কাউসার খানের প্রতিবেদন সাম্প্রতিক অস্ট্রেলিয়া
নতুন অভিবাসীদের বাস করতে হবে আঞ্চলিক শহরে
অস্ট্রেলিয়ার নতুন অভিবাসীদের দেশটির প্রধান শহরে বসবাসের সুযোগ হয়তো আর থাকছে না। কারণ দেশটির নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের সরকার এমনটাই পরিকল্পনা করছে। নতুন অভিবাসন নীতি চালু হলে সিডনি বা মেলবোর্নের মতো প্রধান শহরে অভিবাসীদের বাস করতে দেয়া হবে না। অনেকটা বাধ্য করা হবে দেশটির আঞ্চলিক এলাকায় বসবাস করতে। নতুন নীতিমালা এমনভাবে সাজানো হচ্ছে যাতে অভিবাসীরা আঞ্চলিক শহরে বাস করে। অভিবাসন আইনজীবীরা বলছেন, সরকার অনেক ভিসার নিয়ম পাল্টে আঞ্চলিক শহরে অন্তত পাঁচ বছর বসবাস করার আবশ্যিক শর্ত জুড়ে দিচ্ছে। কাজে দক্ষ, পরিবার ও শরণার্থী ভিসার ক্ষেত্রে এ শর্ত জোরদার করার পরিকল্পনা করছে অস্ট্রেলিয়ার কেন্দ্রীয় সরকার।
২৮ বছর পর দাম পড়ছে বসতবাড়ির
অস্ট্রেলিয়ার বসতবাড়ির দাম কমতে শুরু করেছে। আর গত ২৮ বছরে বাড়ির দাম কমার হারের এটাই সর্বনিম্ন রেকর্ড বলছেন দেশটির অর্থনীতিবিদরা। ঘরবাড়ির দাম বর্তমানে প্রায় ৪ শতাংশ কমেছে বলে জানিয়েছে বাজার বিশ্লেষকেরা। এর আগে ১৯৯০ সালে ঘর বাড়ির দাম হঠাৎই অনেক কমে যায়। ঘরবাড়ির দামের এ নিম্নগতি আরও বাড়বে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। আর এর মূল কারণ দেশটির বাড়ির ঋণে সুদের হার বেড়ে যাওয়া। দেশটির শীর্ষ ছয়টি বাড়ির ঋণ সেবা প্রদানকারী আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ইতিমধ্যে দুইটি প্রতিষ্ঠান তাদের বাড়ির ঋণের ওপর সুদের হার বাড়িয়েছে। আর বাড়তি সুদের অর্থ সামাল দিতে একাধিক বাড়ির মালিকের অনেকেই বাড়ি কম দামে বিক্রি করতে শুরু করছে। আর এ সুযোগটার সবচেয়ে বেশি উপকারী হতে পারে দেশটিতে বসবাসরত প্রথম কিনছেন এমন ক্রেতারা।
সিডনিতে বাতিল হচ্ছে প্লাস্টিকের ড্রাইভিং লাইসেন্স
অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের (এনএসডব্লিউ) বাসিন্দাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স আগামী বছর নাগাদ বাতিল হতে চলেছে। কেননা, রাজ্য সরকার ভার্চুয়াল ড্রাইভিং লাইসেন্স চালু করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ২০১৯ সাল নাগাদ রাজ্যের সকল প্লাস্টিক ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল করে নতুন ডিজিটাল ড্রাইভিং লাইসেন্স সেবা চালু করার কথা রয়েছে। ডিজিটাল ড্রাইভিং লাইসেন্সটি থাকবে ব্যবহারকারীর স্মার্টফোনে। রাজ্যভিত্তিক সরকারি অ্যাপ 'সার্ভিস এনএসডব্লিউ’ তে এ লাইসেন্স জুড়ে দেওয়া হবে। সকল তথ্যের সাথে একটি কিউআর কোড থাকবে। যেটি স্ক্যান করে ট্রাফিক পুলিশ চালকের সকল তথ্য জানতে পারবে।
এনএসডব্লিউ রাজ্যের বেশ কিছু এলাকায় ইতিমধ্যে পরীক্ষামূলক-ভাবে ডিজিটাল ড্রাইভিং লাইসেন্স সেবা চালুর কথা জানিয়েছে রাজ্য সরকার। ওরানা অঞ্চলীয় শহর ডাবোতে প্রাথমিকভাবে ডিজিটাল ড্রাইভিং লাইসেন্স সেবা চালু করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এতে ড্রাইভিং লাইসেন্স এর ব্যবহার সহজ হয়েছে। এ বছরের নভেম্বর নাগাদ পরীক্ষামূলক-ভাবে সিডনির বেশ কিছু উপশহরেও এ সেবা চালুর কথা রয়েছে। এর মধ্যে থাকছে র্যা ন্ডউইক, বন্ডাই, বন্ডাই জংশন, ব্রন্টি, ক্লোভেলি, কুজি এবং ওয়েভারলি। পরীক্ষামূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করলেই এ এলাকার বাসিন্দারা আগেভাগেই ডিজিটাল ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়ে যাবেন। তবে পরীক্ষামূলক অংশগ্রহণ সময়ে প্লাস্টিকের ড্রাইভিং লাইসেন্স সঙ্গে রাখতে হবে।
নেতৃত্ব-হীন জলবায়ু সমস্যা
বিশ্বের সর্বাধিক কার্বন নির্গমন-কারী দুটি দেশের একটি অস্ট্রেলিয়া জলবায়ুর বিপদ্গামী পরিবর্তনের জন্য তেমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না এমনই অভিযোগ করছেন বিশ্বের প্রখ্যাত পরিবেশবিদরা।
প্রখ্যাত মার্কিন পরিবেশবিদ বিল ম্যাককিবেন তার এক লেখায় বলেছেন, 'তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ সত্যিকার অর্থেই চলমান। আর আমরা হেরেই যাচ্ছি।’ যুদ্ধের পথে বিশ্ব শিরোনামের সেই লেখায় ম্যাককিবেন জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতা নিয়ে কথা বলেন। তিনি আরও শঙ্কা প্রকাশ করেন এ যুদ্ধ নেতৃত্ব-হীন বলে। কেননা কোনো দেশই জলবায়ুর পরিবর্তনে আসন্ন সংকট নিরসনে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে না। ২০১৫ সালে বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোকে নিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি সামাল দিতে প্যারিস চুক্তি নামে একটি চুক্তি হয়। ইতিবাচক এ চুক্তির সঙ্গে সহমত প্রকাশ করে চুক্তি সাক্ষর করা দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম অস্ট্রেলিয়া। দেশটির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবট এ চুক্তি সাক্ষর করেন। গত ১৩ আগস্ট অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সংসদে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল সেই চুক্তির একটি নীতিমালার প্রস্তাব পেশ করেন। তবে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বণ্টনের নতুন এ নীতিমালা চুক্তি স্বাক্ষরকারী সেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী অ্যাবটই এর বিরোধিতা করেন। আর সে রেষারেষিতে গত ২৪ আগস্ট টার্নবুলকে প্রধানমন্ত্রীত্ব থেকেই অপসারিত হন।
এ প্রসঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশ ও ডাক্তার সংস্থার অবৈতনিক সচিব ডা: ডেভিড শার্মান অস্ট্রেলিয়ার নতুন প্রধানমন্ত্রী মরিসনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনি দেশের কথা ভাবার আগে নিজের সন্তানদের কথা ভাবুন। তাদের আগামীর জন্য কী পরিবেশ রেখে যাবেন সেটা ভাবতে শুরু করলেই দেশ ও বিশ্বের কথা ভাবতে পারবেন।’
কাউসার খান: অভিবাসন আইনজীবী, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া। ইমেইল: immiconsultants@gmail.com
|