১৩ নভেম্বর হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষে ইন্দ্রজালের ভুবনে হুমায়ূন আহমেদ এম এ জলিল
বালক হুমায়ুন তখন পরিবারের সঙ্গে থাকতেন সিলেটের মীরা বাজারে। সময় ও সুযোগ পেলেই একা একা শহরে হেটে বেড়াতেন। তার মূল আকর্ষণ ছিল সিনেমা হলের পোস্টার। বালক হুমায়ুন একদিন দিলশাদ সিনেমা হলের সামনে গিয়ে দেখেন সেখানে বৃত্তাকারে প্রচুর লোক দাঁড়িয়ে কিছু দেখছে। কৌতূহলী হুমায়ুন ভিড় ঠেলে কিছুটা ভিতরে গিয়ে দেখেন সেখানে জাদু দেখানো হচ্ছে। অদ্ভুত জাদু। কাঠের একটি বড় তক্তার সঙ্গে গা লাগিয়ে ক্রুশবিদ্ধ যিশু খ্রিস্টের ভঙ্গিতে দুই হাত তুলে মায়াকাড়া চেহারার এক বালিকা দাঁড়িয়ে রয়েছে। বালিকাটির ১০/১২ ফুট দূরত্বে চোখ বাঁধা অবস্থায় জাদুকর দাঁড়িয়ে আছেন। জাদুকরের হাত ভর্তি ধারালো ছুরি। জাদুকর বালিকাটির দিকে ক্ষিপ্র গতিতে ছুরি ছুড়ে মারছেন। সে ছুরি বালিকার গা ঘেঁষে কাঠের তক্তায় বিধে যাচ্ছে, অথচ তার গায়ে লাগছে না। ছুরির বলয় তৈরি হলো বালিকাকে ঘিরে। সে এক অদ্ভুত রোমাঞ্চকর জাদু। ছোটবেলায় বাবা ও দাদার কাছে ম্যাজিশিয়ানদের নানা গল্প শুনে শুনে বড় হওয়া হুমায়ুন আজ প্রথম স্বচক্ষে অদ্ভুত ম্যাজিক দেখলেন। ম্যাজিক দেখে হুমায়ুনের জ্ঞান হারানোর অবস্থা। সেদিনই হুমায়ুন ম্যাজিকের প্রেমে পড়েন।
পরবর্তীতে ঢাকায় পড়তে এসে পথের জাদুকর মোখলেসুর রহমানের কাছে তার জাদুবিদ্যায় হাতে খড়ি। পরে নানা সময়ে বহু জাদু শিল্পীর সাথে তার পরিচয় ও বন্ধুত্ব হয়। তিনি যখন যার কাছ থেকে যা পেয়েছেন তাই শিখেছেন একনিষ্ঠ সাধনার সাথে। হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন “জাদুর জন্য যে সাধনার প্রয়োজন হয় তার চাইতে অনেক কম সাধনায় ঈশ্বর ধরা দেন।” হুমায়ূন আহমেদের জাদু শেখার ও জাদুশিল্পী হয়ে ওঠার কাহিনী সিনেমার কাহিনীকেও হার মানায়। হুমায়ূন আহমেদ টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে ম্যাজিক শিখতেন ও ম্যাজিকের সরঞ্জামাদি কিনতেন। তার জাদুর ভাণ্ডারে ছিল প্রচুর বই, সিডি ও উন্নত মানের ম্যাজিক। যদিও হুমায়ুন আহমেদ ছোট ছোট ম্যাজিক দেখাতেন অথচ জাদুর সকল শাখায় ছিল তার ঈর্ষণীয় অভিজ্ঞতা।
আমার সৌভাগ্য বন্ধু হিসেবে হুমায়ূন আহমেদ আমাকে তার কাছে টেনে নিয়েছিলেন। কাছ থেকে তাকে দেখার সুযোগ হওয়ায় ও একান্ত আলাপ-চারিতায় জাদুবিষায়ক বহু তথ্য তার কাছ থেকে পেয়েছি - যা আমার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সকলের কাছে তুলে ধরার লক্ষ্যে রচনা করি, “জাদু শিল্পী হুমায়ূন আহমেদ”। বইটির ভূমিকা সহ বহু স্কেচ করে দিয়েছেন তার ছোট ভাই বাংলাদেশের বিখ্যাত কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব। গত ডিসেম্বরে প্রথমা প্রকাশন বইটি প্রকাশ করেছে। প্রকাশের পর থেকে বইটি প্রথমার বই বিক্রয় কেন্দ্র (দোকান) ছাড়াও অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে।
বইটির মুখবন্ধে ছোট ভাই আহসান হাবিব লিখেছেন, “এম এ জলিল হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের একটি বই লিখেছেন। বইয়ের নাম জাদুশিল্পী হুমায়ূন আহমেদ। তিনি পাণ্ডুলিপিটি আমাকে পড়তে দিলেন। সেটি পড়ে এবং তার সঙ্গে কথা বলে আমি বড় ভাই হুমায়ূন আহমেদ সম্পর্কে অনেক নতুন তথ্য পেলাম। এটা ঠিক হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে এ পর্যন্ত অনেক বই প্রকাশিত হয়েছে। তবে ম্যাজিশিয়ান এম এ জলিলের বইয়ের বিষয় সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমার ধারণা আগ্রহী পাঠকরা বইটি পড়ে হুমায়ূন আহমেদ সম্পর্কে নতুন একটি ধারণা পাবেন।”
মহান এই জাদুশিল্পী কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে উনিশে জুলাই ২০১২ সালে পৃথিবীর রঙ্গমঞ্চ থেকে চিরবিদায় নেন। ১৩ নভেম্বর তার জন্মদিন। শুভ জন্মদিন প্রিয় হুমায়ূন ভাই। ওপারে ভালো থাকুন।
০৪ নভেম্বর ২০২১
 এম এ জলিল, সিডনি অস্ট্রেলিয়া |