যেকোনো আঞ্চলিক এলাকা অর্থাৎ সিডনি মেলবোর্নের মতো মেট্রোপলিটন শহরের বাইরে বসবাস করতে হবে। আবশ্যিক শর্ত হিসেবে আরও থাকছে, ভিসাধারীর পড়াশোনা এবং কর্ম এ দুটিও আঞ্চলিক এলাকাতেই হতে হবে। তবেই এ ভিসার দ্বিতীয় ধাপে মিলবে বাড়তি ১ থেকে ২ বছর মেয়াদ। পাশাপাশি তাঁদের অন্যান্য বাড়তি সুবিধাও দেবে দেশটির সরকার। এছাড়া সাধারণ শিক্ষার্থী ভিসা সাবক্লাস ৫০০ এ কোনো পরিবর্তন আনা হয় নি।
কাউসার খান: অভিবাসন আইনজীবী, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া। ইমেইল: immiconsultants@gmail.com
|