অস্ট্রেলিয়ার মসনদে বসছে কারা, লেবার না লিবারেল? কাউসার খান
অস্ট্রেলিয়ায় ম্যালকম টার্নবুল সরকারের মেয়াদ শেষ হতে চলছে। দেশটির ৪৬তম জাতীয় নির্বাচন হবে চলতি বছরের ৪ আগস্ট থেকে আগামী বছরের ১৮ মের মধ্যে। এ সময়ে দেশটির সংসদ সদস্য (নিম্নকক্ষ) নির্বাচন করা হবে। ২০১৯ সালের ২ নভেম্বরের আগে রাজ্য আইনপ্রণেতাদের নির্বাচন হবে। নির্বাচন সামনে রেখে প্রচারে ইতিমধ্যে সক্রিয় হয়ে উঠেছে দেশটির প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো। অস্ট্রেলিয়ার সরকারি দল লিবারেল পার্টি দলীয়ভাবে প্রস্তুতি শুরু করেছে। আর নির্বাচনী কাজে মাঠে নেমে গেছে বিরোধী দল লেবার পার্টি। কে হবেন অস্ট্রেলিয়ার পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কিংবা কোন দল গঠন করবে আগামী সরকার - এমন প্রশ্ন অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকদের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।
১৫১টি আসনে নির্বাচন হবে। সরকার গঠন করতে একটি দলকে ৭৬টি আসনে জয়লাভ করতে হয়। বর্তমান ম্যালকম টার্নবুলের লিবারেল পার্টির সরকার ৭৬ আসন সংগ্রহ করে ক্ষমতায় আসে। তারা জোটবদ্ধভাবে মোট ভোটের ৫০ দশমিক ৩৬ শতাংশ পায়। জোটে লিবারেল পার্টি পায় ৪৬ আসন। লিবারেল ন্যাশনাল পার্টি অব কুইন্সল্যান্ড (এলএনপি) পায় ২১ আসন। আর ন্যাশনাল পার্টি পায় ৯ আসন।
বর্তমান বিরোধী দল লেবার পার্টির পক্ষে জয় আসে ৬৯টি আসনে। তারা মোট ভোটের ৪৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ পায়। দ্বৈত নাগরিকত্ব ইস্যুতে কিছু আসন বাতিল হওয়ায় বর্তমান সংসদে দলটির ৬৫ আসন রয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য দলের মধ্যে গ্রিনস, সেন্টার অ্যালায়েন্স ও ক্যাটারস অস্ট্রেলিয়ান দল একটি করে আসনে জয় পেয়ে সংসদে আসে।
অস্ট্রেলিয়ার আগামী জাতীয় নির্বাচন শুরু হওয়ার সবচেয়ে মোক্ষম সময় চলতি বছরের আগস্ট। নির্বাচন সামনে রেখে প্রচার নিয়ে কাজ করেছে দেশটির বিরোধী দল লেবার পার্টি। নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যসহ দেশটির বিভিন্ন শহরে তারা নানাবিধ কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এ বিষয়ে দলটির প্রধান বিল শর্টেন বলেন, ‘সরকার যখনই নির্বাচন ডাকুক, আমরা তৈরি।’
লেবার পার্টিকে অস্ট্রেলিয়ার সাতটি রাজ্যের মধ্যে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া ও কুইন্সল্যান্ডে জয়ের জন্য সব সময় হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করতে হয়। তাই এ আসনগুলো পেতে দলটি জোর নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছে বলে জানান বিল শর্টেন। নির্বাচনী জরিপে লেবার পার্টি এগিয়ে রয়েছে। তা সত্ত্বেও দলটি নিজেদের জয়কে এবার একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, এবারের নির্বাচনে দলটি তাদের নিজস্ব নীতিমালা অনুসরণ করবে। বিল শর্টেন বলেন, এ বছর একটি বড় ও ন্যায্য ধারণা নিয়ে নির্বাচনে আসবে লেবার পার্টি।
অস্ট্রেলিয়ায় সিনেটের (উচ্চকক্ষ) নির্বাচন হয় অর্ধেক অর্ধেক করে। অর্থাৎ, এ বছর মোট আওসনের অর্ধেক অংশের নির্বাচন হলে বাকি অর্ধেক অংশের নির্বাচন হবে পরবর্তী নির্বাচনের সময়। এতে নতুন-পুরোনো আইনপ্রণেতাদের মিশ্রণ থাকে সব সময়। এ বছর সিনেটের অর্ধেক অংশের মেয়াদ শেষ হবে ৩০ জুন। সংবিধান অনুযায়ী মেয়াদ শেষে ৩৩ দিনের নির্বাচনী প্রচার ও অন্যান্য বিষয়ের জন্য সময় পাবেন সিনেটররা (উচ্চকক্ষের সাংসদ)। তাই ধারণা করা হচ্ছে, আগস্ট মাসেই অস্ট্রেলিয়ার উচ্চকক্ষের নির্বাচন শুরু হবে। বাকি নির্বাচন আগামী বছরের ১৮ মের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল দুবার নির্বাচন করতে দ্বিমত পোষণ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, আগামী বছরের ১৮ মের আগে একসঙ্গে উচ্চকক্ষের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে তা আদৌ সম্ভব হবে কি না, এ নিয়ে সংশয় রয়েছে।
গত মার্চে তাসমেনিয়া ও দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া তাদের নির্বাচন শেষ করেছে। ভিক্টোরিয়া রাজ্যের নির্বাচন শুরু হবে আগামী নভেম্বরে। নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যে নির্বাচন শুরু হবে আগামী বছরের মার্চে। নির্বাচন একই কিংবা ভিন্ন সময়ে শুরু হলেও জয়ের জন্য এবার অস্ট্রেলিয়ার প্রধান দুটি দলকেই তুমুল লড়াই করতে হবে বলে বিভিন্ন নির্বাচনী জরিপ প্রতিষ্ঠান আগাম আভাস দিয়েছে। তাই এখন সবার মনে প্রশ্ন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে অস্ট্রেলিয়ার ক্ষমতার মসনদে কারা বসছে? লেবার না লিবারেল?
কাউসার খান, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া
|