কাউসার খানের প্রতিবেদন সাম্প্রতিক অস্ট্রেলিয়া (৬)
শেষ রক্ষা হয় নি সরকার দল লিবারেল পার্টির
অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে উপনির্বাচনে ঐতিহাসিক হার হয়েছে দেশটির বর্তমান ক্ষমতাসীন দল লিবারেল পার্টির। গত শনিবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তাঁর ছেড়ে দেওয়া আসন নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের ওয়েন্টওয়ার্থ নির্বাচনী এলাকার উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। উপনির্বাচনে লিবারেল প্রার্থী ইসরায়েলে নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ার সাবেক রাষ্ট্রদূত ডেভ শর্মাকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে জিতে যান স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং একজন স্থানীয় ডাক্তার কেরিন ফেলপস। গত ১১৭ বছরের ইতিহাসে এই প্রথমবার ওয়েন্টওয়ার্থ আসনে লিবারেল পার্টি হেরেছে। আর এর মধ্য দিয়ে দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের প্রধানমন্ত্রীত্ব গ্রহণের পর প্রথম নির্বাচনী কার্যক্রমে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হলো। নির্বাচনে জয়ের জন্য মরিসনের গৃহীত বহুল সমালোচিত জেরুজালেমকে স্বীকৃতি ইস্যুও কোনো কাজে আসে নি। উপনির্বাচনের শুরু থেকে ভোটারদের সমর্থনে এগিয়ে ছিল লিবারেল প্রার্থী ডেভ শর্মা। প্রাইমারি প্রেফারেন্স ভোটের প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট আসে ডেভ শর্মার পক্ষে। সেই ভোটের ৩৩ শতাংশ ভোট যায় ফেলপস এর পক্ষে এবং ১১ শতাংশ লেবার প্রার্থী টিম ম্যুরের পক্ষে। তবে ভোট গ্রহণ বন্ধ হওয়ার পর মোট ভোট গণনা শেষে দৃশ্য পুরোই উল্টে যায়। মোট ভোটের ৪৫.৬ শতাংশ ভোট আসে শর্মার পক্ষে। আর ৫৪.৪ শতাংশ ভোট পেয়ে নির্বাচন জিতে যান কেরিন ফেলপস। নির্বাচনী ফলাফল প্রকাশের পর ফেলপস তাঁর সমর্থকদের বলেন, ‘আজ রাতের এই জয় অস্ট্রেলিয়ান সরকারের জন্য শৃঙ্খলা, সততা এবং মানবতা ফেরত পাওয়ার একটি সংকেত হওয়া উচিত’। এদিকে প্রধানমন্ত্রী মরিসন এই ফলাফল অনাকাঙ্ক্ষিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন। উপনির্বাচনে হারের ফলে হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারালেন মরিসন। সরকারের যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে এখন থেকে স্বতন্ত্রভাবে জয়ী ফেলপসেরও মতামত নিতে হবে মরিসনের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শোক দিবস পালিত
অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে ভাব-গম্ভীর পরিবেশে পালিত হয়ে গেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শোক দিবস। ১৯৮৫ সালের ১৫ অক্টোবর জগন্নাথ হলের ১৫০ বছরের পুরনো অ্যাসেম্বলি ভবনের ছাদ ধসে প্রাণ হারায় ৩৯ জন ছাত্র, কর্মচারী ও অতিথি। এ ছাড়া আরও অসংখ্য অবস্থানকারী আহত হন। সেই দিনের হৃদয় বিদারক ঘটনায় দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের মেধাবী শিক্ষার্থীদের লাশের স্তূপ দেখে মুহ্যমান হয়ে পড়েছিল গোটা দেশ। নিহতদের স্মরণে সিডনিতে স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়। 'মরণসাগর পারে তোমরা অমর, তোমাদের স্মরি’ এই শিরোনামের স্মরণ সভায় সিডনিতে বসবাসরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের প্রাক্তন শিক্ষার্থীসহ আরও অনেকই উপস্থিত ছিলেন। সভায় একে একে সকলে নিহতদের স্মরণে বিভিন্ন লেখা পাঠ, স্মৃতিচারণ ও সঙ্গীত পরিবেশন করেন। সভায় সকল নিহতদের স্মরণে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও প্রার্থনা করা হয়। সভার আয়োজন করে জগন্নাথ হল অ্যালামনাই এসোসিয়েশন অস্ট্রেলিয়া।
বাংলাদেশি প্রকৌশলীদের সংবর্ধনা
অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে বাংলাদেশ থেকে আসা প্রকৌশলীদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। গত ১৪ অক্টোবর রোববার সিডনির একটি ফাংশন সেন্টারে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশি প্রকৌশলীদের সংগঠন আইইবি অস্ট্রেলিয়া। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ থেকে আগত আইইবির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী খন্দকার মনজুর মোর্শেদ, সহসভাপতি প্রকৌশলী নুরুজ্জামান ও প্রকৌশলী কাজী খায়রুল বাসার এবং সহকারী সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী খন্দকার ফারাহ জেবা প্রমুখ। এ ছাড়া, অনুষ্ঠানে আইইবি অস্ট্রেলিয়ার সভাপতি প্রকৌশলী আবদুল মতিন ও সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী এ এইচ এম কামরুজ্জামানসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে ‘ভবিষ্যৎ প্রকৌশলীদের জন্য চ্যালেঞ্জ ও উপায় এবং আইইবি অস্ট্রেলিয়া চ্যাপ্টারের উদ্যোগ’ বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নৈশভোজের আয়োজন করা হয়।
সংসদে ক্ষমা চাইলেন প্রধানমন্ত্রী
অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সংসদে শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার ও ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। গতকাল সোমবার দেশটির জাতীয় সংসদে জাতীয় শিশু সপ্তাহ ২০১৮ উপলক্ষে দেয়া ভাষণে তিনি শিশু যৌন নির্যাতনে ভুক্তভোগীদের কাছে এ ক্ষমাপ্রার্থনা করেন। এ সময় শিশু যৌন নির্যাতনের শত শত ভুক্তভোগী সংসদে উপস্থিত ছিলেন। ভাষণের সময় সংসদে পিনপতন মৌনতা বিরাজ করে। পরে ভুক্তভোগীদের সংগে দেখা করতে আজ সংসদের সকল অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করা হয়। ২০১২ সালে এই ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি রয়েল কমিশন দ্বারা অনুমোদন করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলিয়া গিলার্ড। তিনিও দর্শক সারিতে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের শুরুতেই মরিসন বলেন, ‘আজ অস্ট্রেলিয়া একটি আঘাতের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে, একটি ঘৃণা যা দীর্ঘদিন দৃষ্টি সীমানার বাইরে লুকিয়ে ছিল।’ ব্যথিত কণ্ঠস্বরে মরিসন বলতে শুরু করেন, ‘আজ আমরা মুখোমুখি হবো, নীরব কণ্ঠস্বরের, অন্ধকারের চাপা কান্নার। অস্বীকৃত অশ্রুর। অদৃশ্য দুঃখের অত্যাচারের।’ ভাষণের এক পর্যায়ে মরিসন লজ্জায় মাথা নত করে বলেন, ‘যে শিশুদের আমরা নিরাপদে রাখতে ব্যর্থ হয়েছি, আমি তাঁদের কাছে ক্ষমা চাইছি। যে বাবা মায়ের বিশ্বাস আমরা ভেঙে দিয়েছি, যারা সেই টুকরো টুকরো বিশ্বাসগুলো একসাথে করতে সংগ্রাম করছেন, তাঁদের কাছে আমি ক্ষমা চাচ্ছি।' শিশু যৌন নির্যাতনে বেঁচে যাওয়াদের উদ্দেশ্য করে মরিসন বলেন, ‘আমি তোমাদের বিশ্বাস করি, ভালোবাসি, এই দেশ তোমাদের বিশ্বাস করে ভালোবাসে।’ অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়ার বিরোধীদল লেবার পার্টির প্রধান নেতা বিল শর্টেনও ক্ষমা চাইলেন শিশু নির্যাতনের শিকার সকলের কাছে। বললেন, ‘আমরা ক্ষমা চাচ্ছি প্রতিটি নষ্ট হয়ে যাওয়া শৈশবের জন্য, আমরা ক্ষমা চাচ্ছি প্রতিটি হারিয়ে যাওয়া জীবনের জন্য, আমরা ক্ষমা চাচ্ছি প্রতিটি বিশ্বাসঘাতকতার জন্য, প্রতিটি ক্ষমতার অপব্যবহারের জন্য। আমরা ক্ষমা চাচ্ছি দশকের পর দশক ধরে পাওয়া আঘাতের জন্য, যার ঘা কোনোদিনই শুকাবে না। আমরা ক্ষমা চাচ্ছি সাহায্যের জন্য, চিৎকার করে কাঁদা প্রতিটি কণ্ঠস্বরের জন্য। আমরা ক্ষমা চাচ্ছি প্রতিটি অপরাধের জন্য যার তদন্ত হয় নি কিংবা অপরাধী চিহ্নিত হয়নি। শিশু যৌন নির্যাতন অপরাধের শাস্তি ব্যবস্থা আরও দ্রুত কার্যকর করতে আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী মরিসন। বলেন, ‘ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়া ক্ষমা চাওয়া একটা সাদা কাগজের মতোই। আজ আমরা শিশুদের বিশ্বাস করা ও তাঁদের কথা শোনার মতো একটি দেশ গড়ার প্রতিজ্ঞা করছি।’
কাউসার খান: অভিবাসন আইনজীবী, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া। ইমেইল: immiconsultants@gmail.com
|