কাউসার খানের প্রতিবেদন সাম্প্রতিক অস্ট্রেলিয়া (২৩) করোনাভাইরাসের এই সময়ে অস্ট্রেলিয়াতে অস্থায়ী ভিসা ধারীদের করণীয়
করোনাভাইরাসের এই দুর্যোগ মোকাবিলার সময়ে অস্ট্রেলিয়া সরকারের অভিবাসন বিভাগ দেশটিতে অবস্থিত অস্থায়ী ভিসাধারীদের এক নির্দেশনা দিয়েছে। এতে বলা হয়, সরকার অস্ট্রেলিয়ানদের স্বাস্থ্য, ব্যবসা, চাকরি ও খাদ্য সরবরাহ সুরক্ষা করতে প্রতিশ্রুতি বদ্ধ। তবে সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হল জনস্বাস্থ্য। ফলে এ জন্য দরকার ভাইরাসটিকে দ্রুত নির্মূল করা। এই নির্মুলকালীন সংকট সময়ে সরকার অস্থায়ী ভিসাধারীদের জন্য কিছু শর্ত শিথিল করেছে। পাশাপাশি করোভাইরাস সম্পর্কিত জনস্বাস্থ্যের সকল পরামর্শ অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছে। সকলকে যথাসম্ভব আইনানুগ বৈধ অবস্থায় থাকতেও বলা হয়েছে তবে কেউ যদি ভাইরাসে আক্রান্ত হন, সেই ব্যক্তির ভিসার অবস্থা যা-ই হোক না কেন তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হবে। নির্দেশিত কিছু ভিসার সংক্ষিপ্ত পরিবর্তন তুলে ধরা হল।
ভ্রমণ ভিসা ধারী অস্ট্রেলিয়ায় ভ্রমণ ভিসায় বর্তমানে ২ লক্ষ ১৩ হাজারেরও বেশি মানুষ রয়েছে। ভ্রমণ ভিসা কেবলমাত্র অস্থায়ীভাবে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। বর্তমান দুর্যোগ পরিস্থিতিতে দেশটি অনেক বিধিনিষেধ আরোপ হয়েছে। এ ছাড়া আন্তঃ রাজ্য সীমান্ত বন্ধসহ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বাধ্যতামূলক এখন অস্ট্রেলিয়ায়। ফলে, এ প্রেক্ষাপটে সকল ভ্রমণ ভিসাধারীদের অস্ট্রেলিয়া থেকে নিজ নিজ দেশে ফেরত যেতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এরপরও যদি কেউ অস্ট্রেলিয়ায় থেকে যেতে হয় তাহলে তাঁকে অবশ্যই বৈধভাবে থাকতে বলা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বর্তমান ভিসা শেষ হওয়ার আগে-ই নতুন আরেকটি ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। যদি কারো ভ্রমণ ভিসায় “No Further Stay“ অর্থাৎ ৮৫০৩, ৮৫৩৪ বা ৮৫৩৫ শর্ত থাকে এবং ভিসার মেয়াদ দুই মাসেরও কম থাকে তবে প্রথমে এই শর্ত মওকুফ করার জন্য আবেদন করতে হবে। আর যদি এই শর্ত না থাকে, তবে সরাসরি আরেকটি ভ্রমণ ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। এ ছাড়া, কোন কারণে কারো ভিসার মেয়াদ যদি শেষ হয়ে যেয়ে থাকে তাহলে দ্রুত অভিবাসন দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
শিক্ষার্থী ভিসা ধারী শিক্ষার্থী ভিসার শর্তে সরকার সাধারণ সময়ের চেয়ে নমনীয়। কাউকেই সরাসরি অস্ট্রেলিয়া ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়নি। শুধুমাত্র যারা নিজের খরচ বহন করতে অক্ষম তাঁরা নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে। এ ছাড়া, ক্লাসে উপস্থিতি বা অনলাইন শিক্ষার ব্যবহারে অনেক শর্তই সাময়িক শিথিল করেছে দেশটির অভিবাসন বিভাগ। তা ছাড়া, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ৪০ ঘণ্টা কাজের সীমাবদ্ধতা সাময়িকভাবে শিথিল করেছে। বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে আন্তর্জাতিক ছাত্র যারা বয়স্ক পরিচর্যা খাতে কাজ করছেন তাঁরা পাক্ষিক ৪০ ঘণ্টারও বেশি সময় কাজ করতে পারবেন তবে যারা উচ্চ চাহিদার কারণে দেশটির প্রধান সুপারমার্কেটগুলিতে কিছুদিন ধরে ৪০ ঘণ্টার বেশি কাজ করেছেন তাঁদেরকে আগামী ১ মে থেকে আবারও ৪০ ঘণ্টায় ফিরে আসার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া, সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে যেসব শিক্ষার্থী প্রচণ্ড অর্থকষ্ট আছেন তাঁদের সীমিত সহযোগিতা করছে।
অস্থায়ী কর্ম ভিসা ধারী কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যদি সাময়িক বন্ধ হয়ে থাকে আর এ কারণে কারো কাজ না থাকে তাহলে তাঁদের ভিসার বৈধতা বজায় থাকবে এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্বাভাবিক ব্যবস্থা অনুযায়ী তাঁদের ভিসা বাড়ানোর সুযোগ পাবে।
ব্যবসায়ীরা ভিসা শর্ত লঙ্ঘন না করে বা ব্যবসায়ের মালিকের বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন না করে ভিসা ধারীর ঘণ্টা হ্রাস করতে সক্ষম হবে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে কেউ যদি স্থায়ীভাবে চাকরি হারান তবে তাঁকে বিকল্প হিসেবে ৬০ দিনের মধ্যে অন্য নিয়োগকর্তার সন্ধান করতে হবে। তবে এর মধ্যে নিয়োগকর্তা হিসেবে অন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান না পেলে অস্ট্রেলিয়া থেকে চলে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া, অন্যান্য কোন কারণে যদি কেউ অস্ট্রেলিয়া প্রস্থান করতে না পারে তাহলে দ্রুত দেশটির অভিবাসন দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। করোনাভাইরাসের কারণে অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থিত অস্থায়ী ভিসাধারীদের জন্য আরো বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে অস্ট্রেলিয়া সরকারের অভিবাসন বিভাগের এই ওয়েব লিঙ্কে https://covid19.homeaffairs.gov.au
আটকে পড়া বাংলাদেশিদের জন্য দূতাবাসের উদ্যোগ অস্ট্রেলিয়াস্ত বাংলাদেশ হাই কমিশন সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের পরিস্থিতির কারণে অস্ট্রেলিয়ায় আটকে পড়েছেন কয়েক শত ভ্রমণ ভিসা ধারী। তাঁদেরকে সম্ভাব্য সকল ধরণের সহযোগিতা করার জন্য হাই কমিশনের কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক কাজ করছেন। জরুরী প্রয়োজনে দূতাবাসের ৩ টি টেলিফোন নাম্বারে +৬১ ৪১০ ৬১৬ ৮০৩, +৬১ ৪১৬ ২৮৫ ০৬৯, +৬১ ৪৭৬ ০২৫ ০৩২ এবং সিডনিতে অবস্থিত বাংলাদেশ কনসুলেট জেনারেলের +৬১ ৪২৪ ২৩৭ ৪২২, +৬১ ৪৮০ ২৫৫ ৬২৮ এই নাম্বারে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করা যাবে। এই সংকটময় পরিস্থিতিতে বাংলাদেশি নাগরিকদের প্রয়োজনীয় তথ্যের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হাই কমিশন ওয়েব পোর্টালে একটি অনলাইন নিবন্ধনের লিঙ্ক দিয়েছেন। এই লিঙ্কে বাংলাদেশিদের নিবন্ধন করতে অনুরোধ করা হয়েছে। https://www.bhcanberra.com/covid-19/needs-assessment
কাউসার খান: অভিবাসন আইনজীবী, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া। ইমেইল: immiconsultants@gmail.com
|