কাউসার খানের প্রতিবেদন সাম্প্রতিক অস্ট্রেলিয়া (১২)
সিডনিতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর মৃত্যু
অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিম সিডনিতে এক মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। ২০ বছর বয়সী ওই মোটরসাইকেল আরোহীর নাম সাদ আহমেদ সাদমান। গত বুধবার মধ্যরাতে সিডনির ওয়্যারউইক ফার্মের হিউম হাইওয়েতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে জরুরি সেবা পৌঁছালে গুরুতর আহত অবস্থায় সাদ আহমেদ সাদমানকে উদ্ধার করা হয়। এরপর তাঁকে দ্রুত সিডনির লিভারপুল হাসপাতালে নেওয়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পন্ন হওয়ার আগেই মারা যান সাদমান। দুর্ঘটনার সঠিক কোনো কারণ এখনো জানতে পারেনি পুলিশ। নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্য পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনা তদন্তে কাজ চলছে। সাদমানের বাবার পারিবারিক বন্ধু শাহ আবদুল মতিন বলেন, সিডনির ইউটিএস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প ব্যবস্থাপনার ওপর স্নাতক করছিল সাদমান। তিন সন্তানের মধ্য বড় ছিলেন সাদমান আহমেদ। তিনি মোটরসাইকেল চালাতে খুব পছন্দ করতেন। এই মোটরসাইকেল ওর প্রাণ নিয়ে নিল। জানি না, এ শোক ওর মা–বাবা কীভাবে কাটিয়ে উঠবেন। সাদমানের অকালমৃত্যুতে শোকার্ত হয়ে পড়েছে তাঁর পরিবার-স্বজন ও বন্ধুরা।
আবারও সতর্কবার্তা অস্ট্রেলিয়া সরকারের ভুয়া ট্যাক্স কল থেকে সাবধান!
অস্ট্রেলিয়ার সিডনির প্যারামেটার বাসিন্দা প্রবাসী বাংলাদেশি নাদিম (ছদ্মনাম)। কয়েক দিন আগে তাঁর মুঠোফোনে দেশটির একটি সরকারি নম্বর থেকে ফোন আসে। অস্ট্রেলিয়ার কর বিভাগের কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে তাঁকে বলা হয়, ‘আপনি তিন হাজার ডলার অতিরিক্ত কর ফেরত নিয়েছেন। দ্রুত এ অর্থ ফেরত না দিলে আপনার নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হবে।’ সচেতন নাদিম সরাসরি অস্ট্রেলিয়ার কর বিভাগে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানতে চাইলে তাঁকে বলা হয়, কর বিভাগ তাঁকে এমন কোনো ফোন কল করেনি, এমনকি তাঁর কাছ থেকে কোনো বাড়তি অর্থও পাওনা নেই কর বিভাগের। নাদিমের বুঝতে বাকি রইল না, সে কর বিভাগের ভুয়া পরিচয়ধারী প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়তে বসেছিল। দৃশ্যপটটি গল্পের আকারে বলা হলেও, এ রকম ঘটনাটি কিন্তু অহরহই ঘটছে অস্ট্রেলিয়ায়। দেশটির সরকারের বারবার সতর্কবার্তা জারির পরও শুধু মাত্র গত নভেম্বরেই দেশটির করদাতাদের কাছ থেকে কর বিভাগের (অস্ট্রেলিয়ান ট্যাক্সেশন অফিস বা এটিও) ভুয়া পরিচয়ে শুধুমাত্র ফোন কলের মাধ্যমেই প্রায় ৮ লাখ ৩০ হাজার অস্ট্রেলীয় ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫ কোটি টাকা) হাতিয়ে নিয়েছে একদল প্রতারক চক্র। আর দেশটির হিসাবরক্ষণ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতারক চক্র দিন দিন আরও শক্তিশালী ও অদম্য হয়ে উঠছে। এ অবস্থায় করদাতাদের আরও সচেতন হতে হবে। অস্ট্রেলিয়ার কর বিভাগ বলছে, শুধু এই বছরের জুলাই মাসে প্রায় চার হাজারেরও বেশি ভুয়া ফোন কলের অভিযোগ পেয়েছে তাঁরা। আর গেল নভেম্বরে এই অভিযোগের সংখ্যা প্রায় ২৭ হাজার ছাড়িয়েছে। সারা বছর কর পরিশোধের পর কোনো নাগরিক নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি কর পরিশোধ করলে বাড়তি অর্থ ফেরত দেয় অস্ট্রেলিয়ার কর বিভাগ। যাকে বলে ট্যাক্স রিটার্ন। অর্থবছর শেষে অস্ট্রেলিয়ার কর বিভাগের বরাবর আবেদন করলেই তা ফিরিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। তবে এর উল্টো ঘটনাও রয়েছে। কেউ ট্যাক্স রিটার্নের নামে বেশি অর্থ নিয়ে নিলে কর কর্তৃপক্ষও তা হিসাব দেখিয়ে পরবর্তীতে ফিরিয়ে নেয়। আর একদল প্রতারক চক্র এই পদ্ধতির সুযোগটাই নিয়ে থাকে। কর বিভাগের কর্মকর্তার নাম করে প্রতারক দলের কেউ ফোন কলের মাধ্যমে কাউকে অবগত করেন যে, তিনি ট্যাক্স রিটার্নের মাধ্যমে বেশি অর্থ নিয়েছেন। সেই অর্থ শিগগিরই ফেরত না দিলে আদালতে মামলা দায়ের করা হবে। কীভাবে অর্থ ফেরত দিতে হবে সে বিষয়েও জানায় প্রতারক দল। এভাবেই অস্ট্রেলিয়ায় ভুয়া কলের মাধ্যমে প্রতিবছরই লাখ লাখ ডলার হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারক দল। ভুক্তভোগীদের মধ্যে অভিবাসীদের সংখ্যায় বেশি। পাশাপাশি অর্থ ফিরিয়ে দেওয়ার নাম করে ভুয়া বার্তাও পাঠানো হয়। এমন বার্তায় কর প্রদানকারীকে জানানো হয়, আপনি এ পরিমাণ করের অর্থ ফেরত পেয়েছেন, অর্থ পেতে আপনার ব্যাংক তথ্য দিন। প্রতারক চক্র বেশির ভাগ সময়েই ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়ে যায়। কেননা, কর বিভাগ জানিয়েছ বেশির ভাগ প্রতারক দলগুলোই অস্ট্রেলিয়ার বাইরে অবস্থান করে। তাই প্রতারণা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে সচেতনতাই সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। অস্ট্রেলিয়ার কর বিভাগ গণমাধ্যম ও তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, তারা কখনোই এ ধরনের বার্তা প্রেরণ করে না। অর্থ ফেরত পাওয়ার কথা জানিয়ে এটিও কখনোই বার্তা প্রেরণ করে না। এমনকি তাদের কোনো ধরনের বার্তাতেই ব্যক্তিগত তথ্য চাওয়া হয় না। বার্তার মাধ্যমে কোনো লিংকও পাঠানো হয় না বলে নিশ্চিত করেছে দেশটির কর বিভাগ। কর প্রদানকারীকে প্রতারণার থেকে বাঁচতে বারংবার সচেতন করে চলেছে কর বিভাগ।
সিডনিতে আতিক-মিতার সংগীত সন্ধ্যা ১২ জানুয়ারি
অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে সংগীতশিল্পী জুটি আতিক হেলাল ও মিতা আতিকের ‘গানে গানে জোছনা’ শীর্ষক এক সংগীত সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়েছে। নতুন বছরের ১২ জানুয়ারি ব্যাংকস টাউনের ব্রায়ান ব্রাউন থিয়েটারে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আসর বসবে এই সঙ্গীতানুষ্ঠানের। সিডনির এই শিল্পী জুটি বাংলা নতুন–পুরনো গানসহ পরিবেশন করবেন গজল। অনুষ্ঠানে যন্ত্রে সংগত করতে বাংলাদেশ থেকে আসবেন কয়েকজন প্রথিতযশা শিল্পী। সংগীত সন্ধ্যায় সপরিবারে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন আয়োজকেরা।
সিডনিতে চালু হয়েছে ভার্চুয়াল ড্রাইভিং লাইসেন্স
অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস (এনএসডব্লিউ) রাজ্য সরকারের ডিজিটাল ড্রাইভিং লাইসেন্স (ডিডিএল) প্রকল্পের আওতায় সিডনিতে চালু হয়েছে ভার্চুয়াল ড্রাইভিং লাইসেন্স। পূর্ব সিডনির প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার বাসিন্দাকে এই ভার্চুয়াল ড্রাইভিং লাইসেন্স বিতরণ করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ৩৫০টি ডিডিএল চালু করা হয়েছে। ব্যবহারকারীর স্মার্ট ফোনই এখন ড্রাইভিং লাইসেন্স। রাজ্যভিত্তিক সরকারি অ্যাপ 'সার্ভিস এনএসডব্লিউ’–তে এ লাইসেন্স জুড়ে দেওয়া হয়েছে। চালকের সকল তথ্যের সঙ্গে একটি কিউআর কোড থাকবে। যেটি স্ক্যান করে ট্রাফিক পুলিশ চালকের সকল তথ্য জানতে পারবে। পরীক্ষামূলক ভাবে আগামী ১২ মাসের জন্য চালু হয়েছে ডিডিএল। রাজ্য সরকারের প্লাস্টিকের ড্রাইভিং লাইসেন্সের বদলে ভার্চুয়াল ড্রাইভিং লাইসেন্স চালুর ঘোষণা আসে গত বছর আগস্টে। ওই বছরের নভেম্বর থেকে ওরানা অঞ্চলীয় শহর ডাবোতে প্রাথমিকভাবে চালু করা হয়েছিল ডিডিএল। তবে গত বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) থেকে রেন্ডউইক, বন্দাই, কুজি, ব্রণটি, ক্লোভেলি ও ওয়েবারলি সহ আরও কয়েকটি উপশহরের চালু করা হয়েছে ভার্চুয়াল ড্রাইভিং লাইসেন্স।
ক্রিকেটার উসমান খাজার ভাই আটক
অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটার উসমান খাজার ভাই আরসালান খাজাকে (৩৯) আটক করেছে দেশটির নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্য পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও ভুয়া প্রমাণপত্র তৈরির অভিযোগ রয়েছে। আজ মঙ্গলবার সিডনির স্থানীয় সময় সকালে প্যারামাটায় গাড়ি চালানোর সময় তাঁকে আটক করা হয়। গত ৩০ আগস্ট সন্ত্রাসী কাজের পরিকল্পনা করার অভিযোগে সিডনি থেকে মোহাম্মদ কামের নিলার নিজামেদিন নামের (২৫) এক ছাত্রকে পুলিশ আটক করে। নিজামেদিন নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসায় তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে পিএইচডি করছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলি বিশপের কার্যালয়সহ সিডনির দর্শনীয় জায়গাগুলোয় হামলার পরিকল্পনা করার প্রমাণ পেয়েছিল পুলিশ। নিজামেদিনের একটি নোটবুকে জঙ্গি সংস্থা ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে জড়িত থাকা ও হামলার পরিকল্পনার বিভিন্ন নকশা ছিল। নোটবুকটি তাঁর এক সহকর্মীর হাতে পড়ে। সহকর্মী পুলিশকে জানান। হামলার পরিকল্পনার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ নিজামেদিনকে আটক করে নিয়ে যায়। এরপর তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রায় চার সপ্তাহ গোলবার্নের সুপারম্যাক্স কারাগারে রাখা হয়। তবে নোটবুকটির হাতের লেখার সঙ্গে নিজামেদিনের হাতের লেখা কোনো মিল খুঁজে পাননি হস্তাক্ষর বিশেষজ্ঞরা। এ ছাড়া নিজামেদিনের আগে কোনো অপরাধের রেকর্ড ছিল না। আদালত মামলা সরিয়ে নিয়ে নিজামেদিনকে মুক্তি দেয়। ঘটনার তদন্তে জানা যায়, পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার উসমান খাজার ভাই আরসালান খাজা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত-ভাবে ফাঁসানোর চেষ্টা করে নিজামেদিনকে। একজন নারীকে ঘিরে নিজামেদিনের সঙ্গে বিবাদ ছিল আরসালান খাজার। তাই জঙ্গিবাদের মতো সংবেদনশীল মামলায় নিজামেদিনকে ফাঁসিয়ে দেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। তবে নোটবুকের লেখার সঙ্গে আরসালানের হাতের লেখারও মিল রয়েছে কি না, তা জানায়নি পুলিশ। আটকের পর পুলিশ আরসালান খাজাকে প্যারামাটার থানায় নিয়ে গেছে। সেখানে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে উসমান খাজা কোনো মন্তব্য করেননি।
কাউসার খান: অভিবাসন আইনজীবী, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া। ইমেইল: immiconsultants@gmail.com
|