কাউসার খানের প্রতিবেদন সাম্প্রতিক অস্ট্রেলিয়া (১০)
সিডনিতে ধূলিঝড়, ফ্লাইট বাতিল
সিডনিসহ নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের কিছু শহর আজ বৃহস্পতিবার ধূলিঝড়ের কবলে পড়ে। স্থানীয় সময় বেলা ১১টা থেকে রাজ্যের নীল আকাশ ধুলায় বাদামি রং ধারণ করতে শুরু করে। বেলা বাড়ার সঙ্গে এ ঝড় আরও বাড়তে থাকে। দেশটির আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রাতে ধূলিঝড় আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাজ্যের প্রধান শহর সিডনিসহ আশপাশের আরও বেশ কিছু এলাকা এই মারাত্মক ধূলিঝড়ের কবলে পড়েছে। বাতাসে বিপদজনক মাত্রায় ধুলার উপস্থিতি থাকায় রাজ্যের ধূলিঝড় কবলিত এলাকার বাসিন্দাদের বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে নিউ সাউথ ওয়েলসের স্বাস্থ্য বিভাগ। বৃহস্পতিবারের ধূলিঝড়ে সিডনির প্যারাম্যাটার বাতাসের প্রতি ঘনমিটারে ধুলার পরিমাণ ছিল ১০২ মাইক্রোগ্রাম। তবে রাজ্যের সিঙ্গেলটন শহরে ধুলার পরিমাণ ছিল সবচেয়ে বেশি ১২৮ মাইক্রোগ্রাম। ধূলিঝড়ের দরুন সিডনি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এখনো পর্যন্ত ১৯টি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যসহ অন্য কয়েকটি রাজ্যে আরও প্রচণ্ড গতিতে ধূলিঝড় আঘাত হানতে পারে বলে ধারণা করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর আগে ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে সবচেয়ে বড় ধূলিঝড়ের সাক্ষী হয় সিডনিবাসী। সেই ধূলিঝড়ে বাতাসের প্রতি ঘনমিটারে ধূলির পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার ৪০০ মাইক্রোগ্রাম।
অস্ট্রেলিয়ায় মুসলিম বিদ্বেষী গ্যাভিনের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার দাবি
মুসলিম বিদ্বেষী, নারীবাদী ও সমকামিতা সমর্থনের নেতিবাচক ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত মার্কিন নাগরিক গ্যাভিন ম্যাকইনসকে অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশ করতে না দেওয়ার পক্ষে জোর দাবি উঠেছে। আবার তাঁর অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশের পক্ষেও রয়েছে বিপুল জনসমর্থন। এ নিয়ে অস্ট্রেলিয়া এখন সরগরম। অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন রাজ্যে সাম্প্রতিক বিভিন্ন সন্ত্রাসী হামলার জের ধরে দেশটির মুসলিম কমিউনিটির প্রতি সন্দেহের তির উঠেছে। এ কারণে দেশটিতে মুসলিম অভিবাসীদের প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণে আনার কথা ভাবছে সরকার। তবে মুসলিম অভিবাসীদের প্রবেশাধিকারে লাগাম না টেনে বরং মুসলিম বিদ্বেষীদের অস্ট্রেলিয়ায় আসতে না দেওয়ার কথা বলছেন দেশটির সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর সাবেক প্রধান রোমান কোয়েদলিগ। মার্কিন নাগরিক গ্যাভিনের অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। গ্যাভিন একজন লেখক, কৌতুক অভিনেতা। তবে তিনি বেশি সমালোচিত তাঁর বিভিন্ন মুসলিম বিদ্বেষী, নারীবাদী ও সমকামিতা সমর্থনের নেতিবাচক কথার জন্য। এ ছাড়া তাঁর প্রতিষ্ঠিত সংগঠন প্রাউড বয়েজের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলার জন্য সমালোচিত। গ্যাভিন প্রকাশ্যে নিজেই বলেছেন, হিংস্রতার চেয়ে বড় কোনো অস্ত্র নেই। আগামী ৫ থেকে ১৬ ডিসেম্বর অস্ট্রেলিয়া সফরের কথা ৪৮ বছর বয়সী গ্যাভিনের। তাঁর এই সফর অস্ট্রেলিয়ার শান্তিপূর্ণ মুসলিম কমিউনিটির জন্য হুমকি বলে মনে করেন রোমান। অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যমে দেওয়া বিবৃতিতে রোমান বলেন, অস্ট্রেলিয়ার মুসলিম কমিউনিটির নিরাপত্তার জন্য গ্যাভিন হুমকিস্বরূপ। হিংসা বিস্তারের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় তাঁকে একটা ক্ষেত্র দেওয়া উচিত নয়। অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন-নীতি অনুযায়ী গ্যাভিন চারিত্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারবেন না। কারণ, অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন আইনের ৫০১ অধ্যায় অনুযায়ী, জনসাধারণের নিরাপত্তার জন্য বিপদজনক চরিত্রের কেউ অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশের অধিকার রাখেন না। অস্ট্রেলিয়ায় গ্যাভিনের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে জনগণের কাছ থেকে আবেদনপত্রে স্বাক্ষর গ্রহণ করছে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। প্রায় ৬৪ হাজার অস্ট্রেলিয়ান এই আবেদনপত্রে সই করেছেন। অন্যদিকে, ২২ হাজার অস্ট্রেলিয়ান গ্যাভিনের অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশের পক্ষে সই করেছেন।
সিডনিতে জয়া আহসান
বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে সফলতার পাশাপাশি জয়া আহসান ও চঞ্চল চৌধুরী অভিনীত ‘দেবী’ এখন চলছে অস্ট্রেলিয়ায়। আর অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের আমন্ত্রণে আজ সিডনি পৌঁছেছেন দেবী ছবির রানু চরিত্র জয়া আহসান। গত ১৫ নভেম্বর মায়ের সঙ্গে সিডনি পৌঁছান তিনি। ওইদিন ছিল জয়া আহসানের মায়ের জন্মদিন। সিডনি পৌঁছেই এক নিকটাত্মীয়ের বাড়িতে ঘরোয়া ভাবে মায়ের জন্মদিন পালন করেন তিনি। এর আগেও বেশ কয়েকবার সিডনি সফরে আসেন জয়া। সব মিলিয়ে উচ্ছ্বাসিত দেখা যায় জনপ্রিয় এই অভিনেত্রীকে। সিডনিতে প্রবাসী দর্শকদের সঙ্গে গত কয়েকদিন দেখা করেন জয়া। সিডনির কয়েকটি সিনেমা হলে আগামী কয়েকদিনও দেবী ছবিটি। এর মধ্যে বেশ কয়েকটিতে উপস্থিত ছিলেন ছবিটির অন্যতম চরিত্র রানু। আগামী আরও কয়েকদিন সিডনি, পার্থ ও অ্যাডেলাইডে দেখা যাবে দেবী সিনেমাটি। অনম বিশ্বাস পরিচালিত হুমায়ূন আহমেদের দেবী উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হয় দেবী। গত ১৯ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। ছবিতে রানু চরিত্রে অভিনয় করেছেন জয়া আহসান। এ ছাড়া, মিসির আলী চরিত্রে অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী এবং নিলু চরিত্রে শবনম ফারিয়া, আনিস চরিত্রে অনিমেষ আইচ ও আহমেদ সাবেত চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইরেশ যাকের। ছবিটি তৈরি করেছে জয়া আহসানের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সি-তে সিনেমা।
অস্ট্রেলিয়ায় আবার স্থায়ী ভিসার সুযোগ
অস্ট্রেলিয়ার পয়েন্ট ভিত্তিক স্কিলড নমিনেটেড সাবক্লাস ১৯০ ভিসার মাধ্যমে আবার স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ করে দিচ্ছে দেশটির অস্ট্রেলিয়ান ক্যাপিটাল টেরিটরি (এসিটি) রাজ্য সরকার। দেশটির রাজধানী ক্যানবেরা ও আশপাশের কিছু এলাকা নিয়ে এ রাজ্য। দীর্ঘদিন রাজ্য সরকার কর্তৃক মনোনয়নের এই সাবক্লাস ১৯০ ভিসাটি বন্ধ ছিল এসিটিতে। আগামী ২৯ নভেম্বর থেকে পয়েন্ট ভিত্তিক সাবক্লাস ১৯০ ভিসা পুনরায় চালুর ঘোষণা দিয়েছে এসিটি রাজ্য সরকার। সেই সঙ্গে পরিবর্তন আনা হয়েছে ভিসা প্রক্রিয়ার বেশ কিছু পদ্ধতি ও রাজ্যের চাহিদার পেশা তালিকায়।
আবেদনকারীর যোগ্যতা: সাবক্লাস ১৯০ ভিসায় এসিটি সরকারের মনোনয়ন প্রার্থীর অবশ্যই কয়েকটি ন্যূনতম যোগ্যতা থাকতে হবে। প্রার্থীর পেশা যদি ব্যবস্থাপনা কিংবা পেশাদার বিভাগের হয় তবে অবশ্যই ইংরেজি ভাষায় দক্ষ হতে হবে, যা আইইএলটিএস সর্বনিম্ন ৭–এর সমান। এসিটি সরকারের নির্ধারিত পেশা তালিকার সঙ্গে সম্পর্কিত পেশায় কমপক্ষে ১২ মাসের পূর্ণকালীন ও বৈতনিক কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এসিটি রাজ্যে কোনো চাকরির আমন্ত্রণ থাকা বাধ্যতামূলক নয়। তবে প্রার্থীর যে পেশায় অভিজ্ঞতা রয়েছে সে পেশার এসিটির চাকরির বাজারে চাহিদা থাকতে হবে। সেই সঙ্গে এটাও প্রমাণ করতে হবে যে, এসিটিতে আসার পর চাকরি না পাওয়ার আগ পর্যন্ত রাজ্যে বাস করার সামর্থ্য রয়েছে প্রার্থীর। ভিসা মঞ্জুর হলে কমপক্ষে দুই বছর এসিটিতে বাস করার আবশ্যিক শর্তও রয়েছে।
ভিসা প্রক্রিয়া: এসিটির নতুন স্কোর পদ্ধতিকে ক্যানবেরা ম্যাট্রিক্স নাম দেওয়া হয়েছে। দুইটি ধাপে সাবক্লাস ১৯০ ভিসায় আবেদন করতে হবে। প্রথম ধাপে রাজ্য কর্তৃক মনোনয়ন পাওয়ার ইচ্ছা জানিয়ে এক্সপ্রেস অব ইন্টারেস্ট (ইওআই) পূরণ করতে হবে। ধাপটি সম্পূর্ণ অনলাইন ভিত্তিক। এই ধাপে ক্যানবেরা ম্যাট্রিক্সে বয়স, শিক্ষা, কাজের অভিজ্ঞতা ও ভাষা দক্ষতাসহ আরও বেশ কয়েকটি বিষয়ে সর্বনিম্ন ২০ পয়েন্ট হলে ইওআই পূরণ করা যাবে। দ্বিতীয় ধাপে সর্বোচ্চ ক্যানবেরা ম্যাট্রিক্সে পয়েন্টধারীদের সাবক্লাস ১৯০ ভিসায় আবেদনের আমন্ত্রণ জানাবে এসিটি সরকার। তখনই মূল ভিসায় আবেদন করা যাবে। তবে এটা মনে রাখতে হবে, আবেদনের আমন্ত্রণ পেলেই ভিসা মঞ্জুর হয়ে গেছে, বিষয়টা এমনটা নয়। অস্ট্রেলিয়ান ক্যাপিটাল টেরিটরির স্কিলড নমিনেটেড ভিসা (সাবক্লাস ১৯০) ভিসার পেশা তালিকা ও বিস্তারিত এসিটি রাজ্যের সরকারি ওয়েবসাইট www.canberrayourfuture.com.au এ পাওয়া যাবে।
অস্ট্রেলিয়ার ভিসা প্রক্রিয়া বেসরকারিকরণ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন বাংলাদেশিরাও
সরকারের সীমিত হস্তক্ষেপের মাধ্যমে ভিসা প্রক্রিয়া বেসরকারিকরণের কথা ভাবছে অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন বিভাগ। নতুন উদ্যোগে দেশটির ভিসা আবেদনের প্রক্রিয়ার নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে এমনটিই বলছেন বিশ্লেষকেরা। এ ছাড়া, ভিসা প্রক্রিয়া বেসরকারিকরণের ফলে দেশটির প্রবাসী বাংলাদেশিদের ওপর কী প্রভাব পড়তে পারে এবং করণীয় নিয়ে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে একান্তে বলেছেন দেশটির জাতীয় ট্রেড ইউনিয়ন কমিউনিটি অ্যান্ড পাবলিক সেক্টর ইউনিয়নের সহসভাপতি লিসা নিউম্যানসহ আরও অনেকে।
লিসা নিউম্যান, সহসভাপতি, কমিউনিটি অ্যান্ড পাবলিক সেক্টর ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া অস্ট্রেলিয়ার কমিউনিটি অ্যান্ড পাবলিক সেক্টর ইউনিয়নের সহসভাপতি লিসা নিউম্যান বলেন, লিবারেল সরকার আমাদের ভিসা পদ্ধতিকে বিক্রি করে দিচ্ছে। যেখানে আমাদের সীমান্ত মুনাফার জন্য ক্ষুধার্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে অর্থ উপার্জনকারী একটি মেশিন হয়ে দাঁড়াবে। আর এতে ভিসার গুণমান আর মূল্যায়ন করাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে না। ইতিমধ্যে অনেক দেশই ভিসা বেসরকারিকরণের পথে হেঁটেছে। আর তাদের যে কী দুর্দশা হচ্ছে সেটা বর্তমান মরিসন সরকার আমলেই নিচ্ছে না। আর আসন্ন বিপত্তির সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হবে অভিবাসী অস্ট্রেলিয়ানরা। যুক্তরাজ্য ২০১৪ সালে ভিসা প্রক্রিয়া বেসরকারিকরণের পর থেকে নির্ভরশীল আত্মীয়ের ভিসার খরচ বেড়েছে ৭০ শতাংশেরও বেশি। একই দৃশ্য অস্ট্রেলিয়ায় হলে বাংলাদেশি কমিউনিটির বেশির ভাগ মানুষের সাধ্যের বাইরে চলে যাবে পরিবারকে স্পন্সর করা। তবে নিঃসন্দেহে আমাদের ভিসা পদ্ধতির সংস্কার প্রয়োজন। সবার পাশাপাশি বাংলাদেশি অভিবাসীদের উচিত সরকারকে বোঝানো, এই সংস্কার অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় হতে পারে, বেসরকারিকরণের মাধ্যমে নয়।
সুমন সাহা, কাউন্সিলর, কাম্বারল্যান্ড কাউন্সিল, সিডনি সিডনির কাম্বারল্যান্ড কাউন্সিলের কাউন্সিলর সুমন সাহা বলেন, বর্তমান লিবারেল সরকারের হাতে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের জয়ের একটা বড় হাতিয়ার অভিবাসন নীতি। দেশটির মোট ভোটারের একটা বড় অংশই যেখানে অভিবাসী, সেখানে তাদের ভয় দেখিয়ে জয় পেতে চাইছে এই সরকার। বহু সংস্কৃতির দেশ অস্ট্রেলিয়ায় সম্পূর্ণ বিপরীত এই ভিসা বেসরকারিকরণ। অভিবাসী বাংলাদেশিদের এ বিষয়ে যথেষ্ট সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে। প্রথম করণীয় হওয়া উচিত সবাইকে সরকারের এই ভীতিকর পরিকল্পনা সম্পর্কে অবগত করা। সবকিছু ভালো করে না জেনে প্রতিবাদ কিংবা একমত কোনোটাই কাম্য নয়। বিভিন্ন বাংলাদেশি সংগঠনগুলোও এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে।
ওয়াজীহ রাজীব, অভিবাসন ভাষা শিক্ষা সমন্বয়কারী, মেলবোর্ন মেলবোর্নের অভিবাসন ভাষা শিক্ষা সমন্বয়কারী ওয়াজীহ রাজীব বলেন, কোনো সুবিধা যখন সরকার দেয় তখন সেটা সেবা। সেই একই সুবিধা যখন কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দেওয়া হবে তখন সেটা আর সেবা থাকবে না, ব্যবসা হয়ে যায়। তাই ভিসা প্রক্রিয়া বেসরকারিকরণকে আমার কাছে বাণিজ্যিক-করণ বলেই বেশি মনে হচ্ছে। বাণিজ্য বলতেই বিষয়টা কম খরচে বেশি মুনাফা অর্জনের নীতি চলে আসে। এর মানে অস্ট্রেলিয়ার ভিসা প্রক্রিয়ার বিষয়টিও সেবার থেকে মুনাফা অর্জনের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়বে। এমনটা আমাদের অভিবাসীদের জন্য খুবই ক্ষতিকর। বিশেষ করে যারা কঠোর পরিশ্রম করে টাকা জমিয়ে পরিবারের সদস্যদের একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ তৈরি করতে চান, তাদের সরাসরি একটা চাপ প্রয়োগ করা হবে। আমরা যারা বাংলাদেশি রয়েছি, আমাদের সকলেরই যার যার অবস্থান থেকে বাংলাদেশি কমিউনিটিকে এ বিষয়ে সোচ্চার করা দরকার।
উল্লেখ্য, অস্ট্রেলিয়ার ভিসা প্রক্রিয়া বেসরকারিকরণের সরকারি পরিকল্পনার কথা প্রথম আসে এ বছরে ফেব্রুয়ারিতে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুলের সরকার এই পরিকল্পনা করেছিল। অস্ট্রেলিয়ার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের সরকারও নতুন করে এই উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। নতুন উদ্যোগে ইজারার মাধ্যমে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ভিসা প্রক্রিয়ার প্রায় ৯০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করতে পারবে। সরকার পক্ষ বলছে, ভিসার দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া কমাতে এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আবেদনকারীর যোগ্যতা যাচাই করবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, তবে ভিসা দেবে সরকার। ইতিমধ্যে প্রায় ১০টি প্রতিষ্ঠান এই ইজারা গ্রহণের ইচ্ছা জানিয়ে আবেদনও করেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দাপ্তরিক কাজ চলছে বলেও জানিয়েছেন দেশটির কাস্টমস ও সীমান্ত সুরক্ষা সেবা বিভাগের প্রধান মাইকেল পেজ্জুলো।
কাউসার খান: অভিবাসন আইনজীবী, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া। ইমেইল: immiconsultants@gmail.com
|