কাউসার খানের প্রতিবেদন সাম্প্রতিক অস্ট্রেলিয়া (৩০)
সিডনিতে বাড়ি কেনার খরচ কমলো ৩২ হাজার ডলার
করোনাভাইরাস সংকটের কথা বিবেচনায় রেখে অস্ট্রেলিয়ায় নতুন বাড়ি কেনার খরচ কমিয়ে আনার প্রকল্প হাতে নিয়েছে দেশটির রাজ্য সরকার। অস্ট্রেলিয়ার সিডনির রাজ্য নিউ সাউথ ওয়েলসে (NSW) নতুন বাড়ি কেনার ওপর সরকারি কর সাময়িকভাবে না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আগস্ট মাসের ১ তারিখ থেকে নতুন এই নিয়মে ৮ লাখ অস্ট্রেলীয় ডলার মূল্যের নিচে নতুন বাড়ি কিনলে সরকারি স্ট্যাম্প ডিউটি প্রদান করতে হবে না। এ সুবিধা পাবেন শুধুমাত্র প্রথমবারের মতো যারা বাড়ি কিনবেন তাঁরাই। এ ছাড়া তাঁদের, আবেদন সাপেক্ষে আরও প্রায় ১০ হাজার ডলার পর্যন্ত দেবে রাজ্য সরকার প্রণোদনা হিসেবে। সব মিলিয়ে এই রাজ্যে নতুন বাড়ি কিনলে প্রায় ৩২ হাজার অস্ট্রেলীয় ডলার যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচা কম হবে নতুন ক্রেতাদের।
রাজ্যের নির্মাণ খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও গতিশীল রাখার লক্ষ্যে এ প্রকল্প গ্রহণ করেছে NSW রাজ্য সরকার। রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী গ্ল্যাডিস বেরেজিক্লিয়ান গতকাল সোমবার নতুন প্রকল্পটির ঘোষণা দেন। নতুন প্রকল্পটির আওতায় রাজ্যটিতে প্রায় ৬ হাজার নতুন ক্রেতা সুবিধাভোগী হতে পারে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি।
অস্ট্রেলিয়ায় ঘরবাড়ি বা জমিজমা কেনার ৩০ দিনের মধ্যে ক্রয়কৃত সম্পদের মূল্যের ওপর ভিত্তি করে সরকারকে কর পরিশোধ করতে হয়। অস্ট্রেলিয়ায় এই করকে ‘স্ট্যাম্প ডিউটি’ বলা হয়। অনেক দিন ধরেই অস্ট্রেলিয়ার মানুষের গড় আয়ের তুলনায় দেশটির ঘরবাড়ি ও জমিজমার মূল্য অনেক বেশি। দেশটিতে ঘরবাড়ি বা জমি কিনতে যে মূল্য পরিশোধ করতে হয় তাতে মূলত আরও বেশ কিছু অতিরিক্ত অর্থের একটি এই স্ট্যাম্প ডিউটি। অনেকটা উল্লেখযোগ্য হারেই অস্ট্রেলিয়ার রাজ্যভেদে এই প্রদেয় করের হার ভিন্ন রকম। তবে গড়ে প্রায় ২৬ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার পর্যন্ত স্ট্যাম্প ডিউটি প্রদান করতে হয়।
৫০ পয়েন্টে অস্ট্রেলিয়ার স্থায়ী ভিসা
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো সংক্রমণ রোধে অস্ট্রেলিয়ার আন্তর্জাতিক সীমান্তেও রয়েছে কড়া নিরাপত্তা। এ কঠিন সময়ে দেশটি খুব কমসংখ্যক নতুন প্রবাসীদের ভিসা প্রদান করছে। আর পয়েন্ট ভিত্তিক ভিসার ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা এত বেশি যে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৯০ পয়েন্টেও ভিসা পাওয়া যাচ্ছে না। এর মধ্যে এমন একটি ভিসা রয়েছে যেখানে মাত্র ৫০ পয়েন্টেও অস্ট্রেলিয়ার স্থায়ী বাসিন্দার ভিসা পাওয়া সম্ভব।
দেশটির কুইন্সল্যান্ড রাজ্য দিচ্ছে ছোট ব্যবসার মালিকদের সাব ক্লাস ৪৯১ ভিসা। ১ লাখ অস্ট্রেলীয় ডলার মূল্যের ব্যবসার পূর্ণ মালিকানা থাকলেই হওয়া যাবে দেশটির স্থায়ী বাসিন্দা। স্টার্ট-আপ ব্যবসা অর্থাৎ নতুন ব্যবসার মালিকানা গ্রহণযোগ্য নয়। অবশ্যই ইতিমধ্যে চালু রয়েছে এমন ব্যবসা কিনতে হবে এবং আবেদন করার পূর্বে অন্তত ৬ মাস ব্যবসা করার প্রমাণপত্র দেখাতে হবে। প্রথমে অস্থায়ী সাব ক্লাস ৪৯১ ভিসা তারপর নির্ধারিত শর্তপূরণ হলে মিলবে স্থায়ী ভিসা।
অস্ট্রেলিয়ার স্থায়ী বাসিন্দার ভিসা পাওয়ার বেশ কিছু বিকল্প আছে, তবে যাদের মধ্যে উদ্যোক্তা সুলভ চেতনা আছে তাদের জন্য এটি একটি ভালো সুযোগ। ছোট ব্যবসার মালিক সাব ক্লাস ৪৯১ ভিসাটি রাজ্য সরকার কর্তৃক মনোনীত ভিসা। আর বিজনেস স্কিলড মাইগ্রেশন কুইন্সল্যান্ড (BSWQ) হচ্ছে কুইন্সল্যান্ড রাজ্যের মনোনয়ন প্রদানের দপ্তর। এই ভিসাটির সুবিধাগত অন্যতম দিক হলো ৪৯১ ভিসাটিতে কোনো পেশার সীমা নেই। অর্থাৎ, যেকোনো পেশার প্রবাসীরাই এ ভিসায় আবেদন করতে পারবেন। একজন প্রকৌশলী চাইলে বেকারি ব্যবসা কিনতে পারবে আবার একজন ডাক্তার মোটর গ্যারেজ ব্যবসার মালিক হয়ে আবেদন করতে পারবেন।
ভিসাটির কিছু আবশ্যিক শর্ত হলো—
১. সাব ক্লাস ৪৯১ ভিসাটি পয়েন্টভিত্তিক স্কিলড ওয়ার্ক রিজিওনাল (প্রোভিশনাল) ভিসা।
২. ভিসাটিতে শুধু তারাই আবেদন করতে পারবে যারা অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছেন।
৩. ভিসাটিতে আবেদন করতে এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট (EOI) জমা দিতে হবে।
৪. ভিসাটিতে আবেদন করতে ১ লাখ অস্ট্রেলীয় ডলার মূল্যের ব্যবসা কিনতে হবে। সেই সঙ্গে অবশ্যই ক্রয়কৃত ব্যবসার শতভাগ মালিকানা আবেদনকারীর হতে হবে।
৫. স্টার্ট-আপ ব্যবসা অর্থাৎ নতুন ব্যবসার মালিকানা গ্রহণযোগ্য নয়। অবশ্যই ইতিমধ্যে চালু রয়েছে এমন ব্যবসা কিনতে হবে।
৬. ক্রয়কৃত ব্যবসায় কমপক্ষে একজন অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক কর্মী থাকতে হবে যে সপ্তাহে অন্তত ২০ ঘণ্টা কর্মরত থাকবেন। অস্ট্রেলীয় কর্মী আবেদনকারীর পরিবারের সদস্য কিংবা ঠিকাদার হওয়া যাবে না।
৭. আবেদনকারীকে ৫০ পয়েন্ট পেতে হবে। সেই সঙ্গে অবশ্যই নিজের পেশার স্কিল অ্যাসেসমেন্ট থাকতে হবে।
৮. আবেদন করার পূর্বে অন্তত ৬ মাস ব্যবসা করার প্রমাণপত্র দেখাতে হবে তবে আবেদনকারীকে এই ৬ মাস কুইন্সল্যান্ড কিংবা যেকোনো রিজিওনাল এলাকায় বসবাস করলেই হবে। তবে ব্যবসা যে এলাকায় সেখানেই বসবাস করার কোনো বাধ্যকতা নেই। সাব ক্লাস ৪৯১ ভিসার বিস্তারিত জানা যাবে কুইন্সল্যান্ড রাজ্য সরকারের এই ওয়েবসাইট থেকে: migration.qld.gov.au
এবার সাগরে চীনের সঙ্গে লেগেছে অস্ট্রেলিয়ার
এবার সাগরে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে চীনের বিরোধ লেগেছে। দক্ষিণ চীন সাগরে বেইজিংয়ের তৎপরতার তীব্র বিরোধিতা করছে অস্ট্রেলিয়া। দক্ষিণ চীন সাগরের জলসীমান্তের একটি দ্বীপকে চীন বেআইনিভাবে দখল করে রেখেছে বলে জাতিসংঘে দাবি তুলেছে অস্ট্রেলিয়া। এ ব্যাপারে জাতিসংঘের কাছে সরকারি নথি পাঠিয়েছে অস্ট্রেলিয়া সরকার। বিতর্কিত দ্বীপটির চীনা দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে জাতিসংঘে অস্ট্রেলিয়ার স্থায়ী মিশন। চীনের দাবিকে আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে ‘অসংগতিপূর্ণ’ বলে অভিহিত করেছে অস্ট্রেলিয়া। অস্ট্রেলিয়া বলছে, সমুদ্র আইন সম্পর্কিত ১৯৮২ সালের জাতিসংঘ কনভেনশনের সঙ্গে ‘অসংগতিপূর্ণ’ যেকোনো চীনা দাবি অস্ট্রেলিয়ার সরকার প্রত্যাখ্যান করে। চীনের করা দাবির আইনগত কোনো ভিত্তি নেই বলেও উল্লেখ করে অস্ট্রেলিয়া। গত সপ্তাহে দক্ষিণ চীন সাগরে অস্ট্রেলিয়ার যুদ্ধজাহাজের মুখোমুখি হয় চীনা নৌবাহিনী। এ সময় অস্ট্রেলীয় যুদ্ধজাহাজকে বিতর্কিত দ্বীপটির পাশ দিয়ে যেতে বাধা দেয় চীনা নৌবাহিনী। অস্ট্রেলিয়া-যুক্তরাষ্ট্র-জাপানের একটি যৌথ নৌ–মহড়া চলাকালে এই ঘটনা ঘটে। অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, তারা বিতর্কিত দ্বীপটির ১২ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে প্রবেশ করেনি। যদিও অপরিকল্পিত এই মহড়ায় বিদেশি যুদ্ধজাহাজের সঙ্গে মুখোমুখি হওয়ার বিষয়টি নিরাপদ ও পেশাদার উপায়ে সামলে নেওয়া হয়েছিল। জলসীমান্তে অস্ট্রেলিয়ার দ্বিমত পোষণ করা নিয়ে চীনের শিগগিরই আনুষ্ঠানিক মন্তব্য জানানোর কথা রয়েছে।
ফেসবুক ও গুগলকে অর্থ দিতে হবে অস্ট্রেলিয়ার সংবাদের জন্য
অস্ট্রেলিয়ার সংবাদ প্রকাশ করার জন্য দেশটির গণমাধ্যমকে অর্থ প্রদান করতে হতে পারে ফেসবুক ও গুগলকে। গণমাধ্যমের নিজস্বতা ও স্বাধীনতা রক্ষায় নতুন নীতি প্রণয়ন করতে চলেছে অস্ট্রেলিয়ার সরকার। এমনটা হলে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে ফেসবুক ও গুগলের রাজস্বের প্রথম ভাগীদার হতে চলেছে অস্ট্রেলিয়া। অস্ট্রেলীয় প্রতিযোগিতা এবং গ্রাহক কমিশনের (এসিসিসি) প্রকাশিত এক খসড়ায় আজ শনিবার এ কথা বলা হয়। চলতি বছর নাগাদ এ নীতিমালা বাস্তবায়িত হতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার সরকারের আদেশ অনুযায়ী ফেসবুক, গুগলসহ বড় সব প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলোর নতুন চুক্তি হবে।
খসড়া প্রকাশকালে দেশটির অর্থমন্ত্রী জস ফ্রাইডেনবার্গ বলেন, ‘আমরা চাইছি গুগল ও ফেসবুক অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকেরা যেগুলো ব্যবহার ও পছন্দ করে, সে খাতগুলোয় সেবা প্রদান অব্যাহত রাখুক। তবে সেটা অবশ্যই আমরা আমাদের আইন অনুসারে চাই এবং সেটা যেন সুষ্ঠু হয়।’ কোন কোন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান নতুন নীতির আওতায় পড়বে, তা এখনো নিশ্চিত নয় জানিয়ে ফ্রাইডেনবার্গ বলেন, ‘তবে এটা ফেসবুক ও গুগলকে দিয়েই শুরু হবে।’ গণমাধ্যমকে এই অর্থ বার্ষিক কিংবা পণ্যভিত্তিক প্রদান করতে হতে পারে বলে জানিয়েছেন দেশটির তথ্য যোগাযোগমন্ত্রী পল ফ্লেচার। নীতিমালা না মানলে বড় আকারের জরিমানার বিধানও থাকবে। নতুন নীতির খসড়া সংস্করণটি প্রকাশ করেছে কমিশন। আগস্ট মাসের নাগাদ সংস্করণ শেষ হওয়ার পরেই নীতিমালাটি সংসদে উত্থাপিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সরকারের নীতিমালাকে ‘ভারী হস্তক্ষেপ’ বলে উল্লেখ করেন গুগল অস্ট্রেলিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেল সিলভা। সরকারের প্রস্তাবিত নীতিমালাটি হতাশাব্যঞ্জক বলেও উল্লেখ করেন তিনি। অন্যদিকে ফেসবুক এক বিবৃতিতে জানায়, যেহেতু বেশির ভাগ ফেসবুক ব্যবহারকারী মাধ্যমটি সংবাদের জন্য ব্যবহার করে না, তাই ফেসবুকে সংবাদ প্রচার না করলেও ফেসবুকের ওপর এর খুব বেশি প্রভাব পড়বে না।
কাউসার খান: অভিবাসন আইনজীবী, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া। ইমেইল: immiconsultants@gmail.com
|