আইসিসি’র সংস্কার প্রস্তাব অস্তিত্ব বিলীন করে প্রতিদান নয় কাউসার খান তিন দেশের কর্তৃত্ব আর মুনাফা লাভের চালে বিশ্ব-ক্রিকেটের যে বারোটা বাজতে যাচ্ছে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না এখন। এতদিনে সবাই জেনে গেছেন ক্রিকেটকে নিয়ে কি চালটা চালতে যাচ্ছে ভারত-অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড। তাঁদের মুনাফার জন্য সমস্ত ক্রিকেটকে তাঁরা নাঙা করে দিচ্ছেন দুনিয়ার সামনে। এ ষড়যন্ত্রের যতোটুকু জেনেছি তাতেই লজ্জায় মাথা নত হয়ে গেছে। এ নাকি সভ্যতম খেলার ধারক-বাহকদের পরিকল্পনা।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)’র এ সংস্কার পরিকল্পনা পাস হলে ভারত-অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের ক্রিকেট ক্ষমতা আর মুনাফা অর্জনের বাইরে আমাদের যে কঠিন-তম ক্ষতিটা হবে সেটা হলো ক্রিকেটে বাংলাদেশের টেস্ট খেলার সুযোগ নেমে যাবে প্রায় শূন্যের কোঠায়। আর এরকম একটা কু-প্রস্তাব ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান জোরালো ভাবে এর বিপক্ষে থাকবে সেটা-ই স্বাভাবিক। যেখানে জাতীয় ক্রিকেট বিলীন হয়ে যাচ্ছে সেখানে বিপক্ষ অবস্থান নিতে কোন ভয়, শঙ্কা থাকার কথায় নয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)’র। কিন্তু তারপরও ভয় হচ্ছে কারণ দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় যখন কিছু দেশ নিরাপত্তার অজুহাতে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিতব্য এশিয়া কাপ ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বাংলাদেশ সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করতে পারবে কিনা সন্দেহ পোষণ করছিল তখন প্রতিবেশী ভারত বাংলাদেশের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিল। কিন্তু এখন দেশের স্বার্থ বাদ দিয়ে কোন কারণে ভারতের ওই দৃঢ় অবস্থানের ঋণ যদি শোধ করতে চায় বিসিবি তাহলেই বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের কফিনে শেষ পেরেকটি মারা হয়ে যাবে। আর কেন মনে হচ্ছে এটায় করতে যাচ্ছে বিসিবি কারণ আইসিসি’র সংস্কার প্রস্তাবের ব্যাপারে কৌশলী অবস্থান নিয়েছ বিসিবি। ভাবখানা এমন ‘ঝোপ বুঝে কোপ’ কিন্তু বিসিবি’র এই ‘ঝোপ বুঝে কোপ মারা’র নীতির কোন সুযোগ নেই এখন। এখানে ক্রিকেট অস্তিত্বের সাথে দেশের অস্তিত্বও সম্পৃক্ত হয়ে গেছে। সারা বিশ্ব জেনে গেছে, সংস্কার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ ক্রিকেট-ই সবচে’ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে তারপরও যদি এর বিপক্ষে বাংলাদেশ না দাঁড়ায় তাহলে আমাদের এই দিনে দিনে গড়া গর্বের ক্রিকেট যেমন শেষ হয়ে যাবে সাথে সাথে দেশের মান-মর্যাদাও ধুলোয় লুটবে পৃথিবীর কাছে। তাঁরা দেখবেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) কে খুশি করতে গিয়ে আমরা কীভাবে নতজানু হয়ে পড়ি। এটা তো সত্য, প্রথমে আমদের বাঁচতে হবে তারপর কার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটবে, না ঘটবে সেগুলোর কথা আসে। যে পরিকল্পনায় আমাদের ক্রিকেটের অস্তিত্ব-ই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে সেখানে এ মিথ্যে জুজুর ভয় পেয়ে কি লাভ। সাময়িক লাভের আকার-ইঙ্গিত হয়তো দেখিয়েছেন ষড়যন্ত্র মহারাজ তিন দেশের কর্তাব্যক্তি’রা কিন্তু এটা তো মূর্খও বুঝে, যদি নিজের ক্রিকেট-ই না থাকে তাহলে ক্রিকেট মুনাফা থাকবে কোত্থেকে। সারা পৃথিবীর ক্রিকেট মহলে এ দুরভিসন্ধি পরিকল্পনা নিয়ে তীব্র চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। শুধু আমাদের কর্তাব্যক্তিগণ পরিষ্কার করে কিছু বলছেন না। শুধু দেখছি-ভাবছি করছেন আর ভিতরে ভিতরে নাকি এ ‘কালো সংস্কার প্রস্তাবে’র পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। আর যা-ই করেন, জাতীয় এ ইস্যুতে দেশের স্বার্থ বাদ দিয়ে কোন পক্ষ সমর্থন করা কেউ মানবে না কিন্তু। শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টাও বিপদজনক হবে।
ইতিমধ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সংগঠন এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে, শুরু হয়ে গেছে প্রতিবাদ। আমি অস্ট্রেলিয়ায় থাকি। এখানেও প্রতিবাদের প্রস্তুতি চলছে। আর শেষে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনকে স্পষ্ট করে একটা অনুরোধ করি, আমার বাড়ী কুলিয়ারচর। আপনি আমাদের সংসদ সদস্য। জাতীয় স্বার্থ বাদ দিয়ে অন্যকোন দেশকে খুশি করতে গিয়ে যেন আবার জাতীয় ভিলেনে পরিণত না হন এটা একটু খেয়াল রাইখেন।
kawsark@gmail.com
|