সবাইকে কাঁদিয়ে বিদায় নিল শিশু আরিক
কাউসার খানঃ পরিবার-স্বজন আর আত্মীয়-পরিচিতসহ সিডনি প্রবাসী শত শত বাংলাদেশিসহ অনেককে কাঁদিয়ে শেষ বিদায় নিয়েছে ছোট্ট আরিক। গত ২ ফেব্রুয়ারি অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে গাড়ি-বন্দী অবস্থায় প্রচণ্ড গরমে তিন বছর বয়সী এক প্রবাসী বাংলাদেশি শিশুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। ওইদিন সকালের দিকে ভুলে শিশুটিকে গাড়িতে রেখেই বাড়ির ভেতর কর্মব্যস্ত হয়ে যান বাবা। গাড়িতে প্রায় ৬ ঘণ্টা আটকে থেকে মারা যায় শিশু আরিক হাসান। এই ঘটনার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় ছেয়ে গিয়েছিল সংবাদ থেকে সামাজিক-গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন অঙ্গন। শুধু বাংলাদেশিরা নয়,গাড়ি-বন্দী অবস্থায় এই প্রবাসী বাংলাদেশি শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় অস্ট্রেলিয়া-জুড়ে তোলপাড় হয়েছিল যা এখনো রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার পুলিশ ময়নাতদন্তের পর শিশু আরিকের লাশ দাফন করার জন্য হস্তান্তর করে। আজ শুক্রবার বাদ জুম্মা আরিকের জানাজা ও দাফন-কার্য সম্পন্ন হয়েছে। সিডনির লাকেম্বা মসজিদে প্রথম জানাজার নামাজ শেষে তার মরদেহ সিডনির কেম্পস ক্রিক কবরস্থানে নিয়ে আসা হয়। সেখানে আবার শতাধিক বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণে দ্বিতীয় জানাজার পর আরিককে দাফন করা হয়। ছোট সবুজ কফিনে আরিকের মরদেহ কাঁধে তোলা ৬ জনের একজন ছিলেন তাঁর বাবা নেওয়াজ হাসান। এ সময় তাঁর চোখ বার বার মাটির দিকে নেমে আসছিল। মুসলিম নিয়ম মেনে যতদূর পেরেছেন আরিকের মরদেহের পিছু পিছু এসেছেন তার মা মারজিয়া শাহানা। তাঁকে শান্ত করতে বার বার তাঁর চোখ ঢেকে দিচ্ছিলেন তাঁর সঙ্গে থাকা আত্মীয়স্বজন। কেউ আবার তাঁকে শক্ত করে ধরে রেখেছেন যেন মূর্ছা না যায়। গাঢ় নীল রঙের পাঞ্জাবি, সাদা পায়জামা আর মাথায় টুপি দিয়ে নীরবে সবার সঙ্গে চলছিল আরিকের অল্প বড় ভাই আরাব হাসান। একদম চুপচাপ শুধুই আরিকের কফিনের দিকে, কবরের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছিল আরাবকে, কারো সঙ্গে কথা বলেনি সে।
দুর্ঘটনার দিন সকালে বড় সন্তান আরাবকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি নিয়ে বাড়ি চলে আসেন নেওয়াজ হাসান। কিন্তু গাড়িতে ঘুমিয়ে ছিল ছোট সন্তান আরিক যাকে ডে-কেয়ারে নামিয়ে দেওয়ার কথা ভুলে যান তিনি। বেলা তিনটায় নেওয়াজ বড় সন্তানকে স্কুল থেকে নিয়ে ফেরার সময় গাড়ির পেছনের আসনে অচেতন অবস্থায় আরিককে দেখতে পান। ছেলের এই অবস্থা দেখতে পেয়ে তিনি তাৎক্ষণিক প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়াসহ জরুরি সেবায় কল করেন। কিন্তু প্যারামেডিক এসে শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করে। সেদিন সিডনির তাপমাত্রা ছিল ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
 কাউসার খান, সিডনি
|