কাউসার খানের প্রতিবেদন সাম্প্রতিক অস্ট্রেলিয়া (১৫)
অস্ট্রেলিয়ায় জাল হচ্ছে বাংলাদেশি ভিসা
অস্ট্রেলিয়ায় জাল করা হচ্ছে বাংলাদেশের ভিসা। এ বিষয়টি জানাজানি হয়েছে বাংলাদেশের ভুয়া ভিসা-ধারীরা অস্ট্রেলিয়া থেকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসার পর। তাদের আটক করে ইমিগ্রেশন পুলিশ। তারা সকলেই অস্ট্রেলিয়ার আশ্রয়প্রার্থী রোহিঙ্গা শরণার্থী। ভুয়া ভ্রমণ ভিসায় বাংলাদেশে প্রবেশের সময় বিমানবন্দরেই ধরা পড়েন তারা। আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের অস্ট্রেলিয়ায় ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। গত ২০ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে আবারও ধরা পড়েন পাঁচজন বাংলাদেশের ভুয়া ভিসা-ধারী। অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ হাই কমিশন এই প্রতিবেদকের কাছে বিষয়টির সত্যটা নিশ্চিত করেছে। সব মিলে গত দুই সপ্তাহে হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে ভুয়া ভিসা-ধারী প্রায় ২১ জনের আটক হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। জানা গেছে, ভুয়া ভিসা-ধারীরা ভ্রমণের জন্য অস্ট্রেলিয়ার কনভেনশন ট্রাভেল ডকুমেন্ট (সিটিডি) ব্যবহার করেছিলেন। সিটিডি পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া শরণার্থীদের বিশেষ ধরনের পাসপোর্ট ও পরিচয়পত্র। সিটিডিতে বাংলাদেশের ভুয়া স্ট্যাম্প ও হাতে লেখা ভিসা ব্যবহার করেছিলেন তারা। ভিসাগুলোতে ব্যবহৃত হাইকমিশনের স্ট্যাম্প ও কমিশনের দ্বিতীয় সচিব শামীমা পারভিনের স্বাক্ষরটি নকল করা হয়েছিল। ভুয়া ভিসার মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়া থেকে বের হওয়ার সময় কোনো বাধার সম্মুখীন হননি রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। কারণ ভুয়া ভিসাগুলো মেশিন রিডেবল না হওয়ায় অস্ট্রেলিয়ার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভিসার সত্যতা খতিয়ে দেখার সুযোগ থাকে না। যদিও চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকেই মেশিন রিডেবল ভিসা চালু করেছে বাংলাদেশ হাই কমিশন। তবে ভুয়া ভিসা সম্পর্কে এখনো অস্ট্রেলিয়ার সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়নি বলে জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ সুফিউর রহমান। ভিসা জালিয়াতি চক্রকে চিহ্নিত করার পরপরই তাদের জানানো হবে বলে জানান তিনি। বাংলাদেশ বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ও হাই কমিশন ইতিমধ্যেই তদন্তের কাজ শুরু করেছে। অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যম এসবিএস বাংলায় এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে আজ। প্রতিবেদনটিতে জাল ভিসায় বাংলাদেশে আটক মোহাম্মদ সালাম এবং প্রতারিত হাশিম ও হোসাইনের সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হয়। এরা সকলেই জাল ভিসায় প্রতারিত। সালাম জানান, সরাসরি হাইকমিশনের বদলে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে বাংলাদেশে ভ্রমণের ভিসা নেন। তবে ভিসাগুলো যে নকল এ বিষয়ে কিছুই জানেন না তিনি। হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরেই কর্তৃপক্ষ জানায় তার ভিসা ভুয়া। এরপর তাঁকে অস্ট্রেলিয়ায় ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত আরও বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশ হাই কমিশনে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তাঁদের বাংলাদেশি ভিসাগুলোও নকল। তারাও ভিসা নকল হওয়ার বিষয়টি জানতেন না। হাই কমিশন সূত্রে জানা যায়, হজরত শাহজালাল বিমানবন্দর বর্তমানে শুধুমাত্র মেশিন রিডেবল ভিসা-ধারীকেই বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে।
সিডনিতে বাংলাদেশিদের বড়দিন উদযাপন
অস্ট্রেলিয়া জুড়ে আজ উদযাপিত হয়েছে খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব বড়দিন। দিনটি উপলক্ষে সিডনিতে বসবাসরত বাংলাদেশি খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা মহানন্দে মেতে উঠেছিলেন দিনব্যাপী নানা আয়োজনে। গির্জা থেকে শুরু করে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী প্রতিটি বাংলাদেশির ঘরেই চলে নানা আয়োজনের তোড়জোড়। পরিবার ও বন্ধু স্বজনদের সঙ্গে অনেকেই ঘরেই আনন্দঘন পরিবেশে পালন করেন দিনটি। আবার অনেকে সিডনির বিভিন্ন পিকনিক স্পটে দিনটি উদযাপন করেন। বড়দিনের উৎসবে সিডনির বিভিন্ন বাংলাদেশি খ্রিষ্টান সংগঠনের উদ্যোগেও আয়োজন করা হয় বিভিন্ন অনুষ্ঠান। দিনব্যাপী আয়োজনগুলোর মধ্যে ছিল প্রার্থনা, বড়দিনের সংগীত পরিবেশন ও সকলের মধ্যে সান্তা ক্লজের উপহার বিতরণসহ আরও নানা আয়োজন। এ ছাড়া, প্রতিবছরের মতো সিডনির বাংলাদেশ খ্রিষ্টান ফেলোশিপ অব অস্ট্রেলিয়ার পক্ষ থেকেও বড়দিন উদযাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রবাসী বাংলাদেশিরা সপরিবারে অংশগ্রহণ করেন। এদিকে বড়দিনের উৎসবে অস্ট্রেলিয়ায় ছুটির দিন হওয়ায় জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলেই উৎসবমুখর থাকেন। বেশির ভাগ বাংলাদেশিরাই পরিবার, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে একটি অবসর দিন কাটান। অনেকে পরিবার-পরিজনসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যান।
সিডনির অলিম্পিক পার্কে বৈশাখী মেলা ২৩ মার্চ
প্রতি বছরের মতো অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে মহাসমারোহে আগামী বছরের ২৩ মার্চ শনিবার উদযাপিত হতে যাচ্ছে বাংলা নববর্ষ ১৪২৬। এ উপলক্ষে আগামী বছরও বাংলাদেশের বাইরে সবচেয়ে বড় বৈশাখী মেলার আসর বসতে চলেছে বিশ্বের অন্যতম ইভেন্ট ভেন্যু সিডনি অলিম্পিক পার্কের এএনজেড অলিম্পিক স্টেডিয়ামে। বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন ও মেলার তারিখ ঘোষণা নিয়ে আজ রোববার (২৩ ডিসেম্বর) সিডনির রকডেলের এক রেস্তোরাঁয় সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করে মেলার আয়োজক বঙ্গবন্ধু কাউন্সিল অস্ট্রেলিয়া। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি শেখ শামীমুল হক জানান, আগামী ২৩ মার্চ শনিবার দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনে মেলার বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেন আয়োজকেরা। এ সময় মেলায় বিভিন্ন জিনিসপত্রের মনগড়া দামের বিষয়টি উঠে আসে। এর মধ্যে গত বছর মেলায় ৩ ডলারে এক কাপ চা বিক্রি। মেলায় আগত অনেকে এ ব্যাপারে অভিযোগ করে বলেছিলেন, এই দাম অনেক বেশি। এ অভিযোগসহ আরও কিছু বিষয় সাংবাদিকেরা আয়োজকদের কাছে তুলে ধরেন। প্রতিবারের মতো এবারও মেলায় বিশেষ আকর্ষণ থাকছে বলে জানায় আয়োজকেরা। সবাইকে আগাম নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে মেলায় আমন্ত্রণ জানিয়েছে বঙ্গবন্ধু কাউন্সিল অস্ট্রেলিয়া।
মধ্যপ্রাচ্যে সেনা রাখছে অস্ট্রেলিয়া
ইরাক এবং আফগানিস্তানে অস্ট্রেলিয়ান সেনাবাহিনীর সক্রিয়তা অব্যাহত থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিরিয়া ও আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণার পরই মরিসন এ কথা জানান। মরিসন জানিয়েছেন, অস্ট্রেলিয়ার ছয় শতাধিক সেনা মধ্যপ্রাচ্যের দেশ দুটির সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ ও তাদের সঙ্গে বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে তিনি প্রভাবিত নন বলেও মন্তব্য করেন মরিসন। দেশগুলোতে জঙ্গি হামলা প্রতিহত হয়েছে—ট্রাম্পের এমন দাবির সঙ্গেও একমত প্রকাশ করেননি অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী। ইরাকের রাজধানী বাগদাদে অবস্থানরত অস্ট্রেলিয়ান সেনাবাহিনীর তাজি সামরিক কমপ্লেক্স সফর শেষে গত রোববার অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে এসে এসব কথা জানান মরিসন। মরিসন তাঁর এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা এখনো সন্তুষ্ট নই। অস্ট্রেলিয়া অঞ্চলগুলোতে নিরাপত্তা, মানবিক ও উন্নয়ন সহায়তা প্রদান জারি রাখবে।’ ইসলামিক স্টেটের কর্মকাণ্ডে এখনো শঙ্কা রয়েছে জানিয়ে মরিসন বলেন, ‘আমাদের সম্ভাব্য যেকোনো পরিস্থিতির জন্য সচেতন থাকতে হবে।’ ব্রিটেনের নিরাপত্তা মন্ত্রী বেন ওয়ালেস আরও জঙ্গি হামলার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আল-কায়েদা নীরবে ইউরোপের দিকে আক্রমণের জন্য তৈরি হচ্ছে। তারা বিমান ও বিমানবন্দরে হামলার পরিকল্পনা করছে। তাঁর এই বার্তার প্রতিক্রিয়ায় মরিসন বলেন, ‘ধর্মের নামে হওয়া চরমপন্থি সহিংসতার ব্যাপারে আমাদের সরকার অবগত ও সচেতন রয়েছে।’ মধ্যপ্রাচ্য থেকে অস্ট্রেলিয়ান সেনা না সরানোর এমন সিদ্ধান্ত দেশটির আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে সরকারি দল লিবারেল পার্টির অবস্থানে কোনো প্রভাব ফেলবে কি না, তা নিয়ে ভাবছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। তবে মরিসনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে বিরোধী দল লেবার পার্টি কোনো মন্তব্য করেনি।
ক্যানসার আক্রান্ত বাংলাদেশির চিকিৎসার জন্য সিডনিতে তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগ
মিষ্টি স্বভাবের ৯ বছরের একটি কন্যা-শিশু রয়েছে ফরিদপুরের ছেলে মোফাজ্জেল হোসাইন মুরাদের ঘরে। তাঁর সংসার আলো করে গত ১৮ ডিসেম্বর আরেকটি ফুটফুটে শিশুর জন্ম হয়। তবে নবজাতক সন্তানকে দেখার সৌভাগ্য এখনো হয়ে ওঠেনি তাঁর। মুরাদ জানে না তাঁর চঞ্চল মেয়ের সঙ্গে কবে আবার খেলা করবে! নিজের ছোট্ট সন্তানকে কবে প্রথম কোলে তুলে নেবে। ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মুরাদ এখন ভারতের চেন্নাইয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সুস্থতার জন্য শিগগিরই প্রতিস্থাপন করাতে হবে তাঁর বোনম্যারো। আর এ জন্য মুরাদের প্রয়োজন প্রায় ৫০ লাখ টাকা। মুরাদের চিকিৎসার অর্থ জোগাতে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছেন কিছু বাংলাদেশি। তাদের উদ্যোগে আগামী ১৩ জানুয়ারি সিডনির রকডেলে পালকি রেস্টুরেন্টে সন্ধ্যা ৭টায় এক নৈশভোজের আয়োজন করা হয়েছে। এই আয়োজন থেকে মুরাদের চিকিৎসার জন্য তহবিল সংগ্রহ করা হবে। অনুষ্ঠানের ন্যূনতম প্রবেশ মূল্য ৫০ অস্ট্রেলীয় ডলার। এই তহবিল সংগ্রহের জন্য বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া দুর্যোগ ত্রাণ কমিটি তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে একটি ঘোষণা দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের মানবিক এই কার্যক্রমে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তহবিল সংগ্রহ আয়োজকদের মধ্যে অন্যতম ও মুরাদের মামা সুহৃদ সোহান হক বলেন, ‘মানুষ মানুষের জন্য! আপনাদের মতো মহৎ প্রাণ কিছু মানুষের মানবিকতা আর আর্থিক সহযোগিতাই পারে একটা সম্ভাবনাময় জীবনকে নতুন করে স্বপ্ন দেখাতে।’ তহবিল সংগ্রহ আয়োজনে অগ্রিম প্রবেশের মূল্য ও যেকোনো সহযোগিতা পাঠানো যাবে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া দুর্যোগ ত্রাণ কমিটির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। সহযোগিতা পাঠানোর ঠিকানা—অ্যাকাউন্টের নাম: Bangladesh Australia Disaster Relief Committee. BSB: 062-223, Account No: 10914370, Commonwealth Bank, Australia.
কাউসার খান: অভিবাসন আইনজীবী, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া। ইমেইল: immiconsultants@gmail.com
|