কাউসার খানের প্রতিবেদন সাম্প্রতিক অস্ট্রেলিয়া (১৪)
অস্ট্রেলিয়ার জুড়ে বিজয় দিবস পালন
অস্ট্রেলিয়ার জুড়ে যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত হয়েছে বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবসের। প্রতিটি উৎসব প্রাঙ্গণেই ছিল অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের সমাগম। দিনভর নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিজয় দিবস পালনের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয় ওই সব অনুষ্ঠানে।
ক্যানবেরা:
অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরায় পূর্ণ মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস উদযাপন করেছে বাংলাদেশ হাই কমিশন। দিনব্যাপী অন্যান্য অনুষ্ঠানের সঙ্গে সন্ধ্যায় হাই কমিশনে বিজয় দিবসের তাৎপর্য বিষয়ক এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। পরে শিশু-কিশোরদের পরিবেশনায় এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সিডনি:
বিজয় দিবস উদযাপনকে ঘিরে সিডনির ওয়ালিপার্কে বাংলা মেলার আয়োজন করা হয়। দিনব্যাপী আয়োজিত এই বাংলা মেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংবলিত বিভিন্ন পরিবেশনার আয়োজন করা হয়। লাকেম্বায় বিজয় দিবস উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে অস্থায়ী স্মৃতিসৌধ স্থাপন করা হয়।সিডনিতে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের অংশগ্রহণে মহান বিজয় দিবস উদযাপন করেছে ক্যাম্বেল টাউন বাংলা স্কুল। বিজয় দিবস উপলক্ষে সিডনির নীপবন পল্লী ও খামার বাড়ি যৌথভাবে আয়োজন করে আমাদের প্রাণের বিজয় মেলা ২০১৮।
মেলবোর্ন:
অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া রাজ্যের রাজধানী মেলবোর্ন জুড়ে আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপিত হয়েছে বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস। মেলবোর্নের প্রতিটি আয়োজনেই ছিল প্রবাসী বাংলাদেশিদের উৎসবমুখর অংশগ্রহণ। দিনব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস ও মহান বিজয় দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরা হয় মেলবোর্নের বাংলাদেশি নতুন প্রজন্মের কাছে। ফোর্থ ডাইমেনশন স্কুল অব ড্যান্স, ওয়েস্টার্ন রিজিয়ন বাংলা স্কুল, সান শাইন বাংলা স্কুল ও বাংলা ভাষা ও সাংস্কৃতিক বিদ্যালয়সহ আরও অনেক সংগঠন বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এ দিবস উপলক্ষে।
ব্রিসবেন: অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড রাজ্যের রাজধানী ব্রিসবেনে সাড়ম্বরে উদযাপিত হয়েছে মহান বিজয় দিবস। এ উপলক্ষে ব্রিসবেনের ক্যানন হিল এ্যাংলিকান কলেজ প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয় বিজয় দিবস কনসার্টের। অনুষ্ঠানে অংশ নেয় বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্যান্ডদল ওয়ারফেজ। এ ছাড়া, স্থানীয় বাংলাদেশিদের ব্যান্ডদল স্যানসনম দেশের গান পরিবেশন করে।
অ্যাডিলেড:
অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডে বিভিন্ন সংস্কৃতির মেলবন্ধনে বর্ণিল ভাবে উদযাপিত হয়েছে বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস। অ্যাডিলেডের সেন্ট হেলেনস পার্কে এ উপলক্ষে আয়োজন করা হয় বহু সাংস্কৃতিক বিজয় মেলার। ২৫টিরও বেশি দেশের হাজারের বেশি দর্শক অংশগ্রহণ করেন দিনব্যাপী এই বিজয় মেলায়। অনুষ্ঠানে ১০টি দেশের সাংস্কৃতিক সংগঠন নিজেদের সংস্কৃতি তুলে ধরে বিভিন্ন পরিবেশনার মধ্য দিয়ে। তাদের অংশগ্রহণ ভিন্ন মাত্রার আনন্দ যোগ করে।
পার্থ:
অস্ট্রেলিয়ার ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া রাজ্যের রাজধানী পার্থে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে মহান বিজয় দিবস। পার্থে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য অস্থায়ী স্মৃতিসৌধে স্থাপন করা হয়। বিজয় দিবসের দিন সকাল থেকেই প্রবাসী বাংলাদেশিরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানান। এ ছাড়া, বিজয় দিবস উপলক্ষে একটি ফুটবল ম্যাচেরও আয়োজন করা হয়।
ডারউইন:
আনন্দঘন পরিবেশে অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাঞ্চল রাজ্যের রাজধানী ডারউইনে পালিত হয়েছে মহান বিজয় দিবস। এ উপলক্ষে ডারউইনে আয়োজন করা হয় বিজয় দিবস কনসার্ট। এর আয়োজন করেছিল চার্লস ডারউইন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা।
এ ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া জুড়ে আরও অনেক বাংলাদেশি সংগঠন যথাযোগ্য মর্যাদায় বিজয় দিবস উদযাপন করে।
বৈরি আবহাওয়ার কবলে সিডনি
ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিসহ পূর্ব উপকূলে মারাত্মক বৈরী আবহাওয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে নিউ সাউথ ওয়েলস ও কুইন্সল্যান্ড রাজ্যের উপকূলবর্তী এলাকায় বজ্রপাতসহ ঝড়বৃষ্টিতে নাকাল হয়ে পড়েছে সাধারণ জনজীবন। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে গণ পরিবহনের বিলম্বসহ গত কয়েকদিনে সিডনির ১২৪টি অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া সিডনির অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া সহ বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনার ঘটনাও ঘটেছে। দেশটির বাসিন্দাদের নিরাপদে থাকার সতর্কবার্তা জারি করে দেশটির আবহাওয়া অধিদপ্তর। সিডনির নিকটবর্তী সমুদ্রে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ওয়েনের প্রভাবে বিরূপ আবহাওয়ার দেখা দেয় সিডনি ও আশপাশের এলাকায়। ঝড়বৃষ্টির দেখা দেয় নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের পূর্বাঞ্চলে। সিডনির সর্বোচ্চ বৃষ্টির হয় হার্সলে পার্কে, ২৭ মিলিমিটার। রাজ্য জুড়ে প্রায় ৬০ জনকে ঝড়ের কবল থেকে উদ্ধার করে জরুরি সেবা দল। রাজ্যের জরুরি সেবা গত কয়েকদিনে প্রায় ১ হাজার ৩০টি সাহায্যের জরুরি কল পায়। এ ছাড়া গোটা সিডনিতে ঝড়ের কারণে প্রায় ৪৬ হাজার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার অভিযোগ আসে। তাছাড়া, গতকাল বৃহস্পতিবার ২০ ডিসেম্বর ২০ বছরের ইতিহাসে সবচে শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এতে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
সিডনিতে বার্ষিক ক্রিকেটার্স নৈশ উৎসব
অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের নিয়ে সিডনিতে হয়ে গেল বার্ষিক ক্রিকেটার্স নৈশ উৎসব ২০১৮। গত রোববার (১৬ ডিসেম্বর) সিডনির রিভারউডে কনকা ডরো ফাংশন সেন্টারের ক্ল্যাসিক বলরুমে সন্ধ্যায় আয়োজন করা হয় এই অনুষ্ঠান। জমকালো এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন, বহু সংস্কৃতি ও নাগরিকত্ব মন্ত্রী ডেভিড কোলম্যান। এ ছাড়া বাংলাদেশি কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিসহ বিভিন্ন ক্লাবের খেলোয়াড়েরা উপস্থিত ছিলেন। প্রতিবারের মতো এবারেও নৈশোৎসবের আয়োজন করে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ স্পোর্টস অ্যান্ড কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন (এবসকা)। বর্ণিল এই আয়োজন অন্য দেশের প্রবাসীদের কাছে বাংলাদেশি কমিউনিটির ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করছে বলে জানান এবসকার সভাপতি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম।
সিডনিতে বিশ্বের সেরা সৈকতপথ
অস্ট্রেলিয়ার সেরা দুটি সমুদ্রসৈকতকে এক করে দিয়ে সিডনিতে নির্মাণের শেষ পর্যায়ে ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ বিশ্ব সেরা সৈকতপথ। আর এটি বিশ্বের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন হেঁটে যাওয়ার সৈকত পথও হবে বলে দাবি নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্য সরকারের। সিডনির বিখ্যাত বন্ডাই সমুদ্রসৈকত থেকে শুরু হয়ে এই পায়ে হাঁটার রাস্তা শেষ হবে একদম ম্যানলি সমুদ্রসৈকতে এসে। গোটা রাস্তাটিই সমুদ্রের তীর ঘেঁষে নির্মাণ করা হচ্ছে। রাস্তাটি শুধু যে দুটি বিখ্যাত সমুদ্রসৈকতকে এক করবে কেবল তা নয়। এই রাস্তাটির পাশ কেটে যাবে সিডনির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির। রাস্তাটি সিডনির বিভিন্ন বিখ্যাত ও দর্শনীয় স্থান অপেরা হাউজ, হারবার ব্রিজ, মিসেস ম্যাকওয়ারিজ চেয়ার, নর্থ হেড, টরোঙ্গা চিড়িয়াখানা ও ক্লিফটন গার্ডেনসহ আরও অনেক আকর্ষণীয় স্থানের পাশ দিয়ে যাবে।
কাউসার খান: অভিবাসন আইনজীবী, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া। ইমেইল: immiconsultants@gmail.com
|