কাউসার খানের প্রতিবেদন সাম্প্রতিক অস্ট্রেলিয়া (৭)
শরণার্থীদের মুক্তির দাবিতে সিডনিতে বিক্ষোভ
নাউরু ও মানস দ্বীপে আটক শরণার্থীদের মুক্তির দাবিতে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে শত শত মানুষ বিক্ষোভ করেছে। ২৭ অক্টোবর সিডনির প্রাণকেন্দ্রে এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভে শিশুসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেয়। এতে সড়কে যান চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। বিক্ষোভকারীরা বলেন, শরণার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়ন এবং তাদের মুক্তির জন্য সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। অস্ট্রেলিয়ার নিকটবর্তী নাউরু ও মানস দ্বীপে ছয় শতাধিক শরণার্থীকে আটক করে রাখা হয়েছে। এর প্রতিবাদে গত শনিবার মেলবোর্নে মানব-বন্ধন হয়। সিডনির বিক্ষোভে উপস্থিত ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার রক সংগীতের আইকন জিমি বার্নস। তিনি সপরিবারে বিক্ষোভে অংশ নেন। তিনি বলেন, ‘শরণার্থী শিবিরে যারা আটকে আছেন, তাঁদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই, বেঁচে থাকার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাঁদের সঙ্গে এমন আচরণ সত্যি অপরাধমূলক।’ রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থানের কথা ইঙ্গিত করে জিমি বলেন, ‘বাংলাদেশ লাখ লাখ শরণার্থীর থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করছে। তবে এত বড় স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ হয়েও আমরা কেন তা পারব না?’ শরণার্থীদের প্রতি সরকার ও নেতাদের উদাসীন মনোভাবের তীব্র নিন্দা জানান জিমি। তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকারের আচরণ, আমাদের রাজনীতিবিদদের আচরণ ন্যক্কারজনক।’ বিশ্ব দরবারে অস্ট্রেলিয়া যাতে হাসির পাত্র না হয়ে যায়, সে বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন জিমি। তিনি বলেন, ‘আমার আমেরিকার বন্ধুরা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। তাঁরা আমাদের দিকে তাকিয়ে বলেন, তোমাদের মানবাধিকারের ইতিহাস তো আমাদের চেয়ে জঘন্য।’ সুদিনের আশা ব্যক্ত করে জিমি বলেন, ‘আমাদের একটি দেশ হিসেবে ঘুরে দাঁড়ানো উচিত।’ তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তারা সর্বোচ্চ করছে।
বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যাল
নাচগান আর হই হুল্লোড়ে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে দ্বিতীয়বারের মতো হয়ে গেল বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যাল ২০১৮। বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার প্রয়াসে আয়োজিত এই উৎসবের আসর বসে সিডনির ব্যাংকসটাউনের পল কিটিং পার্কে। গত শনিবার ২৭ অক্টোবর সন্ধ্যা নামার আগেই অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাংলাদেশিদের সমাগমে মুখরিত হয়ে ওঠে উৎসব প্রাঙ্গণ। উৎসবের শুরুতেই স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় সরব হয়ে ওঠে অনুষ্ঠান-স্থল। প্রবাসী বাংলাদেশি তরুণ-তরুণীদের নাচ, গান, ফ্যাশন শো, মুখ ও হাতের আলপনা ছিল উৎসবের আকর্ষণ। উৎসবের বিশেষ আয়োজনে সংগীত পরিবেশন করেন বাংলাদেশের সংগীতশিল্পী আগুন ও ন্যান্সি। তাঁদের জনপ্রিয় গানের তালে মেতে ওঠেন উপস্থিত সকলে। অনুষ্ঠানে দেশীয় পণ্যের বিভিন্ন স্টলের পাশাপাশি ছিল মুখরোচক সব বাংলাদেশি খাবারের স্টল। এ ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করে এনটিভি অস্ট্রেলিয়া। উৎসবে অংশগ্রহণ করে উদযাপনে সহযোগিতা করার জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন আয়োজকদের প্রধান রাশেদ শ্রাবণ।
অস্ট্রেলিয়া বলে কোনো দেশ নেই!
যদি বলা হয়, অস্ট্রেলিয়া বলে কোনো দেশ নেই! আর সেখানে বসবাসকারীরা আসলে অর্থের বিনিময়ে অস্ট্রেলিয়ার অস্তিত্ব নিয়ে মিথ্যা বলে! কথা শুনে নিশ্চয়ই পাগলের প্রলাপ মনে হচ্ছে। ভাবছেন, এ–ও বিশ্বাস করতে হবে! সত্যি বলতে কি, একদল মানুষ আছে, যারা বিশ্বাস করে, অস্ট্রেলিয়া বলে কোনো দেশ নেই। আর সেখানে বসবাসকারীরা মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার ভাড়া করা অভিনেতা। শুধু তা–ই নয়, এই শ্রেণির লোকেরা বিশ্বাস করে, পৃথিবী গোল নয়, বরং সমতল। শ্রেণিটি ফ্ল্যাট আর্থ সোসাইটি নামে পরিচিত। তাদের মতবাদ অনুসারে, পৃথিবী দেখতে একটা পয়সার মতো। এ নিয়ে চলতি বছর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যুক্তরাজ্যের দ্য গার্ডিয়ান। এতে বলা হয়, ফ্ল্যাট আর্থ সোসাইটি ২০০৬ সালে প্রথম দাবি করে, পৃথিবী সমতল হওয়ায় অস্ট্রেলিয়া বলে কোনো দেশ নেই। প্রতিবেদনে বলা হয়, এই মতবাদের অনুসারীর সংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি। তাদের মতে, প্রকৃতপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার কোনো অস্তিত্ব নেই। অস্ট্রেলিয়ার অস্তিত্ব নিয়ে প্রমাণ হিসেবে যা দেখছেন, তার সবই সুন্দর করে সাজানো একটা মিথ্যা। ফ্ল্যাট আর্থ সোসাইটির মতে, অস্ট্রেলিয়ায় যারা আছে, তারা হয় ভাড়া করা অভিনেতা, না হয় কম্পিউটারে তৈরি মানুষ। ফ্ল্যাট আর্থ সোসাইটির বিশ্বাস খুবই দৃঢ়। বহু তর্কবিতর্ক ও প্রমাণ দেখানোর পরও তারা মানতে রাজি নয় যে পৃথিবী গোল। সূর্যকে পৃথিবী যে প্রদক্ষিণ করে চলছে, তা–ও তারা মানে না।
প্যারামাটা কাউন্সিলে চকের বদলে রং-পেনসিল, ফেরত দিতে হতে পারে ২০ লাখ ডলার!
অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের সিডনির প্যারাম্যাটা সিটি কাউন্সিলকে প্রায় ২০ লাখ অস্ট্রেলীয় ডলারের ভর্তুকি গুনতে হতে পারে। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে পার্কিং জরিমানা বাবদ আদায় করা এই অর্থ ফিরিয়ে দিতে হতে পারে জনগণকে। আর এই বিশাল অর্থের লোকসানের একমাত্র কারণ চকের জায়গায় মোমের তৈরি রং-পেনসিল ব্যবহার করা। পশ্চিম সিডনির প্যারাম্যাটা সিটি কাউন্সিলের আওতাধীন পার্কিং পরিদর্শকেরা আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের বেশি কোনো গাড়ি রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকলে জরিমানা করে। আর জরিমানা করার সময় গাড়িটি কতক্ষণ রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিল তা চাকায় রং-পেনসিল দিয়ে চিহ্নিত করে দেয়। আর সেখানেই হয়েছে যত ঝামেলা। প্যারাম্যাটা কাউন্সিলের ট্রাফিক আইনে পার্কিং পরিদর্শকেরা গাড়ির চাকায় চিহ্ন দিতে শুধু চক জাতীয় পদার্থ ব্যবহার করতে পারবে বলে উল্লেখ রয়েছে। যদিও নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের আইনে চক, রং-পেনসিল কিংবা অনুরূপ পদার্থের ব্যবহারের কথা বলা আছে। তবে প্যারাম্যাটার আইনে শুধু চকের কথা উল্লেখ আছে। আর পার্কিং পরিদর্শকদের এই নীতি বহির্ভূত কাজের কথা প্রথম সামনে আসে গত বছরের সেপ্টেম্বরে। তাই সে মাস থেকে অতিরিক্ত সময় পার্কিংয়ের জন্য আদায়কৃত জরিমানার প্রায় ২০ লাখ ডলার ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলছে নীতি নির্ধারক ও আইন বিশ্লেষকেরা। বিষয়টি একজন কাউন্সিলর দ্বারা গত বছরের ২৫ জুন কাউন্সিলকে জানানো হয় বলে জানিয়েছেন প্যারাম্যাটা সিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র। আর অর্থ যদি ফেরত দিতেও হয়, তবে আরেকটি বড় ঝামেলার মুখোমুখি হবে প্যারাম্যাটা সিটি কাউন্সিল। কেননা রাজ্যের সড়ক ও সমুদ্র সেবার তথ্যকেন্দ্রে কাউন্সিল কর্তৃপক্ষের কোনো প্রবেশাধিকার নেই। আর তাই যাদের অর্থ ফেরত দিতে হবে তাদের এক এক করে খুঁজে বের করতে হবে প্যারাম্যাটা সিটি কাউন্সিলকে। বিষয়টি কাউন্সিলের পরবর্তী সাধারণ সভায় নিষ্পত্তি হতে পারে।
বাংলাদেশি নারীদের মিলন মেলা
অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে প্রথমবারের মতো হয়ে গেল বাংলাদেশি নারীদের মিলন মেলা। সিডনির রকডেলের একটি ফাংশন সেন্টারে গত শনিবার (২০ অক্টোবর) আয়োজন করা হয় এই মিলন মেলার। এতে যোগ দিতে সিডনিসহ অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসরত বাংলাদেশি নারীরা ছুটে আসেন। অনুষ্ঠানে প্রায় তিন শ বাংলাদেশি নারী উপস্থিত ছিলেন। অংশগ্রহণকারীদের বেশির ভাগই অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশি নারীদের ফেসবুক গ্রুপ ‘অজি বাংলা সিস্টারহুড’-এর মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে পরিচিত। এই মিলন মেলার আয়োজকও এই গ্রুপটি। অনুষ্ঠানের শুরু থেকেই আড্ডায় মেতে ওঠেন সকলে। মধ্যাহ্নভোজনের পর ছিল গেম শো, লটারি ও সম্মাননা প্রদান। পাশাপাশি সবাই মিলে কেক কেটে ও নাচ-গান করে অনুষ্ঠান মাতিয়ে রাখেন। স্মরণ করেন সদ্য প্রয়াত প্রিয় শিল্পী আইয়ুব বাচ্চুকে। ভবিষ্যতে অস্ট্রেলিয়ার অন্য শহরেও এমন আয়োজন করার পরিকল্পনা আছে বলে জানান, অজি বাংলা সিস্টারহুড গ্রুপের অ্যাডমিন জান্নাতুল ফেরদৌস।
কাউসার খান: অভিবাসন আইনজীবী, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া। ইমেইল: immiconsultants@gmail.com
|