লাকেম্বায় বাঙালি ইফতার বাজার কাউসার খান
সিডনির লাকেম্বায়ও দেশীয় ইফতার বাজারের মতোই দোকানিরা হাঁক ছাড়েন, “আসুন এদিকে, এদিকে আসুন, গরম গরম জিলাপি, কাবাব পেঁয়াজু ইফতারি নিয়ে যান”। এসব দেখে শুনে ভুলেই যেতে পারেন, কোথায় আছেন। পুরানো ঢাকায় নাকি অন্য কোথাও। হাল আমলের এই বাঙালি ইফতার বাজার এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কাছের কিংবা দূরের অনেকই এখন এ বাজারে আসেন সুস্বাদু ইফতার কিনতে। এই দূর প্রবাসে ঘরে ইফতার তৈরির অভ্যাস থাকলেও এখন অনেকে বাহারি স্বাদের ইফতার কিনতে ভিড় করেন লাকেম্বার নানান ইফতারের পসরা সাজানো দোকানগুলোতে। কাউন্সিল থেকে অনুমতি নিয়ে ফুটপাত থেকে শুরু করে রেস্তোরাঁ সব জায়গায় ইফতার বিক্রির আয়োজন হয় এখানে। ইফতারের দোকান নিয়ে এমন দৃশ্য বাংলাদেশে নিতান্তই সাধারণ হলেও এখানে ভিন্ন। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে না হতেই লাকেম্বার রাস্তায় ইফতার দোকানের শোরগোল ভিন্ন মাত্রা তৈরি করে যেটা সচরাচর অন্য এলাকায় চোখে পড়ে না। এখানে বাঙালি ইফতার ঐতিহ্যের প্রায় সকল আয়োজনই রয়েছে, রয়েছে দোকানির ক্রেতাপরায়ণতা আর বিনামূল্যের হাঁকডাক।
সিডনির সবচে বেশি প্রবাসী বাঙালি মুসলিম বসবাস করেন এই লাকেম্বাতে। সেই সাথে শহরটির একটি বড় মুসলিম সম্প্রদায়ের বাসও এই লাকেম্বায়। লাকেম্বার বাঙালি জনগোষ্ঠীকে ঘিরে অনেক ব্যবসা-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে এখানে। মুদির দোকান থেকে শুরু করে বিমানের টিকেট বিক্রির প্রতিষ্ঠানও রয়েছে এখানকার বাঙালিদের। লাকেম্বার বাঙালি প্রবাসীসহ বেশির ভাগই মুসলিম হওয়াই প্রতিবছর রোজার মাস এলেই এখানে বসে জমজমাট ইফতার বাজার। বিভিন্ন বাঙালি রেস্তোরাঁসহ ফুটপাতেই বসে মুখরোচক ইফতারের দোকান। প্রায় প্রতিটি বাঙালি দোকানের সামনেই দেশীয় আমেজের ইফতারে সাজে টেবিলগুলো। প্রায় প্রতিটি দোকানেই রয়েছে পেঁয়াজু, ছোলা, বেগুনি, ঘুগনি, আলুর চপ, জালি-কাবাব, হালিমসহ বিভিন্ন রকম বেসনে ভাজা খাবার, চিকেন ফ্রাই, জিলাপিসহ হরেকরকম মিষ্টি, শরবত , খেজুর আরো অনেক রকমারি ইফতারের সমারোহ আবার কিছু কিছু দোকানে থাকে ভিন্ন স্বাদের ফলের জুস,বার্গার, বারবিকিউসহ অস্ট্রেলিয়ান খাবারও।
তবে দেশীয় ঐতিহ্যের খাবার আর তার স্বাদ নিতে লাকেম্বার এই বাঙালি ইফতার বাজারে সিডনিসহ অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও বাঙালিরা ভিড় জমান এখানে। মাঝে মাঝে ভিন্ন খাবারের স্বাদ নিতে দেশ-ধর্ম শেষে অনেক বিদেশিরাও আসেন এখানে। রমজানের পুরো মাস জুড়েই প্রবাসী বাঙালিদের দেশীয় ধর্মীয় আমেজের ইফতার বাজারের হাঁকডাক, ইফতার, দৌঁড়েফিরে নামাজ তারপর চা-কফি আড্ডা, তারাবি নামাজ এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র এখানেই সম্ভব বলে অনেক সন্ধ্যায় দলবল বেঁধে চলে আসেন ইফতার করতে এই লাকেম্বায় বলে জানালেন এক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক। ইফতারের পাশাপাশি সেহেরির আয়োজনও আছে লাকেম্বার বাঙালি রেস্তোরাঁগুলোতে। ঘরে তৈরি করার চেয়ে সিডনির প্রবাসী বাঙালিদের অনেকই এসব দোকান থেকেই ইফতার কেনেন। 'এখানে ইফতারি কিনতে এসে দেশের যে একটা আমেজ পাওয়া যায়, সেটা ঘরে ইফতারি বানালে কোথায় পাবো’ বললেন বরিশালের বাংলাদেশি প্রবাসী কাজী আহসান। ‘এখানে শুধু ইফতার কেনাটায় মুখ্য এমনটা নয় সাথে নামায, ক্ষণিকের জন্য প্রিয়জনদের সাথে দেখা হওয়াও একটা কারণ বললেন ইফতারি কিনতে আসা আরেক প্রবাসী। তবে এখন সিডনির রকডেল, ইস্টলেকস, মিন্টোতেও ছোট আকারে বাঙালি ইফতার বিক্রির পসরা বসে আবার অন্য কোথাও হয়তো বসবে বাঙালি ইফতার বাজার অচিরেই।
কাউসার খান, সিডনি, kawsark@gmail.com
|