bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia













কাউসার খানের প্রতিবেদন
সাম্প্রতিক অস্ট্রেলিয়া (২৬)



সিডনিতে বর্ণবাদ বিরোধী বিশাল বিক্ষোভ

একদম শেষ মুহূর্তে বিক্ষোভের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার আদালত। ফলে গত শনিবার বিনা বাধায় বর্ণবাদ বিরোধী বিশাল বিক্ষোভ হয়েছে সিডনিতে। এর আগে শুক্রবার একই আদালত সিডনিতে এই ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ নামে জর্জ ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত এই বিক্ষোভ সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছিলেন। যদিও পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আগেই দলে দলে বিক্ষোভকারীরা জড়ো হতে থাকেন সিডনির টাউন হলে। বিক্ষোভ মিছিল শুরু হওয়ার নির্ধারিত সময় বেলা তিনটার কিছু আগে আদালতে আপিল করা রায়ে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত আসে। সঙ্গে সঙ্গে জয়োল্লাসে ফেটে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। তারপর বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে এই বিক্ষোভ চলে। সিডনির প্রাণকেন্দ্র টাউন হলে জড়ো হন হাজার হাজার সাদা-কালো মানুষ। হাতে হাতে বর্ণবাদ বিরোধী ন্যায়বিচারের দাবির বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড, অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের পতাকাসহ নেচে-গেয়ে এই সংহতি বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দেন তাঁরা। আশপাশের রাস্তা ও সিডনির প্রসিদ্ধ হাইডপার্কেও বিক্ষোভকারীরা জড়ো হয়ে অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসী হত্যাসহ বিভিন্ন নির্যাতনের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। মানুষের মুখে মাস্ক ও হাতে স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে দেখা গেলেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে পারেননি। এই বিক্ষোভে সিডনিতে প্রায় ১০ হাজার মানুষ অংশ নিয়েছেন। সমাবেশে জর্জ ফ্লয়েডের আত্মার শান্তি কামনায় এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।


এ ছাড়া বিক্ষোভ শুরু হওয়ার ঠিক আগে সিডনির টাউন হলে শুধু কালো নয়, সাদাও ম্যাটার করে... এমন ইঙ্গিত-পূর্ণ ‘অল লাইভস ম্যাটার’ প্ল্যাকার্ড হাতে একজন শ্বেতাঙ্গ পুরুষ পাল্টা প্রতিবাদকারী হিসেবে চিৎকার করতে থাকেন। পরে পুলিশ দ্রুত তাঁকে সরিয়ে নেয়। তবে পুলিশ নিয়ে যাওয়ার আগেই তাঁর হাতের প্ল্যাকার্ডটি ছিঁড়ে ফেলেন বিক্ষোভকারীরা।

এর আগে গত শুক্রবার করোনাভাইরাসের রাষ্ট্রীয় বিধিনিষেধের কারণে এই বিক্ষোভ সমাবেশকে ‘অবৈধ’ দাবি করে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল দেশটির নিউ সাউথ ওয়েলস (এনএসডব্লিউ) রাজ্যের পুলিশ। পরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার শঙ্কায় সিডনিতে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ নামের এই বিক্ষোভ মিছিল নিষিদ্ধ করে রায় দিয়েছিলেন দেশটির নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট। জুনের ১ তারিখ থেকে সিডনি শহরের রাজ্য নিউ সাউথ ওয়েলসে করোনাভাইরাস বিধিনিষেধ সহজ করা হলেও এখনো বিশেষ অনুষ্ঠানে রাজ্যটির সামাজিক দূরত্ব আইনে ৫০০ জনের বেশি লোকের জমায়েত অবৈধ।

অন্যদিকে, সিডনিতে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশটি যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ফ্লয়েডের হত্যার প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে হলেও অস্ট্রেলিয়ায় পুলিশ হেফাজতে নিহত হওয়া দেশটির আদিবাসী মানুষের ক্ষোভ প্রকাশের সমাবেশে পরিণত হয়েছিল। সমাবেশে অস্ট্রেলিয়াতে অন্যায়ভাবে আদিবাসীদের নিহত হওয়ার বিচারের দাবি ধ্বনিত হয় বেশি।

২০১৫ সালে সিডনির লং বে জেলখানায় মারা যায় অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসী মানুষ ডেভিড ডুঙ্গয়ে। ডেভিড ডুঙ্গয়ের মা, ল্যাটোনা ডে, শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আগামীকালের সমাবেশে তাঁকে পদযাত্রা থেকে কোনো কিছুই থামাতে পারবে না। ‘আমরা এই ভূমির মালিক এবং আপনারা আমাদের পূর্বপুরুষদের সঙ্গে অতীত থেকে আজ অবধি যা ঘটছে, তা দেখতে পেয়েছেন...বর্ণবাদ এখনো এখানে বিদ্যমান এবং এটাই আমার ছেলেকে হত্যা করেছে।’ শনিবার সিডনির বিক্ষোভে ডেভিড ডুঙ্গয়ের পরিবার সক্রিয়ভাবে উপস্থিত ছিলেন।

অস্ট্রেলিয়ার রয়্যাল কমিশন ইনটু অ্যাবরিজিনাল ডেথসের জাতীয় প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ১৯৯১ সাল থেকে পুলিশ হেফাজতে অস্ট্রেলিয়াতে ৪৩২ জন আদিবাসী মৃত্যুবরণ করেন। সিডনি ছাড়াও অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন, ব্রিজবেন, অ্যাডিলেড, ওয়াগাওয়াগা সহ অন্যান্য বড় বড় শহরেও শান্তিপূর্ণভাবে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ এই বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে।



এবার অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণ না করতে চীনের সর্তকতা

চীন এবার তার দেশের নাগরিকদের অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণ না করতে সর্তক করেছে। দেশটির সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয় শনিবার এ সতর্কতা জারি করে বলে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকে অস্ট্রেলিয়ায় বর্ণবাদ ক্রমবর্ধমান রয়েছে।
সতর্কবার্তায় বলা হয়, চীনা ও এশীয় জনগণ অস্ট্রেলিয়ায় আর নিরাপদ নয়। তাঁদের ওপর বর্ণবাদী আক্রমণ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়ার পর্যটনমন্ত্রী সাইমন বার্মিংহাম বলেন, ‘চীন সরকারের এ দাবি মিথ্যা। আমরা চীনের এই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করি। কারণ, আসলে এর কোনো ভিত্তি নেই।’ অস্ট্রেলিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী মাইকেল ম্যাককর্ম্যাকও চীনের এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, চীনের জনগণের বিরুদ্ধে সহিংসতা বাড়েনি।
তবে চীন-অস্ট্রেলিয়া সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, চীনের হুয়াওয়ে কোম্পানির হাইটেক ৫–জি নেক্সট জেনারেশন নেটওয়ার্ক স্থাপনে অস্ট্রেলিয়া নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় চীন অস্ট্রেলিয়ার ওপর আগে থেকেই ক্ষুব্ধ ছিল। তার ওপর আবার করোনাভাইরাসের বিষয়ে তদন্তের দাবি করায় ধারাবাহিক প্রতিশোধের অংশবিশেষ এই ভ্রমণ না করার সর্তকতা।
এর আগে করোনাভাইরাস নিয়ে অস্ট্রেলিয়া-চীন সম্পর্ক উত্তপ্ত হয়ে উঠলে অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত চেং জিংয়ে অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি বন্ধ করে দেওয়ার প্রকাশ্য হুমকি দিয়েছিলেন। তখন তিনি বলেছিলেন, শিক্ষা, পর্যটন, কৃষিক্ষেত্রের লেনাদেনা চীনা মানুষ হয়তো বর্জন করা শুরু করবে। যে দেশ চীনের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ নয়, সে দেশের ওয়াইন এবং মাংস খেতে চায়নিজরা হয়তো দ্বিতীয়বার চিন্তা করবে।
সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া থেকে রপ্তানি করা বার্লির ওপর ৮০ শতাংশ পর্যন্ত কর বসিয়েছে চীন। ফলে অস্ট্রেলিয়ার ৮৮ শতাংশ চীনে রপ্তানি করা বার্লি উৎপাদন এখন বন্ধের পথে। তারপর স্থগিত করেছে অস্ট্রেলিয়া থেকে মাংস আমদানি।
২০১৮-১৯ সালে ১৪ লাখ চীনা পর্যটক অস্ট্রেলিয়ায় ঘুরতে আসে।



প্রধানমন্ত্রীকে সরে দাঁড়াতে বললেন এক বাড়িওয়ালা

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী গত বৃহস্পতিবার দেশটির নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের গোগং এর নতুন বাড়ি-ঘর তৈরি হচ্ছে এমন একটি বাড়ির সামনে সংবাদকর্মী নিয়ে হাজির। রৌদ্রজ্জ্বল সকাল। বাড়ি-ঘর বানাতে সরকারের প্রণোদনা ঘোষণার সংবাদ সম্মেলন সবে শুরু করেছেন তিনি। এই মুহূর্তে শোনা গেল — 'দয়া করে সবাই ঘাসের ওপর থেকে সরে দাঁড়ান।' ঘর থেকে বের হয়ে বাড়ির মালিক দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের উদ্দেশে এ কথা বলেন। সবাই প্রথমে কিছুটা হকচকিয়ে যান। বাড়ির মালিক আবার কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলেন 'নতুন লাগানো হয়েছে ঘাসগুলো'। প্রধানমন্ত্রী স্বাভাবিকভাবেই সামলে নেন পুরো বিষয়টি। 'দুঃখিত' বলে ঘাস থেকে সরে আসেন কিছুটা পেছনে। তারপর বাড়ির মালিককে প্রধানমন্ত্রী 'ঠিক আছে' বলে আঙ্গুল দেখালে তিনি ধন্যবাদ দিয়ে ঘরে ঢুকে যান। তারপর প্রধানমন্ত্রী সরকারের প্রণোদনা সম্পর্কে সাংবাদিকদের বলতে শুরু করেন। সংবাদ সম্মেলন শেষে মরিসন সাংবাদিকদের রসিকতা করে বলেন, 'সাবধান, ওই বাড়ির ঘাস আবার মাড়াবেন না কিন্তু।'

এ নিয়ে অস্ট্রেলিয়া সরকারের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, 'একজন গর্বিত বাড়ির মালিক কোনো ভুল করেননি।' আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, 'তিনি অনেক চেষ্টা এবং প্রচুর সময় দিয়েছেন ঘাসগুলোর জন্য।'

দেশটির বিভিন্ন গণমাধ্যমে ৫৩ সেকেন্ডের এই ভিডিওটি প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাল হয়ে যায় দেশজুড়ে। সেখানে একজন মন্তব্য করেছেন, ‘বাক-স্বাধীনতা, একে অপরকে সম্মান করা, ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং নিজের ভুলের জন্য দায় স্বীকার করা- অস্ট্রেলিয়ানদের এসব গুণাবলির জন্যই আমি অস্ট্রেলিয়ায় থাকতে পছন্দ করি। অন্য দেশে আপনার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এমন আচরণ করার কথা একবার ভেবে দেখুন।‘



মন্দায় পড়েছে অর্থনীতি

করোনাভাইরাসের পরিস্থিতির উন্নতি হলেও মন্দায় পড়েছে অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতি। এমনটি-ই ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির অর্থমন্ত্রী জশ ফ্রাইডেনবার্গ। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে অস্ট্রেলিয়াজুড়ে নেয়া বিধিনিষেধের কারণে গত মার্চ থেকে দেশটির ব্যবসা বাণিজ্য প্রায় বন্ধ রয়েছে। ফলে এই বছরের মার্চ প্রান্তিকের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমেছে দেশটিতে। বলা হচ্ছে, দেশটির ২৯ বছরে এরকম মন্দায় পড়লো অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতি। সর্বশেষ ১৯৯১ সালে এই অবস্থায় পড়েছিল দেশটি। তখন ১১৯১ সাল অর্থমন্ত্রী পল কিটিং এর সময়। জিডিপিতে মার্চ ও জুন পরপর দু’টি নেতিবাচক প্রান্তিক রেকর্ড করেছিল দেশটি।

অস্ট্রেলিয়ান ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকস (এবিএস) জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাবে কারণে থেমে গেছে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। বেকার হয়ে আছে বিপুল সংখ্যক মানুষ। ফলে ৩১ মার্চে শেষ হয়ে যাওয়া এই বছরের প্রান্তিকে জিডিপি কমে যায় ০.৩ শতাংশ।

পার্লামেন্ট হাউজে গণমাধ্যমকে জশ ফ্রাইডেনবার্গ বলেন, করোনা মহামারির কারণে জুনের প্রান্তিকেও একটা ধস আসছে। সেটা মার্চ প্রান্তিকের চেয়েও বড় ধস হতে যাচ্ছে। পর পর দুটি প্রান্তিকে ধসের ১৯৯১ সালের পর আর দেখেনি অস্ট্রেলিয়া। তবে দেশটির অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দার আশংকা করা হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়াতেও এর প্রভাব পড়বে। কিন্তু বাস্তবিক অবস্থা কি হবে এটা এখনো স্পষ্ট নয়।

অস্ট্রেলিয়ার সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত গণমাধ্যমে এবিসি’র সমালোচনামূলক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অস্ট্রেলিয়া যে মন্দায় আছে সেটা এতো ঘটা করে বলার কিছু নেই। সব কিছু বন্ধ, ফলে অস্ট্রেলিয়া মন্দায় আছে গত কয়েক মাস ধরেই তবে এটার বাস্তব অবস্থা বুঝতে কম করে হলেও সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে । আর বিশ্বব্যাপী যে মন্দার আশংকা করা হচ্ছে সেটা হয়তো ২০২১ সালের শেষ পর্যন্ত চলবে।



কাউসার খান: অভিবাসন আইনজীবী, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া। ইমেইল: immiconsultants@gmail.com





Share on Facebook               Home Page             Published on: 9-Jun-2020

Coming Events:
বৃষ্টির সম্ভাবনার কারণে মেলার তারিখ ১ দিন পিছিয়ে ২১ এপ্রিল ২০২৪ (রবিবার) করা হয়েছে......




A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far