নেতৃত্ব নিয়ে সরকারি দলে কোন্দল কে হবেন অস্ট্রেলিয়ার পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী! কাউসার খান
নির্বাচনী বছর হিসেবে অস্ট্রেলিয়ায় এখন থেকেই রাজনীতিবিদদের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। সরকারি কিংবা বিরোধী সকল দলেরই কর্মসূচি এখন নির্বাচন-মুখি। সাম্প্রতিক সময়ে বিরোধীদলের চেয়ে সরকারী দলে কলহ বাড়ছে বেশি আর এ নিয়ে প্রতিদিন সরগরম গণমাধ্যম। সেখানে থাকছে চটকদার বিশ্লেষণও। অস্ট্রেলিয়ার পরবর্তী নির্বাচনে লেবার না লিবারেল পার্টি জয়লাভ করবে তা এখনো বলা যাচ্ছে না। তবে নির্বাচনের জয়-পরাজয়ের ধারাবাহিকতায় বর্তমান বিরোধীদল লেবার পার্টি কিছুটা এগিয়ে এমনটি ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে ফলাফলে যদি সরকারীদল আবার ক্ষমতায় আসে তাহলে কে হবেন অস্ট্রেলিয়ার পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী এ নিয়েও বিশ্লেষণের শেষ নেই।
রাষ্ট্রীয় ও দলীয় নানা বিষয়াদি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সমালোচনা চলছে অস্ট্রেলিয়ার বর্তমান সরকারী দল লিবারেল পার্টিতে। পরবর্তী সরকার প্রধান কে হতে যাচ্ছেন তা নিয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবটের মধ্যকার লড়াই চলছেই দলটিতে। ২০১৫ সালে অ্যাবটকে করা টার্নবুলের নেতৃত্বের চ্যালেঞ্জটি আবারও সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। নিউজপোল নামে অস্ট্রেলিয়ায় নির্বাচনী ফলাফলের প্রায় নির্ভুল পূর্বাভাসের যে একটি পদ্ধতি রয়েছে তার মধ্যদিয়ে এরই মধ্যে দলটির নিজস্ব সংসদ সদস্য দ্বারা সরকার প্রধান নির্বাচনে ৩০টি নিউজপোল খুইয়েছেন টার্নবুল। সেদিক দিয়ে এগিয়ে থাকলেও একে একে ঝুলি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে অ্যাবটের সমর্থক। এর মধ্যে রয়েছে দেশটির প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও ২৫তম প্রাক্তন জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী জন হাওয়ার্ড ও তার আয়ত্তাধীন লোকদের কিঞ্চিত বিপরীত অবস্থান। বলা হয়, অস্ট্রেলিয়ানরা কি চায় সেটা নাকি খুব ভালোই বোঝেন হাওয়ার্ড। সবমিলিয়ে এখন দলে টার্নবুল ও অ্যাবটের অবস্থান সমানে সমান হলেও জন হাওয়ার্ডের কারণে কিছুটা হেলে আছে অ্যাবট এর দিকে।
টনি অ্যাবট এর কয়েকটি কাজের জন্য জনমনে সমর্থন রয়েছে তার প্রতি। এর মধ্যে অন্যতম বিষয় দেশটিতে সমকামী বিবাহ বৈধ করার পেছনে অ্যাবটের বিরোধিতা। গত বছর দেশটিতে এ প্রথা বৈধ হবার পর অ্যাবটের সমর্থক সংখ্যায় বেড়েছে। পাশাপাশি অভিবাসন দেশ হিসেবে খ্যাত অস্ট্রেলিয়ায় যখন ম্যালকম টার্নবুল নাগরিকত্ব প্রদানের আইনে কঠোরতা এনেছিলেন তখনও অ্যাবট কিছুটা বিরোধিতা করেন। এতে অভিবাসীদের মনেও নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করেছিলেন তিনি। তবে বিপত্তিটা ঘটে অ্যাবটের ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গির কারণে। কোনো দলীয় কিংবা জাতীয় সমস্যায় সবাইকে একত্রে নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বেশ কয়েকবার ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। ফলে নিজের সহকর্মীদের কাছেই বিশ্বাস হারিয়েছেন।
অন্যদিকে দলীয় সমর্থন অনেকটা নিজের দিকেই আটকে রেখেছেন ম্যালকম টার্নবুল। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলি বিশপ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পিটার ডটন ও কোষাধ্যক্ষ স্কট মরিসনসহ মন্ত্রীপরিষদের অনেকেই পক্ষে রয়েছেন টার্নবুলের। সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী বার্নাবি জয়েস এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘টার্নবুল নির্বোধ নন, কখন কী করতে হবে তিনি সেটা ভালোই জানেন।’ এদিকে গত রবিবার কোষাধ্যক্ষ মরিসন ‘প্রধানমন্ত্রীত্ব দেওয়া হলে কী করবেন’ এমন এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘টার্নবুল প্রধানমন্ত্রী থাকা কালে নয়, কেননা শুধু সরকার প্রধান হিসেবে নয়, দলের প্রধান হিসেবেও তিনিই যোগ্য।’ একই প্রশ্নের জবাবে পিটার ডটন বলেন, ‘আমি মনে করি সুযোগ আসতে পারে। কিন্তু আমার জন্য আনুগত্যই গুরুত্বপূর্ণ যা আমার আছে।’ এদিকে জুলি বিশপ বলেন, ‘এমন পরিস্থিতি প্রত্যাশাই করি না।’ মন্ত্রীপরিষদদের এমন বক্তব্য টার্নবুলের প্রতি তাদের সমর্থনকেই ইঙ্গিত করে।
রাজনৈতিক দলগুলোতে সমর্থন যেকোনো সময়ই পাল্টে যেতে পারে। যেমনটা ঘটেছিল এবং ঘটছে টনি অ্যাবটের ক্ষেত্রে। যদিও লিবারেল পার্টি যদি পরবর্তী নির্বাচনে জয়লাভ করে তবে বেশিরভাগই টার্নবুলকে পরবর্তী সরকার প্রধান হিসেবে দেখতে চায়। আর তাই নিজের প্রধানমন্ত্রীত্ব ধরে রাখতে হলে এ বছরের শেষ নাগাদ অবধি দলীয় সহকর্মীদের মন জুগিয়ে চলতে হবে টার্নবুলকে। নয়তো বা তীরে এসে তরী ডুবতে পারে টার্নবুলের, এরকম ধারণা অভিজ্ঞ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
কাওসার খান, সিডনি
|