শেষ হল সিডনির বৈশাখী মেলা কাউসার খান
অস্ট্রেলিয়ার বাঙালিরা সাত সমুদ্র পাড়ি দিয়েও ভোলেনি বাঙালিয়ানা। তার ষোলোআনায় বার বার প্রমাণ করেছে এখানকার প্রবাসী বাঙালিরা। পঁচিশ বছর ধরে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে পয়লা বৈশাখ উদযাপন ও বৈশাখী মেলার আয়োজন করে আসছে বঙ্গবন্ধু কাউন্সিল অস্ট্রেলিয়া। সেই পথচলারই রজত জয়ন্তীর আবহ পড়েছে গত ১৩ই মে আয়োজিত এবারের সিডনির বৈশাখী মেলায়। সিডনির রাস্তায় বৈশাখী মেলায় আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ন বাতির ইংরেজির সাথে বাংলা বিলবোর্ড অন্যদিকে মেলা উপলক্ষে প্রথমবারের মতো ‘বৈশাখী প্যারেড’ নামে মঙ্গল শোভাযাত্রা ষোলোআনা পূর্ণ করে বাঙালিয়ানার।
সিডনির শীত শীত দুপুরে বৈশাখীর উষ্ণতা ছড়িয়ে বের হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। ঢোলের তালে-তালে মুখ-মুখোশের প্রকাশে শুভ বোধকে বরণের সবটাই ছিল প্রথমবারের মতো আয়োজিত বৈশাখের অন্যতম এ আয়োজনে। লাল সাদা আর বর্ণিল পোশাকে উৎসবমুখর হয়ে ওঠে সিডনির অলিম্পিক পার্ক। দুপুর গড়িয়ে বিকেল নাগাদ এ যেন এক টুকরো বর্ণিল বাংলাদেশে পরিণত হয়। প্রবাস জীবনে হারিয়ে ফেলা শিকড়ের সন্ধানে আসা মানুষগুলো মেতে উঠেন আড্ডা-খুনসুটিতে। চটপটি-ফুচকার সাথে জিলেপি ঝালমুড়ির স্বাদ নেওয়ার পাশাপাশি উপভোগ করেছেন দেশীয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।
ক্ষুদ্র পরিসরে শুরু হলেও সিডনি বৈশাখী মেলা আজ মহীরুহ। বঙ্গোপসাগর পাড়ের মানুষগুলোকে পঁচিশ বছর ধরে দেশীয় আমেজ দেয়ার কাজটি করে আসছে বঙ্গবন্ধু কাউন্সিল অস্ট্রেলিয়া। এবারের মেলার অন্যতম আকর্ষণ রাখা হয় মঞ্চনাটক ‘আমি তোমার পিতা’। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মঞ্চস্থ এই আয়োজনে ওঠে আসে ৬ দফা থেকে ১৫ই আগস্ট। মৃত্যুর পরে বিশ্বনেতাদের কাল্পনিক কথোপকথনে বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয়তা চমৎকার অভিনয়ে ফুটিয়ে তোলেন জনপ্রিয় বাংলাদেশি অভিনেতা আরেফিন শুভ। নতুন আর পুরনো প্রজন্মের মিশেলে ব্যতিক্রমী ফ্যাশন আর নাচে-গানে হাজার হাজার দর্শক সরব হয়ে উঠেন। এছাড়া পথ প্রোডাকশনস শিল্পীদের তাক লাগানো পরিবেশনা প্রশংসা কুড়ায় মুহুর্মুহু হাত তালিতে। অনুষ্ঠানের শ্রদ্ধাঞ্জলি পর্ব ‘স্মৃতির নীল মণিহার’ এ প্রিয় গানে গানে স্মরণ করা হয় প্রয়াত শিল্পী লাকি আখন্দকে। কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোরের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনায় সবাই স্মৃতির হাত ধরে ছুটে ফিরে গ্রামবাংলার জনন-জননী-জন্মভূমিতে। এছাড়া ছিল জমকালো লেজার রশ্মির চোখ ধাঁধানো আয়োজন।
অস্ট্রেলিয়ায় বৈশাখী মেলার পঁচিশ বছর উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল, ও বিরোধী দলীয় নেতা বিল শর্টেন। তাঁরা বাঙালি ও বাংলাদেশের মঙ্গল কামনা করেন। প্রতি বছর পয়লা বৈশাখেই আয়োজিত হয় এই বৈশাখী মেলা।
শুরুর দিকে সিডনির বিভিন্ন স্থানে এই মেলা আয়োজিত হলেও গত ১২ বছর ধরে মেলাটি হচ্ছে সিডনির বিখ্যাত অলিম্পিক স্টেডিয়ামগুলোতে। এবারে পয়লা বৈশাখের সময় এই ভেন্যুতে চলছিল অনেক আগ থেকে নির্ধারিত ইস্টার শো'য়ের নানা আয়োজন। সে কারণেই এ বার মেলা আয়োজনে এই ১৩ মে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। তবে আগামী বছর বৈশাখের শুরুতেই এ মেলা বসবে বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু কাউন্সিল অস্ট্রেলিয়ার সভাপতি শেখ শামীম। তিনি আরও বলেন, সবার সহযোগিতা থাকলে অস্ট্রেলিয়ার এ বৈশাখী মেলা বাঙালিদের নতুন পরিচিতি দিবে।
সে যাই হোক, পুরোটা বছর অস্ট্রেলিয়ার প্রবাসী বাঙালিরা এই দিনটার জন্যে অপেক্ষা করে, দেশীয় আমেজে নিজেদের সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যে মেতে ওঠে আগত দিনগুলির মঙ্গল কামনায়।
কাউসার খান, email: kawsark@gmail.com
|