bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












সুন্দর ফন্টের জন্য SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন...

কিশোরগঞ্জের সারদারঞ্জন রায়
উপমহাদেশের ক্রিকেট অগ্রদূত

কাউসার খান

কোত্থেকে শুরু করব, আজ থেকে শতবর্ষ তারথেকেও অনেক আগে ১৮৭০ সাল। পেছনে ফিরতে ফিরতে সময় ধরে ধরে যখন একটু থামি তখন আজকের মেট্রোপলিটন চকচকে ঢাকা শহরও জঙ্গলে ঘেরা ছোট্টখানি একটা শহর। তার থেকেও অনেক দূরে তখনকার ময়মনসিংহ জেলার কিশোরগঞ্জ মহকুমার কটিয়াদি থানার মসূয়া গ্রাম। সেখানে নাকি আজকের এই ঝলমলে ক্রিকেটের গোড়াপত্তন। সেখানেই নাকি বাংলা ক্রিকেটের শুরু এবং সেই শুরু’র আনুষ্ঠানিক ক্রিকেট দলও নাকি উপমহাদেশের প্রথম দিকের ক্রিকেট দল। যে সারদারঞ্জন রায় একহাতে বই আরেক হাতে ব্যাট, সারাদিন হৈ হুল্লোড় করে খেলে বেড়াতেন কটিয়াদির মসূয়া নামের গ্রামে তাঁকেই আজ বাংলা ক্রিকেটের জনক বলা হয়, বলা হয় উপমহাদেশের ক্রিকেট অগ্রদূত।

কবে-কোথায়-কখন শুরু করেছিলেন সেগুলো খুঁজতে খুঁজতে যখন আলতো করে শতাব্দি বছর তারও আগে কল্পনায়-আল্পনায় আলোকিত মসূয়া গ্রামে ঢুকি তখন হ্রদয়ের অনুপম ভালোবাসায় ঘুরিফিরি তাঁদের সাথে অনেকক্ষণ। এদিক যাই, ওদিক যাই; খুঁজেফিরি অনেক কিছু। আর মাঝে মাঝে যখন তথ্য, তথ্যের অনেক ভান্ডার আবিষ্কার করি তখন আনন্দে চনমন করে মন। শীতের এমনই একদিনে ১৮৬১ সালে সারদারঞ্জন রায় জম্মেছিলেন বাংলাদেশের মসূয়া গ্রামের বিখ্যাত রায় পরিবারে। কালীনাথ রায় ছিলেন তাঁর বাবা, তাঁরা পাঁচ ভাই তিন বোন- সারদারঞ্জন, কামদারঞ্জন, মুক্তিদারঞ্জন, কুলদারঞ্জন, প্রমোদারঞ্জন, গিরিবালা, ষোড়শীবালা ও মৃণালিনী। জমিদার হরিকিশোর রায়চৌধুরী ছিলেন সম্পর্কে তাঁদের কাকা। জমিদার হরিকিশোর রায়চৌধুরী এবং তাঁর স্ত্রী রাজলক্ষ্মী দেবী’র কোনো সন্তান না থাকায় তাঁরা কামদারঞ্জনকে পাঁচ বছর বয়সে দত্তক নিয়েছিলেন, নাম বদলিয়ে রেখেছিলেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। বঙ্গ ক্রিকেটের পুরোধা সারদারঞ্জন রায়ের এই ছোট ভাই উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীও ছিলেন বাংলা সাহিত্যের আরেক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাঁর ছেলে সুকুমার রায় ছিলেন বিখ্যাত ছড়াকার আর সুকুমার রায়ের ছেলে সত্যজিৎ রায় ছিলেন আরো বিখ্যাত, চলচ্চিত্র নির্মাতা পরে তিনি অস্কার জয়লাভ করেছিলেন।

উপেন্দ্রকিশোর দত্তক বাবার ‘রায়চৌধুরী’ উপাধী ব্যবহার করলেও অঁন্যরা মুল পারিবারিক বংশগত নাম ‘রায়’ই ব্যবহার করে গেছেন এবং করছেন এখনো। এ পরিবারের আবহে গণ্ডিবাঁধা কিছু ছিল না। যাঁর যাতে আগ্রহ, সে সেটা নিয়েই মেতেছেন অনেকদূর পর্যন্ত। কেউবা লেখক কেউবা কবি, কেউবা আবার চিত্রকলা কেউবা আবার ছবি নিয়ে বিখ্যাত হয়ে উঠেছেন। সারদারঞ্জন বিখ্যাত হয়েছেন ক্রিকেট নিয়ে কিন্তু তিনি কোত্থেক, কিভাবে ক্রিকেট শিখেছেন সে ইতিহাস স্পষ্ট করে না জানা থাকলেও সেই সে বয়সে যে ক্রিকেট খেলেছেন মসূয়া গ্রামে সেটা আজ বাংলা ক্রিকেটের ইতিহাস হয়ে রয়েছে সোনার অক্ষরে। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত কিশোরগঞ্জের মাইনর তারপর ময়মনসিংহ জেলা স্কুল সব জায়গায় ক্রিকেটের সাক্ষী রেখে গেছেন তিনি। তারপর ভর্তি হন ঢাকা কলেজে, এখানে এসে ক্রিকেটের পরিপূর্ণ চর্চা শুরু করেন তিনি। সেই সাথে শারীরিকভাবে শক্তিশালী থাকতে তাঁরা চার ভাই ঢাকা কলেজে নিয়মিত ব্যায়ামচর্চাও শুরু করেন। ষোড়শ শতকে ক্রিকেট খেলার প্রচলন শুরু হলেও অফিশ্যাইয়লি যখন আর্ন্তজাতিকভাবে ১৮৭৭ সালে টেষ্ট ক্রিকেট শুরু হয় তারও আগ থেকে এ বাংলায় সারদারঞ্জন রায় ক্রিকেট খেলা শুরু করেন। সারদারঞ্জন রায়ের নেতৃত্বে ১৮৮০-এর দিকে ঢাকা কলেজ ক্লাব গড়ে ওঠার পর ঢাকায় আস্তে আস্তে ক্রিকেটের প্রচলন প্রসারিত হতে থাকে। অখণ্ড বাংলার প্রথম ক্রিকেট ক্লাব হিসেবে সেটি খ্যাতিও অর্জন করে।

১৮৮৪ সালে কলকাতার ইডেন গার্ডেনে ক্যালকাটা প্রেসিডেন্সি ক্লাবের সঙ্গে এক খেলায় ঢাকা কলেজ জয়লাভ করে। তারপর একের পর এক এ দল জয়লাভ করে অনেকবার। অন্যদিকে তখন ব্রিটিশ উপনিবেশীদের বিরুদ্ধে এদেশের মানুষের সংগ্রাম-আন্দোলন চলছিল তীব্রভাবে। সিপাহি বিদ্রোহের পর ব্রিটিশদের অত্যাচারে পুরো উপমহাদেশে একটা হতাশা নেমে এসেছিল। তখন তিনি জাতীয়তাবাদী চেতনা উজ্জ্বীবিত করতে আরো শক্তিশালী ক্রিকেট দল তৈরী করেন। তাঁর এ স্বদেশী দল ব্রিটিশদের কয়েকবার পরাজিত করে মেহনতি নির্যাতিত মানুষদের সংগ্রামী করে তুলতে সাহায্য করে। শুধু যে বিদেশী দখলদারদের বিরুদ্ধে লড়েছেন তিনি এমন নয়, যেখানে অন্যায় দেখেছেন সেখানেই সোচ্চার হয়েছেন। কলকাতায় যখন পূর্ব বাংলার খেলোয়াড়দের প্রতি অবহেলা বেড়ে যায় তখন ওখানে প্রতিষ্ঠিত পূর্ব বাংলার মানুষজন মিলে তাঁদের প্রতি অবহেলার প্রতিবাদে ১৯২০ সালে ইস্ট বেঙ্গল ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। ওই ক্লাবের প্রথম প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্টও ছিলেন তিনি। ক্রিকেট খেলাকে এদেশের মানুষের কাছে সহজ করার জন্য বাংলা ভাষায় ক্রিকেট খেলা বিষয়ক বই লিখেছেন। শুধু তাই নয়, ক্রিকেটকেই তিনি বেছে নিয়েছিলেন জীবনের সকল কিছুতে। যখন চরম বিপদ, চাকুরি থেকে পদত্যাগ করেছেন সদ্য তখনও ক্রিকেট থেকে দূরে থাকতে পারেননি, ক্রিকেট যখন হাঁটিহাঁটি পা পা, এর সরঞ্জামাদি বিক্রয় করে চলার মত নয় তখন, তবুও এ খেলার সামগ্রী উৎপাদন করে জীবন নির্বাহের মত একটা কঠিন পথ বেছে নিয়েছিলেন তিনি, যদিও পরবর্তিতে এ প্রতিষ্ঠান ক্রিকেট খেলার সরঞ্জামাদি সহজপ্রাপ্যতায় যেমন উল্লেখ্যযোগ্য ভূমিকা রেখেছিল তেমনি খ্যাতিও পেয়েছিল অনেক। ১৮৯৫ সালে ‘এস রায় অ্যান্ড কোম্পানি’ নামে প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠানটি বাংলার প্রথম ক্রিকেট সামগ্রী বিক্রয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত। ক্রিকেট কোচ হিসেবেও সারদারঞ্জন রায় ছিলেন অনন্য। এই মহান ক্রিকেটার, ক্রিকেট পুরোধা নিজের সীমাবদ্ধতার মাঝেও ক্রিকেট খেলার বিকাশে করে গেছেন অক্লান্ত পরিশ্রম জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত। ড. বড়িয়া মজুমদার যিনি সেন্ট্রাল ল্যাঙ্কাশায়ার বিশ্ববিদ্যালযয়ের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ও ইএসপিএন, টেন স্পোর্টস এর ক্রিকেট গবেষক তাঁর মতে, ভারতে প্রথম ক্রিকেট খেলা শুরু করে পার্সিরা, মুম্বাইয়ে। কিন্তু ক্রিকেটকে তাঁরা সীমাবদ্ধ করে রেখেছিল অভিজাত মানুষদের মধ্যে। সারদারঞ্জন রায়-ই প্রথম মানুষ যিনি ক্রিকেটকে গণমানুষের কাছে নিয়ে এসেছিলেন। ক্রিকেটের জন্য যা যা করা দরকার সকল কিছুই করেছেন দু’হাত খোলে তাই তাঁকে উপমহাদেশের ক্রিকেটের অগ্রদূত তো বটেই উপমহাদেশের ক্রিকেটের জনক বললেও ভুল কিছু হবে না।

-কাউসার খান kawsark@gmail.com

সূত্রঃ জনাব মুনতাসির মামুন, জনাব ইফতেখার মাহমুদ ও ইস্ট বেঙ্গল ক্লাব






Share on Facebook               Home Page             Published on: 10-Mar-2014

Coming Events:





A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far