bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia













সিডনিতে গাড়ি-বন্দী হয়ে বাংলাদেশি শিশুর মৃত্যু!
জনমনে অনেক প্রশ্ন! পাওয়া গেল যেসব উত্তর!




কাউসার খানঃ অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে গাড়ি-বন্দী অবস্থায় প্রচণ্ড গরমে তিন বছর বয়সী এক প্রবাসী বাংলাদেশি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সিডনির স্থানীয় সময় বেলা তিনটায় গ্লেনফিল্ডের রেলওয়ে প্যারেডে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার দিন সকালের দিকে শিশুটিকে গাড়িতে রেখে ভুলে চলে যান বাবা। বেলা তিনটা নাগাদ ফিরে এসে তিনি শিশুটিকে অচেতন অবস্থায় দেখে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়াসহ জরুরি সেবায় ফোন করেন। তাৎক্ষণিক প্যারামেডিক এসে শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করে। মর্মান্তিক এ ঘটনায় দেশটির গণমাধ্যম ও জনমনে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। দিনব্যাপী অস্ট্রেলিয়ার টিভি চ্যানেলের খবরে এই সংবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে।

ঘটনার বিস্তারিত জানতে ঘটনাস্থল যাই। ব্যস্ত সড়কে একের পর এক গাড়ি চলছে নিজ গতিতে। তবুও যেন থমকে গেছে স্থানীয়দের জনজীবন। যেখানে গাড়ি থেকে নিহত তিন বছর বয়সী আরিক হাসানের মরদেহ উদ্ধার করা হয় সেখানে শোক প্রকাশে আসা-যাওয়া করছেন স্থানীয়রা। সেই শোকের বহিঃপ্রকাশে ফুল, মনের দুটি কথা লেখা কাগজ, কয়েকটা খেলনা রেখে গেছেন অনেকে।

পরবর্তীতে নিহত আরিক হাসানের বড় খালু চৌধুরী মোর্শেদের সঙ্গে কথা হয়। তাঁর ব্যাখ্যায় ঘটনার ধারাবাহিকতা হলোঃ ‘আরিকের মা সকালে কর্মস্থলে চলে যান। আরিকের বাবা, নেওয়াজ হাসান, বাসা থেকে হোম-অফিস করেন। ঘটনার দিন আরিককে চাইল্ড-কেয়ার কেন্দ্রে এবং বড় ছেলে আরাফকে স্কুলে নামিয়ে দেওয়ার জন্য তাঁদের বাবা গাড়িতে করে রওনা হয়। গাড়িতে উঠে পেছনের আসনে শুয়ে ঘুমিয়ে যায় আরিক। এরপর প্রথমে আরাফকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে গাড়িতে পেট্রোল নিতে নিকটবর্তী পেট্রোল পাম্পে যান তিনি। বাড়ি ফেরার রাস্তাটি আরিকের চাইল্ড-কেয়ারের সামনে দিয়ে হওয়াই সেখান দিয়ে আসার পথে তিনি ভাবেন আরিককে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর তিনি বাড়িতে চলে আসেন, বাড়ির সামনে গাড়ি পার্ক করেন, ভিতরে গিয়ে জরুরী মিটিং এ যুক্ত হয়ে পড়েন। এরপর বেলা ৩ টার আগে তিনি আবার আরাফকে স্কুল থেকে নিয়ে আসতে যান। আরাফের স্কুলের কাছেই বাংলাদেশি গ্রোসারি দোকান কাজী সুপার শপের সামনে গাড়ি পার্ক করেন। টুকটাক দৈনিক বাজার করে গাড়ির পেছনে সামগ্রী রাখতে গিয়ে খেয়াল করেন গাড়িতে আরিক শুয়ে আছে! হতচকিত হয়ে সন্তানকে বাঁচাতে গাড়ির পেছনের কাঁচে সজোরে ঘুষি মারেন এবং আহত হন। এরপর পেছনের দরজা খুলে আরিককে বের করে এনে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। জরুরী সেবায় কল করা হলে প্যারামেডিক এসে আরিককে মৃত ঘোষণা করে।’

চৌধুরী মোর্শেদ আরও বলেন, ‘আমি আরিকের খালার ফোন পেয়ে তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখি প্রচুর পুলিশের গাড়ি, মিডিয়া, এম্বুলেন্স। আমি ভেবেছি আরিক হয়ত রাস্তায় দৌড় দিতে গিয়ে কোনো গাড়ির সঙ্গে দুর্ঘটনায় পড়েছে, তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু কে জানত আরিক আর নেই।’

শিশু আরিকের এই অপমৃত্যুর ঘটনায় বিভিন্ন প্রশ্ন তোলা হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন জায়গায়। যার কয়েকটির উত্তর মিলেছে চৌধুরী মোর্শেদের সাথে কথোপকথনে। বাড়ি ফেরার পথে আরিকের বাবা গাড়ির পেছনের আসনে খেয়াল করেন নি যে আরিক শুয়ে আছে? ‘বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব খুবই কম, এতটুকু সময়ে একটি বাচ্চা পেছনে শুয়ে থাকলে না দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং আরিকের বাবা তা-ই বলেছেন।’ ব্যস্ত সড়কে গাড়িটি পার্ক করা ছিল, তাও কেউ দেখেনি? এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন ‘সকালে বাচ্চাকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি বাসায় এনে পার্ক করেছিলেন। দিনভর গাড়িটি বাসার সামনেই ছিল। যে ঘটনাস্থলে গাড়িটি দেখতে পেয়েছেন সেখানে দুপুরের পর বড় ছেলেকে স্কুল থেকে নিয়ে আসার জন্য গিয়ে রাখা হয়েছিল।’ এ ছাড়া, ‘আরিককে সাধারণত তাঁর মা সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ কাজ থেকে ফেরার সময় নিয়ে আসেন।’

তবে অস্ট্রেলিয়ার চাইল্ড-কেয়ার এমনকি বিদ্যালয়ে শিশুরা অনুপস্থিত হলে অভিভাবককে ফোন করে জিজ্ঞাসা করা হয়, এমন কোনো অনুসন্ধানী কল তিনি পান নি কেন? সাধারণত বাবা মায়েরা ফোনে হলেও একজন আরেকজনের কাছে সন্তানের খোঁজ নিয়ে থাকেন, ঘটনার দিন আরিকের বাবা-মায়ের কোনো কথা হয়নি কেন? জনমনের এমন বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মতো কোনো প্রতিবেদন তৈরি হয়নি বলে জানিয়েছে স্থানীয় পুলিশ। শিশুটির মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। আরিকের বাবাকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে গেলেও তাঁর বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ আনা হয়নি। তাঁকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

গতকাল পুলিশ আরিকের বাড়িতেও তল্লাশি চালিয়েছে। এজন্য ঘেরাও করে রেখেছিল, কাউকেই প্রবেশ করতে দেয়নি। চৌধুরী মোর্শেদ জানিয়েছেন, সোমবারের আগে পুলিশ মরদেহ হস্তান্তর করবে না বলে ধারণা করছি; এরপরেই দাফন কার্য সম্পন্ন করা হবে। আর আরিকের দাদী আর চাচা থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে, খবর পেয়েই তাঁরা রওনা করেছেন। তবে সবার প্রতি অনুরোধ যেন আরিকের পরিবারের প্রতি সমবেদনার নজর দেওয়া হয়। দুর্ঘটনাটিকে একটি মানবিক ইস্যু হিসেবে বিবেচনা করে আরিকের পিতার প্রতি কোনো ঘৃণা ছড়াবেন না। পৃথিবীতে কোনো বাবা-ই শিশু সন্তানের প্রতি বেখেয়ালি নন, এটা মর্মান্তিক দুর্ভাগ্য।’

দেশটিতে শিশুদের গাড়িতে রেখে ভুলে যাওয়ার ঘটনা একদমই কম নয়। গত বুধবার দেশটির কুইন্সল্যান্ড রাজ্যেও এক শিশুকে গাড়িতে রেখে চলে যায় একজন ৩০ বছর বয়সী নারী। পড়ে ফিরে এসে গাড়ির তালা আর খুলতে না পারলে জরুরী সেবায় কল করা হলে শিশুটিকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়। এ ছাড়া পুলিশি রিপোর্ট বলছে, প্রতিবছর প্রায় ৫ হাজার শিশুকে গাড়ি-বন্দী অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। গাড়ির ভেতর তাপমাত্রা বাইরের তাপমাত্রার চেয়েও অনেক বেশি হয়। পার্ক করা গাড়ির ভেতরের তাপমাত্রা কতটা ভয়াবহ সেটা বোঝাতে, ২০১৫ সালে সিডনিতে একজন মাস্টার শেফ গাড়ির ভেতরের তাপ ব্যবহার করে মাত্র দেড় ঘণ্টায় মাংস রান্না করে দেখিয়েছিলেন।

বড়দের তুলনায় শিশুদের শরীরের পানি শূন্যতাও ঘটে দ্রুত। তাই শিশুদের অল্প সময়ের জন্য হলেও গাড়িতে একা রেখে যাওয়া মারাত্মক হতে পারে। অস্ট্রেলিয়ায় শিশুদের গাড়িতে বহনের ক্ষেত্রে বিশেষ আইন রয়েছে। আইন অনুযায়ী তাঁদের গাড়িতে শিশুদের জন্য তৈরি বিশেষ আসনে বসাতে হয়। আর শিশুদের গাড়িতে একা রেখে এক মুহূর্তের জন্য দূরে যাওয়া সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ যার বিচারে ৩ বছরের জেল অথবা সর্বোচ্চ প্রায় ১৭ লাখ টাকা জরিমানা হতে পারে।




কাউসার খান, সিডনি




Share on Facebook               Home Page             Published on: 4-Feb-2023

Coming Events:





A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far