ফিরে দেখা ২০১৮ অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশী কমিউনিটি
আগের অংশ
বাঙালিদের মেলা উৎসব প্রিয় জাতি হিসেবে এ বছর বাংলাদেশিদের নানা উদযাপনে বড় বড় মেলার আয়োজন করতে দেখা যায়। এ বছর এর ধারাবাহিকতা শুরু হয় নতুন বছর উদযাপনের মধ্য দিয়ে। সিডনির ব্যাংকসটাউনে পল কিটিং পার্কে জানুয়ারিতে আয়োজিত হয় কালারস অব বাংলাদেশ মেলা। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও অমর একুশ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত হয় একুশে বইমেলা। সিডনির অ্যাশফিল্ড পার্কে এ মেলার আয়োজন করা হয়েছিল। মার্চে ভিক্টোরিয়া রাজ্যের মেলবোর্নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৮তম জন্মবার্ষিকী ও শিশু দিবস উপলক্ষে আয়োজিত হয় এক শিশু কিশোর মেলা। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বাঙালি পাড়া খ্যাত লাকেম্বার পেরি পার্কে এবং ওয়ালিপার্কে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন মেলার আয়োজন করা হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ায় বাঙালিদের উদযাপিত সবচেয়ে বড় উৎসব বাংলা নববর্ষ। এ উপলক্ষে অস্ট্রেলিয়া জুড়ে আয়োজিত হয় মেলার। প্রতিবারের মতো এবারেও সবচেয়ে বড় বৈশাখী মেলার আসর বসে বিখ্যাত এএনজেড অলিম্পিক স্টেডিয়ামে। বঙ্গবন্ধু কাউন্সিল অস্ট্রেলিয়া কর্তৃক আয়োজিত এই মেলায় হাজার হাজার বাঙালি অংশ নেন। এর আগে গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে টেম্পি পার্কে আয়োজিত বৈশাখী মেলার এবারের আসর বসে সিডনির ফেয়ারফিল্ডের শো গ্রাউন্ডে। গত অক্টোবরে ব্যাংকসটাউন পল কিটিং পার্কে দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হয়েছিল বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যাল।
ঈদকে কেন্দ্র করেও মেলার আয়োজন করে বাংলাদেশিরা। জুনে লাকেম্বার ইউনাইটিং চার্চ প্রাঙ্গণে তিন দিনব্যাপী মেলার আয়োজন করা হয়েছিল। আগস্টে সিডনির মিন্টোতে ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুল প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয় বাঙালির ঐতিহ্যবাহী পিঠা উৎসব। ডিসেম্বরে বিজয় দিবস উপলক্ষেও মেলা বসে অস্ট্রেলিয়া জুড়ে। অন্য মেলার সঙ্গে সিডনির ওয়ালিপার্কে দিনব্যাপী চলে বিজয় দিবসের বাংলা মেলা। বিজয় দিবসে ২৫টিরও বেশি দেশের প্রায় দুই হাজার দর্শক নিয়ে বহু সাংস্কৃতিক বিজয় মেলার আয়োজন করে সাউথ অস্ট্রেলিয়ান বাংলাদেশি কমিউনিটি অ্যাসোসিয়েশন (সাবকা)। সেন্ট হেলেনস পার্কের মেলা প্রাঙ্গণে ১০টি দেশের সাংস্কৃতিক সংগঠন নিজেদের সংস্কৃতি তুলে ধরে মেলায়।
বাংলা মঞ্চনাটক, স্থানীয় শিল্পী ও সিনেমার সাফল্য
কঞ্জুস | প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে বাংলা সংস্কৃতিকে তুলে ধরার চর্চা ছিল চোখে পড়ার মতো। এরই ধারাবাহিকতায় অস্ট্রেলিয়ায় এ বছর নতুন সম্ভাবনার মুখ দেখে মঞ্চনাটক ও বাংলা সিনেমা। অস্ট্রেলিয়ায় প্রদর্শিত প্রায় প্রত্যেকটি মঞ্চনাটক ও বাংলা সিনেমা প্রচুর দর্শক আকর্ষণ করেছে। বছরের শুরুতে মঞ্চায়িত হয় সুন্দরবনের নিকটবর্তী জনগোষ্ঠীকে নিয়ে রচিত মঞ্চনাটক ‘প্রেম পুরাণ’। সিডনির ওয়ালিপার্কে হরাইজন থিয়েটারে দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজন করা হয় নাটকটি। নাটকটি রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন রাজন নন্দী। মে মাসে সিডনির ব্যাংকসটাউনের ব্রায়ান ব্রাউন থিয়েটারে মঞ্চায়িত হয় বাংলাদেশের সর্বাধিক মঞ্চায়িত নাটক কঞ্জুস। নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন সিডনি প্রবাসী নাট্যজন শাহীন শাহনেওয়াজ। এরপর ব্যাপক দর্শক অনুরোধে গত ৩০ সেপ্টেম্বর আবারও মঞ্চায়িত হয় নাটকটি।
লিভ মি এলোন |
গত ১০ নভেম্বর দীর্ঘ ষোলো বছর পর অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে মঞ্চায়িত হয় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নির্মিত মঞ্চনাটক লিভ মি অ্যালন। সিডনিতে মঞ্চনাটকটি প্রথম মঞ্চায়িত হয় ২০০২ সালে। এ বছর মঞ্চনাটকটি আরও বেশ কয়েকবার মঞ্চায়িত হয় নাটকটি। নাটকটি রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন জন মার্টিন। মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেন গোলাম মোস্তফা ও মৌসুমী মার্টিন।
বছরের শেষ সময়ে গত ২৩ ডিসেম্বর মঞ্চায়িত হয় মঞ্চনাটক রিফিউজি বিভ্রাট। সিডনির ব্যাংকসটাউনের ব্রায়ান ব্রাউন থিয়েটারে নাটকটি পরিবেশন করা হয়। ইন্দোনেশিয়া থেকে ট্রলারে করে অস্ট্রেলিয়ায় আসা একদল শরণার্থীদের সমুদ্র যাত্রা ও বেআইনিভাবে অস্ট্রেলিয়ায় রিফিউজি বিভ্রাট | বসবাস শুরু করার গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে নাটকটি। নাটক রচনা ও নির্দেশনা করেছেন বেলাল হোসেন ঢালী।
এদিকে অস্ট্রেলিয়ায় বাংলা সিনেমার জয়জয়কার দেখা যায় ২০১৮ সালে। মনপুরা খ্যাত নির্মাতা গিয়াসউদ্দিন সেলিম নির্মিত স্বপ্নজাল সিডনির অবার্নে রিডিং সিনেমাস প্রেক্ষাগৃহে ব্যাপক বাংলাদেশি দর্শক আকর্ষণ করে। বছরের শেষ প্রান্তিকে আসে জয়া আহসান অভিনীত ‘দেবী'। আর এসেই রেকর্ড পরিমাণ হলে চলে সিনেমাটি।বছরের শেষ মাসে সিডনিতে চলছে সিয়াম অভিনীত বাংলা চলচ্চিত্র ‘দহন’। এ ছাড়া, আরও অনেক বাংলাদেশি চলচ্চিত্র দেশটির বিভিন্ন রাজ্যের হলে প্রদর্শিত হয়।
আগের অংশ
কাউসার খান: অভিবাসন আইনজীবী, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া। ইমেইল: immiconsultants@gmail.com
|