৩৯টি অপরাধ সত্ত্বেও অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব পাচ্ছেন পল মার্টিন
কাউসার খানঃ ১৯৭৩ সালে যুক্তরাজ্য থেকে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান পল মার্টিন। পরবর্তীতে এখানেই পরিবারসহ বসবাস শুরু করেন তিনি। দীর্ঘ ৪৩ বছর অস্থায়ী ও পরে স্থায়ীভাবে বসবাসের পর গত বছরের জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেন মার্টিন। কিন্তু সেই বছরের জুন মাসে মোট ৩৯টি ট্রাফিক আইন অমান্যের অপরাধে মার্টিনের নাগরিকত্বের আবেদন বাতিল করে দেয় দেশটির অভিবাসন বিভাগ। মার্টিন অভিবাসন বিভাগের সিদ্ধান্তকে প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে চ্যালেঞ্জ করলে গত ১৪ জুলাই মার্টিনকে নাগরিকত্ব প্রদানের রায় ঘোষণা করা হয়।
২০১৬ সালে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করলে চারিত্রিক পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হওয়ার কারণে মার্টিনের নাগরিকত্বের আবেদন নামঞ্জুর করে দেয় অভিবাসন মন্ত্রী পিটার ডাটনের প্রতিনিধি দল। মার্টিনের বিরুদ্ধে ১৯৮০ সাল থেকে ৩৯টি ট্রাফিক আইন ভঙ্গের অপরাধ প্রমাণিত হয়েছিল। এর মধ্যে ২৯টি ছিল গতি-সীমার উপরে এবং লাইসেন্স ছাড়া ও মদ্যপায় অবস্থায় গাড়ি চালানোর অভিযোগ। তবে এতগুলো অপরাধ করার পরেও নাগরিকত্ব প্রদানের জন্য রায় দেয় আপিল ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের রায় নিয়ে প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালের প্রবীণ সদস্য আদ্রিয়া পোজাক বলেন, সাধারণত যদিও নাগরিকত্ব প্রদানের ব্যাপারে ট্রাফিক আইন অপরাধ গুরুতর-ভাবে বিবেচিত হয় না। তবে যখন সেই অপরাধের সংখ্যা ৩৯টি তখন তা অভিবাসন বিভাগ আমলে নেবেই। আর একই অপরাধ বার বার করার মানে হলো আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হওয়া। এছাড়া নাগরিকত্বের আবেদন পত্রেও এই অপরাধগুলোর কথা উল্লেখ করেন নি মার্টিন, যা আরেকটা অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। তবে আদ্রিয়া পোজাক মতে, অভিবাসন বিভাগ যেটা বিবেচনায় নেয় নি তা হলো মার্টিনের অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসের স্থায়িত্বকাল। তিনি আরও বলেন,“আমি মানছি যে মার্টিনের একই অপরাধের সংখ্যা অনেকগুলো, তবে এর মানে এই নয় যে সে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়। কেননা, তার জীবনের অর্ধেক সময় সে এই দেশটিতে পার করেছেন, অভিবাসন বিভাগের এই বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা উচিৎ।” এছাড়া আদ্রিয়া উল্লেখ করেন, মার্টিন শেষ অপরাধটি করেন এক বছরেরও বেশি সময় আগে। প্রায় ১২ মাস আগে একটি ট্রাফিক অপরাধ ছিল মার্টিনের, তিনি এখন তার ড্রাইভিং রেকর্ডের গুরুত্ব বুঝতে পেরেছেন।
এছাড়াও আদ্রিয়া অস্ট্রেলিয়ার সাবেক গেমিং ও রেসিং মন্ত্রী কেভিন গ্রিন’র মার্টিনকে নিয়ে করা এক মন্তব্য,“মার্টিন এদেশের নাগরিক হতে চাইছে এ নিয়ে অস্ট্রেলিয়া কমিউনিটির অত্যন্ত সম্মানিত বোধ করা উচিৎ।” উল্লেখ করেন বলেন, মার্টিন গত প্রায় ৪০ বছর ধরে স্ট্রিট জর্জ ক্যান্সার কেয়ার সেন্টার ফাউন্ডেশন ও প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিষ্ঠানে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করে আসছেন। মার্টিনের এমন সমাজ সেবামূলক কর্মকাণ্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসের স্থায়িত্বকালকে বিবেচনায় রেখেই অভিবাসন বিভাগকে পল মার্টিনকে নাগরিকত্ব প্রদানের আদেশ দেয় দেশটির প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনাল পক্ষে আদ্রিয়া পোজাক।
|