বাংলাদেশ সফরের পরিকল্পনার পর অস্ট্রেলিয়ায় সন্ত্রাসের অভিযোগে এক যুবক গ্রেফতার কাউসার খানঃ অস্ট্রেলিয়ার সিডনি থেকে ২৬ বছর বয়সী এক যুবককে আটক করেছে নিউ সাউথ ওয়েলস (এনএসডব্লিউ) রাজ্যের যুগ্ম কাউন্টার টেররিজম দল। চরমপন্থি মতাদর্শ সমর্থনকারীদের সাথে অস্ট্রেলিয়ার বাইরে বাংলাদেশে দেখা করতে যাওয়ার প্রচেষ্টার অভিযোগে তাকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। গতকাল ঈদের দিন সিডনির ইঙ্গেলবার্ণ এলাকায় তার নিজের বাড়ি থেকেই পুলিশ তাকে আটক করে নিয়ে যায়। গতকাল ১৬ জুন (শনিবার) কাউন্টার টেররিজম দলের তদন্ত শেষে তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করা হয় এবং তাকে আটক করে ক্যাম্বেলটাউন থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
গ্রেফতারকৃত ২৬ বছর বয়সী যুবকের নাম নওরোজ রাইদ আমিন। সে একজন অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক। ধারণা করা হচ্ছে, আমিনের জন্ম হয়েছে অস্ট্রেলিয়ায় অথবা খুব অল্প বয়সেই পরিবারের সাথে অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসন করে। তবে পুলিশ কিংবা অন্য কোনো সূত্রেই আমিনের পূর্ব জাতীয়তা প্রকাশ করা হয়নি। আমিন ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে আসার চেষ্টা চালালে সিডনি বিমানবন্দরে অস্ট্রেলিয়ার সীমান্ত-রক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তারা তাঁকে বাধা দেয়। আমিনের সঙ্গে থাকা মালপত্র পরীক্ষা করার পরপরই তাঁর বাংলাদেশ ভ্রমণের অনুমতি রদ করে দেওয়া হয়। তাঁর লাগেজে চরমপন্থি মতাদর্শকে সমর্থন করে এমন পোশাক ও অন্যান্য জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করে। সন্দেহের ভিত্তিতে পরবর্তীতে তদন্ত শুরু করে কাউন্টার টেররিজম দল।
তদন্তে আমিনের ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসের বেশি কিছু চাঞ্চল্যকর মুঠোফোনে কথোপকথন পুলিশের সামনে আসে। আমিনের সেসব আলাপনের মধ্যে বাংলাদেশে বা অস্ট্রেলিয়ার বাইরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার এবং অস্ত্র ও অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম নিয়ে কথাবার্তা বলার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে আদালতে পেশ করা প্রমাণাদি থেকে জানা গেছে। তাকে বিদেশী দেশসমূহে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও জঙ্গিবাদ এর প্রস্তুতি বা পরিকল্পনা করা এবং প্রয়োজনীয় অনুমতি ব্যতীত অস্ট্রেলিয়ার কাস্টমস আইনে টায়ার ১ এ লিপিবদ্ধ সাধারণত নিষিদ্ধ পণ্য রপ্তানি করার দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছে। আমিন দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁর যাবতজীবন কারাবাসে সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আজ রবিবার আমিনের প্যারাম্যাটা আদালতে জামিনের জন্য হাজির হওয়ার কথা ছিল। তবে আমিন আদালতে জামিনের জন্য আবেদন করেনি বলে জানিয়েছে পুলিশ। আগামী ছয় সপ্তাহের মধ্যে আমিনের আইনজীবী আদম হাওডা সকল প্রমাণ ও নথিপত্রের বিস্তারিত তথ্য নিয়ে হাজির হবে আদালতে। এর আগ পর্যন্ত আমিনকে পুলিশ হেফাজতে রাখা হবে বলে জানা গেছে।
আমিনের গ্রেফতারের ঘটনায় সিডনিসহ বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকা ইঙ্গেলবার্ন এ নানা গুঞ্জন উঠেছে। ইঙ্গেলবার্ন ও তার আশপাশের এলাকায় অনেক বাংলাদেশিদের বাস। এখানকার প্রায় বেশির ভাগ বাংলাদেশি নিজেরা বাড়ি কিনে বসবাস করেন। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে আমিনের গ্রেফতার হওয়ার খবর ফলাও করে প্রচার করছে অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যম। ফলে বাংলাদেশিদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজমান রয়েছে। গতকাল শনিবার ইঙ্গেলবার্ন এলাকায় বেশ কয়েকবার পুলিশ হেলিকপ্টার টহল দেয় বলে স্থানীয়রা জানায়। অনেকেই ধারণা করছেন, আমিনের গ্রেফতারের কারণেই আগ থেকে পুলিশ নজর বন্দি রাখে এলাকাটিকে। এদিকে আমিনের বাবা তার ছেলে সন্ত্রাসী নয় বলে দাবী করেন। এক সংবাদ মাধ্যমে জানালার নেটের পেছনে আবছা ছবির সাথে তার এ মন্তব্য প্রকাশিত হয়। তবে অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল পুলিশের সহকারী কমিশনার ইয়ান ম্যাককার্টনি বলেন, 'এ কার্যক্রমের ফলে কোনো কমিউনিটিতেই বর্তমান বা আসন্ন কোনো ঝুঁকি নেই'। আমিনের তদন্তের বিষয়টি দীর্ঘ ও জটিল ছিল বলেও জানান তিনি। অন্যদিকে, আদালতে ম্যাজিস্ট্রেট আগামী ১৪ আগস্ট পর্যন্ত মামলা মুলতবি করেছেন।
সূত্র - দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ড, দ্য ওয়েস্ট অস্ট্রেলিয়ান
|