এবার লেবার পার্টির নেতৃত্বে লড়াই
কাউসার খান: অস্ট্রেলিয়ার বর্তমান সরকারের শেষ দিনগুলো চলছে এখন। শুরু হতে যাচ্ছে দেশটির ৪৬তম জাতীয় নির্বাচন। সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে কোন দল রাষ্ট্র চালনার ক্ষমতায় আসবে সে প্রশ্ন নিয়ে একদিকে চলছে তুমুল আলোচনা, অন্যদিকে জরিপ আর চুলচেরা বিশ্লেষণ। তবে কোন দল ক্ষমতায় যাবে সে ফলাফল রয়ে গেছে এখনও বহুদূর। কেননা, দল পরিচালনা করবেন কে, এ নিয়েই দলের ভেতরকার নানা সংকট চলছে অস্ট্রেলিয়ার প্রধান দুটি দলের ভেতরই। দেশটির বর্তমান সরকার দল লিবারেল পার্টির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল এবং দলের আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবটের মধ্যে এতদিন দলের নেতৃত্ব নিয়ে রেষারেষি চলছিল বা চলছে বেশ বড় করেই। এবার সে পথেই হাঁটছে দেশটির প্রধান বিরোধীদল লেবার পার্টিও। যদিও লেবার পার্টি থেকে কেউ কেউ বলছেন এটা প্রপাগন্ডা, সত্যিকার অর্থে লেবার পার্টির নেতৃত্ব নিয়ে কোন লড়াই নেই। এরই মধ্যে দেশটির অন্যতম গ্রহণযোগ্য সংবাদপত্র দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ড ‘অ্যালবানিজ, শর্টেন এবং নেতৃত্বের প্রশ্ন যা দূরে হবে না কখনো’ এক শিরোনাম করে সংবাদ বিশ্লেষণ প্রচার করার পর আলোচনার আগুনে নতুন করে ঘি ঢেলে দিয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার বিরোধীদল লেবার পার্টির বর্তমান প্রধান বিল শর্টেন। এর পরবর্তী ক্ষমতায় রয়েছেন অ্যান্থনি অ্যালবানিজ। ২০১৩ এবং ২০১৬ সালে শর্টেন এর বিপরীতে নেতৃত্ব নিয়ে দলীয় নির্বাচনে জয় পাননি অ্যালবানিজ। তবে নেতৃত্বের যোগ্যতায় কোনো কমতি নেই অ্যালবানিজ এর। এ নিয়ে কখনও সমালোচনায়ও পড়েননি তিনি। দেশটির জনগণের কাছে জনপ্রিয়তাও রয়েছে তাঁর। সমাজসেবা মূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সর্বদা অগ্রণী ভূমিকায় দেখা যায় তাঁকে। এমন কি সাংসদ হয়েও অনুদান সংগ্রহে একবার এক কনসার্টে সঙ্গীত সম্পাদকের (ডিজে) কাজও করেন তিনি। জনগণের বেশ কাছাকাছি থাকার কারণ জানতে চাইলে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘অনেকে বলবে, রাজনীতিবিদরা অহংকার আচরণ দেখায় যদিও এমনটা মোটেও নয়। আমরা সাধারণ মানুষ, তবে আমাদের মধ্যে কেউ হয়তো সেটা প্রকাশ করতে পারে, আবার কেউ হয়তো বা করতে পারে না।’ অস্ট্রেলিয়ার সরকার দলীয় সাংসদেরাও অ্যালবানিজকে 'জনগণের পছন্দ’ বলে অ্যাখ্যায়িত করেন।
তবে বিল শর্টেন এর জনপ্রিয়তা লেবার পার্টির সদস্যদের মধ্যেই অধিক। দলের সদস্যদের সমর্থনেই বরাবর নেতৃত্বের আসনে ক্ষমতাসীন হয়ে আছেন শর্টেন। নেতৃত্বের নির্বাচনে জনপ্রিয়তার প্রায় ৬০ শতাংশ ভোট আসে অ্যালবানিজ এর পক্ষে। তবে মুল ভোটের ৬৪ শতাংশ ভোটে জয় পান বিল শর্টেন। লেবার পার্টির সমর্থকদেরও কাছেও জনপ্রিয়তা রয়েছে শর্টেন এর। সাম্প্রতিক এক নিউজপোল এ লেবার ভোটার এর ৩৯ শতাংশ সমর্থন আসে শর্টেন এর পক্ষে, যেখানে অ্যালবানিজ এর পক্ষে আছে মাত্র ২২ শতাংশ। তবে ২০১৩ সালের নির্বাচনের পর থেকে শর্টেন বরাবরই জনগণের ভালোবাসা ধরে রাখতে ব্যর্থ হন। দলের ভিতর জনপ্রিয় হলেও ১৯৮৫ সাল থেকে নিউজপোলের তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত শর্টেনই সবচেয়ে অ-জনপ্রিয় বিরোধীদলের নেতা। সম্প্রতি প্রকাশিত অ্যাসেনশিয়াল পোল এর ফলাফলে বলা হয় গত এক মাসে শর্টেন সমর্থক ৪ পয়েন্ট কমে ৩৩ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে।
অ্যালবানিজ এর জনপ্রিয়তা লেবার দলের আসন্ন নির্বাচনে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারে। আর তাই দলটির নেতৃত্ব বদল হওয়ার কিছুটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আগামী ২৮ জুলাই এর অস্ট্রেলিয়ার উপনির্বাচনের ফলাফলের ওপর শর্টেন এর নেতৃত্ব বহাল থাকার অনেক শঙ্কায় নির্ভর করছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিরোধী দল থেকে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষয়তায় আসার লেবার পার্টির ইতিহাস তিন বার। আর সেই তিনবারই গফ হুইটলাম, বব হক এবং কেভিন রাড এর মতো জনপ্রিয় নেতারাই দলকে জাতীয় নির্বাচনে জয় লাভ করিয়েছে। আর সেদিক থেকে শর্টেন জনগণকে উৎসাহী করতে পিছিয়ে রয়েছেন। তবে সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার বিষয়ক অধ্যাপক রড টিফেন বলেছেন, নির্বাচনের আগে নেতৃত্বে পরিবর্তন খুব বেশি কাজে দেয় না। অস্ট্রেলিয়ার রাজনৈতিক ইতিহাস বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, ১৯৭০ সালের পর প্রায় ৭৩ টি জাতীয় ও রাজ্যভিত্তিক নেতৃত্ব পরিবর্তনের ঘটনার ঘটে। তবে এর ফলে দল বেশির ভাগ সময়ে নির্বাচনে জয় না পেয়ে, পরাজিতই হয়েছে। কারণ দল পরিচালনার ক্ষেত্রে এটি একটি ব্যর্থতা বলে জনমনে বিরূপ প্রভাব পড়ে বলেও জানান তিনি। আবার লেবার পার্টি যখন ক্ষমতায় ছিল, তখনকার প্রধানমন্ত্রী কেভিন রাড ও তাঁর পরের প্রধানমন্ত্রী জুলিয়া গিলার্ডের মধ্যে নেতৃত্ব নিয়ে রশি-টানাটানি হয়েছিল। এর ফলে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থেকে মাশুল দিচ্ছে লেবার পার্টি। এবার আর সে পথে দলটি হাঁটবে না বলে মনে করছেন রাজনীতিবিদেরা। পাশাপাশি, শর্টেনও সহজেই ছেড়ে দেয়ার পাত্র নয় বলে লেবার পার্টির একজন সাবেক মুখপাত্র বলেন। আর জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভে অ্যালবানিজ এর জনপ্রিয়তাও দলের প্রয়োজন রয়েছে। তাই দলের নেতৃত্ব নিয়ে নানা শঙ্কা থাকলেও লেবার পার্টিকে আগামী মাসের শেষ দিকে আসন্ন উপ-নির্বাচনের ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। যদিও লেবার পার্টি থেকে কেউ কেউ বলছেন, লেবার পার্টির নেতৃত্বের সঙ্কট শুধুই প্রপাগন্ডা। দেশটির বর্তমান সরকার দল লিবারেল পার্টি বিরোধীদলের নেতৃত্বে ফাটল ধরাতে এই প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।
|