bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












সুন্দর ফন্টের জন্য SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন...


রঙিন য়্যূরোপের সাদাকালো অভিজ্ঞতা
কাউসার খান



একবার অনেক আগে দুই হাজার সালে ঘুরতে গিয়েছিলাম ইংল্যান্ডে। পনেরো দিন ছিলাম। মন ভরেনি। তখন থেকেই খুব ইচ্ছে ছোট করে হলেও য়্যূরোপের আরো কয়েকটি দেশ ঘুরতে যাব। বিশেষ করে ছবি আর কবিতার দেশ ফ্রান্সে একবার যেতেই হবে কিন্তু ব্যাটে-বলে হচ্ছিল না। এবার যখন সুযোগ হলো তখন আর দেরি করিনি আমি আর আমার বউ দিলাম ছুট। আর এই ছুটে, ছুটে চলি বিহন-হরণ প্রেমময় মুগ্ধতায়। তবে এ রঙিনওরঙিন স্বপ্নের দেশগুলো ভ্রমণের সময় কারো সাথে এমন সাদাকালো অভিজ্ঞতা হয়েছে কিনা, জানি না। আমাদের সাথে যেগুলো হয়েছে তাতে মাঝে মাঝে মনে হয় এই স্বপ্নের দেশগুলো না দেখলেই ভালো ছিল। মনের মাঝে চিরকাল স্বপ্ন স্বপ্ন রঙিন রঙিন হয়েই থাকতো ওই দেশগুলো, ওই দেশের মানুষ, সংস্কৃতি আর তাঁদের অর্জনগুলো। অন্তত আমাদের মনে সাদাকালো হয়ে ভেসে বেড়াত না, এখন যেমন বেড়ায়।

অক্টোবর মাস, আবহাওয়া চমৎকার। জার্মানি’র ফ্রাঙ্কফুর্টে পৃথিবী খ্যাত বইমেলা চলছে। এই বইমেলা দেখার ইচ্ছে ছিল অনেক আগ থেকেই। রাতে একবার ঘুরে এসেছি, পরদিন আবার গেলাম। প্রবেশ করতে ২২ য়্যূরো লাগে। তারপরও বইমেলায় মানুষ আর মানুষ। বাংলাদেশী কোন স্টল তো নেই-ই, বাংলা বইয়েরও কোন হদিস নেই। ঝকঝকে, দামি দামি বই আছে, বইয়ের স্টলও আছে কিন্তু বাঙালি বইমেলার প্রাণের যে টানটা থাকে সেটা কোথাও পেলাম না তারপরও ভাল লাগছিল কারণ সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে মাত্র, পেয়েছেন ফ্রান্সের পেট্রিক ম্যাডিয়ানো। ভাবছিলাম, পৃথিবীর সবচে’ বড় বইমেলা এখানে তিনি থাকতেও পারেন। তথ্যকেন্দ্র জানালো তিনি নেই এখানে। তবে তাঁর সদ্য প্রকাশিত বই ও প্রকাশনীর খবর পেলাম, গেলাম সেখানে। স্কাইপে বাংলাদেশে এক টিভিতে সরাসরি সংবাদ দিলাম এখান থেকে তাঁর বই হাতে। তারপর ঘুরলাম আরো কিছুক্ষণ। এ পর্যন্ত ঠিকঠাক ছিল তারপরই সাদাকালো পর্ব শুরু হল। ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে জেনেভা যাওয়ার কথা ছিল পরদিন কিন্তু মনে হল আজই চলে যাই। বিমানে গেলে আরেক শহরে থেমে যাবে বলে ঘণ্টা দু’য়েক বেশি সময় নিবে তার উপর বন্দরে যাওয়া-আসা সব মিলে লাগবে ৬/৭ ঘণ্টা আর দ্রুত গতির ট্রেনে গেলে লাগবে ৫/৬ ঘণ্টা সাথে দেখতে দেখতে যাওয়া যাবে বলে ট্রেনেই যাব সিদ্ধান্ত নিলাম। ফ্রাঙ্কফুর্টে পরিচিত মান্নান ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম, টিকেট কাটি কিভাবে, তিনি বললেন সোজা স্টেশনে চলে যান পরবর্তী ট্রেনের টিকেট কেটে চেপে বসুন ট্রেনে ব্যস। আমরাও তাই করলাম। স্টেশনের পাশেই হোটেল, ব্যাগ-ট্যাগ নিয়ে সোজা স্টেশনে তারপর টিকেট কেটে ফেললাম। দু’জনের ৩১৬ য়্যূরো। দেরি না করে প্ল্যাটফর্মে গেলাম। ট্রেন আসে আসে। টিকেট ইংরেজি অক্ষরে জার্মান ভাষায় লেখা। একজনকে বললাম বগি আর সিট নাম্বারটা বলে দিতে। টিকেট দেখে বিস্মিত কারণ তিনি যাচ্ছেন প্রথম শ্রেণিতে ৮৫ য়্যূরো দিয়ে সে জায়গায় আমরা দ্বিতীয় শ্রেণিতে যাচ্ছি ১৫৮ য়্যূরো করে তারউপর আমাদের নাকি বগিও নেই, সিটও নেই যদি কোন সিট খালি থাকে তবে বসে যেতে পারবো, না হলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যেতে হবে। ৫/৬ ঘনটার যাত্রা দাঁড়িয়ে যেতে হবে। ভাবতেই কষ্ট হচ্ছিল। একটু পেছনে মনে করতে চাইলাম, দেখলাম টিকেট বিক্রেতা ভদ্রমহিলা টিকেটের যে মূল্য বেশি, সিট নেই, বগি নেই এরকম কোন তথ্য ছাড়ায় টাকাটা রেখে টিকেটটা ধরিয়ে দিলেন আমাকে। হঠাত করে টিকেট কাটলে মূল্য একটু বেশিই এসব দেশে। কিন্তু একজন বিদেশি পর্যটককে এতদূর যাত্রার সিট ছাড়া টিকেট বিক্রি ন্যায়সঙ্গত হওয়ার কোন কারণ নেই। মনটা খারাপ করেই যাত্রা শুরু করলাম পরে একটু এদিক-সেদিক হলেও বসেই আসতে পেরেছিলাম। ট্রেনও আবার ঘন্টাখানেক দেরি করেছিল আর দেরি করলে নিয়ম অনুসারে টিকেটের টাকাও ফেরত দিতে হয়। আরেকটু হলে পুরো টাকায় ফেরত পেতাম, এক ঘণ্টা বলে অর্ধেক টাকা ফেরত নেয়ার রশিদ দিল ট্রেনেই। আমি বললাম যাব্বাবা, ভালই হল; এক ঘণ্টা আগে পরে আমাদের কিইবা এমন হল, মাঝখান দিয়ে কিছু টাকাতো ফেরত পাওয়া গেল।

জেনেভা পৌঁছে পরদিন গেলাম জাতিসংঘের সদর দপ্তর দেখতে। যেখানে ট্রাম এসে থামে সে গেট দিয়ে পর্যটক ভেতরে যেতে পারেন না। অন্য গেট দিয়ে যেতে হয়। তো, এখানে যে পুলিশ ছিলেন তাঁর তথ্যমতে, এ গেট থেকে প্রবেশ গেটে পায়ে হেঁটে যেতে ১৫/২০ মিনিট লাগবে আর শাটল বাস আছে আধ ঘণ্টা পর পর। হিসেব করে দেখলাম পায়ে হেঁটে যাওয়ায় ভাল আর ভেতরে যেতে ১২ ফ্রাঁঙ্ক দিয়ে টিকেট কাটতে হয়। ক্রেডিট কার্ড,ডলার,য়্যূরো বা অন্য কোন কিছু চলে না, নগদ জন প্রতি ১২ ফ্রাঁঙ্ক লাগে। এটা অবশ্য জেনেভা নেমেই বুঝেছিলাম যে সুইসরা য়্যূরো থেকে ফ্রাঁঙ্ককেই প্রাধান্য দেয় বেশি। ফ্রাঁঙ্ক থেকে য়্যূরো’র মূল্য বেশি হলেও এখানে দেখি কোন কিছু কিনতে গেলে ফ্রাঁঙ্ক যতো য়্যূরোতে ততোই। আমাদের কাছে ফ্রাঁঙ্ক নেই। তো, এখন ফ্রাঁঙ্ক দরকার। টাকা তোলার মেশিন খুঁজতে খুঁজতে চলে গেল প্রায় ঘন্টাখানেক। তারপর হেঁটে হেঁটে প্রবেশ গেটে গেলাম। গিয়ে শুনি, পর্যটকদের আজ ভেতরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। ইচ্ছে ছিল বাংলাদেশের পতাকার সামনে একটা ছবি তুলবো সে আর হল না ভেবেই মনটা খারাপ হল। গেটের প্রহরী পুলিশকে বললাম পূর্ব নোটিশ ছাড়া হঠাত করে এরকম বন্ধ করে দেয়া ঠিক হয়নি তোমাদের। পুলিশ বললেন, নোটিশ দেয়া হয়েছে। আমি বললাম, কই? ওই গেটে যিনি আছেন তিনিই তো পাঠালেন এখানে।আমি আরো দু’ঘণ্টা ব্যয় করে আসলাম। পুলিশ তাচ্ছিল্য করে বললেন, আমি জানি না, এখন যাও এখান থেকে। আমি বললাম এভাবে তুমি বলতে পারো না। তারপর পুলিশ ভদ্রলোক আমার সাথে ইংরেজিতে আর কোন কথাই বলেননি, সম্ভবত সুইস ভাষায় কি যেন আঁকুপাঁকু করলেন, আমিও কম যায়নি খাঁটি বাংলা ভাষায় কিছুক্ষণ আঁকুপাঁকু করে চলে এলাম।

রোম গিয়ে প্রথম দিনই ঐতিহাসিক ‘কলসিয়াম’ দালান দেখতে যাই। সভ্যতার এই পুরনো দালান মুগ্ধতায় ভরিয়ে তুলে আমাদের। তারপর ‘এ্যল ফোরো রোমানো’র পুরো এলাকাটা দেখতে যেতেই টিকেটের মুখোমুখি হই। টিকেট কাটতে বিশাল লাইন ১৮ য়্যূরো করে জনপ্রতি সাথে ইংরেজি হেডফোন গাইড নিলে আরো ১০ য়্যূরো করে, আমি তাই নিলাম কিন্তু ভেতরে ঢুকে দেখি আমি যে ইংরেজি হেডফোন গাইড নিয়েছি সেটা এখানকার নয় কলসিয়াম দালানের। ‘এ্যল ফোরো রোমানো’র গেটে অনুরোধ করে বের হয়ে গেলাম টিকেট কাউন্টারে।বললাম- তুমি আমাকে ভুল গাইড দিয়েছ। সে বলল, না, গাইড এখানে একটায় হয়। বললাম-আমি যাচ্ছি ‘এ্যল ফোরো রোমানো’তে তুমি ‘কলসিয়াম’র গাইড তাহলে কেন বিক্রি করলে? সে কোন কথা বলল না। বললাম, আমার টাকা ফেরত দাও। সে বলল, সম্ভব না। বললাম-এটা কেমন কথা, একজন বিদেশী মানুষ রোম দেখতে এসেছে তুমি তাকে প্যারিস দেখার টিকেট দিয়ে দিলে। আশেপাশের মানুষ দেখলাম হেসে উঠে আমাকে সমর্থন জানাল। তাতেও কিছু হল না। বললাম- এই নাও তোমার কলসিয়াম গাইডের টিকেট। কেউ যদি রোমে এসে প্যারিস দেখতে চায় তাঁকে বিনামূল্যে দিয়ে দিয়ো।সবাই আবার হেসে উঠল, আমি চলে এলাম।

ছবির দেশ-কবিতার দেশ, গল্প আর গানের দেশ আরো কত কি, উপমা দিয়ে শেষ করা যায় না ফ্রান্সকে আর ফ্রান্সের হৃদয় প্যারিস। এই প্যারিসে নেমেই সবচে’ কুৎসিত অভিজ্ঞতাটা হল আমার। কত চলচ্চিত্রে দেখেছি, পয়সা নেই, কড়ি নেই ভ্যাগাবন্ড স্বপ্নময় কবি-লেখক নেমেছেন এই শহরে নিজস্বালয় ভেবে। প্যারিস মানেই আকাশে ভেসে বেড়ানো একটা শুভ্র মেঘের স্বপ্ন আমার কাছে। জেনেভা থেকে প্যারিসের গার্দে নর্দ স্টেশনে যখন নামি তখনও আলতো করে নিঃশব্দে-নৈশব্দে পা বিছিয়ে দেই যেন ছন্দ না কাটে এখানকার ধ্যনে থাকা মনীষী কবিদের। কিন্তু আচমকা বলা নেই, কওয়া নেই দস্যু রাবণ মতন তিনটে নেকড়ে পুলিশ আমাদের ব্যাগ-বাটোরা নিয়ে টানাহেঁচড়া শুরু করে দেয়। সাধারণ পোশাকের এদের কোনমতই পুলিশ মনে হচ্ছিল না। আমি ওদের যতোই বলি তোমরা যদি পুলিশ হও তাহলে অবশ্যি আমার সব কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পার কিন্তু এভাবে প্ল্যাটফর্মে কেন? চল তোমাদের অফিসে যাই। এরকম অসভ্য ভাবে কেন আমার ব্যাগ নিয়ে টানাহেঁচড়া করছো। না, আমার কোন কথায় শুনেনি তাঁরা। আমাদের ব্যাগ তছনছ করে ফেললো। আমি এতোই মানসিক পীড়া পেলাম যে মুহূর্তের মাঝে গার্দে নর্দ স্টেশনকে গার্দে নরক মনে হল। স্টেশনের বাইরের সুরম্য কারুকাজময় ধবধবে সাদা দালানগুলোকে কুৎসিত কদাকার মনে হতে লাগলো। এত ঘোরাফেরার মাঝে এত নিম্ন অভিজ্ঞতা আমার আর কোথাও হয়নি। ভীষণ ক্ষুদ্ধও হলাম। এর মাঝে একদল পোশাক পরিহিত টহল পুলিশকে পেলাম তাঁদেরকে বললাম পুরো কাহিনীটা।তাঁরা একটু আধটু খবর নিয়ে বললো, এই স্টেশনে পুলিশ ছাড়া এরকম কিছু অন্যকেউ করতে সাহস করবে না। আমি বললাম যে-ই করুক কাজটা তো ভাল করিনি আমার সাথে।তাঁরা আমার কাছে পোশাকি ক্ষমা চাইল। আমি তাঁদের বললাম, তোমরা ছবির দেশ, কবিতার দেশের মানুষ কিন্তু কবিতা আর ছবি যদি তোমাদের জীবনে প্রভাবই না ফেলল তাহলে তো ষোল আনাই শেষ। তাঁরা আমার সাথে মাথা ঝাঁকালো কিন্তু কতটুকু বুঝল সেটা বুঝলাম না।



kawsark@gmail.com






Share on Facebook               Home Page             Published on: 29-Dec-2014

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far