কাউসার খানের প্রতিবেদন সাম্প্রতিক অস্ট্রেলিয়া (১৩)
সিডনিতে বিজয় দিবস উদযাপন শুরু
অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে হয়ে গেল বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবসের ৪৭ বছর পূর্তি উৎসব। ‘এসো মেতে উঠি বিজয়ের আনন্দে’ স্লোগান নিয়ে গত রোববার (৯ ডিসেম্বর) সিডনির গ্লেনফিল্ড কমিউনিটি হলে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। একাত্তরের চেতনায় অস্ট্রেলিয়ায় বেড়ে ওঠা বাংলাদেশি নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করতে বিজয় দিবস উৎসবের আয়োজন করে সিডনি বাঙালি কমিউনিটি। আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন রাজ্য (নিউ সাউথ ওয়েলস) সাংসদ অনুলাক চান্টিভঙ্গ। এ ছাড়া, স্থানীয় বিশিষ্ট বাংলাদেশিসহ অন্যান্য আরও অনেকে উপস্থিতি ছিলেন। অনুষ্ঠানে শিশু-কিশোরদের পরিবেশনার পাশাপাশি ছিল আরও কিছু পরিবেশনা। মুক্তিযুদ্ধ ও দেশের গান এবং আবৃত্তি পরিবেশন করেন স্থানীয় অন্যান্য শিল্পীরা। অনুষ্ঠানে বাঙালি শিশুদের পরিবেশনায় মুগ্ধতা প্রকাশ করেন অনুলাক চান্টিভঙ্গ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সেলিমা বেগম। সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন অজয় দত্ত।
বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন প্রবাসীরা
বাংলাদেশি নাগরিক যারা বিদেশে বসবাস করেন, তারা জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন। এ ব্যাপারে একটি নির্দেশনা জারি করেছে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। গত ৩০ নভেম্বর কমিশনের যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান স্বাক্ষরিত স্মারকপত্রে এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে আসন্ন নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন প্রবাসীরা। অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ হাই কমিশন এক বার্তায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রেরিত বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ওই স্মারকপত্রটি প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের এই স্মারকপত্রে বলা হয়েছে, গণ প্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেওয়ার অধিকার রয়েছে এমন ব্যক্তিদের মধ্যে প্রবাসীরাও রয়েছেন। তাই প্রবাসী বাংলাদেশিদের আবেদনের ভিত্তিতে রিটার্নিং অফিসার প্রবাসীদের আছে ডাকযোগে পোস্টাল ব্যালট প্রেরণ করবেন। প্রবাসীরা সেই পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট প্রদান করে তা আবার রিটার্নিং অফিসারের কাছে ফেরত পাঠাবেন। একজন প্রবাসী বাংলাদেশের যে এলাকার ভোটার, তিনি সেই সেই এলাকার হয়েই ভোট প্রদানের সুযোগ পাবেন। এ প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ পৃথক ও স্বতন্ত্র। সেই সঙ্গে পোস্টাল ব্যালট আদান-প্রদানের ডাক মাশুল খরচ প্রবাসী ভোটারকেই বহন করতে হবে। এর কারণ হিসেবে স্মারকপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘যেহেতু আন্তর্জাতিক বিধানমতে ডাকমাশুল আদায় স্ব স্ব দেশের আওতাভুক্ত, তাই নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের পক্ষে বৈদেশিক মুদ্রায় বিভিন্ন দেশের ডাকমাশুল পরিশোধ করা সম্ভব নয়।’ প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগে নির্বাচন কমিশনের আদেশের কথা জানিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনার কাউন্সিলর (রাজনৈতিক) ও চ্যান্সারি প্রধান ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘আমরা নির্দেশনা পেয়েছি সার্কুলার প্রকাশ করার। এর বাইরে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।’ দীর্ঘদিনের দাবিদাওয়ার পর প্রবাসীদের ভোট প্রদানের আবেদন নির্বাচন কমিশন আমলে নেওয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে। প্রবাসীদের ভোট গ্রহণে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশের খবরে আনন্দ ছড়িয়ে পড়েছে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে। দেশের নির্বাচনে প্রবাসীদের অংশ নেওয়ার ইচ্ছার কথা সরকার পক্ষ আমলে নিয়েছে বলে আনন্দ প্রকাশ করেন অনেকেই। বিষয়টিকে সরকারের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগের একটি ইতিবাচক দিক হিসেবে দেখছেন প্রবাসীরা। তবে বিষয়টিকে সুখবরের পাশাপাশি নিরাশা হিসেবেও দেখছেন অনেকেই। তারা বলেন, ভোটাধিকার প্রয়োগের খবরটা আনন্দের, তবে এর যথোপযোগী কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এত কম সময়ের মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট প্রদান একটি সময়সাপেক্ষ এবং প্রায় অবাস্তব। সিডনি প্রবাসী ফাখরুজ্জামান লেনিন এ বিষয়ে বলেন, আমরা আনন্দিত এটা জেনে যে, সরকার প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের ইচ্ছার কথা আমলে নিয়েছে। তবে একই সঙ্গে আমাদের আশার আলো জ্বলেও নিভে গেল এ জন্য যে, এই পদক্ষেপটা মোটেও বাস্তবসম্মত নয়। আমরা জানি, প্রবাসীদের ভোট গ্রহণের প্রক্রিয়াটি একটি জটিল। প্রবাসীরা শুধু দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মার্কাতেই ভোট দিয়ে দিল বিষয়টি এতটা সাধারণ নয়। তাই সরকারের একটি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা করার প্রয়োজন ছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেলবোর্ন প্রবাসী একজন সরকারের এ পদক্ষেপে খুশি হয়েছেন জানিয়ে বলেন, ‘তবে উদ্যোগটি বাস্তবসম্মত না হওয়ায় প্রবাসীদের জন্য এখনই ফলপ্রসূ হবে না। তিনি আরও বলেন, তবুও শুরুটা যেহেতু হয়েছে, আশা করছি ভবিষ্যতে সরকার আরও বাস্তবিক কোনো পরিকল্পনা করবেন আমাদের জন্য।’ বাংলাদেশের নির্বাচনে ভোট প্রদানের ইচ্ছার কথা বহু বছর ধরেই জানিয়ে আসছিলেন অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশিরা। এ নিয়ে নানা সময়ে বিভিন্ন উপায়ে নিজেদের দাবি সরকারে কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করে প্রবাসীরা। সরকারের বিভিন্ন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি অস্ট্রেলিয়া সফরে এলে তাঁদের কাছেও নিজেদের অধিকার আদায়ের কথা জানিয়েছেন প্রবাসীরা। সরকারও বিভিন্ন সময়ে প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগ বাস্তবায়িত করার আশার বাণী শুনিয়ে আসছে বহু বছর ধরেই। এরই ধারাবাহিকতায় আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার কথা জানায় বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন।
আবারও পড়ছে অস্ট্রেলিয়ার বসতবাড়ির দাম
গত সেপ্টেম্বরের পর আবারও বসতবাড়ির দাম কমতে শুরু করেছে অস্ট্রেলিয়ায়। আর বাজার ধসের হার দেশটির বিগত ১৯৯০ সালের ভূসম্পত্তি বাজার ধসের হারকেও ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন বাজার-বিশ্লেষকেরা। অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম শহর সিডনিতে গত মাসে বসতবাড়ির দাম কমার হার ১.৪ শতাংশ বেড়ে যায়, আর মেলবোর্নে ১ শতাংশ। পুরো অস্ট্রেলিয়ায় গড়ে বসতবাড়ির দাম কমেছে ৪.১ শতাংশ। আর্থিক প্রতিষ্ঠান কোরলজিকের এক প্রতিবেদনে আজ সোমবার এসব কথা বলা হয়েছে। কোরলজিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী বড়দিনের আগেই এই বসতবাড়ির দামের নিম্নগতি আরও বাড়বে। গত জুলাইয়ে সিডনির বসতবাড়ির দাম গড়ে ৯.৫ ৬ শতাংশ কমে যায়, যেখানে অস্ট্রেলিয়ার ঐতিহাসিক ১৯৮৯-৯১ সালের বসতবাড়ির অতিমন্দার বাজারে সর্বনিম্ন দাম পড়ে যায় ৯.৫ শতাংশ। তবে বসতবাড়ির দামের এই নিম্নগতির পেছনে মূল কারণ হিসেবে দেশটির বাড়ির ঋণে সুদের হার বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করছে অস্ট্রেলিয়ার রিজার্ভ ব্যাংক। কোরলজিকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গেল নভেম্বর পর্যন্ত গোটা সিডনিতে বাড়ির দাম গড়ে কমেছে ৮.১ শতাংশ। এর মধ্যে সিডনির রাইড অঞ্চলে বাড়ির দাম অভাবনীয় ভাবে কমে গিয়েছে প্রায় ১২.১ শতাংশ, বলকাম হিল ও হাক্সবেরিতে ১১.৩ শতাংশ, সাদারল্যান্ড শায়ারে ১০.৯ শতাংশ এবং প্যারাম্যাটায় ১০.৩ শতাংশ পর্যন্ত বসতবাড়ির দাম কমে গেছে। অন্যদিকে মেলবোর্নে ৫.৮, পার্থে ৪.২ ও ডারউইনে ০.৮ শতাংশ কমে গেছে। অস্ট্রেলিয়ার রিজার্ভ ব্যাংক বোর্ড বাড়ির ঋণে সুদের হার কমানোর বিষয়ে আলোচনা করছে। অস্ট্রেলিয়ার মতো স্থিতিশীল জীবনযাপন-পদ্ধতির দেশে আয়-ব্যয়ের হিসাবের সামান্য তারতম্যও জনজীবনে বেশ বড় প্রভাব ফেলে। দ্রব্যমূল্যের স্বল্প রদবদলও দেশটির অর্থনীতি ও সাধারণ জীবনের অনেক কিছুই পরিবর্তন করে দেয়। তাই বাজার-বিশ্লেষকেরা বলছেন, বাড়ির ঋণে সুদের হার বাড়লে ঘরবাড়ির দাম পড়তে শুরু করে। বাড়তি সুদের অর্থ সামাল দিতে একাধিক বাড়ির মালিকের অনেকেই বাড়ি কম দামে বাড়ি বিক্রি করতে শুরু করেন। ঋণ নিয়ে কেনা একাধিক বাড়ি বাড়তি সুদের হার পরিশোধ করে রাখা সম্ভব হবে না অনেকের পক্ষেই। যদিও এটি একটা সুযোগ দেশটির স্থায়ী অভিবাসীদের নিজের বাড়ি কেনার।
সিডনিতে মামুন ও অমিয়ার সংগীত সন্ধ্যা ২৯ ডিসেম্বর
অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে আয়োজন করা হয়েছে বাংলা গানের সঙ্গীতানুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে গান গাইবেন আবদুল্লাহ আল মামুন ও অমিয়া মতিন। এক মঞ্চে এই দুই শিল্পীর সুরের মেলা বসবে আগামী ২৯ ডিসেম্বর স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে। বিশেষ এই সঙ্গীতানুষ্ঠান 'মুখরিত জীবন' সিডনির হার্স্টভিলের সিভিক থিয়েটারে আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে তারা দুজন জনপ্রিয় সব বাংলা গান পরিবেশন করবেন।
কাউসার খান: অভিবাসন আইনজীবী, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া। ইমেইল: immiconsultants@gmail.com
|