কাউসার খানের প্রতিবেদন সাম্প্রতিক অস্ট্রেলিয়া (৩১)
অস্ট্রেলিয়ায় ব্যবসায়ী ভিসায় অভিবাসনের সুযোগ
অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসন হতে অগ্রাধিকার পাচ্ছে বিজনেস মাইগ্রেশন ভিসা প্রত্যাশীরা। অভিবাসন প্রত্যাশীদের স্বর্গরাজ্য বলা হয় ওশেনিয়া অঞ্চলের দ্বীপ-মহাদেশ অস্ট্রেলিয়াকে। যাবতীয় নাগরিক সুবিধা ও নিরাপত্তার জন্য দেশটি অনেকের কাছেই প্রথম পছন্দ। আর ব্যবসায়ীদের জন্য দেশটিতে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ নিয়ে চালু রয়েছে বিভিন্ন ভিসা। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে ব্যবসায়ীদের দেশটিতে স্বাগতম জানাতে নতুন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে দেশটির সরকার। বিভিন্ন দেশের অভিবাসীদের মতো এখন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরাও বিজনেস মাইগ্রেশনের আওতায় স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ নিতে পারেন অস্ট্রেলিয়াতে। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশিদের জন্যও বিজনেস মাইগ্রেশনে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ তৈরি হয়েছে দেশটিতে। দেশটির অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠতে ব্যবসায়িক দক্ষতার আলোকে এই অভিবাসন নীতিমালাটি তৈরি করেছে অস্ট্রেলিয়া সরকার। বর্তমানে সেই নীতিমালার আওতায় প্রভিশনাল সাবক্লাস ১৮৮ ও সাবক্লাস ১৩২ ভিসার আবেদনকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে এই অর্থ বছরে প্রায় দ্বিগুণ ভিসা প্রদানের ঘোষণাও দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া সরকার। আবশ্যিক শর্ত পূরণ করতে পারলে এই ভিসায় অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ কাজে লাগানোর ভালো সময় এটা।
ভিসার ধরণঃ
ভিসাগুলো মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ভিসা হচ্ছে সাবক্লাস ১৩২ বিজনেস ট্যালেন্ট পার্মান্যান্ট ভিসা। এই ভিসা মঞ্জুর হলে আবেদনকারী সরাসরি স্থায়ীভাবে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসের সুযোগ পান। এ ছাড়া, প্রভিশনাল ভিসা অর্থাৎ প্রথমে অস্থায়ী এবং পরে স্থায়ী এ ধরণের কিছু ভিসা রয়েছে। সাবক্লাস ১৮৮ ব্যবসায়িক উদ্ভাবনী এবং বিনিয়োগ (বিজনেস ইনোভেশন অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট) এই শ্রেণীতে কয়েক ধরণের ভিসা রয়েছে। এগুলো হলো, ব্যবসায়িক উদ্ভাবনী ১৮৮ এ, বিনিয়োগ ১৮৮ বি, উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ ১৮৮ সি এবং প্রিমিয়াম বিনিয়োগ ১৮৮ ডি। অধিকাংশ আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যবসায়িক উদ্ভাবনী (বিজনেস ইনোভেশন) ভিসার শর্ত পূরণ কিছুটা সহজসাধ্য। যেসব ব্যবসায়ী বা বিনিয়োগকারীদের কমপক্ষে চার বছরের ব্যবসায়িক ও ব্যবস্থাপনা-গত অভিজ্ঞতা আছে তাঁরা এ ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। প্রাথমিকভাবে এ ভিসার মেয়াদকাল প্রায় চার বছরের জন্য হলেও পরবর্তীতে ভিসা সাবক্লাস ৮৮৮-এর অধীনে স্থায়ী বসবাসের জন্য আবেদন করা যাবে।
ভিসার শর্তঃ
ব্যবসায়িক উদ্ভাবনী সাবক্লাস ১৮৮ এ ভিসায় আবেদনের জন্য ৮ লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার অথবা প্রায় ৫ কোটি টাকার সম্পত্তি থাকতে হবে। ব্যবসা, নগদ অর্থ, স্বর্ণালংকার ইত্যাদি সকল সম্পত্তি মিলিয়ে এ অর্থ হতে হবে যা আবেদনকারী এবং তাঁর স্ত্রী/ স্বামী’র আলাদা কিংবা দুজনের একত্রে মালিকানা মিলিয়ে হতে পারে। ৫ কোটি টাকা, ভিসা মঞ্জুর হওয়ার ২ বছরের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় আনার যোগ্য হতে হবে। এছাড়া এমন একটি ব্যবসার মালিকানা থাকতে হবে যে ব্যবসার বার্ষিক আয় কমপক্ষে ৩ কোটি টাকা। অংশিদারিত্ব-মূলক ব্যবসার মালিকানাও গ্রহণযোগ্য তবে সেক্ষেত্রে ক্ষেত্র বিশেষে সর্বনিম্ন ৩০ বা ৫১ শতাংশ মালিকানা থাকার শর্ত রয়েছে। একই ধরনের অন্যান্য আবশ্যিক শর্তের সঙ্গে সাবক্লাস ১৮৮ বি বিনিয়োগ ভিসায় ব্যবসার মালিকানা থাকতে হবে ১৫ লাখ ডলার অথবা প্রায় ৯ কোটি টাকার। এসহ সব মিলিয়ে সম্পত্তির মালিকানা থাকতে হবে প্রায় ১৪ কোটি টাকার।
ভিসার পয়েন্টঃ
সাবক্লাস ১৮৮ এ এবং ১৮৮ বি এ দুটি ভিসায় পয়েন্ট টেস্ট ভিত্তিক ভিসা। অর্থাৎ এ ভিসায় আবেদন করতে আবেদনকারীকে সর্বনিম্ন ৬৫ পয়েন্ট অর্জন করতে হবে। এ পয়েন্টগুলো বয়স, সম্পত্তির পরিমাণ, ইংরেজি ভাষার দক্ষতা, শিক্ষা ইত্যাদি নানা বিষয়ের উপর নির্ভর করে পেতে হয়। যেমন, আবেদনকারীর বয়স ২৫ থেকে ৩২ বছর হলে এর জন্য ৩০ পয়েন্ট, ৩৩ থেকে ৩৯ বছরের জন্য ২৫ পয়েন্ট।
সরাসরি পার্মান্যান্ট ভিসাঃ
সাবক্লাস ১৩২ এ বিজনেস ট্যালেন্ট ভিসাটি সবচেয়ে আকর্ষণীয় কারণ সরাসরি পার্মান্যান্ট ভিসা। এ ভিসায় উল্লেখযোগ্য ব্যবসায়িক ইতিহাস ১৩২ এ এবং উদ্যোগমূলক মূলধন উদ্যোক্তা ১৩২ বি নামের দুটো শ্রেণী রয়েছে। ভেনচার ক্যাপিটাল উদ্যোক্তা ১৩২ বি ভিসায় কোনো অস্ট্রেলিয়ান প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির থেকে প্রায় ৬ কোটি টাকার বিনিয়োগ গ্রহণের ব্যবস্থা করতে হয়। এ জন্য সাবক্লাস ১৩২ এ সিগনিফিকেন্ট বিসনেস হিস্ট্রি স্ট্রিম এ আরেকটি সহজতর ভিসা। এ ভিসায় ১৮ কোটি টাকা টার্ণওভার সম্পন্ন ব্যবসায় অংশীদারিত্ব থাকার আবশ্যিক শর্ত রয়েছে। এ ছাড়া, আবেদনকারীও তাঁর স্ত্রীর ক্যাশ, জায়গা-সম্পদ, স্বর্ণালংকার সব মিলিয়ে ৯ কোটি টাকার সম্পত্তি থাকতে হবে। উল্লিখিত সকল ভিসার আবশ্যিক শর্তেই কিছু সাদৃশ্য রয়েছে। যেমন, প্রত্যেকটি বিজনেস ভিসার আবেদনকারীকেই সর্বোচ্চ বয়স সীমা ৫৫ বৎসর। এছাড়া প্রত্যেকটি ভিসার ক্ষেত্রেই মূল ভিসায় আবেদনের পূর্বে দেশটির যেকোনো রাজ্য সরকার কর্তৃক মনোনয়ন পেতে হবে। সেই সঙ্গে বিজনেস মাইগ্রেশন ভিসায় অভিবাসন বিভাগের মনোনয়ন ও আবেদন করার আমন্ত্রণ পেতে আবেদনকারীকে অবশ্যই যথাযথ দক্ষতা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় তাঁর আগ্রহ বা এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট (EOI) ব্যক্ত করতে হবে। সরকার আবেদন করার জন্য আমন্ত্রণ জানালে তবেই এ ভিসা পেতে আবেদন করা যাবে। তবে এ ভিসায় আগ্রহীদের প্রথমে অস্ট্রেলিয়ায় ভ্রমণ করে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করার পরামর্শ দেন অভিবাসন আইনজীবীরা।
কাউসার খান: অভিবাসন আইনজীবী, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া। ইমেইল: immiconsultants@gmail.com
|